ছুটিরঘণ্টা I শুভ্রতার পর্বতে
মোহাম্মদ শহিদুল আলম ও জুলিয়া পারভীন। বাংলাদেশি অভিযাত্রী দম্পতি। সেভেন সামিট সম্পন্নের উদ্দেশ্যে তাদের পদচিহ্ন পড়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তের উঁচু উঁচু পর্বতচূড়ায়। মাউন্ট কেনিয়া অভিযানের গল্প জানাচ্ছেন জুলিয়া পারভীন
আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারোকে ‘দ্য মাউন্টেন অব মুন’ বা ‘চাঁদের পাহাড়’ বলেও ডাকা হয়। পক্ষান্তরে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট কেনিয়াকে বলে ‘দ্য মাউন্টেন অব গড’ বা ‘ঈশ্বরের পাহাড়’। এমন উপাধির কারণও আছে! পৌরাণিক কল্পকাহিনিগুলোতে পর্বতকে হয় স্রষ্টা, নয়তো শয়তানের আবাসস্থল হিসেবে বর্ণনার চল ছিল। মাউন্ট কেনিয়াও ব্যতিক্রম নয়। এই পর্বতে স্রষ্টার বাস—এমনটাই বিশ্বাস স্থানীয় নৃগোষ্ঠী কিকুয়ুর। অবশ্য সময়ের প্রবহমানতায় সেই বিশ্বাস ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
আফ্রিকার পর্বতারোহণের প্রসঙ্গ এলে অনেকে শুধু কিলিমানজারোর কথা ভাবেন। সেই তুলনায় মাউন্ট কেনিয়ায় আরোহণ করা তুলনামূলক কঠিন। হ্র্রদ, হিমবাহ, ঘন বন, খনিজ স্প্রিংস আর বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও গাছে ভরা এই পর্বতকে ইউনেসকো ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৪৯ সালে জাতীয় উদ্যান এবং ২০০০ সালে জাতীয় সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে গণ্য করে, এর পরিচালনার দায়িত্ব সামলাচ্ছে কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস (কেডব্লিউএস)।
মাউন্ট কেনিয়া নামটি এসেছে কিকুয়ু ভাষার ‘কিরিনিয়াগা’ বা ‘কেরেনিয়াগা’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘শুভ্রতার পর্বত’। কেননা, এর শিখর তুষারে ঢাকা। এমনকি কেনিয়া দেশটির নামকরণও মাউন্ট কেনিয়া থেকে। এই পর্বত বিষুবরেখায় অবস্থিত হলেও সাধারণত বরফ ও তুষারাবৃত থাকে। ১৭ হাজার ৫৭ ফুট উচ্চতার মাউন্ট কেনিয়ার এলোমেলো চূড়ায় বাসা বাঁধে হিমবাহ; আর ঢালজুড়ে বিস্তৃত বনরাজি। আশপাশে বসবাসকারীদের বিশ্বাস ও রীতিনীতিকে প্রভাবিত করেছে পর্বতটি। প্রাচীনকাল থেকে আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত বিলুপ্তপ্রায় আগ্নেয়গিরিতে এর বরফাচ্ছাদিত চূড়াগুলোকে সূর্যের আলোয় জ্বলতে দেখে স্থানীয় সম্প্রদায় হতবাক হয়ে যেত। কিকুয়ু কিংবদন্তি অনুসারে, তাদের দেবতা গাই এই উজ্জ্বল পর্বত তৈরি করেছিলেন। কিকুয়ুদের বাস পর্বতটির দক্ষিণ ও পশ্চিম প্রান্তে; মাউন্ট কেনিয়াকে তারা দেবতা গাইয়ের পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচনা করেন। তাদের বিশ্বাস, দেবতা গাইয়ের একটি পার্থিব বাসস্থান এটি, যেখান থেকে তিনি তার সৃষ্টিকে অবলোকন এবং তাদের ওপর আশীর্বাদ ও শাস্তি প্রদান করেন।
বাংলাদেশি দম্পতি হিসেবে আমরা পৃথিবীর সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলো জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। এটি সেভেন সামিট নামে পরিচিত। বিশ্বের সবচেয়ে আইকনিক, সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাত পর্বত এর অন্তর্ভুক্ত। এই সেভেন সামিট পর্বতগুলোর মধ্যে আমাদের প্রথম অভিযান ছিল মাউন্ট কিলিমানজারো। এর আগে ২০১৫ সালে মাউন্ট কেনিয়ার পাদদেশ থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল আমাদের, যথেষ্ট প্রস্তুতি না থাকায়। অন্যদিকে, করোনার ঘরবন্দি জীবনে একঘেয়েমি কাটাতে মাউন্টেন হাইকিংয়ে মনোনিবেশ করেছিলাম। ফলে ৮ মাসের প্রস্তুতি নিয়ে যখন সাফল্যের সঙ্গে মাউন্ট কিলিমানজারোর চূড়ায় পৌঁছতে পেরেছিলাম, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মাউন্ট কেনিয়া অভিযানের।
এর অংশ হিসেবে এবার আমরা দক্ষিণ-পূর্ব কেনিয়ার উপকূলীয় শহর মোম্বাসা থেকে ১১ ঘণ্টা ড্রাইভ শেষে দেশটির আরেক প্রান্ত নানিউকিতে পৌঁছালাম। রাতটা সেই শহরে কাটিয়ে পরদিন সকালে পৌঁছে গেলাম মাউন্ট কেনিয়ার পাদদেশে, সিরিমন গেটে। অপর গেট চোগোরিয়া দিয়ে অভিযান শুরু করব বলে এখানেই আরেকটি রাত কাটাতে হলো। কেননা, চোগোরিয়া গেটের রাস্তা ভীষণ খারাপ; সেখানে যেতে ল্যান্ড রোভার গাড়িই একমাত্র ভরসা। সেই ভীষণ কর্দমাক্ত, পিচ্ছিল ও এবড়োখেবড়ো পথ পাড়ি দেওয়ার সময় শুধুই মনে হচ্ছিল, গাড়ি যদি উল্টে যায় কিংবা কোনো গর্তে চাকা আটকে গেলে আমাদের পুরো জার্নি বৃথা হয়ে যাবে। এসব উৎকণ্ঠা, আর বিশাল বাঁশের জঙ্গল পেরিয়ে একসময় অবশ্য নিরাপদেই চোগোরিয়া গেটে পৌঁছাতে পারলাম।
পার্কে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা যখন সেরে নিচ্ছিলেন আমাদের গাইড, পটাররা তখন শেষ মুহূর্তের তল্পিতল্পা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলেন আর বাবুর্চি ব্যস্ত দুপুরের খাবার তৈরিতে। একজন গাইড, কুক, চারজন পটারসহ আটজনের একটি টিম নিয়ে চোগোরিয়ার ভেতরে প্রবেশের যাত্রা শুরু হলো আমাদের।
অনেকটা পিকনিকের মতো মধ্যাহ্নভোজের পর আমরা রেইনফরেস্টের ভেতর বিশেষ ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। চোগোরিয়া গেট থেকে খুব বেশি দূরত্ব না হওয়ায় আশা করছি, অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগেই ক্যাম্পে পৌঁছাতে পারব। কিছুটা দেরি করে বের হওয়ার কারণে হয়তো বন্য প্রাণী দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে সন্ধ্যায় কর্দমাক্ত মহিষের দল ক্যাম্পের কাছাকাছি জলাধারে জড়ো হয়ে থাকে, আর তাই এই সময়ে ক্যাম্পে থাকাই তুলনামূলক নিরাপদ।
রাতের খাবারের পরে, গভীর জঙ্গলে সময় কাটানোর মতো তেমন কিছুই করার থাকে না। তা ছাড়া রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করেছে। ঠান্ডায় আমাদের অনেকটাই জমে যাওয়ার দশা। ইতিমধ্যে বনফায়ারের ব্যবস্থা করেছেন গাইড; যেন আমাদের উষ্ণ রাখার পাশাপাশি বন্য প্রাণীগুলোকে ক্যাম্প থেকে দূরে রাখা যায়। বিশেষ করে মহিষের পাল, যেগুলো এই ক্যাম্পকে জলাধারে যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহার করে। কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকলেও নিরাপদ রাত আর সুন্দর ঘুমের প্রত্যাশায় কাটল সময়।
মাউন্ট কেনিয়া অভিযানের তৃতীয় দিনে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এলিস হ্রদ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার হাইকিং করতে হবে। তবে ট্র্যাকের প্রথম অংশটি ৬ কিলোমিটার, যা আমাদের নিয়ে যাবে পর্বতটির অন্যতম আকর্ষণ নিথি জলপ্রপাতে। ১০০ মিটার উঁচু এই জলপ্রপাতকে মাউন্ট কেনিয়ার রত্ন হিসেবে গণ্য করা হয়।
আমরা এখন বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে, ছোট ছোট জলস্রোত পেরিয়ে, সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। আশপাশের বাতাস খুবই সতেজ ও স্বাস্থ্যকর; তাই বুকভরে শ্বাস নিচ্ছি, যা আমাদের অনেকটা চাঙা করে তুলছে।
একটু বিরতি ও বিশ্রামের পর, জলপ্রপাত থেকে দূরে নয় এমন একটি গুহার দিকে ক্লিফটি আরোহণ শুরু করলাম আমরা। এই গুহা আমাদের অভিযান তালিকায় না থাকলেও জলপ্রপাতটির কাছাকাছি হওয়ায় একেও এক্সপ্লোর করার সিদ্ধান্ত নিলাম। গাইড আমাদের পথ দেখিয়ে নিচ্ছেন। চারপাশের পরিবেশ অনেকটাই ভয়ংকর ও ভুতুড়ে; সেই সঙ্গে সরু, কর্দমাক্ত আর ঝোপঝাড়ে ঘেরা এই পথ আমাদের হাইকিংকে আরও দুরূহ করে তুলল। এই মুহূর্তে আরও একটি বিশেষ কারণে আমরা কিছুটা আতঙ্কে রয়েছি; তা হলো, মাউন্ট কেনিয়ার এই অঞ্চলে বুনো ঝোপঝাড় ও পাথরের গর্তে বাস করে শিংওয়ালা ভাইপার। এই মারাত্মক বিষধর সাপ একমাত্র মাউন্ট কেনিয়া ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। দুষ্প্রাপ্যতা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে বিদেশি সংগ্রাহকদের কাছে সাপটি বিরল ডাকটিকিট কিংবা অ্যান্টিকের মতো এবং যে কেউ প্রচুর অর্থের বিনিময়ে হলেও একে নিজের সংগ্রহে রাখতে চায়!
জলপ্রপাত ও গুহা অভিযান শেষে আমরা ইতিমধ্যে রোডহেড ক্যাম্পের সংযোগস্থলের কাছে পৌঁছে গেছি। সেতুর নিচে নিথি নদীর স্বচ্ছ পানিতে পরিষ্কার ও চাঙা হয়ে রোডহেড ক্যাম্পে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিলাম। তারপর শুরু হলো হাইকিং দ্বিতীয় পর্বের বাকি ৬ কিলোমিটারের যাত্রা।
রোডহেড ক্যাম্প থেকে বনের ট্র্যাক অনুসরণ করে গর্জেস উপত্যকা অতিক্রম করছি। ধীরে ধীরে বায়ুমণ্ডল এবং এর চারপাশ পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন আমরা মুগি পাহাড়ের স্বর্ণালি জলাভূমির ভেতর অনেকটাই ধীরগতিতে এগিয়ে চলেছি। মুগি পাহাড়টি ৩ হাজার ৫০৮ মিটার উচ্চতায় লেক এলিসের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। ওপর থেকে নিচে একটি ড্রাইভওয়ে দেখা যাচ্ছে, যা চোগোরিয়া পার্ক গেট থেকে চোগোরিয়া রোডহেড হয়ে এঁকেবেঁকে লেক এলিসে এসে শেষ হয়েছে। শুকনা মৌসুমে এ পথে অসংখ্য ট্যুরিস্ট ভেহিকেলের দেখা মেলে।
অবশেষে দারুণ শান্ত ও নয়নাভিরাম লেক এলিসে পৌঁছাতে পারলাম। লেকটির তীর ঘেঁষে দুটি সুন্দর ক্যাম্পিং ভেন্যু রয়েছে। রাতযাপনের জন্য বেছে নিলাম দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের ক্যাম্পটিকে। অন্য কোনো অভিযাত্রী আপাতত না থাকায় মনে হচ্ছে, আজ রাতটাও আমাদের অনেকটা একাই কাটাতে হবে।
লেক এলিসকে পেছনে রেখে পাহাড়ের ঢালের প্রায় ১৮ কিলোমিটার লম্বা ট্র্যাকটি মুরল্যান্ড পেরিয়ে আমাদের আরও পশ্চিমে একটি পাহাড়ের ৪ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতায় প্রধান চোগোরিয়া ট্রেইলে নিয়ে যাবে। সেখানে মনোরম গর্জেস ভ্যালি, ভিভিয়েন জলপ্রপাত, নর্দার্ন মুরল্যান্ডসের দর্শনীয় দৃশ্য দেখতে দেখতে ৩৩০ মিটার খাড়া ক্লিফ দিয়ে নিচে নেমে সেই লেক মাইকেলসনে রাতযাপন করব, যাকে বলে মাউন্ট কেনিয়ার হিডেন ট্রিজার। গর্জেস উপত্যকার স্পার্কিং হিডেন জেম বা ‘ঝলমলে গুপ্ত রত্ন’ হিসেবে খ্যাত এই লেক। সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অনেকে একে ‘স্বর্গের দরজা’ বলে ডাকেন।
আজ অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। যদিও আমাদের হাঁটার গতির ওপর নির্ভর করছে কখন পরবর্তী ক্যাম্প লেক মাইকেলসনে পৌঁছাব; তবে ৬-৭ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। আজ ১০ আগস্ট। বিশেষ দিন। প্রতিবছর এই দিন বিশেষভাবে ভিন্ন ভিন্ন আমেজে উদ্যাপন করে আসছি। যদিও এতটুক আয়োজন বা জাঁকজমক নেই আজকের এই উদ্যাপনে, তবু আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট কেনিয়ার অন্যতম সুন্দর আকর্ষণ লেক মাইকেলসনে আমার জন্মদিনের অপ্রত্যাশিত শুভেচ্ছায় সিক্ত হতে পারা সত্যিই এক অন্য রকম অনুভূতি।
পাহাড়, নদী, উপত্যকা ও গিরিখাত পেরিয়ে মাইকেলসন লেকের তীরে আসার পথটি মোটেই সহজ ছিল না। দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়ে আমরা ভীষণ ক্লান্ত। ইতিমধ্যে ঘনিয়ে এসেছে আঁধার; সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে রাতের খাবার শেষে যথারীতি গা গরম করতে বনফায়ার উপভোগ করছি আমরা। গিরিখাতটির ওপর দিয়ে আমাদের দিকে যেন সরাসরি তাকিয়ে রয়েছে বিশাল চকচকে চাঁদ! কিছুক্ষণ পরপর লেক থেকে উঠে আসা কুয়াশা চাঁদের চকচকে আলোকে ফ্যাকাশে করে দিচ্ছে। ঈর্ষাকাতর কুয়াশা, চাঁদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করলেও চাঁদ তার সবটুকু উজাড় করে দিয়ে চারপাশ মায়াবী করে তুলেছে।
চতুর্থ দিনে আমরা লেক মাইকেলসন থেকে বেসক্যাম্পের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। ৯ কিলোমিটার স্টিপ স্লোপস; কোনো রকম বিরতি ছাড়া সামনের দিকে আরোহণ করতে থাকলাম। সেনেসিও বা বিশাল গ্রাউন্ডসেল গাছগুলো বিশেষভাবে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর। এই সেনেসিও কেনিওডেনড্রন গাছগুলো শুধু পূর্ব আফ্রিকার কিছু অংশেই পাওয়া যায়। দারুণ আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, প্রতি ২৫ বছরে এই গাছগুলোতে একটি নতুন শাখা গজায়। মানে, আমাদের চারপাশের গাছগুলোর বয়স প্রায় ১০০ বছর বা তারও বেশি। এ ছাড়া দৈত্যাকার লোবেলিয়া গাছগুলোর বিচ্ছুরণ দেখে মনে হলো, আমরা রয়েছি কোনো ভিন্ন গ্রহে!
সন্ধ্যা নামার আগেই শিপটন ক্যাম্পে পৌঁছাতে পারলাম। ততক্ষণে ক্যাম্প ঢেকে গেছে কুয়াশায়; সেই সঙ্গে শুরু তুষারপাত। এই ক্যাম্পেও আমরা ছাড়া অন্য কোনো আরোহী নেই। আজ রাতেই যেহেতু সামিট আরোহণ করব, তাই সব প্রস্তুতি শেষে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম, যেন মাঝরাতে জেগে উঠতে সমস্যা না হয়।
রাত প্রায় ১টা, ট্যুর অপারেটর ঘুম থেকে ওঠার তাগাদা দিলেন। ঠিকমতো ঘুম হয়নি আমাদের। ভারী খাবারও ছিল না। সকালের নাশতায় শুধু এক কাপ কফি এবং পপকর্ন। আমাদের লক্ষ্য ছিল ৪ হাজার ৮৯৫ মিটার উচ্চতার লেনানা শিখরে পৌঁছানো। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে পবর্তারোহণ করছি আমরা। সামনের পথটি আমাদের মাথায় সংযুক্ত টর্চের আলোয় আলোকিত। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চাঁদও পথকে কিছুটা আলোকিত করেছে। আমাদের ট্রাকটি পাথুরে স্ক্রি; অন্ধকারে ঠিকমতো চলতে না পারলে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা অনেক বেশি। এই পথ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আলোয় চারপাশসমেত পুরো পর্বত জ্বলজ্বল করে উঠল।
১২ আগস্ট ২০২২, সকাল ৬টা ৫০ মিনিট। অবশেষে আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট কেনিয়ার লেনানা শৃঙ্গ চূড়ায় উঠতে পারলাম। এ সময়ে আমার পরনে ছিল শাড়ি। চূড়ায় উঠে জাতীয় সংগীত গাইতে পেরে মন ভরে গেল আমাদের। যদিও প্রবল বাতাসের তোড়ে কণ্ঠস্বর একদমই শোনা যাচ্ছিল না, তবু গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সামিট উদ্যাপন করলাম।
অভিযান তো সফল হলো, এবার আগ্রহীদের জানিয়ে রাখি, মাউন্ট কেনিয়া পর্বতের যে চূড়ায় যান না কেন, আপনার অবশ্যই উচ্চ স্তরের ফিটনেস থাকার প্রয়োজন পড়বে। কেননা অসংখ্য খাড়া অংশ রয়েছে এখানে। তা ছাড়া অতি উচ্চতা এই আরোহণকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। অতি উচ্চতায় মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, বমি বমি ভাব প্রভৃতি অসুবিধা অনুভব করতে পারেন। এমনকি পালমোনারি এডিমা বা ফুসফুসে তরল জমার মতো বিপদও ঘটতে পারে, যা কখনো কখনো ডেকে আনে মৃত্যু।
ছবি: লেখক ও ইন্টারনেট
Adventures worth taking risks. Wish you all the best in your endeavour..
I wish you all the best