ইভেন্ট উইমেন I এম্পাওয়ারমেন্ট সামিট ২০১৮
চট্টগ্রামের জব মার্কেটিংবিডিডটকম হোটেল আগ্রাবাদে গেল মাসে আয়োজন করে উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট সামিট ২০১৮। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফল কয়েকজন নারী। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, দেশের শীর্ষস্থানীয় সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ও পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কানিজ আলমাস খান, বিএসআরএমের পরিচালক সাবিন আমির, এসকিউ গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার শাম্মা তাসনীম, আমেরিকান কর্নার চিটাগংয়ের ম্যানেজার রুমা দাশ ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের হেলেন ডেলফেল্ড।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের সম্মাননা স্মারক দিয়ে অভিবাদন জানানো হয়। সূচনাবক্তব্য দেন হেলেন ডেলফেল্ড। অনুষ্ঠানে ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছেন। অতীতের তুলনায় বর্তমানে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সব ক্ষেত্রে নারীরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। পৃথিবীতে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী তার নিজের জীবনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেয়া হয়- সমন্বিত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধি। সমন্বিত উন্নয়নতত্ত্বে নারী উন্নয়ন হলো সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি।
বর্তমানে সংসদে নারী সংসদ সদস্যরা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদ উপনেতা, স্পিকার- প্রত্যেকেই নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন। বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান ক্ষেত্র তৈরি পোশাক খাতের ৮০ ভাগ কর্মীই নারী। দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহারকারীও নারী। নানা প্রতিকূলতা, বাধা ডিঙিয়ে তারা এখন কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান আলোকপাত করেন নারী উদ্যোক্তাদের কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্যের ওপর। তিনি বলেন, সময় এসেছে নারীকে আরও এগিয়ে নেয়ার। নারীকে অবহেলিত রেখে সমাজের ও দেশের উন্নয়ন ভাবনাকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবে না। এটা তো মানতেই হবে, পুরুষের সাফল্যের পেছনেও রয়েছে নারীর অবদান। তাই এই নারীকে এখন আর পেছনে থেকে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজে না লাগিয়ে সামনে নিয়ে এসে সরাসরি কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, কোনো নারী যাতে ঘরে-বাইরে নির্যাতিত না হয়, সেটাও নিশ্চিত করা জরুরি। নারীর ক্ষমতায়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য সুবিধাদি প্রদান, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণের সুযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। নারীর প্রতি সামাজিক ও কাঠামোগত বৈষম্য ও বৈরিতার অবসান হচ্ছে না। এমনকি প্রতিনিয়ত ঘটছে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা। এসব বৈরী পরিবেশের অবসান ঘটাতে হবে। নারীর উন্নয়ন তখনই হবে, যখন কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে। শুধু চাকরি নয়, যেকোনো কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়াটা যেকোনো মেয়ের জন্য সবচেয়ে জরুরি।
বিএসআরএমের পরিচালক সাবরিন বলেন, বিশ্বের প্রত্যেক মা তার কন্যার শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে লড়ছেন। আমাদের দায়িত্ব নারীর নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরি করে দেয়া, যাতে তারা তাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। উচিত এমন পরিবেশ তৈরি করা, যাতে নারীরা সম্মানের সঙ্গে তাদের সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে পারে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের মতে, বিগত ছয় বছরের পরিসংখ্যানে নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তাদের দাবি, নারীর উন্নয়নে গত ছয় বছরে বাংলাদেশ ২৫ ধাপ এগিয়েছে।
এস কিউ গ্রুপের কর্মকর্তা শাম্মা তাসনীম বলেন, নারীরা জম্মগতভাবেই বঞ্চিত হয়। অথচ বিশ্বের অর্ধেকের বেশি নারী। এদের উন্নয়ন ছাড়া বিশ্বের উন্নয়ন অসম্ভব। যদি সমান মর্যাদা ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাহলে জিডিপি ১ শতাংশ বেড়ে যাবে। আমি নারী দিবসের বিপক্ষে। আজও বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে নারীরা বৈষম্যের শিকার, দেশীয় রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠানে নারীকে অধস্তন করে রাখার প্রবণতা বিরাজমান। বিভিন্ন সময়ে নারী আন্দোলন জাতিসংঘের ব্যবস্থাগুলো এগিয়ে নিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের ছাত্রীরা অনুষ্ঠানে নাচ ও গান পরিবেশন করেন। জব মার্কেটিংবিডিডটকমের সিইও মো. আবু হোরায়রা সমাপনী বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ ও আগ্রহ ছিল উল্লেখযোগ্য।
নিউটন দত্ত
ছবি: কমল দাশ