skip to Main Content

রম্যরস I ইয়ে, ব্যাপারটা বিয়ে -সুমন্ত আসলাম

বাবার হাতের আঙুল চেপে ধরে হাঁটছিল রাফিদ। কেবল ছয় পেরিয়েছে ওর বয়স। সঙ্গে মা-ও আছেন। বাড়ির পাশেই একটা কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে খেতে যাচ্ছেন তারা। এলাকার মাঠের কোনায় ঘাস খাচ্ছিল দুটো গাধা। ওদিকে চোখ যেতেই আঙুলটা টেনে ধরল সে। থেমে গেলেন বাবা। হাঁটা বন্ধ করলেন মা-ও। চোখ দুটো সরু করে ফেলল রাফিদ। গাধা দুটোকে ভালো করে দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, গাধা কি বিয়ে করে?’
রাফিদের বাবা পাশে দাঁড়ানো মায়ের দিকে তাকালেন। চোখ দুটো সরু হয়ে গেল তারও, ‘হ্যাঁ বাবা, গাধারাই বিয়ে করে!’


বিয়ে হচ্ছে একটা গোলকধাঁধা। সেখানে তিনটি রিং আছে—
 এনগেজমেন্ট রিং
 ওয়েডিং রিং
 সাফারিং
বিয়ে সাধারণত দুই ধরনের হয়—
 অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ
 লাভ ম্যারেজ
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, লাভ ম্যারেজে একসময় অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এসে ভর করে। ভালোবাসা ফিকে হয়ে আসে, জানালার পর্দায় ধুলো জমে, কোকিলময় গলা কাকসদৃশ শোনায়, সবকিছু অ্যারেঞ্জ করে চলতে হয় একসময়। তাই তো বিয়ের আগে মেয়ের যখন হাত ধরে ছেলেটা, তখন তাকে বলে ভালোবাসা; আর বিয়ের পর ওই হাত ধরাকেই বলে আত্মরক্ষা!
বিয়ে হচ্ছে এমন একটা অনুষ্ঠান, যেখানে দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ পরস্পরকে জ্বালাতন করা এবং পরস্পরের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার শপথ নেয় তত দিনের জন্য, যত দিন না মৃত্যু এসে আলাদা করে দেয় তাদের। অনেকে আবার এটাও বলেন—বিয়ে হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে কল্পনার জয়, আর দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে অভিজ্ঞতার বিপক্ষে আশাবাদের জয়।
অনেকে বলেন, বিয়ের পর যে স্বামী-স্ত্রী হয়, তারা হলো একটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, একসঙ্গে থাকলেও তারা কখনো মুখোমুখি হতে পারে না।
তবে বিয়ে না করলে প্রত্যেক ছেলে সারা জীবন ভাবত—তাদের জীবনে কোনো ভুল নেই। আর মেয়েরা যে বিয়ের আগে ভাবে—তার জীবনসঙ্গী হবে একজন সুদর্শন, বিত্তবান, নির্বোধ আর সে হবে স্বাধীন। কিন্তু বিয়ের পরেই তারা আবিষ্কার করে ফেলে—সত্যি কেউ পরাধীন হয়ে জন্মায় না, কিন্তু অনেকে বিয়ে করে ফেলে। আর সূর্য, বৃষ্টি, রংধনু ও আকাশ একসঙ্গে পাওয়া যায় কখনো কখনো, অনেক দিন; কিন্তু সুদর্শন, বিত্তবান, নির্বোধ স্বামীর সঙ্গে নিজের স্বাধীনতা কখনো একসঙ্গে পাওয়া যায় না, কোনো দিনই না।
পুরো জীবনে একজন পুরুষের আদি সফলতা হচ্ছে—পর্যাপ্ত আয় করতে পারা; আর একটা মেয়ের সফলতা হচ্ছে, সেই পুরুষকে বিয়ে করতে পারা। তবে সব বিয়েই কিন্তু সুখের, কেবল পরবর্তী সময়ে একসঙ্গে থাকতে গিয়েই যত ঝামেলা হয়। আবার এটাও তো সত্য—ভালোবাসা অন্ধ; চোখ খুলে দেয় বিয়ে।

দ্য সিক্রেট অব হ্যাপি ম্যারেজ রিমেইনস আ সিক্রেট। তবে সুখী-সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য একটি পুরুষের অপরিহার্যভাবে যা করা উচিত, তা হলো—তার মুখটা বন্ধ রাখা। সুখী দাবি করা সুখী-সুখী চেহারার এক সফল ব্যবসায়ীকে এক টিভি সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার জীবনের এত সফলতা ও সুখী জীবনের গোপন রহস্য কী?’
‘বেশ কয়েক বছর ধরে আমি আমার বউয়ের সঙ্গে কথা বলি না।’
‘কেন!’ চমকে উঠলেন টিভি সাংবাদিক।
‘কারণ, প্রতিবার সে প্রথম কথা শুরু করে, তারপর তাকে আর আমি থামাই না, কথার মাঝখানেও কোনো কথা বলি না। তবে আমি বিশ্বাস করি, দাম্পত্যে সুখের আসল রহস্য হচ্ছে—কেউ কথা বলুক অথবা না বলুক, একটা পুরুষের শেষ কথা হওয়া উচিত—‘ঠিক আছে, কিনে ফেলো।’
অনুষ্ঠানের এক কোনায় দাঁড়ানো বয়স্ক এক দম্পতির দিকে এগিয়ে গেলেন ওই সাংবাদিক, ‘আচ্ছা, আপনাদের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের রহস্য কী?’
‘রহস্য আর কিছুই না।’ পুরুষটি একটু এগিয়ে এলেন সাংবাদিকের দিকে, ‘দুদিন ভালো রেস্তোরাঁয় ডিনার, মৃদু আলোতে সফট মিউজিক, একটু নাচ—এই আরকি।’
‘তবে—।’ এগিয়ে এলেন মহিলাটিও, ‘আমি যাই মঙ্গলবারে, ও যায় বৃহস্পতিবারে।’ মহিলাটি মুচকি হাসি দিলেন, ‘একটি মেয়ের সঙ্গে সুখে থাকার আরও একটি মন্ত্র আছে—ইউ মাস্ট আন্ডারস্ট্যান্ড হিম আ লট অ্যান্ড লাভ হিম আ লিটল।’
‘আর একজন ছেলের সুখে থাকারও আরেকটি মন্ত্র হচ্ছে—’ পুরুষটির মুখেও হাসি, ‘ইউ মাস্ট লাভ হার আ লট অ্যান্ড নট ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড হার অ্যাট অল।’
স্বামী হিসেবে প্রত্নতত্ত্ববিদেরাই সবচেয়ে আদর্শ; কারণ, পুরোনো জিনিসের প্রতি তাদের আগ্রহ অনেক বেশি। আর মেয়েরা সত্যি আনপ্রেডিক্টেবল। বিয়ের আগে তারা একজন পুরুষকে এক্সপেক্ট করে, বিয়ের পরে করে সাসপেক্ট, আর মৃত্যুর পর করে তাকে রেসপেক্ট।
আর স্রষ্টা এই দুই শ্রেণিকে সৃষ্টি করার পর কী করেছেন—ইন দ্য বিগিনিং, গড ক্রিয়েটেড আর্থ অ্যান্ড রেস্টেড। দেন গড ক্রিয়েটেড ম্যান অ্যান্ড রেস্টেড। দেন গড ক্রিয়েটেড ওম্যান, সিন্স দেন, নেইদার গড নর ম্যান হ্যাজ রেস্টেড।

মেয়েরা আশা করে, ছেলেরা বিয়ের পর বদলাবে, কিন্তু তা হয় না। আর ছেলেরা আশা করে, মেয়েরা বিয়ের পরেও একই রকম থাকবে, কিন্তু তারা বদলে যায়। তাই একজন দার্শনিক আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী জীবনের ২৫টা বছর বড় আনন্দে কাটিয়েছি। তারপর আমাদের পরিচয় হলো।’
এই পরিচয় হওয়াটা মানে, চেনার শুরু, চিনতে পারার প্রথম ধাপ।
সুখের আসলে প্রকারও আছে। একজন নববিবাহিত যখন বলে সে সুখী, আমরা জানি—কেন? একজন ১০ বছরের বিবাহিত মানুষ যখন বলেন সে সুখী, আমরা ভাবি—কেন? ভালোবাসা হচ্ছে একটি মিষ্টি স্বপ্ন, বিয়ে হচ্ছে অ্যালার্ম ক্লক।
ভালোবাসার আলুথালুতে ছেলেটি মেয়েটিকে বলেছিল, ‘তোমার জন্য আমি নরকে যেতে রাজি।’ স্রষ্টা তাকে সেই সুযোগ দিলেন—পরস্পরকে বিয়ে করার সুযোগ দিলেন তাদের। তারপর ছেলেটা একদিন উদাস হয়ে বলে ফেলল, ‘বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না সত্যিকারের সুখ আসলে কাকে বলে। যখন জানলাম, বড্ড দেরি হয়ে গেছে তখন।’


আ ম্যান ইজ ইনকমপ্লিট আনটিল হি ইজ ম্যারিড; আফটার দ্যাট, হি ইজ ফিনিশড—হাসতে হাসতে বিয়ে-অভিজ্ঞরা এ কথা বলেন। কিন্তু তাই কি?
ডেড মিউয়ার বলেছেন, ‘একটি পরিপূর্ণ বিয়ে সেটা নয়, যেখানে ছেলে মেয়ে উভয়ই পৃথকভাবে পরিপূর্ণ এবং মিল বিদ্যমান। বরং পরিপূর্ণ বিয়ে হলো সেটাই, যেখানে তাদের মধ্যে থাকে অমিল এবং তারা তা উপভোগ করে।’ আর মে ওয়েস্ট বলেছেন, ‘বিয়ে হলো একটি চমৎকার প্রতিষ্ঠান, অনেক কিছু শেখার আছে সেখানে।’ তাই তো ‘বিয়ের সৌন্দর্য একেবারে শুরুতেই পাওয়া যায় না, বরং তা ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে।’ ফাওন ওয়েভার সেই কবেই বলে গেছেন তা।
আর সম্প্রতি কষ্টের ফেরিওয়ালা ‘কষ্ট নেবে কষ্ট’-এর স্রষ্টা চিরকুমার হেলাল হাফিজ বলেছেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল।’ অথচ তিনি নিজেই লিখেছিলেন সেই অমর লাইন—‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ এই লাইনটাই ইট্টু পাল্টে দিয়ে লিখতে হবে—‘এখন যৌবন যার, বিয়ে করার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’
বিয়ের সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে—আপনার ভুল আর ত্রুটিগুলো কষ্ট করে আপনার নিজের মনে রাখার দরকার নেই। আপনি পুরুষ হলে আপনার অর্ধাঙ্গিনী তা মনে রাখবে; মেয়ে হলে মনে রাখবে, যাকে আপনারা অনেকেই আহলাদ করে বলেন—পতিদেবতা!

ইলাস্ট্রেশন: দিদারুল দিপু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top