skip to Main Content

কুন্তলকাহন I ক্রমান্বয় কষে

কখন, কীভাবে এবং কোনটার পর কোনটা—এই তিনের উত্তরে লুকিয়ে আছে পরিচর্যার প্রকৃত পদ্ধতি। জানা আছে তো?

চুল ম্যানেজেবল কিংবা চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে হিমশিম খান অনেকে। তাদের জন্য তেল, শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার; চুলের পরিচর্যার ধাপ শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ। সঠিক জ্ঞানটা থাকে না বলেই সেই ব্যাক টু বেসিক থ্রি স্টেপ রুটিন! আসলেও কি চুলের জন্য এতুটুকু যথেষ্ট?
ত্বকের জন্য যেমন রয়েছে লেয়ারড স্কিন কেয়ার রুটিন, তেমনি আছে চুলের জন্যও। ধাপে ধাপে হেয়ার কেয়ার রুটিন শুধু চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করবে না; বরং চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রেখে লম্বা সময় বশেও রাখবে।
চুলের যত্নে শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার যেমন অগ্রাহ্য করার উপায় নেই, তেমনি লিভ-ইন সেরামের অ্যাডিশনকে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। যত্নের পাশাপাশি স্টাইলিংয়ে চাই প্রোডাক্টের প্রপার মিক্সিং। শাইন স্প্রে, হেয়ার মুজের পাশাপাশি হিট প্রোটেক্টরের কথা ভুলে গেলে চলবে কী করে? লম্বা লিস্টটা দেখে ঘাবড়ে না গিয়ে একটু নিয়ম মেনে চললেই পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত ফল।
ত্বকের ক্ষেত্রে স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলার প্রথম ধাপ হলো শুরুতে হালকা সব প্রোডাক্টের ব্যবহার, এরপর ধীরে ধীরে ভারী থেকে অতি ভারী প্রোডাক্টের অ্যাপ্লিকেশন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চুলের ক্ষেত্রে বিষয়টা একদম উল্টো।
শ্যাম্পু
‘আরে, শ্যাম্পু কি কখনো বাদ যায় নাকি?’, শ্যাম্পু বলতেই যারা শুধু চুল পরিষ্কার রাখার প্রোডাক্ট মনে করেন, ভুলটা ভাঙার সঠিক সময় এখনই। শ্যাম্পু করছেন কিন্তু চুলের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক উপাদান শ্যাম্পুতে আছে তো? শ্যাম্পুর বোতলে থাকা ময়শ্চারাইজিং, ক্লিনজিং, হাইড্রেটিং, স্ট্রেনদেনিং, কালার প্রোটেক্টর, থিকেনিং, ড্যামেজ রিপেয়ারিং শব্দগুলো ভুরু কুঁচকে দিতে পারে যেকোনো ক্রেতার। তবে এর চেয়েও জরুরি বিষয় ঋতু, আবহাওয়া এবং জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে শ্যাম্পু বেছে নেওয়া। সেলিব্রিটি স্টাইলিস্টরা সব সময় স্ক্যাল্পের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
পরিমাণ বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহার আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সঠিক হচ্ছে রাইট অ্যামাউন্ট বলতে গেলে একটা কয়েনের সমপরিমাণ সাইজে শ্যাম্পু ঢেলে নেওয়া। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে বেছে নিতে পারেন প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ শ্যাম্পু। প্যারাবেন ও সালফেটের মতো রুক্ষ উপাদান এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
চুলের ধরনও বুঝতে হবে। স্ক্যাল্প বা চুল অতিরিক্ত তেলতেলে হলে বেছে নেওয়া যেতে পারে ক্লিনজিং শ্যাম্পু, রুক্ষ চুলের জন্য দারুণ কাজের ময়শ্চারাইজিং শ্যাম্পু বা হাইড্রেটিং শ্যাম্পু।
মাস্ক
চুলের একদম ভেতর পর্যন্ত পুষ্টি পৌঁছে দিতে হেয়ার মাস্কের জুড়ি নেই। ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনিং মাস্কগুলো চটজলদি সারাইয়ের কাজ করে।
চুলে বারবার রং করার ফলে তা নষ্ট হয়ে যায় খুব সহজে। এ ছাড়া যারা নিয়মিত হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করেন, তাদের চুল ভেঙে পড়ার সমস্যা প্রবল। এ জন্য হাইড্রেটিং মাস্ক দারুণ কাজে দিতে পারে।
অনেকের হয়তো জানা নেই, হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের উপযোগী সময় কন্ডিশনার ব্যবহারের আগে। অর্থাৎ শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের মাঝামাঝি সময়ে ব্যবহার করলে সুফল বেশি মেলে। শ্যাম্পু সাধারণত হেয়ার ফলিকলগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়, তাই এরপরই মাস্কের ব্যবহার এতে থাকা উপকারী উপাদানগুলোকে একদম গভীরে প্রবেশ করায় সহায়তা করে।
মাস্ক কি হেয়ার প্যাকের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাখিয়ে রাখা লাগে? হেয়ারস্টাইলিস্টদের মতে, শ্যাম্পু ব্যবহারের পর মাস্ক অ্যাপ্লাই করে মাত্র ২০ মিনিট রেখে দিলেই হেয়ার মাস্ক নিজের কার্যকারিতা দেখাতে সক্ষম।
তবে প্রতিবার শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় যে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, তা কিন্তু নয়; ১৫ দিনে একবার, কিংবা চুলের চাহিদা আর ড্যামেজের ধরন বুঝে ৭ দিনে একবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
কন্ডিশনার
গুড হেয়ার ডে চাই? একটা ভালো কন্ডিশনার হতে পারে সমাধান। চুলের ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে বেছে নিতে হবে সেটা। চুল স্বাভাবিক কিংবা শুষ্ক হলে বেছে নেওয়া চাই জেল কন্ডিশনার। চুল রুক্ষ হলে ক্রিম কন্ডিশনার। ড্যামেজড চুলের জন্য হাইড্রেটিং কন্ডিশনার হতে পারে ভালো বিকল্প।
লিভ-ইন ট্রিটমেন্ট
লিভ-ইন ট্রিটমেন্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে মনে রাখা উচিত, এটি হালকা এবং চুলের গোড়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিতে সক্ষম কি না। একটা সঠিক লিভ-ইন কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিয়ে চুলকে প্রাণবন্ত করে। চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে সঙ্গে ধরে রাখে আর্দ্রতা। স্প্রে, অয়েল, লোশন, ক্রিম—লিভ-ইন কন্ডিশনার যেকোনো ধরনের হতে পারে।
অবশ্য চুল যদি অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে থাকে, তবে লিভ-ইন কন্ডিশনারের পর অ্যাপ্লাই করা যেতে পারে এসেনশিয়াল অয়েল।
যারা চুলে রেগুলার কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন, তাদের নিয়মিত লিভ-ইন ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পরামর্শ দেন সেলিব্রিটি স্টাইলিস্টরা।
মুজ বা হেয়ার থিকেনিং স্প্রে
গ্রিজি অর্থাৎ চ্যাপচ্যাপে ভাব থাকলে চুল চেহারায় লেপ্টে যায়। মুজ বা হেয়ার থিকেনিং স্প্রে চুলকে এর স্বাভাবিক ময়শ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে। গোসলের পর ভেজা চুলে মুজ মেখে, এরপর হালকা শুকিয়ে ব্লো ড্রাই করে নেওয়া যেতে পারে। এতে চুল বশে থাকবে।
হিট প্রোটেক্ট্যান্ট
চুলগুলোকে কার্ল বা স্ট্রেইট করার আগে হেয়ারস্টাইলিং প্রোডাক্টগুলোর ব্যবহার কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যাবে না। কারণ, হিট টুলগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহারে চুলে পার্মানেন্ট ড্যামেজ হওয়া থেকে শুরু করে চুল ভাঙা, পড়া, চুলের আগা ফাটা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব ভিটামিন ও সিলিকনসমৃদ্ধ হিট প্রোটেক্ট্যান্ট ব্যবহারের মাধ্যমে। স্ট্রেইটনার কিংবা কার্লার ব্যবহার করতে হবে চুলের লেন্থ বুঝে। নিয়ম মেনে।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: মারিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top