ইভেন্ট I কে ক্র্যাফটের ২৫
একটি পাঞ্জাবিকে কেন্দ্র করে যে উদ্যোগের সূচনা, সময়ের ধারা বেয়ে সেটাই এখন ২৫। এ গল্প দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড কে ক্র্যাফট-এর। সূচনা ১৯৯৩ সালে। এ বছর তাই উদ্যাপন করল রজতজয়ন্তী।
হোটেল রিজেন্সির এই অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানান প্রতিষ্ঠান শুরু যাঁর হাতে, সেই শাহনাজ খান। তিনি স্মরণ করেন ফেলে আসা দিন আর সব শুভানুধ্যায়ীকে।
ব্র্যান্ড কে ক্র্যাফট-এর শুরুর গল্পটা হৃদয়গ্রাহী। বাংলা সাময়িকী বিচিত্রা তখন রমরমা অবস্থা। দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে বেগবান করতে নিরলস তখন বিচিত্রা সম্পাদক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরী। মধ্য আশি থেকে প্রতিবছর আয়োজিত ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। সেই সময়ে, অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের শেষ দিকে তরুণ দম্পতি শাহনাজ খান ও খালিদ মাহমুদ খান এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ঈদ হয় ’৯৫ সালে। প্রতিযোগিতায় জমা দেন ধূসর-কালো কম্বিনেশনের একটি পাঞ্জাবি। প্রথম পুরস্কার মেলে। এরপরের গল্প শুধু এগিয়ে চলার।
বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি ব্র্যান্ড কে ক্র্যাফট। তুলনায় নবীন হওয়া সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য সব উদ্যোগে পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছে। মধ্যবিত্তকে ফ্যাশনের মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্তির কৃতিত্ব এই হাউজের। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অনেক প্রথমের প্রচলন হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে। পুরুষ পোশাকে রঙিন কাপড় আর প্রিন্টের সংযোজনের মধ্য দিয়ে নব্বই দশকের ফ্যাশনে কে ক্র্যাফট ট্রেন্ডসেটার।
কে ক্র্যাফট প্রথম হাউজ শো করে ৯৩তে; দুই বছর পর প্রথম প্রদর্শনী- আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে। প্রথম সামারফেস্ট ১৯৯৮ সালে। বছর না ঘুরতেই ইয়াং ডিজাইনার সার্চ। প্রথম বৈশাখ প্রদর্শনী ২০০২ সালে। ২০০৩-এ প্রথম শার্ট উৎসব। ২০০৪ সালে প্রথম খাদি উৎসব। বাংলাদেশের বয়নশিল্প নিয়ে প্রদর্শনী হ্যান্ডলুম আর্ট অব বাংলাদেশ ২০০৫-এ। কারুশিল্পীদের মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধারা আছেন। সেই ভাবনা থেকেই ২০০৬ সালে কে ক্র্যাফট সম্মাননা জানায় মুক্তিযোদ্ধা কারুশিল্পীদের। আর্ট অব ট্র্যাডিশন শিরোনামে প্রদর্শনী করে ২০০৮ সালে। আর এক্সক্লুসিভ শাড়ি একজিবিশন আরও বছর তিনেক পরে।
কে ক্র্যাফট-এর রজতজয়ন্তী সন্ধ্যা শুরু হয় তথ্যচিত্র উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে। জানা হয় এই ফ্যাশন ব্র্যান্ডের অজানা সব গল্প। এরপর ফ্যাশন শোর মাধ্যমে দর্শনার্থীদের সামনে প্রদর্শন করা হয় কে ক্র্যাফট-এর ডিজাইন ভাবনা। শুরুতেই বর্ণমালার পোশাকে স্মরণ করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এরপর লাল-সবুজে স্বাধীনতা আর বর্ণের উজ্জ্বলে বৈশাখ। পরের কয়েকটি কিউতে উপস্থাপিত হয় কে ক্র্যাফট-এর ঈদ কালেকশন। পোশাকের ডিজাইন ও মোটিফের উপর ভিত্তি করে নামকরণ করা হয় প্রতিটি কিউর। যেমন: স্বর্ণশুভ্রা, সমুদ্রবসন, আকাশলীনা, বর্ণালি বুনট, দি রয়্যালিটি অব ব্লু অ্যান্ড ব্ল্যাক ও হারমনি অব মেটালিক শাইন। এই কালেকশনে দেখা যায় ক্রিট, আফ্রিকান, এথনিক, জ্যামিতিক, জামদানি, ফ্লোরাল, টেক্সটাইল টেক্সচার ও ইসলামিক মোটিফ। অলংকরণে প্রাধান্য পেয়েছে প্রিন্ট, টাইডাই ও হাতের কাজ।
কে ক্র্যাফটের পর ছিল ইয়াং কে-এর দুটি কিউ। নেকলাইন, হেম ও স্লিভের বৈচিত্র্যপূর্ণ কাট দেখা যায় লেয়ার্ড কামিজ ও কুর্তিতে; ড্রপ ও কোল্ড স্লিভ, এ-লাইন, কটিসহ কামিজ ও কুর্তি। এ ছাড়া ইয়াং কে-এর এই কালেকশনে স্থান পেয়েছে আনারকলি স্টাইল, ইন্দো-ওয়েস্টার্ন স্টাইল এবং ক্ল্যাসিক কামিজ প্যাটার্ন। ছেলেদের পোশাকও ছিল উল্লেখযোগ্য। শার্ট, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, প্যান্ট ও পায়জামা। কাট প্যাটার্ন বেজোস কালেকশনে রঙের ব্যবহার বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। সবশেষে কে ক্র্যাফটের ওয়েডিং কালেকশন উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ফ্যাশন শো।
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: ক্যানভাস