তনুরাগ I নোনাজল নিমগ্ন
সে জন্য রোজ সমুদ্রে ছুটে যেতে হচ্ছে না; বরং চারদেয়ালের মাঝেই হতে পারে আয়োজন। লবণের গুণে দেহ আর মন—দুই-ই হবে প্রশান্ত
সল্ট বাথের গুণপনার মুগ্ধতা শোনা যাচ্ছে দিকে দিকে। লবণ-জলে স্নান। সহজে ব্যাখ্যা করা যাক। যদিও এর রয়েছে আভিধানিক খটমট নাম। থ্যালাসোথেরাপি। এটি মূলত গ্রিক শব্দ। ভাষার অভিধান অনুযায়ী থ্যালাসা অর্থ একই সঙ্গে দুটি। সাগর এবং সাগরের দেবী।
সাগরের পানিতে থাকে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই তিন পদার্থ সমুদ্র জলকে করেছে গুণান্বিত। এই গুণমুগ্ধতাতেই বাথটাবকে একখণ্ড সমুদ্র বানিয়ে সল্ট বাথ সেরে নেওয়ার ট্রেন্ড চালু হয়েছে।
আমাদের রক্তের রাসায়নিক বিশ্লেষণে জানা যায়, ৯১-৯২ শতাংশ পানি আর ৮-৯ শতাংশ সলিড। উপস্থিতি মেলে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট, ক্লোরাইড ও ক্যালসিয়ামের। সমুদ্রের সঙ্গে মানবদেহের মিল এখানেই।
লবণ শতভাগ প্রাকৃতিক উপাদান। আর সমুদ্র জল যে লবণাক্ত, সে তো সবারই জানা। কিন্তু রোজকার স্নান সারতে সব দিন নীল জল ছুঁয়ে আসা সম্ভব নয়। তাই চারদেয়ালের মাঝেই একটুকরো সমুদ্র তৈরি করে সেখানে কাটানো যেতে পারে খানিকক্ষণ। কীভাবে?
ইপসম লবণ ব্যবহারে তৈরি করা যেতে পারে সল্ট ওয়াটার। চাইলে এর সঙ্গে যোগ করা যায় কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল। এখানে কোনো ধরনের রাসায়নিকের প্রয়োজন নেই। যা কিছু দরকারি, সবটাই ধরণী থেকে পাওয়া। ইপসম লবণ থেকে খনিজ পদার্থ জলে মিশে গিয়ে ত্বকের সংস্পর্শে আসে। আর ত্বকের উপরিভাগ এই নোনাজলের কল্যাণে নানামুখী সমস্যার সহজ সমাধান পেয়ে যায়। দেহের কোথাও চুলকানোর সমস্যা, ফুলে থাকা, লাল হয়ে যাওয়ার মতো অস্বস্তি থাকলে তা কমে আসার প্রমাণ মিলেছে এ ক্ষেত্রে। কোনো অংশে ব্যথা থাকলে ইপসম জলে গোসল সেরে নিলে দ্রুতই তা কমে যায়। ইপসম লবণ না চাইলে হিমালয়ান সল্ট ব্যবহার করা যায়। তবে কোনোভাবেই কিচেন থেকে এক চা-চামচ খাওয়ার লবণ নিয়ে এসে মিশিয়ে দেওয়া যাবে না।
ইপসম লবণে ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতি আছে; যা মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এই উপাদান গ্রহণ করতে শুধু সল্ট বাথে কিছুক্ষণ অলস সময় কাটালেই চলবে। বিশ্রামের পাশাপাশি ত্বকের মাধ্যমে ম্যাগনেশিয়াম পৌঁছে যাবে দেহে। নিদ্রা দেবী হবে তুষ্ট। এখানে হুট করে ঘুমের কথা কীভাবে চলে এসেছে, তা নিয়ে ভ্রু কোঁচকানোর আগেই জেনে নেওয়া জরুরি, ম্যাগনেশিয়াম ঘুমকে প্রভাবিত করে। আর দেহে ম্যাগনেশিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য সল্ট বাথ কার্যকর পদ্ধতি। ঘুম আর বিশ্রামের সঙ্গে এই খনিজ পদার্থের সম্পর্ক সুদৃঢ়। দেহের মাংসপেশিকে রিল্যাক্স করে দিতে পারে এই উপাদান। তাতেই ধীরে ধীরে চোখজুড়ে আসে ঘুমে। সব কাজ শেষে ঘুমের আগের মহার্ঘ হিসেবে কাজ করবে এই সল্ট বাথ। স্লিপিং পিলের পসরা এবার গোটানোর পালা। আরেকটি কথা, পিরিয়ড পেইন কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারে ম্যাগনেশিয়াম। তাই মাসের বিশেষ সময়টাতে নিজের যত্ন নিতে নোনাজলে কিছুক্ষণ সময় কাটানোই যায়। বিশ্রাম হবে, আবার পেইন কিলারের ক্ষতি থেকেও রক্ষা মিলবে।
সমুদ্র স্নানের পরে শুষ্ক ত্বকের অভিজ্ঞতা হয় অনেক সময়। সল্ট বাথেও এমনটা হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা হতেই পারে। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, সল্ট বাথের সঙ্গে একটি ময়শ্চারাইজিং উপাদান মিশিয়ে নিলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা হবে না। ২০ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে নেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে। এতে ত্বক যেমন কোমল থাকবে; তেমনিও স্নান হবে সুবাসিত।
সাগরের রাশি রাশি জল ঢেউ হয়ে পায়ের পাতায় আছড়ে পড়লে মনে কী এক দারুণ প্রশান্তি ছুঁয়ে যায়। হোমমেইড পেডিকিউরে লবণ যোগ করে নিলেও এমন অনুভূতি পাওয়া যায়। আর্থ্রাইটিস অথবা ওয়ার্কআউট-পরবর্তী ব্যথা কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে সল্ট বাথ। পানির উষ্ণতাও ভূমিকা রাখবে দেহের ব্যথা আর অস্বস্তি কমিয়ে দিতে। সারা দিনে যদি ক্লান্ত হয়ে আসে পায়ের পাতা, আর স্নানের ইচ্ছা যদি না হয়, তাহলে শুধু পায়ের বিশ্রামের জন্যও ব্যবহার করা যাবে সল্ট বাথ। এতে হাড়ের জয়েন্ট, পেশি—সবই একটু জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে। এর সঙ্গে মেশানো যায় কয়েক ফোঁটা পিপারমেন্ট অয়েল। এতে পায়ের পাতা বিশ্রাম পাবে। আবার দুই আঙুলের মাঝের ফাঙ্গাস, পায়ের দুর্গন্ধ—সবই পালাবে। ত্বকের সমস্যায়ও কার্যকরী সল্ট বাথ। একজিমা আর সোরায়সিসে ভুগছেন যারা, তাদের জন্য এটি দারুণ উপকারী।
সল্ট বাথের প্রধান উপকরণ ইপসম লবণ ন্যাচারাল স্ক্রাব হিসেবেও কার্যকরী। হাতের তালুতে নিয়ে ভেজা শরীরে আলতোভাবে স্ক্রাবিং করা যেতে পারে এ দিয়ে। মৃতকোষ উঠে যাবে; পরিষ্কার হবে ত্বক। কয়েক মিনিট এভাবে রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিলেই ব্যস! পরিষ্কার।
এই স্নানে ব্যবহৃত উপাদানের বেশ কিছু গুণ রয়েছে। পেশির বিশ্রামে দেহে ফুরফুরে বাতাস ছুঁয়ে যাবে। রক্ত চলাচল বাড়বে। দেহ ও মন—দুই-ই প্রশান্ত হবে। দুশ্চিন্তা কমে আসবে।
স্পিকারে লো ভলিউমে ‘সাগরের তীর থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে…’ চালিয়ে লবণ-জলের আয়োজন করা যেতে পারে। আর কী চাই!
বিউটি ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ