skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I মায়ের মর্যাদা

মনে মনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা এতটুকু কম অনুভব না করলেও মন খুলে বলতে পারি না। কেটে যাক এমন দ্বিধা! মন খুলে বলুন, ‘মা, তোমাকে ভালোবাসি’

মা। বাংলায় ছোট্ট একটি শব্দ। অন্যান্য ভাষায়ও কমবেশি ছোট্ট শব্দে এর প্রকাশ। তবে সমান মধুর। বিরল ব্যতিক্রম বাদে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ মানুষটিকে করা সম্ভাষণ বললে অত্যুক্তি হবে না। সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক জন্ম-জন্মান্তরের। তা যেমন শারীরিকভাবে, তেমনি মানসিকভাবেও; যেমন প্রত্যক্ষভাবে, তেমনি পরোক্ষভাবেও। মা এক পরম আশ্রয়। ‘পার্থিব’ উপন্যাসে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যেমনটা লিখেছেন, ‘মানুষ যখন ভয় পায়, যখন বিপদে পড়ে, যখন মনে হয় একা, তখন ভয়ার্ত শিশুর মতো মাকেই আঁকড়ে ধরে।’

দুই
সৃজনশীলতার এমন কোনো মাধ্যম নেই, যেখানে মায়ের বন্দনা করা হয়নি। মা বেঁচে থাকাকালে অনেক সন্তানই হয়তো তার মর্যাদা ঠিকঠাক অনুভব করতে পারেন না; তবে মা-হারা সন্তানমাত্রই জানেন, তার অভাবে পৃথিবীটাকে, জীবনকে কতটা শূন্য, অনিরাপদ ও আশ্রয়হীন মনে হয়। বিশ্বখ্যাত সোভিয়েত-রাশিয়ান চলচ্চিত্রকার আন্দ্রেই তারকোভস্কি তার ব্যক্তিগত দিনলিপিতে যেমনটা লিখেছিলেন, ‘আমার মা মারা গেছেন গত সপ্তাহে। তার মতো এত ভালো এই পৃথিবীতে আর কেউ বাসবে না আমাকে।’ বাংলা গানের স্বর্ণযুগের প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার প্রণব রায় গানে গানে যেমন লিখে গেছেন, ‘মধুর আমার মায়ের হাসি/ চাঁদের মুখে ঝরে/ মাকে মনে পড়ে আমার/ মাকে মনে পড়ে।’ কিংবা বাংলাদেশি কিংবদন্তি রকস্টার জেমসের গগনবিদারী সেই আর্তনাদ, ‘রাতের তারা আমায় কি তুই বলতে পারিস/ কোথায় আছে কেমন আছে মা।/ ওরে তারা, রাতের তারা মাকে জানিয়ে দিস/ অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না।’

তিন
মা এমন মানুষ, যিনি সন্তানের জন্য অকাতরে নিজের সবটুকু বিলিয়ে দেন। মায়েরও আছে মন, আবেগ, অনুরাগ; অনেক সন্তানই তা খেয়াল করে না। অথচ করা উচিত। মাকে বিশেষ মানুষ হিসেবে অনুভব করানো সন্তানের অলিখিত দায়িত্ব। আর তা খুব একটা কঠিনও নয়। কেননা, মা মাত্রই তো সাধারণত উদারমনা। তার প্রতি সন্তানের অতি সামান্য মনোযোগও মায়ের মনে অনাবিল প্রশান্তি এনে দিতে পারে মুহূর্তেই। তাই দিনের শুরুতে মায়ের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা থেকে শুরু করে দিনের শেষে হাসি বিনিময় সেরে ঘুমোতে যাওয়ার মাঝের সময়টুকুতেও যখনই সম্ভব মাকে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া আমার-আপনার জীবনকে করে তুলতে পারে আরও মধুর। হয়তো ভাবছেন, মাঝখানের সময়টুকুতে কী করবেন। সকালের নাশতা মায়ের সঙ্গে সারতে পারলে দারুণ হয়। তাতে তার মন ভালো থাকবে; আপনিও দিন পাড়ি দেওয়ার মতো পেয়ে যাবেন প্রাণোচ্ছল স্নেহের রসদ। মাঝেমধ্যে মায়ের হাতে তুলে দিতে পারেন ফুল, কার্ড ইত্যাদি উপহার। মায়ের পছন্দের গান বাজাতে পারেন। সময়-সুযোগ করে তার সঙ্গে উপভোগ করতে পারেন চলচ্চিত্র। তাকে কোথাও ঘোরাতে নিয়েও যেতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, তার মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টায় কমতি না রাখার পাশাপাশি আপনার কোনো আচরণে তিনি যেন বিন্দুমাত্রও কষ্ট না পান, সেদিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক।

চার
মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস। কেউ কেউ হয়তো ভাবেন, মায়ের জন্য তো বছরের প্রতিটি দিনই সমান গুরুত্ববহ; বিশেষ একটি দিনকে আলাদা করার কী দরকার। দরকার আছে! প্রতিদিন দিনের শেষে রাত, রাতের শেষে দিন আসে ঠিকই; তবু আক্ষরিক অর্থে প্রতিটি দিন অভিন্ন নয়। জীবন থেমে থাকে না। সময় থেমে থাকে না কারও জন্য। আর এই চির চলমান প্রক্রিয়ায় প্রতিটি মুহূর্তেই কোনো না কোনো নতুন বিষয়ের, কিংবা পুরোনো কিছুর নতুন বাঁকের আবির্ভাব ঘটে। তা হয়তো সাধারণ বিবেচনাবোধে টের পাওয়া যায় না; তবে একটু গভীরভাবে ভাবলে বোঝা সম্ভব। তাই বছরের একটি বিশেষ দিনে, অন্য সবকিছুর চেয়ে মাকে বিশেষভাবে সম্মান ও ভালোবাসা জানানোর, তার মনে বিশেষ অনুভূতি ছড়িয়ে দেওয়ার আয়োজন সারার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি।

পাঁচ
কেন যেন আপনজনদের প্রতি প্রকাশ্যে ভালোবাসা জানানোতে একধরনের কুণ্ঠা কাজ করে আমাদের মনে! পশ্চিমা সংস্কৃতিতে তা খুব সাধারণ ঘটনা হলেও প্রাচ্যে, বিশেষত আমাদের এ তল্লাটে একধরনের আড়ষ্টতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। মনে মনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা এতটুকু কম অনুভব না করলেও মন খুলে বলতে পারি না। কেটে যাক এমন দ্বিধা! মন খুলে বলুন, ‘মা, তোমাকে ভালোবাসি।’
পৃথিবীর সব মায়ের মুখে ফুটুক মধুর আসি। সন্তানদের জীবনে বর্ষিত হোক মায়ের স্নেহ ও আশীর্বাদ। সবাই ভালো থাকুন। মায়ের যত্ন নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top