skip to Main Content

বহুরূপী I ডাল বাহারি

সাধ্যের মধ্যে আমিষের জোগান দিতে পারে ডাল। গম ও চালের চেয়ে বেশি প্রোটিন মেলে তাতে। গ্রামবাংলায় তো বটেই, নিম্ন আয়ের শহুরেদের আমিষের ঘাটতি পূরণে এর অবদান অনেক। তা ছাড়া বাঙালি রসনায় ডালের উপস্থিতি প্রাত্যহিক। দেশে মেলে এর হরেক পদ। সেগুলোতে বালাইনাশকের পাশাপাশি কিছু অস্বাস্থ্যকর উপাদানও রয়েছে।
আমাদের দেশে যেসব ডালের প্রচলন বেশি, সেগুলোর মধ্যে খেসারি, মসুর, মাষকলাই, মুগ, সোনা মুগ, সবুজ মুগ, মটর, ছোলা, অড়হর ও বিউলির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় সম্ভবত মসুর ডাল। উচ্চমাত্রার দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ বলে তা রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। ফলে হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমে। ধমনী পরিষ্কার রাখতে পারে মসুর। এতে স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মসুর ডাল উপকারী হতে পারে। কেননা তা রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও ডালটি উপাদেয়। রক্তশূন্যতা দূর করতে পারে বলে গর্ভবতীদের জন্য এ ডাল ভালো। তবে কিছু কারণে আজকাল অনেকেই মসুর ডাল পাতে তোলেন না। সেই দোষ যতটা ডালের, তার চেয়েও বেশি অসাধু ব্যবসায়ীদের। তারা আমদানি করা মসুরে কাপড়ের রংসহ নানান বাজে রাসায়নিক মিশিয়ে বিক্রি করেন, যা স্বাস্থ্যবান্ধব নয়। তাই নিরাপত্তার জন্য অনেক ভোক্তা মসুর ডাল এড়িয়ে চলেন।
এবার খেসারির প্রসঙ্গ। এতে ভেষজ গুণ অনেক। বিশেষ করে রিকেটস সারাইয়ে ডালটি পথ্যের মতোই উপকারী। তা ছাড়া খেসারি হাড়ের ব্যথা নাশ করে। নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, স্মৃতিশক্তি লোপ, বমিভাব, অরুচি ও নখকুনি সমস্যা দূর হয়। তবে খেসারিতে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এক বিপদ! এই ডালে বোয়া নামের অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি হয়, যা ‘ল্যাথারিজম’ নামক প্যারালাইসিসের জন্য দায়ী।
প্রচলিত আরেকটি ডাল হলো মুগ। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকর। হজমশক্তি বাড়াতে এর সুনাম রয়েছে। এই ডালে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতা কমাতে মুগ ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। তা ছাড়া এটি রক্তে ইনসুলিনকে আরও কার্যকর করে তোলে, পাশাপাশি রক্তচাপও কমায়। গরমে হিট স্ট্রোক থেকে মুক্ত থাকতেও তা খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই ডাল খাওয়া শতভাগ নিরাপদ নয়। ঋতুস্রাব চলাকালে এটি খেতে বারণ করেন কিছু গাইনি বিশেষজ্ঞ। কেননা সে সময় এ ডাল খেলে বমি ও ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া মুগ ডাল খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতির পরিচয় দিতে হয়। নয়তো তা রক্তে শর্করার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কমিয়ে দিতে পারে।
মাছের মাথা দিয়ে রান্নার জন্য ভোজনবিলাসীদের বিশেষ পছন্দ মাষকলাই ডাল। দৈহিক শক্তি বাড়াতে তা নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া এটি শুক্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। রয়েছে হজমশক্তি বাড়ানোর গুণও। এই ডালের ক্ষতিকর দিকের বিষয়ে খুব কমই জানা যায়। আরেকটি ডাল হলো অড়হর। খুব একটা প্রচলিত না হলেও বেশ স্বাস্থ্যবান্ধব। জন্ডিস নিরাময় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অড়হর। তা ছাড়া মুখের অরুচি দূর করে। জিভের ঘা সারানোর গুণও আছে। তবে কিছু পাশর্^প্রতিক্রিয়া থাকায় এ ডাল খাওয়ায় সতর্ক থাকা চাই। যেমন এটি অ্যালার্জি তৈরি করে। তা ছাড়া শরীরে পুষ্টি উপাদান প্রবেশে বাধা দেয়।
শেষ করা যাক বিউলি ও ছোলার ডাল দিয়ে। বিউলিতে প্রচুর আয়রন থাকে। পেটের যন্ত্রণা দূর করতে এ ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, ছোলার ডাল কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে পারে।
অন্য সব খাবারের মতো প্রতিটি ডালেরই রয়েছে ভালো ও মন্দ দিক। তাই নিয়মিত ডাল খাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে যেকোনো একটি বেছে নেওয়া ভালো। চাইলে কয়েক পদের ডাল মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top