skip to Main Content

কুন্তলকাহন I কোল্ড কমফোর্ট

লাক্সারি স্পা থেকে ঘরেলু চর্চায় ক্রমেই আলাপের বিষয় হয়ে উঠছে। প্রাচীন আয়ুর্বেদীয় শীতলীকরণ নীতি প্রাণিত এই থেরাপিকে সমর্থন করছে হালের ট্রাইকোলজি সায়েন্সও

চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় নানা জটিলতা দূরীকরণে নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে কোল্ড স্ক্যাল্প থেরাপি। স্ক্যাল্পের তেলতেলে ভাব দূর করার পাশাপাশি নানা সমস্যার সমাধান করে চুলকে সুন্দর, সতেজ ও মজবুত রাখে। বাড়ায় আত্মবিশ্বাস।
মাথার ত্বকে শীতল স্পর্শ—এই ধারণা শুরুতে খানিকটা জটিল মনে হলেও এখন এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর। এমনকি এই থেরাপি ক্যানসারের মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীকে মানসিকভাবে স্বস্তি পেতেও সাহায্য করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় বহুল ব্যবহৃত থেরাপিটি বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠছে।
কোল্ড স্ক্যাল্প থেরাপি কী
একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মাথার ত্বককে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঠান্ডা করে রাখা হয়। বরফ প্যাক, কুলিং ক্যাপ, ফ্রিজে ঠান্ডা করা হেয়ার মাস্ক বা ঠান্ডা বাতাস দিয়ে ব্লো-আউট করে একটি নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা প্রয়োগ করা হয় স্ক্যাল্পে। এই পদ্ধতির মূল ধারণা হলো মাথার ত্বকের রক্তনালি সাময়িকভাবে সংকুচিত করে চুলের ফলিকল উদ্দীপিত করা, তারপর মাথা আবার গরম হলে সেখানে পুষ্টিসমৃদ্ধ রক্তপ্রবাহ বাড়ানো।
কার্যপদ্ধতি
থেরাপি চলাকালীন মাথার ত্বক ১৫ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠান্ডা রাখা হয়। এ কারণে মাথার রক্তনালি সংকুচিত হয়; ফলে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। কেমোথেরাপিসহ নানা রোগের ওষুধ চুলের গোড়ায় কম পৌঁছায়। একই সঙ্গে, কোষের কার্যকলাপও ধীর হয়ে আসে। ফলে ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব কমে যায়।
কোল্ড স্ক্যাল্প থেরাপির উপকারিতা একাধিক; বিশেষ করে যারা কেমোথেরাপির কারণে চুল হারানোর আশঙ্কায় থাকেন, তাদের জন্য এটি মানসিক ও শারীরিক—উভয়ভাবে সহায়ক।
 ঠান্ডা ত্বকের রক্তনালি সাময়িকভাবে সংকুচিত করে স্ট্রেসজনিত অতিরিক্ত চুল পড়া কমাতে ভূমিকা রাখে।
 থেরাপি প্রয়োগের ফলে ত্বক ঠান্ডা হওয়ার পর তা পুনরায় গরম হলে রক্তপ্রবাহ বাড়ে। ফলে চুলের গোড়ায় বেশি অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায়; চুলের বৃদ্ধিতে যা অত্যন্ত জরুরি।
 ঠান্ডা ত্বকের সেবেশিয়াস গ্রন্থির কার্যকলাপ কমিয়ে আনে। ফলে স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
 ঠান্ডা স্পর্শে চুলের কিউটিকল শক্ত হয়। ফলে গোড়া মজবুত হয়; সুস্থ থাকে। কম ভাঙে।
 গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় মাথার চুলকানি থেকে তাৎক্ষণিক স্বস্তি দেয় এই থেরাপি।
 ঠান্ডা প্রভাব কিউটিকলকে মসৃণ করে। চুল হয়ে ওঠে ঝকঝকে ও চকচকে।
সম্ভব বাড়িতে বসেও
 বরফ মাসাজ: একটি বরফের টুকরা নরম কাপড়ে মুড়ে নিয়ে মাথার ত্বকে আলতো মাসাজ করা চাই ২ থেকে ৩ মিনিট।
 ঠান্ডা অ্যালোভেরা জেল মাস্ক: জেল ফ্রিজে ঠান্ডা করে স্ক্যাল্পে মাসাজ করা যায়; ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলা চাই।
 ঠান্ডা গ্রিন টি: চা বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। চুল ধোয়ার পর এই ঠান্ডা চা দিয়ে স্ক্যাল্প ধুয়ে নেওয়া চাই। এটি তেল নিয়ন্ত্রণ ও খুশকি কমাতে সহায়ক।
 মোড ব্যবহার: চুল ধোয়ার পর ব্লো ড্রায়ারের ঠান্ডা বাতাস ২ থেকে ৩ মিনিট মাথায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
 ফ্রিজে রাখা স্ক্যাল্প সেরাম: নিয়মিত ব্যবহৃত স্ক্যাল্প টনিক বা সেরাম ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে ব্যবহার করা যেতে পারে বাড়তি উত্তাপ প্রশমনের জন্য।
সঠিক সময়
এই থেরাপি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার নেওয়াই যথেষ্ট। তবে মাইগ্রেন, সাইনাস সমস্যা বা স্ক্যাল্প সংবেদনশীল হলে বাড়তি ব্যবহার এড়িয়ে চলা মঙ্গল। কোন ধরনের চুলে ব্যবহার করা যাবে, তা-ও জানা জরুরি।
 তৈলাক্ত, চুলকানিযুক্ত বা ইনফ্লেমড স্ক্যাল্প যাদের;
 স্ট্রেসজনিত চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন যারা;
 প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ও মজবুত গোড়া পেতে আগ্রহীরা।
সতর্কতা
 দীর্ঘস্থায়ী সাইনাস, মাইগ্রেন বা ঠান্ডায় অতিসংবেদনশীল ব্যক্তিরা;
 যদি মাথার ত্বকে খোলা ক্ষত বা ইনফেকশন থাকে।
ঘরোয়া টোটকা
অ্যালোভেরা ও মিন্ট মাস্ক
তাজা অ্যালোভেরা জেল, কয়েক ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েল (ঐচ্ছিক) ফ্রিজে রেখে ২০ মিনিট ঠান্ডা করে মাথায় মাসাজ করে ১০-১৫ মিনিট রাখতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
 উপকারিতা: চুলকানি, ফোলা ও তৈলাক্ত ভাব কমাবে।
গ্রিন টি মাস্ক
২টি গ্রিন টি ব্যাগ ১ কাপ পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর তা দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে চুল।
 উপকারিতা: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই চা স্ক্যাল্প রিফ্রেশ করে, খুশকি ও তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ঠান্ডা গোলাপজল স্প্রে
একটি স্প্রে বোতলে গোলাপজল রেখে ফ্রিজে ঠান্ডা করুন। চাইলে এর সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে নেওয়া যায়। এরপর স্ক্যাল্পে সরাসরি স্প্রে করা চাই।
 উপকারিতা: স্ক্যাল্পে শীতলতার পাশাপাশি চটজলদি সতেজ অনুভূতি দেয় এবং ঘাম ও দুর্গন্ধ কমায়। এটি শ্যাম্পুর পর শেষ ধাপ হিসেবে ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

 স্বর্ণা রায়
মডেল: আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top