ইভেন্ট I বিএসওএবির হেয়ার অ্যান্ড বিউটি ফেস্ট ২০২৪
বিউটি সার্ভিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএসওএবি)-এর উদ্যোগে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত হয় দেশের প্রথম হেয়ার অ্যান্ড বিউটি ফেস্ট। দুদিনব্যাপী সৌন্দর্যের এই মহা উৎসবে অংশ নেন বিভিন্ন প্রান্তের সৌন্দর্যসচেতন মানুষেরা। তাদের মধ্যে কেউ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন রূপসজ্জাকে, কেউ কাজ করছেন প্রসাধন নিয়ে। দেশীয় সৌন্দর্যশিল্পের জন্য একটি বিশেষ আয়োজন ছিল এটি। প্রথম দিন, ১১ ফেব্রুয়ারি উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী মো. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, এমপি। উপস্থিত ছিলেন বিএসওএবির প্রেসিডেন্ট কানিজ আলমাস খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট নেলুফার খন্দকার ও গীতি বিল্লাহ, সেক্রেটারি সুমনা হাসান, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি শারমিন কচি, ইভেন্ট সেক্রেটারি কাজী কামরুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইভেন্ট সেক্রেটারি রাজিয়া সুলতানা, ট্রেজারার সায়েরা মঈনসহ সংগঠনটির সদস্য এবং দেশীয় সৌন্দর্য অঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বলে রাখা ভালো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করার মধ্য দিয়ে বিএসওএবি অসংখ্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে। তাদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে বিউটি ইন্ডাস্ট্রিকে স্বীকৃতি দেয় এবং শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে।
‘হেয়ার অ্যান্ড বিউটি ফেস্ট ২০২৪’ বিউটি সেক্টরের সম্ভাবনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রচারে সংগঠনটির প্রতিশ্রুতির উদ্যাপন। দেশে এটিই এ ধরনের প্রথম কোনো আয়োজন।
সৌন্দর্যবিশ্বের সঙ্গে পরিচয়
এবারের আয়োজনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিদেশি এক্সপার্টদের কাজের সঙ্গে দেশের হেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রফেশনালদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ফলে দেশের প্রফেশনালরা ভিনদেশি হেয়ারস্টাইলিং টেকনিক এবং মেকআপ ট্রিক সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। প্রথম দিন থাইল্যান্ডের প্রফেশনাল হেয়ার ডিজাইনার মিকি অচার দর্শকদের চুল কাটার নতুন সব কৌশল দেখান। তার সঙ্গে একই মঞ্চে হেয়ারস্টাইলিং নিয়ে নিজেদের নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনান দেশের বিশিষ্ট হেয়ার ডিজাইনাররা। দ্বিতীয় দিন ব্রিটিশ মেকআপ আর্টিস্ট মাদিহা খান মেকআপের নানা টেকনিক প্রদর্শন করেন। সাজিয়ে দেখান বাংলাদেশি মডেল রুমাকে।
আলোচনায়, জেনে নেওয়ায়
হেয়ার অ্যান্ড বিউটি সেক্টরের উদ্যোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ট্যাক্স-ভ্যাট এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ। এ দুটি বিষয় ঘিরে বিস্তারিত আলোচনা ছিল দুদিনের আয়োজনে। প্রথম দিন ‘সাফল্যের দ্বার উন্মোচন: ব্যবসায় সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচক প্যানেলে ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. ইকবাল হোসেন এবং বিএসওএবির প্রেসিডেন্ট কানিজ আলমাস খান। সাবলীল এই সেশনের সঞ্চালক ছিলেন ফ্যাশন, বিউটি ও লাইফস্টাইল বিষয়ক অগ্রজ সাংবাদিক শেখ সাইফুর রহমান। উপস্থিত অতিথিরা নিজ নিজ দক্ষতার জায়গা থেকে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্যের পাশাপাশি উপস্থিত দর্শকের প্রশ্নের উত্তর দেন। সৌন্দর্যশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কীভাবে তাদের টিন নম্বর, বিন নম্বর তৈরি করবেন এবং বার্ষিক আয়কর দেবেন, সে বিষয়ে তথ্যবহুল বক্তব্য দেন ইকবাল হোসেন। কানিজ আলমাস খান এই সেক্টরে পরিপূর্ণ জরিপের প্রয়োজন তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। রিজওয়ানা হাসান পরিবেশের সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্পর্ক তুলে ধরেন এবং এ সেক্টর নিয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের দক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
‘হেয়ার অ্যান্ড বিউটি ফেস্ট’-এর শেষ দিনে কনজ্যুমার রাইটস অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচক প্যানেলে ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকারের ডিরেক্টর জেনারেল এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় তারা কীভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে তিনি বিউটি সেক্টর-সংশ্লিষ্ট সবাইকে মানের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেন।
স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং ড. জেসমিন জাহান মেকওভার প্রফেশনালদের প্রতি দেশীয় পণ্য ব্যবহারের আহ্বান জানান। আলোচনায় উঠে আসে কীভাবে তারা বিউটি সেক্টরের ব্যবহারের জন্য উপযোগী পণ্য প্রোডাক্ট লাইনে যোগ করেছেন। বিউটি সেক্টরের প্রতিনিধিদের কাছে তাদের চাহিদা জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। সে অনুযায়ী পণ্য তৈরি, ব্যবসাবান্ধব প্যাকেজিং, কোম্পানি থেকে সরাসরি পণ্য কেনাসহ বেশ কিছু সেবা চালু করার আগ্রহও প্রকাশ করেন।
বিএসওএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বর্ষীয়ান মেকওভার প্রফেশনাল নেলুফার খন্দকার গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তার মতে, পণ্যের মান নিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। সরাসরি সরবরাহকারীর কাছ থেকে সৌন্দর্যপণ্য কেনার সুযোগ থাকে না, দোকান থেকে কিনতে হয় বিধায় এ নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। যার দায় তাদের ওপরই বর্তায় বলে জানান তিনি। এর সমাধান জরুরি বলে মত দেন। হেয়ার এক্সপার্ট কাজী কামরুল ইসলাম, বানথাই, হেয়ার অ্যান্ড বিউটি স্যালনের অভিজ্ঞতা জানান। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে দর্শকসারিতে থাকা বিউটি স্যালনের বিভিন্ন উদ্যোক্তাকে প্রশ্ন করতে দেখা যায়। যার যথাযথ উত্তর দেন আলোচকবৃন্দ।
আলোচনায় বিএসওএবির প্রেসিডেন্ট সৌন্দর্যসেবা সেক্টরে পণ্য নিয়ে মূলত কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেসবের বর্ণনা দেন। এতে জানা যায়, দেশি পণ্যের ব্যবহার বর্তমানে বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘একসময় আমরা বিদেশি পণ্যের বাজারের কাছে জিম্মি ছিলাম। ধীরে ধীরে এ সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন আমাদের প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্য দেশেই মিলছে। বেড়েছে দেশি পণ্যের চাহিদা। এর অন্যতম কারণ দেশীয় কোম্পানিগুলোর সহযোগিতার মনোভাব।’ সামনের দিনে এই সহযোগিতা দেশের পণ্য ব্যবহারে সবাইকে আরও আগ্রহী করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলতার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুরোধ করেন, যাতে সহায়কপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখে মান নিয়ন্ত্রণবিষয়ক অভিযান পরিচালনা করা হয়।
হেয়ার অ্যান্ড বিউটি ফেস্ট জুড়ে ছিল সৌন্দর্যসংক্রান্ত ভিন্নধর্মী সব আয়োজন। হেয়ারস্টাইলিং নিয়ে একটি বিশেষ ক্যাটওয়াক ছিল প্রথম দিন। সেখানে দেখা যায় চুল নিয়ে সৃজনশীল সব কাজ। ব্রাইডাল শোতে বাংলাদেশের বিয়ের কনেদের উজ্জ্বল উপস্থাপনা ছিল নজরকাড়া। তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার সাফিয়া সাথীর নকশা করা জমকালো পোশাক ও সাজে রানওয়েতে হাঁটেন মডেলরা। আমাদের দেশে উৎসবকে কেন্দ্র করে সাজপোশাকের আয়োজন করা হয় আনন্দের সঙ্গে। সেটিই ফুটে উঠেছিল প্রথম দিনের ‘ফেস্টিভ বাংলাদেশ’ শীর্ষক ফ্যাশন শোতে। দ্বিতীয় দিনে ব্রিটিশ মেকওভার আর্টিস্ট মাদিহা খানের বিশেষ ব্রাইডাল শো প্রদর্শিত হয়। সেখানে তিনি কনের সাজের নানা রূপ প্রদর্শন করেন। ১৯৫০ থেকে ২০১০—এই সময়কালের প্রতিটি দশকে পোশাক ও সাজ কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয় বিশেষ ফ্যাশন কিউর মাধ্যমে। পরিবেশের প্রতি সচেতনতাবোধের চিত্র ফুটে উঠেছিল ইকোলজিক্যাল ব্যালান্সভিত্তিক কিউতে।
দ্বিতীয় দিন (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রধান অতিথি সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আয়োজনের সমাপ্তি হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘হেয়ার অ্যান্ড বিউটি ফেস্ট ২০২৪ সৃজনশীলতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রচারে শিল্পের প্রতিশ্রুতির উদাহরণস্বরূপ। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা সৌন্দর্যকে উদ্যাপনের পাশাপাশি ক্ষমতায়ন, ভোক্তা অধিকার এবং নৈতিক মূল্যবোধের ওপর জোর দিচ্ছে।’
কানিজ আলমাস খান বলেন, ‘হেয়ার অ্যান্ড বিউটি ফেস্ট ২০২৪ দেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রির গতিকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি ইতিবাচক পরিবর্তন, সদস্যদের ক্ষমতায়ন ও নতুনদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছে। এই অনন্য যাত্রায় সবাইকে আমাদের সঙ্গে যোগদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন, সবাই মিলে এই শিল্পকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করি।’
ইভেন্টের প্ল্যাটিনাম স্পন্সর ছিল সামিট; গোল্ড স্পন্সর ছিল বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ও রিভাইভ।
সারাহ্ দীনা
ছবি: বিএসওএবির সৌজন্যে