ত্বকতত্ত্ব I দ্য ‘ও গ্লো’
স্যালন অব্দি যেতেই হবে না। সেরে নেওয়া যাবে ঘরের চৌহদ্দিতে। মিলবেও একদম মুফতে। এমন সৌন্দর্যকৌশলের খুঁটিনাটি না জানলে চলে!
অ্যান অরগাজম আ ডে কিপস দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে। পাশ্চাত্যে বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ। অরগাজম। যখন শারীরিক সুখানুভূতি পৌঁছে যায় সর্বোচ্চে। নানান হরমোনের নিঃসরণ এর প্রধান কারণ। এ ছাড়া অরগাজমের সময় বাড়ে হৃৎকম্পন; ব্লাড প্রেশারও থাকে ঊর্ধ্বমুখী। ফল—প্রয়োজনীয় অক্সিজেন প্রবাহিত হয় পুরো দেহে। ত্বক দেখায় পরিপুষ্ট।
তথ্য তালাশ
আমেরিকান নিউরোসাইকোলজিস্ট ডেভিড জোসেফ উইকসের সমীক্ষা এ ক্ষেত্রে সামনে আসে সবার আগে। নব্বইয়ের দশকে করা সেই জরিপে অংশ নেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। তাতে দেখা যায়, যেসব নারী সপ্তাহে অন্তত তিনবার অরগাজমের সুখানুভূতি পান, তাদেরকে অন্যদের তুলনায় প্রায় দশ বছর কম বয়সী দেখায়। পরে দুই বিখ্যাত প্লেজার অ্যান্ড ইমিউনিটি গবেষক চারনেটস্কি এবং ব্রেনান ২০০৪ সালে প্রমাণ করেন, অরগাজম দেহের ইমিউনোগ্লোবিউলিনের মাত্রা বাড়ায়। ফলে শরীরের পাশাপাশি ত্বকের নিজস্ব প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে; যা রুখে দিতে পারে ব্রণ আর অ্যাকনের মতো জীবাণুসংক্রান্ত সংক্রমণ। এরও বছর চারেক আগে গবেষক কিম ওয়ালেন আবিষ্কার করেন, পোস্ট-অরগাজম লেভেলে দেহের এস্ট্রোজেন সাময়িকভাবে বাড়ে। এই হরমোন কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবক; যা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়। কমায় বলিরেখা। ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে এই গবেষণার সত্যতা পুনরায় প্রমাণিত হয়।
২০০৬ সালে বায়োলজিক্যাল সাইকোলজিতে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। প্রকাশক দুই গবেষক ব্রডি ও ক্রুগারের মতে অরগাজম চমৎকারভাবে দেহে কর্টিসল লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মূলত দেহের প্রাইমারি স্ট্রেস হরমোন হিসেবে পরিচিত। কর্টিসল ক্রনিক স্ট্রেসকে উসকে দেয়। ফলে ত্বকে দেখা দেয় অ্যাকনে, সোরায়সিস, একজিমার মতো নানা সমস্যা। এগুলোর সমাধানে অরগাজম জাদুর মতো কাজ করে, স্ট্রেস কমায়; সঙ্গে কমে আসে স্ট্রেস উদ্ভাবিত সব ত্বক সমস্যা। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার লাগামও টেনে ধরে। ২০১০ সালের সাইকোনিউরোএন্ডোক্রিনোলজির একটি গবেষণাপত্র মোতাবেক অরগাজম দেহের অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণকে ট্রিগার করে। এই হরমোন দেহের রিলাক্সেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের পুনরুদ্ধারেও সহায়ক। এ ছাড়া সেক্সুয়াল অ্যাকটিভিটির সময় স্বভাবতই শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয়। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় প্রমাণিত, এতে দেহ থেকে যাবতীয় টক্সিন বেরিয়ে যায়। ফলে লোমকূপ পরিষ্কার হয়ে ত্বকের উপরিভাগ ঝকঝকে দেখায় অনেকখানি। ২০১৯ সালেও অরগাজম নিয়ে হয়েছে নতুন গবেষণা। অরগাজমের সাইকোলজিক্যাল রেসপন্স নিয়ে করা সেই সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়, এই সময় দেহের রক্তসঞ্চালন বাড়ে। পুরো শরীরে তো বটেই, যা ত্বকের কোষেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন আর পুষ্টি পৌঁছে দেয়। ফল—স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, তারুণ্যদীপ্ত চেহারা।
সাম্প্রতিক সময়ের সমীক্ষা তো আরও অবাক করা। সুখ্যাত নিউরোসায়েন্টিস্ট, সেক্স থেরাপিস্ট এবং রিলেশনশিপ স্পেশালিস্ট ন্যান ওয়াইজ প্রমাণ করেছেন, মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে ত্বকের জবর যোগ রয়েছে। তিনি এর নামকরণ করেছেন সাইকোডার্মাটোলজি। সাম্প্রতিক সময়ে সৌন্দর্যবিশ্বে দারুণ সাড়া ফেলেছে এই তত্ত্ব। ওয়াইজের মতে মস্তিষ্কে সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্স নামের অংশটি স্পর্শ, তাপের তারতম্য আর ব্যথার সংবেদন বোঝাতে সহায়তা করে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, যৌনাঙ্গ থেকে উদ্ভূত নানা ধরনের সংবেদনও এই কর্টেক্সেরই প্রক্রিয়াজাত। তাই শারীরিক উদ্দীপনা যত বাড়ে, মস্তিষ্কের এই অংশ তত বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। অরগাজমের সময় তাই দেহের জন্য ইতিবাচক সব হরমোন নিঃসৃত হতে শুরু করে। সেরোটোনিন, প্রোল্যাকটিন, মুড লিফটিং অপিওয়েড যেমন এন্ডোরফিন এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ফলাফল—অরগাজমের পর চেহারায় সুস্পষ্ট ফিল গুড আফটার গ্লো। যার শিকড় মূলত সংযুক্ত মনুষ্য মস্তিষ্কের রসায়নের সঙ্গে।
সৌন্দর্য সংযোগ
পোস্ট-অরগাজম গ্লো এতটাই নজরকাড়া যে বিউটি ব্র্যান্ডগুলোকে এরই মধ্যে ব্লাশের নামকরণে টার্মটিকে যোগ করতে দেখা গেছে। অরগাজমে হৃৎকম্পন এবং রক্ত চলাচল—দুই-ই বাড়ে নাটকীয়ভাবে। মেলে সতেজ, রক্তিম, উজ্জ্বল ত্বক। একেবারে ভেতর থেকে ঠিকরে ওঠা এই সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না। অরগাজমের সময় দেহে নানা রকমের হরমোনের নিঃসরণ হয়; যার মধ্যে অন্যতম অক্সিটোসিন। দ্য লাভ হরমোন নামেও সুখ্যাত; যা কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের টুঁটি চেপে ধরে। আর কম স্ট্রেস মানেই প্রদাহ কমে আসা। অবাঞ্ছিত দাগছোপ থেকে মুক্তি। বিউটি স্লিপ চাই? অরগাজমের চেয়ে ভালো প্রভাবক আর কী হতে পারে! এ সময় শরীর থেকে প্রোল্যাকটিন আর এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়; যা চরম ঘুম ভাব সৃষ্টিতে উৎকৃষ্ট। আর গভীর ঘুম মানেই শরীরের নানাবিধ ক্ষতি পূরণের চমৎকার সুযোগ। ফলাফল, হ্যাপি হেলদি স্কিন। অরগাজমের সময় রক্তসঞ্চালন বাড়ে বিধায় ত্বক পর্যাপ্ত পানির জোগান পায়। পরিপুষ্ট দেখায় আরও। আরও নিঃসৃত হয় এস্ট্রোজেন। কোলাজেন কমে যাওয়ার হার রোধ করে এই হরমোন। বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে তাৎক্ষণিকভাবে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: আজিম ও অহনা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল