skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I কফি রেভ কালচার

১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কফি দিবস। এই পানীয় ঘিরে জমে উঠেছে তারুণ্যের নতুন এক আন্দোলন

স্বাগত কফি রেভের জগতে! যেখানে ইলেকট্রনিক মিউজিকের তাল কফির সুবাসের সঙ্গে মিশে যায়, আর তা সূর্যাস্তের বেশ আগে থেকে শুরু হয়। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ, নৃত্য ও সম্প্রদায়ভিত্তিক অনুভূতির নতুন তাৎপর্য জাহির করে। প্রচলিত নৈশকালীন পার্টির নতুন বিকল্প হিসেবে এর আত্মপ্রকাশ।
কফি রেভের উৎপত্তি আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে, যা এখন মেইনস্ট্রিম। ধারণাটির শিকড় ইউরোপের আন্ডারগ্রাউন্ড কালচারে। অনেকে বলেন, নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে এর উৎপত্তি; তবে কোনো অকাট্য প্রমাণ মেলেনি এই দাবির সপক্ষে। এই পার্টির ক্ষেত্রে প্রচলিত জায়গার পরিবর্তে বেছে নেওয়া হয় বেকারি ও ক্যাফে। সকালে অনুষ্ঠিত এই জমায়েতগুলো অংশগ্রহণকারীদের সতেজ প্রাণশক্তিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে। অ্যালকোহলমুক্ত পরিবেশে সংগীত ও নাচের মধ্য দিয়ে আনন্দ উদ্‌যাপন করেন তারা। সবচেয়ে বড় কথা, যারা নাইট ক্লাবের হট্টগোল পছন্দ করেন না, তাদের জন্য কফি রেভ একটি দুর্দান্ত বিকল্প। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ট্রেন্ড ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যেখানে ক্রোয়েসেন্ট ও কফির সঙ্গে জনতার নাচতে থাকার ভিডিও হরদমই ভাইরাল। এমন ডিজিটাল প্রচার এই আন্দোলনকে আমস্টারডাম ও লন্ডনের মতো শহরের ছোট গ্যাদারিং থেকে নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, ভারতের বিভিন্ন শহর এবং আমাদের ঢাকা শহরের কিছু ক্যাফে পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে।
অনন্য অভিজ্ঞতা
একটি সাধারণ কফি রেভ স্থানীয় একটি ক্যাফেকে নাচের স্থলে রূপান্তর করে। ভাবুন তো, ডিজেরা ইলেকট্রনিক মিউজিক বাজাচ্ছেন আর অতিথিরা সকালে আরামদায়ক পোশাকে আয়োজনটি উপভোগ করছেন। বারিস্তারা ককটেল নয়; এসপ্রেসো পরিবেশন করছেন। পরিবেশটি চুম্বকীয় ও স্বাগতপূর্ণ। কোনো ড্রেস কোড কিংবা নিরাপত্তারক্ষী নেই। এটি এমন এক পরিবেশ, যেখানে মিউজিকপ্রেমীরা একসঙ্গে এসে নাচতে, পারস্পরিক যোগাযোগ করতে এবং ক্যাফেইন গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে সতেজ করতে পারেন সকালবেলা। ভারতীয় ডিজে তনিষ্কের ‘মোর কফি মোর রেভ’ ট্যুর এই ট্রেন্ডের দারুণ উদাহরণ। যারা সবার জন্য উন্মুক্ত সামাজিক অভিজ্ঞতা চান, উচ্চ তালের মিউজিক্যাল সেশনের মাধ্যমে পরিচালিত এই জমায়েতগুলো তাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
কফি রেভ কালচার কোনো আঞ্চলিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এখন বৈশ্বিক আন্দোলন। ফিলিপাইনে কফি রেভের অর্ধশতাধিক ভেন্যু রয়েছে। তাতে হাজারো অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতি ঘটে। উদ্দেশ্য স্পষ্ট—এমন স্থান তৈরি করা, যেখানে মানুষ আসতে, নাচতে এবং স্থানীয় ক্যাফেগুলোকে সমর্থন করতে পারে; আর তা করার জন্য অ্যালকোহল গ্রহণ কিংবা রাত জেগে থাকার প্রয়োজন নেই।
‘ক্যাফেটন’ নামে একটি ইভেন্ট আছে শিকাগোতে; তবে সেটি ক্যাফে বা স্থায়ী দোকান নয়, বরং রেগেটন ও কফি পার্টি ধরনের ইভেন্ট। এটি দৈনন্দিন ডে-টাইম পার্টি, যেখানে ল্যাটিনো মিউজিক; বিশেষ করে রেগেটনের সঙ্গে ‘কফি অ্যান্ড ডিজে’ মিউজিকের মেলবন্ধন ঘটে। মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষ; বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি সামাজিক ও বিনোদনমূলক স্পেস তৈরি করা, যেখানে তারা একই সঙ্গে কফি পান করতে, গান শুনতে, নাচতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। সাধারণত ওয়েস্ট রেসেস নামক ভেন্যুতে এটি অনুষ্ঠিত হয়। চলে সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত। বিভিন্ন ল্যাটিনো মালিকানাধীন বা ল্যাটিনোভিত্তিক কফি ভেন্ডররা তাতে কফি সরবরাহ করে। ইভেন্টে বিভিন্ন ধরনের কফি পেস্ট্রি ও কফি ড্রিংকস থাকে। সাধারণত বাজে রেগেটন ও পার্টি মিউজিক। তাই এটি সাধারণ কফি শপের তুলনায় একটু বেশিই ধ্বনিপূর্ণ ও উদ্দীপনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
মর্নিং গ্লোরিভিলে, যা মর্নিং গ্লোরি নামেও সমাদৃত। এটি লন্ডনভিত্তিক সকালের কফি রেভ পার্টি; যা খাবার, নাচ, ভালো সংগীত, ওয়েলনেস (ইয়োগা, মাসাজ, মেডিটেশন ইত্যাদি) এবং সামাজিক সংযোগকে গুরুত্ব দেয়। শুরুয়াত ২০১৩ সালে। এর উদ্দেশ্য সকালে একটি উৎসবমুখর, প্রাণবন্ত ও সক্রিয় অভিজ্ঞতা দেওয়া। মানুষকে নাচ, সংগীত ও শরীরসচেতন কাজকর্মের মধ্য দিয়ে দিন শুরু করানো এর অন্যতম উদ্দেশ্য। আরেকটি বড় উদ্দেশ্য হলো মদ ও মাদকের বাইরে রাখা। সাধারণত ডিজে সেটস, ড্যান্স ফ্লোর, সকালের যোগব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর পানীয় ও খাবার, মাসাজ স্টেশন, মেডিটেশন ইত্যাদি এর অংশ। ‘ওয়েক আপ অ্যাঞ্জেলস’ নামের স্বেচ্ছাসেবকেরা তাতে অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান এবং সহায়তা করেন। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। পূর্ব লন্ডনের ওভাল স্পেস থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্লাব বা আউটডোর স্পেসসহ বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হয়। টিকিট খরচ অনুষ্ঠান ও ভেন্যুর ওপর নির্ভর করে।
জনপ্রিয়তার নেপথ্যে
প্রশ্ন জাগতে পারে, কফি রেভ কেন এমন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে? এর অন্যতম প্রধান কারণ, যারা স্বাস্থ্য বিবেচনা করে পার্টিতে যান, এটি তাদের জন্য উপযুক্ত। যারা অ্যালকোহলের আসক্তি কমাতে কিংবা তা বাদ দিতে চান, তাদের জন্য কফি রেভ এমন একটি পরিবেশ, যেখানে মাদক সেবন এড়িয়ে মিউজিক ও কমিউনিটির প্রতি মনোযোগ পায়।
করিডর সেভেন কফি রোস্টার ভারতের নাগপুরের একটি জনপ্রিয় ক্যাফে, যারা কফি রেভ আয়োজন করে। লন্ডন থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা নিয়ে শুরু তাদের। প্রথম রেভ ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় অর্ধসহস্র মানুষ। সকালবেলা দৌড় ও জুম্বার মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ছিল, আর তা সংগীত ও কফির সঙ্গে মিলিয়ে একটি সামগ্রিক সুস্থতার ধারণা প্রচার করে।
ডিজিটাল যোগাযোগের যুগে, কফি রেভ মানুষকে সামনাসামনি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। এতে সংহতি ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির অনুভূতি বাড়ে। দিনের বেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কফি রেভ সময়সূচি অনেকের জন্য সুবিধাজনকও; বিশেষত যারা রাতে বাইরে থাকতে পছন্দ করেন না।
কফি সংস্কৃতি ও ইলেকট্রনিক মিউজিকের এই সংমিশ্রণ শুধু একটি ফ্যাশন নয়; বরং আমাদের সংযোগ ও প্রকাশের পরিবর্তিত রূপের প্রমাণ। এককথায়, কফি রেভ হলো সংস্কৃতির এমন একটি পরিমার্জন, যা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বাস্থ্যসচেতন এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সামাজিক অভিজ্ঞতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই পরেরবার যখন আপনি নাচতে চাইবেন, আপনার প্রিয় কফির কাপ হাতে নিয়ে দিনের বেলা এই নৃত্যবিপ্লবে যোগ দিলে নিশ্চয় মন্দ হবে না?

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top