skip to Main Content

তনুরাগ I ফ্লোটিং থেরাপি

ভেসে বেড়ানোর বিশেষ কায়দা। মানসিক স্বস্তির পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্যবর্ধনে এর জনপ্রিয়তা এখন বিশ্বব্যাপী

মানসিক চাপ, উত্তেজনা—মনের পাশাপাশি প্রভাব ফেলে ত্বকেও। এই দুয়ের সমাধানে তাই কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফ্লোটিং থেরাপি। প্রশান্তির খোঁজে সৌন্দর্যসচেতনেরাও বেছে নিচ্ছেন এই থেরাপি। বৈজ্ঞানিক ভাষায় ফ্লোটিং থেরাপি একটি সেনসরি ডিপরাইভেশন প্র্যাকটিস। স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি লেভেল কমিয়ে আনে। দেহের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে হালকা কোনো ব্যথা থাকলে তা-ও সারায়।
ফ্লোটিং থেরাপির ধারণা আসে ডেড সি থেকে। সেখানে সাঁতার ছাড়াই পানিতে ভাসে মানুষ। ডুবে যায় না। এই তত্ত্ব ব্যবহার করে এখন তৈরি হচ্ছে ফ্লোটিং ট্যাংক। উষ্ণ পানির সঙ্গে ৩০ শতাংশ ইপসম লবণ ব্যবহার করা হয় এখানে; যা ব্যবহারকারীকে ভেসে থাকার অনুভূতি দেয়। দেহের তাপমাত্রার সঙ্গে ট্যাংকে ব্যবহৃত পানি খাপ খেয়ে যায় ধীরে ধীরে।
ফ্লোটিং থেরাপির সময়কাল সাধারণত ঘণ্টাখানেক হয়ে থাকে। অনেক সময় ৯০ মিনিটও চলে। ফ্লোটিং ট্যাংক এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যেন প্রাকৃতিক উপাদানের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এই উপাদানগুলো হচ্ছে শব্দ, আলো ও তাপমাত্রা। এর সঙ্গে সঙ্গে নিñিদ্র নীরবতাও প্রভাব রাখে মনের ওপরে। স্ট্রেস আর অ্যাংজাইটির নিয়ন্ত্রণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে ত্বকে।
তিনটি প্রধান কারণে মনে করা হয় ফ্লোটিং থেরাপি ত্বকস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি দেহ-মনে প্রশান্তি এনে দেয় এবং স্ট্রেস লেভেল কমায়। দ্বিতীয়ত, দেহে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা বাড়ায়। তৃতীয়ত, ডিপ সেলুলার লেভেলে বডি ডিটক্স করে। এর বাইরেও বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে এই থেরাপির।

 ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েশন: ফ্লোটিং থেরাপিতে ব্যবহৃত ইপসম সল্ট ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। ত্বকের মৃতকোষ সরিয়ে দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা দৃশ্যমান করে তোলে।
 লোমকূপ পরিষ্কার: গভীর থেকে ত্বকের লোমকূপগুলো পরিষ্কার করে। কোনো ধরনের ব্যথা ছাড়াই।
 আর্দ্রতার জোগান: ফ্লোটিং ট্যাংকে ব্যবহৃত ইপসম সল্ট ত্বকে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা জোগান দিতে সাহায্য করে। কোমলতা বৃদ্ধি করে।
 ডিটক্সিফিকেশন: ফ্লোটিং থেরাপির মাধ্যমে দেহ থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। ত্বক পরিষ্কার হয়। স্বাস্থ্যোজ্জ্বলতা বাড়ায়। ফ্লোটিং ট্যাংকে ৬০০ কেজির বেশি ইপসম লবণ থাকে, যা ডিটক্সিফিকেশনের কাজ করে। দূষণ, টক্সিন, হেভি মেটাল দেহ থেকে বের করে দেয়।
 মানসিক চাপ দূর: অ্যাকনে, একজিমা আর সোরায়সিসের জন্য দায়ী করা হয় মানসিক চাপকে। ফ্লোটিং থেরাপি স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে বলে এ ধরনের সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।
 রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি: ফ্লোটিং থেরাপিতে ওজনহীনতার অনুভূতি পাওয়া যায়, যা পুরো দেহে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। অক্সিজেন পৌঁছে দেয় সব জায়গায়। ত্বক এবং চুলেও।
 প্রদাহ প্রশমন: দেহের প্রদাহ কমিয়ে আনতে দারুণ কার্যকর ফ্লোটিং থেরাপি। এতে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় ত্বক ও চুল।
 ছোটখাটো ত্বক সমস্যার সমাধান: অ্যাকনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ফ্লোটিং থেরাপিতে উপস্থিত ম্যাগনেশিয়াম দারুণ কার্যকর। স্কিন ইস্যু কমিয়ে আনে। বাড়ায় আত্মবিশ্বাস। এই উপাদান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করে।
 স্কিন রিলাক্সেশন: ত্বকে আলট্রা ডিপ রিলাক্সেশন হয় বলে ফ্লোটিংয়ের মাধ্যমে উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া সম্ভব। বিশ্রামে ত্বকের শ্রান্তি দূর হয়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। ত্বক এতে নিজ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। ক্রনিক স্ট্রেসে ত্বকের ক্ষতি হয় বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। টক্সিনের আউট ফ্লো এবং ইন ফ্লো স্ট্রেসের ওপর নির্ভরশীল বলে জানা যায়। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বকে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারতে বেশি সময় নেয়।
 ত্বক সারাই: ইপসম লবণে ম্যাগনেশিয়াম সালফেট থাকে। ফ্লোটিং থেরাপিতে এটি ব্যবহৃত হয়। এই বিশেষ উপাদানের ইনফ্লাক্স ত্বক সারিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। এটি বায়োকেমিক্যাল রি-অ্যাকশনে গুরুত্বপূর্ণ কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। স্কিন অ্যালার্জি সারায়। দেহে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ কম হয়ে থাকলে সেখানেও কার্যকর ফ্লোটিং থেরাপি। শোষণ ক্ষমতার মাধ্যমে কোষ পর্যন্ত পৌঁছে দেয় তা।
 হেয়ার গ্রোথ: এ ক্ষেত্রে রক্ত চলাচল বিশেষ ভূমিকা রাখে। পানিতে ভেসে থাকার এই থেরাপিতে দেহের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ার কারণে চুল দ্রুত বাড়ে। দেখায় ঘন। তা ছাড়া চুল প্রতিনিয়ত সূর্যের আলোসহ আরও বেশ কিছু রাসায়নিকের সরাসরি সংস্পর্শে আসে। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, স্প্রে, ডাই, ব্লো ড্রায়ারের অত্যধিক ব্যবহারে চুল অনুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ফ্লোটিং থেরাপির ফলে ইপসম সল্ট চুল থেকে অতিরিক্ত তেল, ময়লা, দূষণ সরিয়ে নেয়। চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ভলিউম বাড়ায়।
ফ্লোটিং থেরাপির প্রথম সেশনে সাধারণত স্বস্তিকর পজিশন খুঁজে বের করা হয়, যাতে আরামদায়ক হয় সেশনটি। কোনো ধরনের অস্বস্তি অনুভূত হলে, শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগী হয়ে প্রশান্তি অনুভব করা সম্ভব। মুখত্বক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে পারলে হাতের স্পর্শে চোখ, নাকে কোনো ইরিটেশন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
যেকোনো বিশেষ উৎসবের আগে প্রস্তুতির সময় ফ্লোটিং থেরাপি ত্বক প্রাণবন্ত করে তুলতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া সেবা গ্রহণকারী ডি-স্ট্রেসড হন বলে তার শান্তির ঘুম হয়, এনার্জি বৃদ্ধি পায়; মানসিক স্বস্তি মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। যার প্রতিফলন দেখা যায় ত্বকে।

 সারাহ্ দীনা
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top