সেলুলয়েড I জিপসিজ আর ফাউন্ড নিয়ার হেভেন
মূল শিরোনাম: Tabor ukhodit v nebo
বিকল্প শিরোনাম: কুইন অব দ্য জিপসিজ
উৎস গল্প: ম্যাক্সিম গোর্কি
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: এমিল লোতেনু
চিত্রগ্রহণ: সের্গেই ভ্রন্সকি
সম্পাদনা: নাদেজদা ভাসিলিয়েভা
অভিনয়: সভেৎলানা তমা, গ্রিগরি গ্রিগরিও
সময়ব্যাপ্তি: ১০১ মিনিট
ভাষা: রুশ
দেশ: সোভিয়েত ইউনিয়ন (অধুনালুপ্ত)
মুক্তি: ১৯৭৬
সময়কাল বিশ শতকের গোড়ার দিক। স্থান তৎকালীন অস্ট্রো–হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের উপকণ্ঠে, জাকারপাতিয়া অঞ্চলের তিজা নদীর (বর্তমানে হাঙ্গেরির অন্তর্ভুক্ত) পাড়। যাযাবর নৃগোষ্ঠীর রোমার ক্যাম্প ঘিরে প্রেক্ষাপট। এই নৃগোষ্ঠীর দুটি ভিন্ন গ্রুপের দুই আত্মম্ভরী যুবক–যুবতীর বেদনাত্মক প্রেমের সংকলন ‘ জিপসিজ আর ফাউন্ড নিয়ার হেভেন’। প্রসিদ্ধ রুশ সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কির একাধিক গল্প থেকে অনুপ্রাণিত এর কাহিনি।
যুবকটির নাম জোবার। দুর্ধর্ষ ঘোড়াচোর সে। যুবতীর নাম রাদা। রূপসী ও স্বাধীনচেতা। তার সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার কালে জোবার ছিল আহত; ঘোড়া চুরি করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ। গহিন উপত্যকায় তাকে যেন পৌরাণিক কোনো আরোগ্যকারীর মতো এসে শুশ্রূষা দেয় রাদা। সে কি সত্য ছিল নাকি স্রেফ কল্পনা—এই ঘোরে তার সন্ধান চালিয়ে যায় জোবার। পেয়েও যায় দেখা। রাদার গোত্রপ্রধান এবং আরও অনেকের সঙ্গে জোবারের পরিচয় ছিল আগে থেকেই।
ইতিমধ্যে স্থানীয় এক মধ্যবয়সী ধনী লোক প্রেমে পড়ে যায় রাদার। সবকিছুর বিনিময়ে পেতে চায় তাকে। কিন্তু রাদার আত্মমর্যাদাবোধের কাছে লোকটির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এদিকে, রাদা–জোবারের প্রেমপর্ব তুঙ্গে উঠলেও উভয় গোত্রের মধ্যে বিরাজ করতে থাকে চাপা উত্তেজনা। কেননা, এই যুবক–যুবতী—উভয়ই নিজ নিজ অহংবোধের জায়গায় চুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ। তাই যখন তাদের সম্পর্ক চূড়ান্ত ধাপে রূপ নেওয়ার সময় উপস্থিত, রাদা জোবারকে জানায়, তার কাছে সবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে, তার হাতে চুমু খেয়ে করতে হবে পাণিপ্রার্থনা। প্রেমে অন্ধ তবু আত্মমর্যাদাবোধে উন্মত্ত জোবার মিনতি জানায়, আগে হাঁটু গেড়ে বসার বদলে বরং হাতে চুমু খাওয়ার। অনড় রাদাও। এমন মিনতি–পাল্টা মিনতির একপর্যায়ে রাদার বুকে ছুরি বসিয়ে দেয় জোবার। বিস্তীর্ণ তৃণভূমির বুকে, মৃত্যুতে ঢলে পড়ে রাদা। সেখানে হাজির তার বাবা এ বেলা পেছন থেকে ছুরিকাহত করে জোবারকে। রাদার পাশে মৃত্যুতে ঢলে পড়ে জোবার। এই দুই যুবক–যুবতীর মৃতদেহ পড়ে থাকে যেন কোনো মহাকাব্যিক বেদনাত্মক প্রেমের প্রতিমূর্তি হয়ে। এখানেই শেষ সিনেমা!
আপাতদৃষ্টে প্রেমকাহিনি হলেও ‘জিপসিজ আর ফাউন্ড নিয়ার হেভেন’ মূলত পূর্ব ইউরোপের জিপসি বা যাযাবর নৃগোষ্ঠীদের জীবন ও সংস্কৃতির এক জলজ্যান্ত প্রতিকৃতি। পুরো ফিল্মে তাদের প্রতি ভীষণ দরদ দিয়ে দেখানো হয়েছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। বাইরের পৃথিবীর বাহ্যিক কর্তৃত্ব, সীমাবদ্ধতা কিংবা বস্তুবাদী প্রলোভনকে তোয়াক্কা না করে তাদের নির্বিবাদ স্বাধীনচেতা জীবনযাপনের জয়গান গাওয়া হয়েছে এই সিনেমায়। ফলে এটি ফিকশন হওয়া সত্ত্বেও একটি অনিন্দ্যসুন্দর ডকুমেন্টারির মর্যাদা প্রবাহিত হয়েছে এর ফ্রেমে ফ্রেমে, ইমেজে ইমেজে। এ ক্ষেত্রে সোভিয়েত তথা মলদোভান ফিল্মমেকার এমিল লতেনুর বিশেষ কৃতিত্ব, কাহিনিটিকে একটি সুনির্দিষ্ট উৎসের বিয়োগগাথা হিসেবে নয়, বরং যেকোনো স্থান ও সময় থেকে বিয়োগগাথার আবির্ভাব ঘটতে পারে—এমন একটি সর্বজনীন অবয়বে উপস্থাপন করেছেন তিনি।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। এটি কোন ধরনের প্রেমকাহিনি?
[ক] বেদনাত্মক
[খ] মিলনাত্মক
[গ] প্রবঞ্চনামূলক
[ঘ] প্রেমকাহিনি নয়
২। কোন নৃগোষ্ঠীকে দেখানো হয়েছে?
[ক] সাঁওতাল
[খ] চাকমা
[গ] রোমা
[ঘ] মাসাই
৩। এর নায়কের পেশা কী?
[ক] ব্যবসায়ী
[খ] জাদুকর
[গ] বৈদ্য
[ঘ] চোর
গত সংখ্যার বিজয়ী
১. নাহিদা সুলতানা, গুলশান, ঢাকা।
২. অর্পিতা সেন, হালিশহর, চট্টগ্রাম।
৩. রুপালি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।