ফিচার I স্ন্যাক টাইম
পেটপূর্তির জন্য নয় কিন্তু। পুরো ব্যাপারটাই সৌন্দর্যসংক্রান্ত। জানাচ্ছেন জাহেরা শিরীন
পমোডোরো টেকনিক সম্পর্কে জানা আছে? আশির দশকে আবিষ্কৃত এই টাইম ম্যানেজমেন্ট মেথড আজও জনপ্রিয়। যা মোতাবেক পঁচিশ মিনিট টানা কাজ করার পর পাঁচ মিনিটের বিরতি নেওয়া প্রয়োজন। আর প্রতি দুই ঘণ্টায় প্রয়োজন পনেরো মিনিটের ব্রেক। এতে কাজের মান বাড়ে। বাড়ে কাজের প্রতি আগ্রহও। স্ট্রেস বাস্টার হিসেবে কাজ করে এসব ছোট ছোট বিরতি। বাড়ায় মনোযোগও। ব্যস্ত দিনে হঠাৎ ক্ষুধা মেটাতে এমন একটা কুইক ব্রেকই যথেষ্ট। চট করে এক কাপ চায়ে চুমুক বা প্রিয় কুকিতে কামড় বসানোর মোক্ষম সময়। পারফেক্ট স্ন্যাক টাইম। ঠিক এই কনসেপ্ট থেকেই অনুপ্রাণিত নতুন দিনের সৌন্দর্যচর্চা বিউটি স্ন্যাকিং। ওয়ার্ল্ড ট্রেন্ড ফোরকাস্টিং কোম্পানি ডব্লিউজিএসএনের মতে, এ বছর বিউটি ট্রেন্ড তালিকার শীর্ষে থাকবে এর নাম। মূলত স্বল্প বিরতিতে চটজলদি সেরে নেওয়ার মতো সৌন্দর্যচর্চাগুলোই বিউটি স্ন্যাকিংয়ের প্রধানতম অংশ। তাই একে বিশেষজ্ঞরা সংজ্ঞায়িত করেছেন ‘বাইট সাইজ মোমেন্টস অব সেলফ কেয়ার’ বলে। এই মাইক্রো বিউটি মোমেন্টগুলো শুধু সুন্দর দেখাতেই সাহায্য করবে না, মনের খোরাকও জোগাবে। স্বল্প ঝক্কিতে, সহজ উপায়ে, সেকেন্ডে সেরে নেওয়া যায় বলে বিউটি স্ন্যাকিং চলতে, ফিরতে, গাড়িতে, অফিস ডেস্ক থেকে বাড়িতে সেরে নেওয়া যাবে অনায়াসে। শুধু জানতে হবে সঠিক কৌশলগুলো।
ফেস মিস্ট
দিনভর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায়? সে ক্ষেত্রে ফ্রেশ ফর্মুলায় তৈরি ফেস মিস্টের চেয়ে কার্যকর সৌন্দর্য উপাদান আর হয় না। চটজলদি সতেজতা দেবে ত্বকে। জোগাবে জরুরি আর্দ্রতা। একদম কোনো ধরনের ঝক্কি ছাড়া। যাদের দিনের অনেকটা সময় কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে কাটাতে হয়, তাদের ত্বকের ক্লান্তিভাব কাটাতে এর জুড়ি নেই। ইনস্ট্যান্টলি ত্বক প্রাণোজ্জ্বল করে তুলবে। লাইটওয়েট ফর্মুলারগুলোই বেছে নেওয়া ভালো এ ক্ষেত্রে। আর যদি একদম প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি মিস্ট ব্যবহার করতে চান, সে ক্ষেত্রে গোলাপজল স্প্রে করে নিলেও চলবে।
লিপ অয়েল অ্যান্ড মাস্ক
দিনজুড়ে চা-কফিতে চুমুক, খাবার খাওয়া আর এয়ারকন্ডিশনারের প্রভাব পড়ে ঠোঁটে। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান লিপ অয়েল অথবা মাস্ক। আর এর আগে যদি একটু স্ক্রাবিং সেরে নেওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। খুব কঠিন কিছু নয়। সামান্য চিনি নিয়ে এর সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে ঠোঁটে আচ্ছা করে ঘষে নিতে হবে। চিনি গলে যাওয়া অব্দি। তারপর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে মেখে নিতে হবে লিপ অয়েল বা মাস্ক। নিমেষেই শুষ্ক ঠোঁটের সমস্যা উধাও। সেই সঙ্গে ঠোঁট দেখাবে কোমল আর পরিপুষ্ট।
ফেশিয়াল টুল
সৌন্দর্যচর্চায় কাল্ট ফেভারিট মানা হয় এ টুলকে। আইস গ্লোব মূলত বিশাল গোলকসদৃশ বস্তু। হাতলসমেত হওয়ায় ত্বকে এর প্রয়োগপ্রক্রিয়া সহজ। সাধারণ ত্বকচর্চার মান বাড়াতে এর যোগ দারুণ কার্যকর। ব্যবহারের আগে ঠান্ডা করে নিতে হয় আইস গ্লোব। ফ্রিজে রেখে দিতে হবে বিশ মিনিটের জন্য। তারপর ঠান্ডা আইস গ্লোব ম্যাসাজ করে নিতে হবে। ব্যস, মিনিটেই ত্বকের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। ডিপাফ হবে ত্বক। ত্বকের জ্বালাপোড়া আর অস্বস্তি ভাব কমাবে। প্রতিদিন এর মিনিটখানেকের ব্যবহার ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়াবে। ফেশিয়াল ক্রিম মুখে অ্যাপ্লাই করে আইস গ্লোব দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বক ক্রিম দ্রুত শুষে নেবে। এটা ছাড়াও কুইক স্কিন রিলাক্সেশনের জন্য ফেশিয়াল রোলার আর গুয়াশাও মন্দ নয়।
শিট মাস্ক
দারুণ স্ট্রেস বাস্টার। বিউটি স্ন্যাকিংয়ের জন্য দারুণ। শুধু ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে ব্যবহারের আগে। তারপর ফেবারিট শিট মাস্ক মুখে সেঁটে নিতে হবে, ব্যস। এটা পরেই সেরে নেওয়া যাবে হাতের সব কাজ। বিশেষ কোনো ইভেন্টের আগে চটজলদি ত্বকচর্চার জন্য এর জুড়ি হয় না। শুধু আর্দ্রতা বাড়ায় না, উজ্জ্বলও করে তোলে ত্বক।
আই প্যাচ
স্ক্রিন টাইমে চোখ ক্লান্ত? আই জেল প্যাচ থেকে জম্পেশ সমাধান আর হয় না। শুধু প্যাকেট থেকে খুলে চোখের নিচে সেঁটে নিতে হবে। এগুলো সাধারণত ক্যাফেইন ইনফিউজড হয়। ব্যবহারের পরপরই চোখের ক্লান্তিভাব কেটে যায়। দেখায় সতেজ। এ ছাড়া চোখের চারপাশের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। চোখের ফোলাভাব কমে যায়। জরুরি আর্দ্রতার জোগান দিয়ে দশ মিনিটে চোখকে করে তোলে প্রাণবন্ত।
হ্যান্ড ক্রিম
দিনভর স্ক্রলিং আর টাইপিংয়ে হাতের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব হারিয়ে যেতেই পারে। সঙ্গে করোনার প্রভাবে বারবার হাত ধোয়ার ফলে শুষ্কতা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। সে ক্ষেত্রে হ্যান্ড ক্রিম এখন মাস্ট হ্যাভ বিউটি প্রডাক্ট। দ্য আলটিমেট বিউটি স্ন্যাক। কাজের মাঝে হাতের যত্নে এর থেকে দারুণ পণ্য আর হয় না। এটা হাতের ত্বকে আর্দ্রতার জোগান দেবে। ফলে নিয়মিত ব্যবহারে স্বাস্থ্যোজ্জ্বলতা বজায় থাকে। থাকে কোমল ও মসৃণ।
মডেল: মাহলেকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন