ফিচার I রমজানে অন্দরসজ্জা
বিশেষ এ সময়ে বিশেষ সাজে সাজুক ঘর ও কর্মস্থল। তবে যথাযোগ্য গাম্ভীর্যে বিঘ্ন না ঘটিয়ে
রমজান মাসজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দেহ ও মনে বিরাজ করে এক ভিন্নমাত্রার স্নিগ্ধতা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সিয়াম সাধনায় মগ্ন হন তারা। এ সময় প্রিয়জনের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনায় করেন বিশেষ প্রার্থনা। স্বভাবতই মাসজুড়ে বিশেষ আবহ বিরাজমান থাকে অন্দরে ও বাহিরে। তাতে তাল মিলিয়ে ঘর কিংবা অফিস সাজানোর মাধ্যমে যোগ করা যেতে পারে বাড়তি আমেজ। এই অন্দরসজ্জা এমনভাবে করা শ্রেয়, যেন ঘর কিংবা অফিসে একটি প্রশান্তিদায়ক আবহ তৈরি হয়। আর তা বেশ সহজে করা সম্ভব।
ইফতার ঘিরে অন্দরমহলে মনোরম আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারেন। সেটা যদি হয় মোমবাতির মাধ্যমে, তাহলে কথাই নেই। এ ধরনের আলোর আভা মনকে ফুরফুরে রাখে। তাজা ল্যাভেন্ডার থেকে শুরু করে গোলাপ কিংবা যেকোনো ধরনের ফুলের সুবাসযুক্ত মোমবাতি অন্দরমহলে এনে দিতে পারে এক আধ্যাত্মিক আবহ। তাতে মন থাকবে প্রফুল্ল।
রোজা রেখে সারা দিন যেখানে কাটে সময়, সেই কর্মক্ষেত্র কিংবা সেখান থেকে ফিরে যেখানে পান পরিবারের সান্নিধ্য, সেই নিজ ঘর—উভয় জায়গায় স্নিগ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করতে নতুন সাজে সাজিয়ে তুলতে পারেন অন্দরমহল। বছরের বাকিটা সময় যে রকমই থাক, এ সময়ে এসে অন্দরে যোগ করতে পারেন নতুন গালিচা ও পাটি। তাতে ঘরের ভেতর একটি ভিনটেজ লুক আসবে। হাতে বোনা গালিচা, শ্যাগি কিংবা ওরিয়েন্টাল পাটি থেকে শুরু করে অনেক ডিজাইন রয়েছে, যেগুলো থেকে বেছে নিতে পারেন পছন্দসই কিছু। ঘরের চারপাশ নজর বুলিয়ে দেখে নিতে পারেন, কোনো আসবাব মেরামত কিংবা প্রতিস্থাপন করার দরকার রয়েছে কি না। যদি থাকে, তাহলে দেরি না করে তা সেরে নেওয়ার এ এক মোক্ষম সময়।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাহে রমজানে প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন। ঈদ সামনে রেখে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পুনর্মিলনী এবং একে অন্যকে উপহার দিতেও পছন্দ করেন। ইফতারে ও ঈদে খাবার টেবিলে আয়োজন থাকে অপরাপর সময়ের তুলনায় একটু বেশি এবং বিশেষ। সেই টেবিল যদি সুন্দর না হয়, কিংবা যদি তা দেখতে একঘেয়ে লাগে, নিশ্চয় একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মনোজগতে। তাই খাবারের টেবিলেও এনে দিতে পারেন সৌন্দর্য ও রুচির ছোঁয়া। এর জন্য উপযুক্ত টেবিলক্লথ, চকচকে রুপার পাত্র এবং সুগন্ধযুক্ত মোমবাতি বেছে নিতে পারেন। রুপার পাত্রে রুচি ও সৌন্দর্য প্রকাশে সাজাতে পারেন খেজুর, শুকনো ফল ও বাদাম।
পৃথিবীর অনেক দেশে রোজার মাসে ঐতিহ্যবাহী আলোকবাতিতে রাস্তাঘাট, শপিং মল, হোটেল, অফিস ও বাসস্থান সাজানোর রেওয়াজ রয়েছে। আপনিও বিশেষ আলোকবাতি, যেমন পারস্যের ঐতিহ্যবাহী ফানুস রাখতে পারেন অন্দরে। থাকতে পারে ওয়াল ল্যাম্প, সিলিং ল্যাম্প, এলইডি ডেকোরেটিভ লাইট, স্ট্রিং লাইট, ফ্লোর ল্যাম্প প্রভৃতি, আপনার রুচি অনুযায়ী। আরও থাকতে পারে রঙিন বেলুন। তবে সিলিং, দেয়াল ও প্রবেশদ্বারের আকৃতির ওপর নির্ভর করে বেলুনের আকার ও থিম সেট করা চাই। সবচেয়ে সহজ হলো বিভিন্ন আকার ও রঙের বেলুন দেয়ালে ছড়িয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া।
ফুলও হয়ে উঠতে পারে এ সময়ের দারুণ অনুষঙ্গ। থাকতে পারে পুষ্পস্তবক। আরও ভাবতে পারেন দেয়ালের কথা। সেখানে যুক্ত করতে পারেন নতুন কোনো বার্তা, কোনো দেয়ালচিত্র। ক্যালিগ্রাফি ভঙ্গিমায় লিখে নিতে পারেন রমজান ঘিরে প্রিয় কোনো উক্তি; অথবা স্রেফ—‘মাহে রমজান’ কথাটি। ইসলামি চিত্রকর্মও জায়গা করে নিতে পারে আপনার ঘরে ও অফিসে। সুবিধামতো দেয়ালে সেঁটে রাখতে পারেন এমন কোনো চিত্রমালা, যা দেখে নিজের মনে বয়ে যাবে প্রশান্তির নির্মল বাতাস। পাশাপাশি অতিথি, পরিজন কিংবা সহকর্মীরাও যার দিকে তাকিয়ে নিমগ্ন হতে পারবে এক আধ্যাত্মিক ঘোরে।
দেয়ালে আরও রাখা যেতে পারে কিছু সাজানো লন্ঠন। সে ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা দিয়ে চিন্তা করা চাই, কোথায় রাখলে তা ভালো লাগবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো লন্ঠন সাজানোর উপকরণ ঠিক করা। এই সাজানো লণ্ঠনে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ এনে দিতে পারে শৈল্পিক ছোঁয়া।
অন্দরে নতুন করে সমাদর পেতে পারে বইও। হয়তো বাসায় বুকশেলফ আছে, আর তা বহুদিন পড়ে রয়েছে অনেকটাই অনাদরে। প্রয়োজনে সেই বুকশেলফ পাল্টে ফেলুন; অথবা করে নিন মেরামত কিংবা সাজিয়ে নিন নতুন রঙে। আর তাতে যুক্ত করতে পারেন রমজান ও ধর্মবিষয়ক বইপত্র। চাইলে একেবারেই ছোট্ট একটা বুকশেলফকে জায়গা দিতে পারেন বসার ঘরে। সেই বুকশেলফে রাখতে পারেন সময়োপযোগী বইগুলো। যেন অতিথি কেউ এলে, বিশেষত বিকেলের দিকে একই সঙ্গে সময় ভালো কাটে তার, আবার রমজানের বিশেষ আবহও ছড়িয়ে পড়ে।
রমজান ঘিরে অন্দরমহল যেভাবেই সাজান না কেন, খেয়াল রাখা চাই, অতিরঞ্জিত যেন না হয়। এ মাসের যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে কোনো ছেদ যেন না পড়ে।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট