skip to Main Content

ফিচার I স্বাদ সিদ্ধি

দু-একটি বাড়তি উপকরণ ঈদের খাবারকে করতে পারে দ্বিগুণ সুস্বাদু। সেই সঙ্গে রাঁধুনির মুনশিয়ানা তো আছেই। মাছ, মাংস কিংবা পোলাও, কীভাবে হবে মুখরোচক?

ঈদের খাবার মুখরোচক না হলে সর্বনাশ। তাতে মেহমানদের প্রশংসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু উৎসবদিনের নানান ব্যস্ততায় রান্নায় যথাযথ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই বলে স্বাদের সঙ্গে আপোস করতে নারাজ রাঁধুনিরা। তারা খুঁজে ফেরেন সহজ কৌশল। কী করলে পদটা একটু বেশি সুস্বাদু হবে, সেই পথ হাতড়ে বেড়ান অনেকেই। খুঁজেও পান। বেশ কিছু টোটকা আছে, যেগুলো মানলে পদের স্বাদ হয়ে যেতে পারে দ্বিগুণ। বিশেষ করে ঈদের পদগুলো। মানে মাংস, মাছ, পোলাও ইত্যাদি।
ঈদের দিনে মাংসের পদ থাকেই। কখনো ভুনা, কখনো ঝোল ঝোল করে রান্না। মাংসের যে ধরনের পদই হোক, একে সাধারণের চেয়ে বেশি সুস্বাদু করতে দেওয়া যেতে পারে বাগাড়। পেঁয়াজ রসুন থেঁতলে। পাঁচফোড়ন দিলেও স্বাদ বাড়বে। মাংসের তরকারি মুখরোচক করবে টালা জিরাও। তা রান্নার পর মাংস নামানোর কিছুক্ষণ আগে দিলে ভিন্ন রকমের ঘ্রাণ আসবে, যা ভোজনের তুষ্টি বাড়াবে। দই ও পুদিনার পেস্ট যোগ করলে মাংসের তরকারিতে দারুণ স্বাদ আসে। একই রকম মুখরোচক হবে টমেটোর কুচি দিলে। তা দিতে হবে মাংস কষানোর সময়। ঝাল ভুনার ক্ষেত্রে কারিপাতা দিলে তরকারির স্বাদ খোলতাই হয়। একই ফলাফল মিলবে পেস্তাবাদাম বেটে দিলে। পরিশেষে মাংসের তরকারি চুলা থেকে নামানোর আগে বেরেস্তা দিয়ে পনেরো মিনিট ঢেকে রাখা যেতে পারে। তাহলে অতিথিরা মাংস খেয়ে হাত চাটবেন!
ঈদে বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হওয়া মাংসের আরেকটি পদ হলো কাবাব। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের খুবই পছন্দের পদ হওয়ায় এর স্বাদের সঙ্গে বিন্দুমাত্র আপোস করতে চান না মায়েরা। এটি সুস্বাদু করারও কিছু কৌশল রয়েছে। কাবাব মুখরোচক করতে হলে মাংস নির্বাচনে পটু হতে হয়। চাপের কিংবা সিনার হাড়ের লম্বাটে অংশের মাংস দিয়ে দ্রুত কাবাব তৈরি সম্ভব। রানের মাংসের কাবাব করতে হলে গবাদির সামনের পা থেকে নিতে হবে। পেছনের পা থেকে নিলে মাংসে বাড়তি কিছু উপকরণ যোগ করতে হবে, যাতে কাবাব নরম হয়।

এ উদ্দেশ্যে মাংসে কষযুক্ত কাঁচা পেঁপে বেটে দেওয়া যেতে পারে। মেরিনেট করার সময়ই তা যোগ করা ভালো। কাবাবভেদে ২০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ধরে পেঁপে বাটা মেখে রাখলে মাংস নরম হবে। আরেকটি কৌশল হচ্ছে, কাবাবের জন্য আদা ও রসুনবাটায় পানি যতটা পারা যায় কম যুক্ত করা। এতে স্বাদ হয় দারুণ। অনেকেই কাবাব তৈরিতে দই ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে পানি ঝরিয়ে নিলে ভালো স্বাদ মিলবে। কেউ কেউ মনে করেন, উচ্চ তাপে কাবাব বেশ ভালো হয়। আসলে কাবাবে তীব্র তাপ না দেওয়াই ভালো। নয়তো এর ওপরের অংশ পুড়ে কালো হয়ে যাবে; ভেতরটা থেকে যাবে কাঁচা। লোহা এড়িয়ে যারা কাবাবের শিক হিসেবে বাঁশের কাঠি ব্যবহার করেন, তারা কাঠিগুলো বেশ কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এতে তা আগুনে পুড়ে গিয়ে কাবাবের স্বাদ নষ্ট করতে পারবে না।
এবারে পোলাও। রাঁধুনিদের লক্ষ্য থাকে তা ঝরঝরে করার। যদিও এটা খুব সহজ কাজ নয়। রান্নার হাত পাকা থাকা চাই। নয়তো পোলাও ঝরঝরে হবে না। তখন দেখতে খারাপ লাগার পাশাপাশি সঠিক স্বাদও মিলবে না। পোলাও ঝরঝরে করতে চাইলে তাতে দেওয়া তেল বা ঘিয়ের পরিমাণ ঠিকঠাক থাকা চাই। ২ কাপ চালের জন্য আধা কাপ তেল দিতে হয়। পোলাওয়ে দিতে হবে গরম পানি। তা হতে হবে দ্বিগুণ। অর্থাৎ ১ কাপ চালে ২ কাপ পানি। পোলাওর রং ঠিক রাখাও কঠিন। রান্নার পর তা বাদামি হয়ে যায়। কিন্তু রাঁধুনিরা চান সাদা রাখতে।

এ উদ্দেশ্যে পোলাও রান্নায় পেঁয়াজ বাদ দিতে হবে। বড়জোর রান্না শেষে এর ওপর বেরেস্তা ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া পোলাওর চাল ধোয়ার সময় খুব ভালো করে কচলে ধুতে হয়। রান্নার আগে চাল খুব অল্প সময় ভাজতে হবে। বেশি ভাজলে পোলাও বাদামি হয়ে যেতে পারে। পোলাও সুস্বাদু করার জন্য অনেকেই পানির বদলে দুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে দুধ ও পানি আধা-আধি হলে পোলাও মুখরোচক হবে। পোলাওয়ে অতিরিক্ত সবজি যোগ করলেও এর স্বাদের হেরফের ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২ কাপ চালের জন্য বড়জোর দেড় কাপ সবজি যোগ করা যেতে পারে। আবার সবজির কারণেও পোলাওয়ের রঙে বদল আসতে পারে। তাই সেগুলো পোলাওয়ে দেওয়ার আগে লবণপানিতে সামান্য সেদ্ধ করে নেওয়া ভালো। পোলাও ভাজার সময়েই সবজি যোগ করে নেওয়া যেতে পারে। পোলাওয়ের সঙ্গে গরমমসলা দিয়ে সবজি কিছুটা ভেজে নিলে স্বাদ আরও বাড়বে।
ঈদে মাংসের মতোই অনেকের আয়োজনে থাকে মাছের ঘটা। এর কাবাব থেকে শুরু করে তরকারি—সবই হয়। মাছের পদ সুস্বাদু করতে হলে রান্নার সময় তো বটেই, সতর্ক থাকতে হয় মাছ কেনার সময়ও। মাছের চোখ স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল আছে কি না, তা পরখ করে কেনা চাই। মাছে আঁশটে গন্ধ যাতে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাজা মাছের স্বাদ বেশি। পচা মাছের শরীরে চাপ দিলে দেবে যায়। মাছের সুস্বাদু পদ চাইলে তাজা মাছই আনতে হবে। এরপর রান্না। অনেকে মাছ অতিরিক্ত ভাজেন। এতে স্বাদ হারিয়ে যায়। অল্প লবণযোগে মাছ সামান্য ভেজে নেওয়াই ভালো। অনেকক্ষণ ধরে জ্বাল দিলেও মাছের পদ স্বাভাবিক স্বাদ হারায়। তাই মাছের মাঝের অংশ স্বচ্ছ থাকা অবস্থাতেই চুলা থেকে নামিয়ে ফেললে আইটেম মুখরোচক হবে। মেরিনেট করার সময় কিছুটা লবণ যোগ করলেও মাছের পদ সুস্বাদু হবে। আইটেম দ্বিগুণ স্বাদের করতে মেরিনেট করার সময় লেবু, জলপাই কিংবা মৌরি যোগ করা যেতে পারে। তবে এগুলো দিয়ে খুব বেশিক্ষণ মেরিনেট করা যাবে না। বড় চিংড়ির পদ তৈরি করতে চাইলে তা রান্নার আগে মিনিট চারেক পানিতে সেদ্ধ করে নেওয়া যেতে পারে। এতে মাছের মিষ্টতা দূর হবে। পদ হবে সুস্বাদু।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top