টেকসহি I অকৃত্রিমতায় অনুরঞ্জন
প্রকৃতিপ্রাণিত। রাসায়নিকের ছিটেফোঁটা নেই একরত্তি। তাই পুরো প্রক্রিয়া সেরে নেওয়া যাবে পরিবেশের ক্ষতি না করেই
চুলের প্রাকৃতিক রং পাল্টে লুকে অন্যতর পরিবর্তন আনার আকাঙ্ক্ষা থাকে অনেকের মাঝে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় রেডিমেড হেয়ার ডাইয়ের ব্যবহার। সহজে চুলে রং ধরায় বটে, কিন্তু এতে ক্ষতির আশঙ্কা এড়ানো মুশকিল। চুলের পাশাপাশি মানবদেহ এবং পরিবেশেও প্রতিকূল প্রভাব ফেলার প্রমাণ মিলেছে বক্সে পোরা এসব কেমিক্যাল হেয়ার ডাইয়ের বিরুদ্ধে।
বেশির ভাগ কমার্শিয়াল হেয়ার ডাই তৈরির মূল উপকরণ নানা ধরনের কেমিক্যাল; যেগুলোর অন্যতম অ্যামোনিয়া। এটা হেয়ার কিউটিকল ভেদ করে একদম ভেতরে প্রবেশ করে, ফলে চুলে রং দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ ছাড়া সিসা, বেনজিন, টলুইন, পি-ফেনেলিনডায়ামিনের মতো উপাদানগুলোর উপস্থিতি দেখা যায় হেয়ার ডাইয়ের ফর্মুলায়; যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
পি-ফেনেলিনডায়ামিন বা পিপিডির উপস্থিতি বেশি নজরে পড়ে কালো আর বাদামির মতো গাঢ় শেডের হেয়ার ডাইগুলোতে। এগুলো চুলকে প্রাকৃতিক রঙে রাঙালেও পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে মানুষের ডিএনএ এমনকি দেহকোষেও। আর অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন তো খুবই স্বাভাবিক। এমনকি অ্যামোনিয়া ফ্রি হেয়ার ডাইগুলোও পরিপূর্ণ থাকে বেনজিন ও সিসার মতো রাসায়নিকে। যেগুলোর ব্যবহার কোনোভাবেই আশঙ্কামুক্ত নয় বলে মত হেয়ার এক্সপার্টদের।
তাই বছর কয়েক ধরেই চুল রাঙানোর সাসটেইনেবল সব পন্থা বের করায় ব্যস্ত বিশেষজ্ঞরা। সচেতন হতে হবে ব্যবহারকারীদেরও।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই হালকা শেড বেছে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। কালো, বাদামির মতো গাঢ় শেডে পিপিডির মাত্রা অনেক বেশি থাকে, যা উৎপাদনের সময় বায়ুদূষণেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর হেয়ার ডাই ধোয়ার পর রাসায়নিক মিশ্রিত সেই পানি বায়োঅ্যাকুমুলেশনের মাধ্যমে মিশে যাচ্ছে পানি ও মাটিতে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আর হালকা শেডের হেয়ার ডাইগুলোতে কেমিক্যালের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় তা চুল তো বটেই, পরিবেশের জন্যও কম ক্ষতিকর।
ঘন ঘন হেয়ার টাচ আপ এড়িয়ে যাওয়া জরুরি। অনেকেই সপ্তাহ দুয়েক পরপর টাচ আপের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়; সাসটেইনেবল তো নয়ই। পুরো প্রক্রিয়া সারতে রাসায়নিক ডাই ব্যবহার করতেই হয়। যা পানিতে মিশে দূষণ বাড়ায়। সেই সঙ্গে বাড়তি অপচয়ও হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মত, চুলকে দুই থেকে চার মাস বাড়তে দিতে হবে। তারপর রিটাচ করে নিলেই চলবে। এতে চুলেরও ক্ষতিটা কম হবে।
ঘরে বসে বক্স হেয়ার ডাই ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বক্সে লেখা নির্দেশাবলি একদম অক্ষরে অক্ষরে পালন করা চাই। এতে করে হেয়ার কালার করার পর দীর্ঘস্থায়ী হবে। সহজে রং নষ্ট হয়ে যাবে না। সেই সঙ্গে সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু আর অ্যালকোহল বেসড স্টাইলিং প্রডাক্ট ব্যবহারে রাশ টানতে হবে। কালার করা চুল নিয়ে দীর্ঘ সময় রোদেও থাকতে বারণ। এতে করে রংটা ঠিক থাকবে। পুনরায় কালার করা লাগবে না চুল। ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষা পাবে। বাঁচবে পরিবেশও।
কোন কালারটা চাই চুলে, সে সিদ্ধান্ত আগে থেকে নিয়ে রাখাই ভালো। রেফারেন্সের জন্য ছবি রাখা যেতে পারে সঙ্গে। কাঙ্ক্ষিত রং পেতে বারবার এক্সপেরিমেন্ট চুলের জন্য যেমন ক্ষতিকর, পরিবেশের জন্যও। হেয়ার এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলে চুলের টেক্সচার, টাইপ, প্রাকৃতিক রং আর হেয়ারস্টাইল বুঝে যদি একবারেই রঙের কাজ সেরে নেওয়া যায়, সেটা সবচেয়ে ভালো।
হাইলাইটস আর বালায়েজের মতো হেয়ার কালারিং টেকনিকগুলোতে হেয়ার ডাই তুলনামূলকভাবে অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়। তাই চুলের কম ক্ষতি হয়, পরিবেশেরও। তাই এই প্রক্রিয়ায় চুল রাঙানো সাসটেইনেবিলিটি রক্ষায় সেরা।
রুট টাচ আপ করার সময় স্প্রে অথবা পাউডার প্রডাক্ট ব্যবহার করার পরামর্শ হেয়ার এক্সপার্টদের। সহজেই করে নেওয়া যায় এগুলো, পুনরায় ডায়িং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়েই। আর টেম্পরারি এসব রং সাধারণত অ্যামোনিয়া, পিপিডি আর প্যারাডক্স ফ্রি হয়ে থাকে। ফলে চুল তো বটেই, পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর।
চুল রাঙানোর ঘরোয়া বিকল্পও আছে। কৃত্রিম রঙের মতো তীব্র না হলেও চুলের রঙে তফাত আনার জন্য যথেষ্ট। যারা সৌন্দর্যে সাসটেইনেবিলিটির চর্চা করতে চান, তাদের জন্য সেরা উপায়। তবে মাথায় রাখতে হবে, প্রাকৃতিক এসব হেয়ার ডাইয়ের ফলাফল নির্ভর করবে চুলের ন্যাচারাল কালারের ওপর। চুল যত কালো হবে, রংও তত হালকা দেখাবে। তবে একাধিকবার ব্যবহার করে রঙের গাঢ়ত্ব বাড়িয়ে নেওয়া যায়। উপকরণভেদে রং মিলবে ভিন্ন ভিন্ন।
কফি ব্রাউন শেডের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে কফি। এক কাপ এসপ্রেসো লিকারের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে পরিমাণমতো কন্ডিশনার আর এক টেবিল চামচ গুঁড়া কফি। মিশ্রণ ঘন হবে। চুলে এটি মাখিয়ে র্যাপ করে নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে ঘণ্টাখানেক। তারপর ধুয়ে নিতে হবে ভালো করে।
রেডিশ ব্রাউন শেডের জন্য বেছে নেওয়া যায় দারুচিনি। দুই টেবিল চামচ দারুচিনি গুঁড়া এবং কন্ডিশনার মিশিয়ে চুলে মাখাতে হবে। রাখতে হবে র্যাপ করে। এটাও ঘণ্টাখানেক পর ধুয়ে নিতে হবে।
চুলে হালকা পার্পল টোনের জন্য ব্যবহার করা যায় বিটের রস। একটা গোটা বিট নিয়ে রস করে নিতে হবে। তারপর চুলায় ফুটিয়ে ঘন করে নিয়ে এর সঙ্গে বেশ খানিকটা কন্ডিশনার মেশাতে হবে। অন্তত এক ঘণ্টা রাখতেই হবে র্যাপ করে। তারপর ধুয়ে নিলেই চলবে।
চুলের রং হালকা করতে চাইলে ক্যামোমাইল টি কার্যকর। কাঙ্ক্ষিত রং পেতে একাধিকবার ক্যামোমাইল টি পাউডার আর কন্ডিশনারের মিশ্রণ ব্যবহার করা যাবে চুলে।
তবে মনে রাখতে হবে, এ ধরনের রঙের স্থায়িত্ব কৃত্রিম রঙের মতো নয়। দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কালার প্রটেক্টিং শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: ইন্দ্রানী
হেয়ার কালার ও মেকওভার: পারসোনা
ছবি: মাল্টিপ্লাই ডিজিটাল