skip to Main Content

কুন্তলকাহন I বায়োটিন ভার্সেস কোলাজেন

এ বিতর্ক বহু পুরোনো। কারও মত, এর যেকোনো একটা একাই এক শ। তো ভিন্নমতে দুটোই সমান জরুরি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, সুন্দর চুলের জন্য। কোনটা সত্য?

শুধু বাইরে থেকেই নয়, চুলের অন্দরের ভিত শক্ত হওয়া জরুরি। তাই বাহ্যিক যতেœর পাশাপাশি চাইলে ভেতর থেকেও চুলের যত্ন নিতে হবে। প্রয়োজন শুধু বাড়তি কিছু পদক্ষেপ, যা চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে তুলবে, জোগাবে জরুরি পুষ্টি। এতে হেয়ারফল কমবে। চুল হয়ে উঠবে আরও বেশি সুন্দর।
বায়োটিন ও কোলাজেন- দুটো সম্পর্কেই অবহিত আছেন সৌন্দর্যসচেতনেরা। শুধু বায়োটিন বা কোলাজেন- কোনটা বেশি কার্যকর, নাকি একসঙ্গে ব্যবহার করা যাবে দুটিই- এ রকম কিছু বিষয় নিয়ে দ্বিধান্বিত অনেকেই। তাই ব্যবহারের আগে সঠিক যাচাই-বাছাই প্রয়োজন।
বায়োটিন কী
বি কমপ্লেক্স গ্রুপের ভিটামিন বায়োটিন, যা ভিটামিন এইচ নামেও পরিচিত। আবার এটাকে ভিটামিন বি সেভেনও বলা হয়। দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর কার্যক্রম ঠিক রাখার জন্য অপরিহার্য। চুল, ত্বক আর নখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সহায়ক। দেহের বিপাকের জন্য প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিডসহ অন্যান্য উপাদান ভেঙে শরীরে শোষণ করতে সাহায্য করে এই বায়োটিন। রূপান্তর করে শক্তিতে। চুলের বৃদ্ধিতেও যা দারুণ সহায়ক।
এ ছাড়া চুলের গোড়ায় চুলকানো, স্ক্যাল্পে র‌্যাশ বা চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়ার মূল কারণ বায়োটিনের অভাব। এ ছাড়া বায়োটিনের অভাবে হতে পারে ডার্মাটাইসিস। আবার অতিরিক্ত হেয়ারফলও হতে পারে এর অভাবে।
বায়োটিনের উৎস
খাদ্যতালিকায় যদি ভাজাপোড়া বা বেশি মসলার খাবার থাকে, এর প্রভাব পড়তে পারে চুলে। সে ক্ষেত্রে বায়োটিন হতে পারে এই সমস্যার সমাধান। নিয়মিত বায়োটিনের জোগান চুলের হারানো জৌলুশ ফিরিয়ে দিতে পারে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাবও। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে বায়োটিনযুক্ত খাবার। যেমন মিষ্টি আলু। এটি বায়োটিনের অন্যতম উৎস। নিয়মিত মিষ্টি আলু খেলে বায়োটিনের অভাব অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব। এ ছাড়া তালিকায় থাকতে পারে মাশরুম। নুডলস অথবা পিৎজায় টপিংস হিসেবে অনায়াসে ব্যবহার করা যায় এটি। এতেও রয়েছে প্রচুর বায়োটিন। এ ছাড়া কলা ও পালংশাকে পাওয়া যায় বায়োটিন। বিশেষজ্ঞদের মত, প্রতিদিন একটা করে কলা খাওয়া গেলে শরীরে বায়োটিনের অভাব অনেকাংশেই দূর হয়ে যায়।
এ ছাড়া এখন বিভিন্ন ধরনের বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেটও পাওয়া যায়, যা বায়োটিনের অভাব পূরণে সক্ষম। তবে সুন্দর চুলের জন্য খাদ্যতালিকায় বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার না রেখে শুধু সাপ্লিমেন্ট খেলে কোনো লাভ হবে না বলে মত ডার্মাটোলজিস্টদের।
বায়োটিন বেনিফিট
চুল গজানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন, তার অন্যতম মূল উৎস বায়োটিন। সহায়ক হিসেবে দারুণ কার্যকর। এর সঙ্গে অন্যান্য বোটানিক্যাল আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মিশেল এর কার্যকারিতা বাড়াতে পারে বহুগুণ। যার সঠিক ব্যবহারে চুল বাড়বে দ্রুত।
কোলাজেন কী
কোলাজেন হচ্ছে একধরনের প্রোটিন, যা বিভিন্ন ফর্মে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে চুল, ত্বক ও নখে। এটা অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরির অন্যতম উৎস, যা দিয়ে কেরাটিন তৈরি হয়। আর কেরাটিনে তৈরি হয় চুল। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রোটিন চুলে শক্তি জোগায়, যা চুল বাড়তে সহায়তা করে। দেয় স্ট্রাকচারাল সাপোর্ট, যা স্ক্যাল্পের শক্তি বাড়ায়, কমায় চুল পড়া।
কোলাজেনের উৎস
দৈনন্দিন খাবারে কিছুটা পরিবর্তন আনলেই কোলাজেনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। এর অন্যতম উৎস হলো প্রাণিজ প্রোটিন। এ ছাড়া গাঢ় সবুজ, শাকজাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে কোলাজেন সরবরাহ করে। প্রাকৃতিকভাবেই ডিমের সাদা অংশেও থাকে প্রচুর পরিমাণে কোলাজেন। অ্যামিনো অ্যাসিডেরও বেশ ভালো পরিমাণ রয়েছে ডিমের সাদা অংশে। তাই দেহে প্রয়োজনীয় কোলাজেন সাপ্লাই দিতে নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে ডিমের সাদা অংশ। প্রাণিজ প্রোটিনের অন্যতম উৎস হচ্ছে মাছ, বিশেষত সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক মাছে যে কোলাজেন পাওয়া যায়, তা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। দুধ এবং দুধ দিয়ে বানানো বিভিন্ন ধরনের খাবার, এমনকি চিজ খেলেও অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিমাণ শরীরে বৃদ্ধি পায়। ফলে কোলাজেনের উৎপাদনের হারও বেড়ে যায়। ভিটামিন সি ত্বক বা চুল পরিচর্যায় যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সবারই জানা। কোলাজেন উৎপাদনেও কিন্তু ভিটামিন সি বেশ ভূমিকা রাখে। তাই চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে খাওয়া যেতে পারে টকজাতীয় খাবার যেমন: বিভিন্ন ফল, লেবু, পেঁপে, টমেটো ইত্যাদি। কোলাজেন সৃষ্টিকারী খনিজ হিসেবে সালফার বেশ জনপ্রিয়, তাই খাদ্যতালিকায় যোগ হতে পারে সালফার সমৃদ্ধ খাবার রসুন।
কোলাজেন যেমন শরীরেই তৈরি হয়, তেমনি নানা কারণে তা নষ্টও হয়ে যেতে পারে। আবার বাধাও পড়তে পারে কোলাজেন তৈরির দৈনিক প্রক্রিয়াতে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন সতর্কতা। ধূমপানের মাধ্যমে যে নিকোটিন আমাদের শরীরে ঢোকে, তা রক্তনালিতে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ ব্যাহত করে, ফলে ব্যাপকভাবে কমে যায় কোলাজেন উৎপাদন। এ ছাড়া স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি চিনি ও কার্বোহাইড্রেট গ্রহণও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে কোলাজেন উৎপাদন প্রক্রিয়া। তাই একটু খেয়াল রাখতে হবে যেন ডায়েটে চিনি ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি না হয়ে যায়।
কোলাজেন কামাল
চুলের যতেœ কোলাজেনের ভূমিকা অনেক। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হেয়ারফল, চুলের আগা ফেটে যাওয়া বা চুল বেশি ভঙ্গুর হলে, বেশির ভাগ সময়েই এর প্রধান কারণ কোলাজেনের অভাব। চুলের গোড়া মজবুত করতে দারুণ ভূমিকা রয়েছে কোলাজেনের; যা চুলকে মাথার ত্বকের সঙ্গে আটকে রাখে। বেশ কয়েকটি রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয় কোলাজেন। এর মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিড ও প্রোটিন অন্যতম। শরীর থেকেই উৎপন্ন হওয়া এসব উপাদানের অন্যতম কাজ হলো চুলের গোড়া শক্ত রেখে চুল পড়া কমানো।
আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের হার কমে। এ ছাড়া ফরমালিনযুক্ত ফলমূল, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পরিবেশের দূষণ শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ দেখা যায় বয়স খুব বেশি না হওয়া সত্ত্বেও অনেককে চুল পড়ার সমস্যায় ভুগতে।
বায়োটিন ও কোলাজেনের পার্থক্য
এ দুটিই ভিন্নভাবে উপকারী। চুলের যতেœ দুটি উপাদানেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কার্যকারিতা। কারণ, উপাদান দুটি আমাদের শরীরে কাজ করে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। বায়োটিন মূলত একটি ভিটামিন এবং কোলাজেন একটি প্রোটিন। আমাদের দেহের বিপাক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর একটি হলো বায়োটিন। অপরদিকে কোলাজেন হলো একধরনের প্রোটিন, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন: ত্বক, চুল, নখ গঠনে সহায়তা করে। বায়োটিন মূলত চুল, নখ ত্বকের সঠিক কার্যকারিতায় সাহায্য করে, অন্যদিকে কোলাজেন চুলের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে অন্যতম। বায়োটিন মূলত উদ্ভিদজাতীয় খাবারে বেশি পাওয়া যায়। অন্যদিকে কোলাজেনের অধিকাংশ জোগানই আসে বিভিন্ন প্রাণিজ আমিষ থেকে। চুলের সুস্থতাতেও এ দুটির ভূমিকায় রয়েছে বিস্তর ফারাক। কোলাজেন সরাসরি সহায়তা করে চুলের গঠনে। অন্যদিকে বায়োটিন জোগায় প্রয়োজনীয় শক্তি, চুল গজানোর ক্ষেত্রে। অর্থাৎ কোলাজেন যদি ঘর তৈরির ইট হয়, বায়োটিন হচ্ছে সেই রাজমিস্ত্রি, যিনি সিমেন্ট দিয়ে ইট গাঁথছেন।
বায়োটিন নাকি কোলাজেন
কোলাজেন কিন্তু আমাদের শরীরেরই অংশ। মানবদেহ নিজে থেকেই কোলাজেন উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোলাজেন উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোলাজেনযুক্ত খাবার খেয়ে দেহের বাইরে থেকে এটি সাপ্লাই দেওয়ার। কারণ, কোলাজেনের অভাবে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষত চুলে নানান পরিবর্তন আসতে পারে। শরীরে কোলাজেনের পরিমাণ বেশি হলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না। অন্যদিকে বায়োটিন সম্পূর্ণভাবে শরীরের বাইরে থেকে সাপ্লাই দিতে হয়। বায়োটিন সরবরাহের পরিমাণ বেশি হলে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সাধারণত খুব বেশি বায়োটিনের ঘাটতি না থাকলে শরীরে আলাদা করে বায়োটিন সরবরাহ করতে বলেন না ডাক্তাররা। কিন্তু কোলাজেনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একদমই ভিন্ন। এই প্রোটিন মানবদেহের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য অত্যাবশ্যক। এর মধ্যে অন্যতম প্রক্রিয়া হচ্ছে চুলের গোড়া শক্ত করা।
কোনটা দরকার
বায়োটিন হোক বা কোলাজেন- শরীরে কোনটার ঘাটতি বেশি এবং কোনটার পরিপূরক গ্রহণ করতে হবে, এটি শুধু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক খাবারে যোগ করতে হবে বায়োটিন অথবা কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার। বাজারে এখন বিভিন্ন কোম্পানির বায়োটিন ও কোলাজেন সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এগুলো নিয়মিত গ্রহণ করা একদমই অনুচিত।
আর সবার আগে চুলের জন্য নিতে হবে বেসিক যত্নগুলো। চুল রাখতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এ ছাড়া যেহেতু এখন শীতের সময়, তাই চুলের প্রতি রাখতে হবে একটু বাড়তি খেয়াল। বায়োটিন এবং কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে বেশি বেশি। খেতে হবে প্রচুর ফলমূল এবং পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি।

 সাদিয়া আফরিন আইভী
মডেল: আয়শা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top