তনুরাগ I স্ট্রবেরি লেগস
অদ্ভুতুড়ে নাম। কিন্তু সাধারণ ত্বক সমস্যা। সারাতে রয়েছে সহজ সমাধান
শেভিংয়ের পর অনেক সময় পায়ে কিছু দাগ ফুটে ওঠে; যা দেখতে স্ট্রবেরির গায়ে থাকা বীজের মতো। তাই এই স্কিন কন্ডিশনের নাম দেওয়া হয়েছে স্ট্রবেরি লেগস। এর মূল কারণ ত্বকের ইনগ্রোন হেয়ার ফলিকল অথবা এনলার্জড পোরের মধ্যে আটকে পড়া তেল, ব্যাকটেরিয়া এবং ডেড সেল। তাই বিশেষজ্ঞদের মত, স্ট্রবেরি লেগস সৃষ্টির সাধারণত তিনটি কারণ: কেরাটোসিস পিলারিস, ফলিকিউলাইটিস ও ইনগ্রোন হেয়ার।
কেরাটোসিস পিলারিস: হেয়ার ফলিকলের প্রারম্ভে কেরাটিন জমে যখন আস্তর তৈরি করে, তখন কেরাটোসিস পিলারিস সৃষ্টি হয়। আর এই ত্বক সমস্যা থেকেই উৎপত্তি হয় স্ট্রবেরি লেগসের।
ফলিকিউলাইটিস: এটি সৃষ্টি হয় যখন লোমকূপের ছিদ্রগুলোতে তেল, ব্যাকটেরিয়া, মৃত ত্বককোষ এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ আটকে যায়। ফলে হেয়ার ফলিকল স্ফীত হয় এবং পরবর্তী সময়ে স্ট্রবেরি লেগসে রূপান্তরিত হয়।
ইনগ্রোন হেয়ার: এবড়োথেবড়ো শেভিংয়ের ফলে লোম অনেক সময় সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। ত্বকের নিচে এক জায়গায় হয়ে কুঁকড়ে যায় এবং পরে স্কিন বাম্প এবং স্ট্রবেরি লেগসে পরিণত হয়।
স্ট্রবেরি লেগস থেকে পরিত্রাণের পাশাপাশি মসৃণ, কোমল ত্বক পেতে এই পদ্ধতিগুলো কাজে আসতে পারে।
ড্রাই ব্রাশিং: শেভিংয়ের ৫ থেকে ১০ মিনিট আগে নরম, শুকনা একটি ব্রাশ দিয়ে পায়ের ত্বক সার্কুলারভাবে ঘষে নিলে লোমকূপে আটকে থাকা মৃতকোষগুলো পরিষ্কার হতে শুরু করবে। জমে থাকার সুযোগ পাবে না। সে সঙ্গে দূর হবে ত্বকের গভীরে থাকা দূষণ। স্ট্রবেরি লেগসও সৃষ্টি হবে না।
এক্সফোলিয়েশন: ল্যাকটিক বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ রাসায়নিক এক্সফোলিয়েন্ট বা ট্রপিক্যাল ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এই দুটি উপাদানই ত্বকের উপরিভাগে জমতে থাকা মৃতকোষগুলোকে সারাইয়ে সাহায্য করে। এতে লোমকূপের মুখ আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। শুষ্ক ত্বকের জন্য শিয়া বাটার এবং সেরামাইড সমৃদ্ধ এক্সফোলিয়েটর বেশি কার্যকর। আর এক্সফোলিয়েশনের সময় আস্তে আস্তে স্ক্রাব করে নিতে হবে ত্বক। নতুবা ত্বকের উপরিস্তরে অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পার-অক্সাইড অথবা রেটিনলযুক্ত পণ্য: বিশেষজ্ঞরা ফলিকিউলাইটিসকে অনেক ক্ষেত্রেই ব্রণের কম সংক্রমিত রূপ বলে সংজ্ঞায়িত করেন। তাই যেসব পণ্যে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পার-অক্সাইড এবং রেটিনলের মতো উপাদান থাকে, সেগুলো ব্যবহার করলে ফলিকিউলাইটিস থেকে পরিত্রাণ মিলবে। এই পণ্যগুলো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, অতিরিক্ত তেল ভাব দূর করে এবং ত্বকের মৃতকোষ সারাতে সাহায্য করে।
ময়শ্চারাইজিং শেভিং জেল: অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ শেভিং জেল ত্বককে লুব্রিকেট করতে সাহায্য করে, জ্বালা প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে রেজর বার্ন থেকে সুরক্ষিত রাখে। ভিটামিন ই যুক্ত শেভিং জেলগুলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা ফ্রি র্যাডিকেলের কারণে সৃষ্ট ইউভি রশ্মি থেকে বাঁচায়। এ ধরনের শেভিং জেল রেজর ব্লেডের প্রখরতা থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং শেভ করার পরে ত্বক নরম ও কোমল রাখে। পায়ের ত্বকে চুলের কন্ডিশনারও ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু শেভ করার সময় কোনোভাবেই পানি লাগানো যাবে না পায়ে। তবে শেভ করার পর পানি, অ্যালোভেরা এবং টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে সেটি পায়ে ম্যাসাজ করা যেতে পারে। এটি করলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে। পাশাপাশি পোরগুলো পরিষ্কার থাকে। ফলে স্ট্রবেরি লেগস সৃষ্টি হয় না।
এপিলেটর: এটি একধরনের বিউটি টুল, যা মূল থেকে আঁকড়ে ধরে লোম তুলে ফেলে। এটি তেমন ব্যথা না দিয়েই দ্রুত শিকড় থেকে চুল অপসারণ করে এবং ত্বক মসৃণ, কোমল রাখে। এটি ঘন ও পাতলা—উভয় ধরনের চুলের জন্যই উপযুক্ত।
ঘাম অপসারণ: স্ট্রবেরি লেগসের অন্যতম কারণ ফলিকিউলাইটিস; যা ঘাম, তেল আর ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্ট। তাই ঘাম প্রতিরোধ করা চাই। সে ক্ষেত্রে সব সময় সঙ্গে ক্লিনজিং ওয়াইপ রাখা যেতে পারে।
পরিষ্কার এবং ধারালো রেজর: ইনগ্রোন হেয়ার এড়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো সব সময় পরিষ্কার, ধারালো রেজর ব্যবহার করা। চুল যেদিকে বাড়ে, সেদিকে রেজর চালাতে হবে। এতে করে ইনগ্রোন হেয়ার রোধ করা যাবে। পরিত্রাণ মিলবে স্ট্রবেরি লেগসের সমস্যা থেকে।
ওয়াক্সিং: স্ট্রবেরি লেগস এড়াতে এটি দারুণ উপায়। ওয়াক্স করলে চুলের ফলিকল পুরোপুরি পরিষ্কার হয়, যেটি শেভিংয়ে অনেক সময় হয় না।
লেজার থেরাপি: যদি ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর না হয়, সে ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সেটিংয়ে প্রশিক্ষিত পেশাদার চিকিৎসক দিয়ে লেজার থেরাপি করিয়ে নেওয়া যায়। এটি একদম গোড়া থেকে লোমগুলো গায়েব করে দেয় বলে স্ট্রবেরি লেগসও সৃষ্টি হয় না।
i সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: স্নিগ্ধা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন