skip to Main Content

নখদর্পণ I বেঙ্গল রোজ ২.০

লাল টুকটুক আলতার প্রাঞ্জলতায় সঙ্গত দিচ্ছে অ্যাক্রিলিক। নতুন প্রজন্মের নতুন তত্ত্ব। উদ্দেশ্য—‘মেসিনেস’কে শুভ বিদায়। এই নতুন অধ্যায়ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়

আলতাকাহনের সূচনাতেই খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার আর ওডিশাও আছে সেই পুরোনো তালিকায়। আলতার রং এখনো অম্লান এই দেশটায়। বিয়ের কনের সাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রসাধন ছিল এটি। পূজাপার্বণ ও বিবাহে উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম হয়ে উঠেছিল। এখনো চলমান। আলতার একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, এটি দেখতে রক্তের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ; যা প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক।
প্রসাধনী যখন লেস ফিতার বাক্সবন্দী হয়ে ঘরে আসত, সে সময়টাতে আলতার চাহিদা ছিল আকাশছোঁয়া। হাতের দশ আঙুলের আধেক লাল করে ঠিক মাঝ বরাবর বসানো হতো বৃত্ত। আবার পায়ের দুই ধারেও এঁকে দেওয়া হতো। পুরোনো দিনে লাক্ষার রংকে শুভ হিসেবে গণ্য করা হতো।
চিত্রা দেবের ‘আবরণে-আভরণে ভারতীয় নারী’ বইয়ে পাওয়া যায় আলতার চিহ্ন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, লাক্ষা থেকে তৈরি হতো আলতা। লাক্ষাকে ইংরেজিতে বলা হয় ল্যাক। এটি একধরনের প্রাকৃতিক রেজিন। আসে ছোট্ট লাক্ষা পোকা থেকে। পোকাগুলো নির্দিষ্ট গাছের (যেমন কুসুম, পলাশ, বুনো কুল ইত্যাদি) ডালে বসে গাছের রস খায় এবং চারপাশে চটচটে রেজিনজাতীয় পদার্থ নিঃসরণ করে। শুকনো অবস্থায় এই পদার্থকে বলা হয় স্টিক ল্যাক, যেটি প্রক্রিয়াজাত করে পাওয়া যায় লাক্ষা বা ল্যাক রেজিন।
আলতার আবেদন
মিলেনিয়াল থেকে জেনারেশন জেড—প্রসাধন প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন স্পষ্ট। শুধু কলেবরে বেড়েছে তা নয়; অনেক হারিয়েছে, আবার যোগও হয়েছে প্রচুর। আলতাও আছে টিকে যাওয়ার তালিকায়। তবে এসেছে কিছু পরিবর্তন।
নতুন অধ্যায়েও স্পষ্ট আলতা। সেখানে সঙ্গত দিচ্ছে অ্যাক্রিলিক। আরবান মেকওভারে এই পরিবর্তনের পেছনে আছে আলতা অ্যাপ্লিকেশনের মেসিনেস, দ্রুত মুছে যাওয়া, কাপড়ে দাগ তৈরি করা, টাচ আপসহ নানা রকম ঝক্কি। এসব গরলে এখনকার ফ্যাশনিস্তাদের বড্ড বিরক্তি। তারা সরলে বিশ্বাসী। দ্রুত শুকিয়ে যাবে, আবার মানও হবে ভালো—এমন চাহিদাই তাদের।
‘কন্টাক্ট ডি-পিগমেন্টেশন কজড বাই অ্যান অ্যাজো ডাই ইন আলতা’ শিরোনামের একটি গবেষণাপত্র পাওয়া যায় অন্তর্জালে। ৬ জন গবেষক সেখানে উল্লেখ করেছেন আলতায় রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। প্রাকৃতিক লাক্ষায় তৈরি আলতা না পেলে রাসায়নিকেই সই—এমন কিন্তু নয় বিষয়টি। তাই বুঝেশুনে তবেই কেমিক্যাল-কাহনে অংশ নেওয়া চাই। নতুন প্রজন্মের অনেকে আলতার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করছেন অ্যাক্রিলিক। বলা যায়, নতুন ট্রেন্ড এটি। পাওয়া যায় দুই ধরনের। যেকোনোটা নিলেই হবে না; বরং এতে বিপদ বাড়বে। ব্যবহার করা চাই অ্যাক্রিলিক জেল পলিশ; যা নখ ও ত্বকের উপযোগী। ত্বকে প্রয়োগ করতে হলে কেবল কসমেটিক-গ্রেড পেইন্ট বেছে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। আর্ট অ্যাক্রিলিক পেইন্ট ক্যানভাস ও ক্রাফটের জন্য। কোনোভাবেই স্কিন সেফ নয়। তাই সরাসরি ত্বকে ব্যবহার না করাই মঙ্গল।
এই উপাদান বাজারে পাওয়া যায় তিন রূপে। ফ্লুইড মিডিয়াম, গ্লস মিডিয়াম ও মডেলিং পেস্ট। মনে রাখা ভালো, ফ্লুইড বেছে নিলে এটি আলতার ঘনত্ব কমিয়ে আনে। পাতলা করে। গ্লস মিডিয়ামে চকমকে ভাব বেড়ে যায় বেশ খানিকটা। মডেলিং পেস্ট যোগ করা হলে থিকনেস বাড়ে। চাহিদা বুঝে সিদ্ধান্ত নিলে সহজে হতে পারে বাজিমাত! এখন বাজারে আলতা পেনও পাওয়া যাচ্ছে। তুলি, তুলা, ব্রাশ—কিছুই প্রয়োজন নেই। কলম ধরে এঁকে নিলেই ব্যস! তাই ঝক্কিতে সময় না পেলে আলতা পেনে সহজ সমাধান মিলতে পারে।
প্রস্তুতি প্রাঙ্গণ
আলতা ব্যবহারের এক দিন আগে নখসহ আঙুল এক্সফোলিয়েট ও ময়শ্চারাইজ করে নিলে ভালো। তাতে নখের সাজ সুন্দর হয়। নখ শেপ, কিউটিকল কেয়ার করার পরে অ্যালকোহল ফ্রি প্রেপ ওয়াইপ দিয়ে মুছে নেওয়া যেতে পারে। শেষে নখে বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে মেকআপ ফিক্সিং মিস্ট। এটি টপ কোট হিসেবে কাজ করবে। নখ থেকে তুলে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে তুলা ও মাইসেলার।
সমাপ্তি ক্ষণ
প্রতি বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজা করতেন মায়েরা। সেই সময় পূজার দিনে নাপিত-বউয়েরা বাড়িতে আসতেন। তারা বাড়ির মেয়েদের পা পরিষ্কার করে আলতা পরিয়ে দিতেন। বৌদ্ধযুগেও আলতার চল ছিল। প্রসাধনীর পাশাপাশি মঙ্গলের প্রতীক মনে করা হতো আলতাকে। মেয়েদের সামাজিক অবস্থানও দেখানো হতো আলতা দিয়ে। দুর্গাপূজার ষষ্ঠীর দিন আলতা ব্রত। পূজার সময় দেবীকে সিঁদুর আর আলতা নিবেদন করতেন তারা। আলতা-সিঁদুর সধবা মেয়েদের মঙ্গলের প্রতীক। ষষ্ঠীর দিন মায়েরা সন্তানের মঙ্গলের জন্য দুর্গাষষ্ঠীর পাশাপাশি পায়ে লাল আলতা পরে ব্রত পালন করতেন। ভারতের বিভিন্ন দেবী মন্দিরে পূজার থালিতে সিঁদুরের সঙ্গে আলতা, টিপ ইত্যাদি দেওয়া হয়। আসন্ন দুর্গাপূজায় এবারেও আলতাবানুর কারসাজি দেখা যাবে বলে ধারণা করা যায়। দেখা যাক কে কতটা আনকোরা আলতায় নজর কাড়েন!

 সারাহ্ দীনা
মডেল: প্রমা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: মাহমুদা শাড়ী হাউজ
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top