skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I রানওয়ে রিদম: নিউইয়র্ক-লন্ডন ফ্যাশন উইক

ফ্যাশন উইক মানেই হইহই রইরই! কী হয়, কী হয়! উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। ডিজাইনার, ব্র্যান্ড, ফ্যাশনিস্তা, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, মডেল, মেকওভার আর্টিস্ট, ক্যামেরা ক্রু, কোরিওগ্রাফার- সবাই থাকেন অপেক্ষায়। সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাশন ইভেন্টের দুয়ার খোলে। সেখান থেকে দুই বিগ ইভেন্টের স্টাইল হাইলাইটস থাকছে সারাহ্ দীনার লেখায়

চ্যাপ্টার: নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক
সেপ্টেম্বরের ১১ থেকে ১৬, বহুল আকাক্সিক্ষত নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের দরবারে চলে মহাযজ্ঞ। ৬০টির বেশি শো সেখানে দেখা যায়। নতুনের আহ্বানে সারা দিনে হয় বিপুল সমাগম। সূচনায় ছিল মাইকেল কোরস। এরপরে দেখা মেলে আলতুজারা, কেলভিন ক্লেইন, ক্রিশ্চিয়ান সিরিয়ানো, কলিনা স্ট্রাদা, প্রবাল গুরুং, টোরি বুরচসহ আরও বহু গুণী ডিজাইনারের কাজের। এবারের আসরে উজ্জ্বল রং দেখিয়েছে জেল্লা। ম্যাক্সিমালিজম যে ফিরেছে, তা বেশ বোঝা গেছে রানওয়ে অধ্যায়ে। ডিজাইনার লাকুয়ান স্মিথ আর প্রবাল গুরুং মিনিমালিস্টিক নকশাকে করে তুলেছেন ইনস্টাগ্রাম রেডি। একদম স্টেটমেন্ট স্টাইল যাকে বলে। ওভারসাইজড এবারেও মাতিয়েছে। ব্যাগি ব্লেজার, ট্রাউজার, ভলিউমনাস কোট ছিল লাইমলাইটে। ডিজাইনার পিয়ের মস স্ট্রিটওয়্যারের সঙ্গে হাই ফ্যাশন পলিশের মেলবন্ধন দেখিয়েছেন।
টেকসই তত্ত্ব নিয়ে ফ্যাশন দুনিয়া কতটা সচেতন, তার কিছুটা প্রকাশ এই মহাযজ্ঞেও দেখা গেছে। ছিল ইকো কনশাস ডিজাইন আর আপসাইকেলড ফ্যাব্রিক নিয়ে কাজ। কলিনা স্ট্রাদা তার আয়োজনে দেখিয়েছেন ফ্যাশন ফরোয়ার্ড ভাবনা এবং এনভায়রনমেন্টাল রেসপনসিবিলিটি- এই দুই তত্ত্ব পাশাপাশি কত সুন্দর করে অবস্থান করতে পারে। জেন্ডার ফ্লুয়িইডিটি যে এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা-ও বেশ বুঝিয়ে দিয়েছে নিউইয়র্কের রানওয়ে। ডিজাইনার টেলফার স্যুটে দেখিয়েছেন লুজ টেইলরিংয়ের আধিপত্য। জেন-জি অডিয়েন্সের পছন্দ অনুযায়ী কেমন বদলেছে ফ্যাশন দুনিয়া, তার পষ্ট প্রকাশ ছিল ছয় দিনব্যাপী এই আয়োজনে।
ফ্যাশন ফিয়েস্তাজুড়ে স্টেটমেন্ট অ্যাকসেসরিজ দখল করেছিল স্পটলাইট। ওভারসাইজড ব্যাগ, চাংকি জুয়েলারি ও স্ক্যাল্পচারাল ফুটওয়্যারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষঙ্গের ব্যবহার সাধারণত ফিনিশিং টাচ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এবারে বোঝা গেছে, স্টেজ দখলের ক্ষমতাও আছে এগুলোর। ডিজাইনে ড্রামা যোগ করতে জুড়ি নেই বললেই চলে। নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের এবারের আসরে স্পষ্ট হয়েছে, ফ্যাশন শুধু পোশাকেই সম্পন্ন হয় না; এটি একটি সম্পূর্ণ লাইফস্টাইলও বটে।
এই আয়োজনে স্ট্রিট স্টাইল ফটোগ্রাফার, ফ্যাশন এডিটর, সেলেব, ইনফ্লুয়েন্সারের উপস্থিতি ছিল অভাবনীয়। ফেস্টিভ্যাল লাইক এনার্জি ঘিরে রেখেছিল সবাইকে। উৎসবের উচ্ছ্বাস মিশে ছিল চারদিকে। আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ফ্যাশন রানওয়ে। আর সেখানেও পাওয়া গেছে নতুনত্বের খোঁজ। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কাজ দেখা গেছে অন্তত তিনটি। ডিজাইনার লাকুয়ান স্মিথের কালেকশন যখন র‌্যাম্পে , তখন দর্শককে ঘিরে ছিল ইলেকট্রিক আবহ। নিয়ন লাইটের ব্যবহারে ক্লাব লাইক ভাইব তৈরি করা হয়েছিল। এই ডিজাইনারের কালেকশনে উজ্জ্বল রং আর আলোর ঝলকানির মিশেল রানওয়েকে করে তুলেছিল জীবন্ত। পিয়ের মসের শোতে তৈরি করা হয়েছিল স্টোরিটেলিং এম্বিয়েন্স। লাইটেনিং মিউজিক আর স্টেজ ডিজাইন- দুইখানেই নাট্যমঞ্চের অভিজ্ঞতা দেওয়ার চেষ্টা ছিল। এই ডিজাইনার লেয়ারড আউটফিট আর ওভারসাইজড সিল্যুয়েটের সঙ্গে সঙ্গত তৈরি করে দেখিয়েছেন সফলভাবে। যেন শুধু পোশাকের প্রদর্শনী নয়, অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার আয়োজন। কলিনা স্ট্রাদার সংগ্রহ যখন প্রদর্শিত হয়, সেখানে রঙের খেলার মাঝে দৃশ্যমান হয়েছিল পরিবেশ-সচেতনতা। এসবের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিশে গিয়েছিল খামখেয়ালিপনার ছোঁয়া। নিউইয়র্কের এই ফ্যাশন ব্র্যান্ড টেকসই তত্ত্বের সঙ্গে স্টাইলের মিশেল দেখিয়েছে সার্থকতার সঙ্গে।
চ্যাপ্টার: লন্ডন ফ্যাশন উইক
আসর শুরু ১৮ সেপ্টেম্বর। পর্দা নামে ২২ তারিখে। আয়োজক ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিল। উদযাপন ছিল শহরজুড়ে। পপ আপ, প্যানেল ডিসকাশনসহ নানা কিছু যোগ হয়েছিল রানওয়ের সঙ্গে। এমনকি লন্ডন শহর ছাড়িয়ে ব্যাপ্তি পৌঁছে ছিল ম্যানচেস্টার, নিউক্যাসেল, লিভারপুলেও। ডিজাইনার, বিক্রেতা, ফ্যাশন-সচেতন, সংস্কৃতিমনাসহ অযুত-নিযুতে সমাবেশ ছিল। সার্থকভাবে দর্শককে মুগ্ধ করেছে শতাধিক শো।
ব্রিটিশ ব্র্যান্ড বারবেরির কালেকশনে ব্রিটিশ মিউজিক ফেস্টিভ্যাল কালচারের ছোঁয়া দেখা গেছে। কি-এলিমেন্ট হিসেবে ছিল কুরুশের বুনন, ফ্রিঞ্জ। গোলাপি, হলুদ, সবুজের অ্যাসিড টোন ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ব্র্যান্ডের সিগনেচার ট্রেঞ্চ কোট আবারও নতুন করে আসে সামনে। এই শো অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের বিলাসবহুল প্যালেস কেনসিংটনের বাগানে। সুরের মূর্ছনা এনে দিয়েছিল পূর্ণতা। রক ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথের একটি মিউজিক ট্র্যাক ব্যবহার করে রক অ্যান্ড রোলের আবহ তৈরি করা হয়েছিল।
তুর্কির হ্যান্ড ক্রাফটেড ডিজাইনার ব্র্যান্ড বোরা আকসুর এবারের কালেকশনে দেখা যায় ষাটের দশকের ফ্যাশন। মডেলরা সেজেছিলেন পুতুলের মতো করে। আবেগের সঙ্গে খানিকটা বিষাদও সেখানে ছিল উপস্থিত। এর পেছনের কারণ জানা গেল ডিজাইনার আকসুর মন্তব্যে। রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, এই ডিজাইনার তার কাছে থাকা ভাঙা পুতুলের সংগ্রহ থেকে পেয়েছিলেন এমন কাজের উৎসাহ। স্মৃতি ছুঁয়ে ছুঁয়ে লেইস, এমব্রয়ডারি, ফ্রিলস, বনেট স্টাইল হ্যাটের ব্যবহারে লেয়ারড ড্রেস তৈরি করেছিলেন তিনি।
ডিজাইনার পল কস্টেলো তার বুলোভা অব ড্রিমস কালেকশনে ১৯৬০ সালের গ্ল্যামার তুলে এনেছেন পুনরায়। প্যাস্টেল কালার, পয়েন্টি কলার, প্ল্যাটফর্ম শু, ফ্লোরাল মোটিফ প্রাণ জুগিয়েছে তাতে। কাল্ট ব্রিটিশ ব্র্যান্ড রিজো এবারে দশম বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে বিশেষ একটি কালেকশন বাজারে এনে। নাম দিয়েছে এথেরিয়াল ড্রিম। সেখানে ফুলেল প্রিন্ট, ফুলে থাকা নকশা আর প্যাটার্ন মিক্সিং পেয়েছে প্রাধান্য। এই পোশাকগুলো তৈরিতে ব্র্যান্ডটি কোলাব করেছিল লিবার্টি ফ্যাব্রিকসের সঙ্গে। বোহিমিয়ান দর্শন ছিল এই কালেকশনের উৎসাহে; যা যোগ করেছিল নতুন মাত্রা। মডার্ন ওয়্যারেবিলিটির গুণ এই সংগ্রহকে আরও বিশেষ করেছে।
আইরিশ ফ্যাশন ডিজাইনার সিমোন রোসার কাজ ছিল বেশ আনকোরা। রোম্যান্টিক ফ্লেভার যোগ হয়েছিল পোশাকে। যেমন করসেট ও লেইস। বুননেও ছিল অনন্যতা। অনবদ্য হয়ে উঠেছিল সিমোনের কালেকশন।
ফ্যাশন শোর রানওয়েতে প্রথম মডেল যখন পা রাখেন, তখন থেকে শুরু করে শেষ মডেল পর্দার পেছনে হারিয়ে যাওয়া অবধি দর্শকের নজর থাকে সেদিকেই। তাই আবহ অতি গুরুত্বপূর্ণ। থিমেটিক মোটিফ ব্যবহারে বেশ কিছু কাজ হয়েছে এবার। আবার আকসুর ব্রোকেন ডল, প্যাস্টেল ড্রিম, ফ্লোরাল রোমান্টিসিজমও দেখা গেছে। পোশাক থেকে শুরু করে হ্যাট, কালার প্যালেট, টেক্সচার, অ্যাকসেসরিজসহ বেশ কিছু পণ্যের ক্যানভাসেই দেখা গেছে এমনটা। লেইস, সুই-সুতার কাজ, ফ্রিল যোগ করার ইচ্ছা বেশ দৃশ্যমান হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের সঙ্গে ডিজাইনারদের জীবনবোধ ও গল্প মিশে যাওয়ার মতো দৃশ্য দেখা গেছে। বহুল আলোচিত টেকসই তত্ত্বও পেয়েছে গুরুত্ব। কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিল ধরণি প্রেমের কাব্য।
বিশ্ব মাতিয়ে শেষ হয়েছে নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক এবং লন্ডন ফ্যাশন উইকের সেপ্টেম্বর ২০২৫ এর আসর। দুই জায়গাতেই পাওয়া গেছে একটি মিল। কী সেটা? ফ্যাশন যে শুধু কাপড় নয়, আসলে জীবনেরই অংশ, সেই ধারণা আরও জোরালো হয়েছে। নিউইয়র্ক সেজেছিল নিয়ন আলো, ওভারসাইজড সিলুয়েট আর স্টেটমেন্ট অ্যাকসেসরিজে। লন্ডনে দেখা গেছে শৈল্পিকতা, আবেগ আর মঞ্চায়নের গুরুত্ব। সব মিলিয়ে দুই আয়োজনেই ফ্যাশন রানওয়ে মুগ্ধ করেছে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top