skip to Main Content

ফরহিম I ফর ফেশিয়াল

সেলফ কেয়ার কি শুধুই মেয়েদের জন্য? সেদিন গত হয়েছে বহু আগেই। পুরুষেরাও এখন সৌন্দর্যসচেতনতায় পিছিয়ে নেই

নির্জীব, বড় বড় লোমকূপযুক্ত, ব্রণে ভরা পুরুষালি ত্বক। শুধু বাসায় বসে ফেসওয়াশিং আর শেভিংয়েই সারবে সমস্যা? সে আশার গুড়ে বালি। এ ক্ষেত্রে চাই প্রফেশনাল হেল্প। ফেশিয়ালটাও হতে পারে সেরা সমাধান। সমস্যা সারার সঙ্গে সঙ্গে ক্লান্তি আর স্ট্রেসও কমাবে। তাই শুধু কোন ইভেন্ট সামনে রেখে ছেলেদের ফেশিয়াল করতে হবে, সে ধারণা এখন সেকেলে; বরং নিয়ম মেনে পুরুষদের সেলফ প্যাম্পারিংটাই বর্তমানে স্বাভাবিক চর্চা।
ফেশিয়াল কেন
দিনের অধিকাংশ সময়েই ঘরের বাইরে কাটান ছেলেরা। এ সময় রোদের কারণে সানবার্ন হয় ত্বকে। অনেক সময় অতিরিক্ত সানবার্নের কারণে চেহারায় অনেকটা রোদে পোড়া তামাটে ভাব চলে আসে। সঙ্গে প্রতিদিনের ধুলাবালি আর পলিউশন তো আছেই। যার কারণে ত্বক হয়ে যায় রুক্ষ। এ ছাড়া স্কিনের বিভিন্ন স্থানে ব্লাকহেডস থাকে। আবার অনেকেরই ত্বক বেশ তৈলাক্ত থাকে, তাই ত্বকে দেখা দেয় ব্রণের সমস্যা। রেগুলার ফেশিয়ালের মাধ্যমে অনেকটা রেহাই মিলবে এই সমস্যাগুলো থেকে। ফেশিয়ালের মাধ্যমে ত্বকে জমে থাকা ময়লা যেমন দূর হয়, তেমনি সমস্যা বুঝে আলাদাভাবে বিশেষ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। এতে ত্বকের উপরিভাগ হয় পরিষ্কার। সঙ্গে ফেশিয়াল মাসাজ ও ডিপ ক্লিনিংয়ের মাধ্যমে ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাবও কমিয়ে আনা হয় অনেকটা। প্রতি মাসে রেগুলার ফেশিয়াল করলে চেহারায় ব্রণ হওয়ার প্রবণতাও বেশ কমে যায়। ফেশিয়াল করার সময় মুখের মৃত চামড়াগুলো উঠে যায়, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে অনেকটাই উজ্জ্বল। আর বাসায় বসে ত্বকচর্চার চেয়ে একজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করা এই ফেশিয়ালের কার্যকারিতার ফল মেলে দারুণ। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জুতসই উপাদানের পাশাপাশি এক্সপার্ট হ্যান্ড থাকায় ফুল অন স্কিনকেয়ারের সুফল মেলে।
আদ্যোপান্ত
নারী ও পুরুষের ত্বক আলাদা। পুরুষদের ত্বক তুলনামূলকভাবে বেশি তৈলাক্ত, লোমযুক্ত, পুরু এবং বয়স বাড়ার ব্যাপারটাও ভিন্ন। কিন্তু বর্তমানে সমীক্ষা অনুযায়ী মিলও রয়েছে মেলা। তবে সবচেয়ে বড় বিভেদ বিয়ার্ড এরিয়া। পুরুষদের দাড়ি ওঠার জায়গায় ইনগ্রোন হেয়ার আর অস্বস্তির সমস্যা থাকে। যার জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্নআত্তি। মেয়েদের মতো ছেলেদেরও ফেশিয়ালের আছে নানা অপশন। ত্বকের ধরন বুঝে ও ত্বকের সমস্যার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে বেছে নিতে হবে সঠিক ফেশিয়াল। অনেকের স্কিনে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি থাকে। ফেশিয়াল নেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বিষয়টি। দেখে নিতে হবে, যে ফেশিয়াল বেছে নেওয়া হয়েছে, তা ত্বকে মানানসই কি না। ডার্মাটোলজিস্টরা পুরুষদের ফেশিয়ালকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। এর সঙ্গে নানা ধরনের কাস্টমাইজেশন যোগে স্যালনগুলো সাজিয়েছে তাদের ফেশিয়াল চার্ট।
স্ট্যান্ডার্ড: এই ফেশিয়ালগুলোতে অন্তর্ভুক্ত থাকে ক্লিনজিং, ত্বকের দূষণ দূরে ফেস মাস্কের ব্যবহার এবং ত্বকের লোমকূপ এক্সট্র্যাকশন প্রসেস। আর থেরাপিউটিক মাসাজ তো থাকছেই। এ ধরনের স্ট্যান্ডার্ড ফেশিয়াল ত্বক পরিষ্কারের জন্য দারুণ, ডিস্ট্রেসিংয়ের জন্যও চমৎকার।
স্ট্যান্ডার্ড প্লাস মাইক্রোডার্মাব্রেশন অথবা পিল: এই ধরনের ফেশিয়ালগুলোতে স্ট্যান্ডার্ড ফেশিয়ালের সঙ্গে যোগ করা হয় ছোট সাকশন ডিভাইস। পেইনলেস এই যন্ত্র ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মিনিয়েচার ভার্সন। এটি দিয়ে লোমকূপগুলো ডিপ ক্লিন করা হয়। যা কোনো ধরনের ক্লিনজিং ব্রাশ বা এক্সফোলিয়েন্ট দিয়ে সম্ভব নয়। আর পিল ত্বকের বাইরের স্তরে জমে থাকা মৃত কোষ দূর করে দেখায় তারুণ্যোজ্জ্বল।
হাইড্রাফেশিয়াল: এ ধরনের ফেশিয়ালে চলে ক্লিনজিং, লোমকূপের সাকশন আর এক্সফোলিয়েশন। ইনফিউশন হিসেবে ব্যবহৃত হয় নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ব্রণের সঙ্গে লড়াই করে, ত্বকের অসমতা আর পিগমেন্টেশনের সমস্যা দূর করে। দেয় টার্গেটেড বেসপোক ট্রিটমেন্ট। পোর ক্লিনজিংয়ে ট্রিটমেন্টগুলো ডিপ ক্লিন করে ত্বক। সেই সঙ্গে মাইক্রোডার্মাব্রেশন ত্বককে দেয় ঝকঝকে পরিষ্কার ভাব।
এখনকার অ্যাডভান্সড ফেশিয়ালগুলোতে এক্সট্র্যাকশন যোগ হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ফেশিয়ালিস্টরা বন্ধ হয়ে যাওয়া লোমকূপ দুইভাবে পরিষ্কার করে থাকেন, আঙুলের সাহায্যে ম্যানুয়ালি অথবা সাকশন ডিভাইস দিয়ে। প্রফেশনাল এ ট্রিটমেন্ট লোমকূপের ড্রেইনেজ সিস্টেমকে উন্নত করার পাশাপাশি ত্বকে ব্যবহৃত উপাদানগুলো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করাতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে দূর করে দাগছোপ।
এ ছাড়া ফেশিয়াল করার আগে অনেকেই চিন্তা করেন, দাড়ি কেটে নিতে হবে কি না কিংবা অন্য কোনো পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন আছে কি না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত, আগে থেকে তেমন কোনো প্রস্তুতি না নিলেও চলবে। শুধু একজন দক্ষ ফেশিয়ালিস্টের কাছে গেলেই হবে। এ ছাড়া অনেকেরই ধারণা, অ্যাকনে বা ব্রণ থাকা অবস্থায় ফেশিয়াল না করানোই ভালো। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ভিন্ন। মাইক্রোডার্মাব্রেশনসহ ফেশিয়াল এ ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী। এতে করে ত্বকের ওপরে জমে থাকা মৃতকোষ দূর হয়, সঙ্গে লোমকূপগুলোর ড্রেইনেজ সিস্টেমও পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে ব্রেকআউট দূর হয় দ্রুত।
কখন করা চাই
মেয়ে বা ছেলে, জীবনের বিশেষ দিনগুলোতে সবাই-ই চায় নিজেকে একটু সুন্দর, আকর্ষণীয় লাগুক। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও কিন্তু এই চাওয়া পূরণ করতে পারেন বিশেষ দিনগুলোর আগে চটজলদি একটা ফেশিয়াল নিয়ে। বিয়ে, জন্মদিন, গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রেজেন্টেশন বা ডেট অথবা বড় কোনো প্রোগ্রামের আগে ফেশিয়াল করে নিলে ফেসটা দেখাবে বেশ ক্লিন। সঙ্গে ত্বকে আসবে দারুণ একটা ন্যাচারাল গ্লো। তবে সাবধান! কখনোই ইভেন্টের দিন ফেশিয়াল করা যাবে না। কারণ, ফেশিয়ালের পর ত্বক সামান্য ইরিটেটেড, লালচে এবং দাগযুক্ত দেখায়। তাই সপ্তাহখানেক আগে ফেশিয়াল সেরে নেওয়া সবচেয়ে ভালো। বিশেষ দিনগুলো ছাড়াও মাসে নিয়ম করে দুবার বা একবার করতে পারেন ফেশিয়াল। রেগুলার বাইরে থাকার কারণে স্কিনে যে পলিউশন হয়, তা সহজেই দূর হয়ে যাবে। রেগুলার ফেশিয়াল করলে ফেসে ব্রণ হওয়ার শঙ্কাও কমে যায় অনেকটা।
সতর্কতা
ফেশিয়ালের ক্ষেত্রে ছেলেদের মানতে হবে কিছু বাড়তি সতর্কতা। ইদানীং মেয়েদের পার্লারের পাশাপাশি জেন্টস পার্লারও চোখে পড়ার মতো। তাই ফেশিয়াল করার সময় বিভিন্ন পার্লার দেখে-শুনে নির্বাচন করুন সঠিক পার্লারটি। কারণ, মুখত্বক যেহেতু আমাদের শরীরের বিশেষ একটা অঙ্গ, তাই এর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারেও বেশ খেয়াল রাখতে হবে। ছেলেদের প্রথম ফেশিয়ালের আগে অবশ্যই কোন ফেশিয়ালটি করবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো কোনো রূপবিশেষজ্ঞের সঙ্গে। জেনে নিতে হবে কোন ফেশিয়ালটি মানানসই হবে ত্বকের সঙ্গে। এ ছাড়া অনেক ফেশিয়াল করার পর ত্বকে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে তারপর বেছে নিতে হবে ত্বকের জন্য উপযুক্ত ফেশিয়ালটি। স্যালন বা জেন্টস পার্লার- যেখানেই ফেশিয়াল করা হোক না কেন, যাচাই করে নিতে হবে ত্বকে ব্যবহারের জিনিসগুলো যেমন ব্রণ স্টিক, ফেস টাওয়েল পরিষ্কার আছে কি না। না হলে হতে পারে বিভিন্ন রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যেদিন ফেশিয়াল করা হবে, সেদিন চেষ্টা করতে হবে ত্বকে নতুন কিছু না ব্যবহার করার। শেভ না করাই ভালো। কারণ, এ সময় স্কিন সেনসিটিভ থাকে।
 সাদিয়া আফরিন আইভী
মডেল: নাহিদ খান
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top