সেলুলয়েড I মম
পরিচালক : রবি উদওয়ার
অভিনয় : শ্রীদেবী, অক্ষয় খান্না, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিক, সেজাল আলী, আদনান সাদিক
সংগীত : এ আর রহমান
মুক্তিকাল : ৭ জুলাই, ২০১৭
বলিউড টিনসেল টাউনে গ্ল্যামারাস মম যে কয়জন আছে, তাদের একজন প্রয়াত শ্রীদেবী। জীবনের শেষ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন মায়ের ভূমিকায়। গত বছরের ১৪ জুলাই মুক্তি পাওয়া সেই ছবির নামও ছিল ‘মম’। অভিনয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রদর্শিত এই ছবিটি ছিল শ্রীদেবীর ৩০০তম চলচ্চিত্র। দেবকি সাবরাওয়ালের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন শ্রীদেবী। তিনি ছিলেন পরবর্তী সময়ে সৎমেয়ের জীববিজ্ঞানের শিক্ষিকা। এই অ্যাকশন থ্রিলারে শ্রীদেবীর নিজের অভিনয় তো দেখিয়েছেন, তবে টপ ফর্মে দেখা গেছে গোয়েন্দা দয়াশঙ্কর কাপুরের চরিত্রে অভিনয় করা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীকে।
গল্পটা আহামরি কিছু নয়; বরং অনেকটা ছকে বাঁধা। পাকিস্তানি সেজাল আলী অভিনয় করেন আরিয়ার চরিত্রে। যে গণধর্ষণের শিকার হয়। আর সেই ঘটনা নিয়ে এগোয় ছবি। সৎমায়ের প্রতি বিরক্ত ও বীতশ্রদ্ধ আরিয়া শেষ পর্যন্ত সেই মাকেই আশ্রয় করে। এর মাঝে নানা ঘটনা।
তবে ছবির সাজ আর পোশাক আমাদের আলোচ্য। চরিত্রচিত্রণের দায় থেকেই বা চরিত্রের দাবি থেকেই বলতে গেলে কোনো মেকআপ করেননি শ্রীদেবী। জেল্লাহীন চেহারাকেই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তিনি। এর জন্য এড়িয়ে গেছেন মেকআপ, টিনটেড ময়শ্চারাইজার। একেবারে পরিচ্ছন্ন মুখমন্ডল রেখেছেন তিনি। ছবির সব চরিত্রে মেকআপ বদলেছে কাহিনির গতি আর পটপরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। তবে দয়াশঙ্কররূপী নওয়াজউদ্দিনের মেকআপ প্রশংসার দাবি রাখে। রবি কুমার উদাইয়ার নির্দেশিত এই ছবির প্রযোজনায় শ্রীদেবীর স্বামী বনি কাপুর।
চরিত্রাভিনয় তিনি শুরু করেন গৌরি সিন্দের ইংলিশ ভিংলিশ দিয়ে। ২০১২ সালে। মাতিয়ে দেন অভিনয়দক্ষতায়। মম-এ ও তিনি চমৎকার অভিনয় করেছেন। তাকে এই মা চরিত্রচিত্রণে ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রার পোশাকনকশার তারিফ করতেই হবে।
ছবির সূচনায় শ্রীদেবী শিক্ষিকা- তাকে দেখি হালকা গোলাপি সালোয়ার-কামিজ আর ওড়নায়। এ ছাড়া তাঁকে বিভিন্ন সময়ে চরিত্রের প্রয়োজনে দেখা যায় নানা পোশাকে, তা পাশ্চাত্যের হোক বা ঐতিহ্যবাহী ভারতীয়। তবে রঙ সব সময়েই থাকে হালকা। সালোয়ার-কামিজ বা স্কার্ট-টপস কিংবা শার্ট-প্যান্ট- সবই। তিনি ক্যারি করেছেন চমৎকারভাবে।
শ্রীদেবী ছাড়া এই ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র গোয়েন্দা দয়াশঙ্কর। নওয়াজউদ্দিন এই চরিত্র রূপায়ণ করেছেন বিশেষ মাস্ক পরে। তাকে ফুলশার্ট, হাতাকাটা কটি এবং সানগøাস পরা অবস্থায় দেখা গেছে বেশির ভাগ সময়ে।
অসহায় মা শ্রীদেবী আইনের সহায়তা না পেয়ে দয়াশঙ্করের দ্বারস্থ হন ধূসর গোলাপি সালোয়ার-কামিজে। ওই রঙের মধ্যে চরিত্রের অসহায়তা ধরা পড়ে। আবার কোর্টে মামলায় হেরে যাওয়ার পর শ্রীদেবীকে দেখা গেছে নীল কুর্তি ও লাল দোপাট্টায়।
পুলিশ অফিসার অক্ষয় খান্নার প্রথম লুক ছিল চমৎকার লেদার জ্যাকেট, লাল পোলো শার্ট আর জিনসে। তারও পোশাক বদলায় পরিস্থিতির সঙ্গে।
আরিয়ার চার ধর্ষকের মধ্যে গার্ড বাবুরামকে হত্যার পর পুলিশ অফিসার অক্ষয় খান্নাকে দেখা যায় সবুজ রঙের পোলো টি-শার্টে।
ছবির এ রকম অংশে মহাভারতে দ্রৌপদীর লাল রঙ প্রতিশোধের প্রতীক হিসেবে লক্ষণীয় এবং তা প্রতিফলিত হয় পোশাকেও। এ ছাড়া লালের পাশাপাশি কালো রঙও ব্যবহৃত হয়েছে।
দেশের বাইরে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ছুটি কাটাতে গেলে শ্রীদেবীর পরিবারের সদস্যদের কস্টিউমে থাকে পরিবেশের প্রভাব। সেভাবেই দুই কস্টিউম ডিজাইনার পরিস্থিতি আর চরিত্রের চাহিদা মাথায় রেখে পোশাকের ডিজাইন করেছেন।
কস্টিউমে কালার প্যালেটের সঙ্গে প্রকৃতির রঙের সামঞ্জস্যে প্রতীকী হয়ে উঠেছে। যেখানে বিষাদ কিংবা সুখ ধরা পড়েছে।
কস্টিউমের পাশাপাশি চরিত্রানুগ অ্যাকসেসরির ব্যবহার ছিল উল্লেখ করার মতো। এ জন্য অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার দুই কস্টিউম ডিজাইনার ফাবেদা খান ও গায়েত্রী মাদানী।
তানজীনা এফ খান মুনিয়া
লেখক: কস্টিউম ডিজাইনার, কো-ফাউন্ডার
কস্টিউম সিলুয়েট/অনকোর ক্রিয়েশনস
কুইজ
১. মম সিনেমায় মায়ের ভূমিকায় কে অভিনয় করেছেন?
ক. শ্রীদেবী খ. রেখা গ. মাধুরী
২. সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন কে?
ক. প্রিতম খ. এ আর রহমান গ. গুলজার
৩. শ্রীদেবীর মেয়ের ভূমিকায় কে ছিলেন?
ক. জায়রা ওয়াসিম খ. সেজাল আলী গ. দীপিকা পাডুকোন
গত সংখ্যার বিজয়ী
১. নাফিজা মির্জা, উত্তরা, ঢাকা।
২. সাদিকুর রহমান, ধানমন্ডি, ঢাকা।
৩. ফারজানা ইয়াসমিন, চকবাজার, চট্টগ্রাম।