skip to Main Content

বহুরূপী I ঘি গরিমা

ঘি। বাংলায় একে কালেভদ্রে ‘তুপ’ও বলা হয়। হাজার বছরের পুরোনো একটি খাদ্য উপাদান, যা মূলত দুধ থেকে তৈরি। উপমহাদেশীয় রান্নায় এটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খাবারে শুধু স্বাদ ও গন্ধ বাড়ায় না; পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণের জন্যও সমাদৃত। বিভিন্ন ধরনের ঘি বিভিন্ন উৎস, প্রস্তুতপ্রণালি ও গুণগত মান অনুসারে আলাদা হয়।
ঘি মূলত গরু বা মহিষের দুধ থেকে প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত প্রথমে দুধ থেকে ক্রিম বা মাখন সংগ্রহ করা হয়; এরপর তা ধীরে ধীরে গরম করে অতিরিক্ত জলীয় অংশ অপসারণের মাধ্যমে খাঁটি ঘি তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ায় ঘি দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য থাকে এবং এর স্বাদ ও গন্ধ অনন্য হয়ে ওঠে।
দেশি গরুর ঘি সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয়। এই ঘি সাধারণত হলদেটে হয় এবং এতে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সিএলএ (কনজুগেটেড লিনোলেইক অ্যাসিড) ও ভিটামিন এ ও ডি থাকে। সীমিত পরিমাণে খাওয়া হলে এটি হজমে সহায়তা, মস্তিষ্কের বিকাশ এবং হৃদ্‌পিণ্ডের জন্য উপকারী।
মহিষের দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়ায় এর ঘি অধিক ঘন, সাদা বা ক্রিম রঙের এবং তুলনামূলক ভারী হয়। এটি রান্নায় বেশি ব্যবহৃত হয়, বিশেষত বিয়ে বা উৎসবের খাবারে। উচ্চ ক্যালরি-সমৃদ্ধ এই ঘি শরীরে শক্তি জোগায়। এ ছাড়া চর্মরোগ সারাইয়ে এর বাহ্যিক ব্যবহারও রয়েছে।
বি লোনা ঘি প্রাচীন ‘বিলোনা’ পদ্ধতিতে তৈরি; যেখানে দুধ থেকে দই তৈরি হয়। তারপর তা থেকে মাখন আলাদা করে গরম করা হয়। এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ হলেও এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর ঘি হিসেবে বিবেচিত। বিশেষত দুধের সরকে ফার্মেন্টেশন করে তা থেকে বাটার তৈরি করে তারপর সেই বাটার থেকে তৈরি করা হয় এই ঘি। এই পদ্ধতিতে তৈরি ঘিতে উচ্চমানের পুষ্টিগুণ থাকে, যা ভিটামিন ও মিনারেলসে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর। এটি প্রায়শ ধর্মীয় আচারে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও এর গুরুত্ব রয়েছে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কারখানায় প্রক্রিয়াজাত ঘি বাজারে পাওয়া যায়, যাকে বাজারজাত ঘি বলে। এগুলোতে অনেক সময় সংরক্ষণকারী বা স্বাদ বৃদ্ধিকারী উপাদান যোগ করা হয় এবং সহজলভ্য, দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য, তুলনামূলক সস্তা। তবে সব সময় খাঁটি হয় না। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত হলে এর পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে।
জৈব ঘি জৈবভাবে পালন করা গরুর দুধে তৈরি। এসব গরু পালনে কোনো রাসায়নিক, অ্যান্টিবায়োটিক বা হরমোনযুক্ত খাদ্য ব্যবহৃত হয় না। তাই এই ঘি পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত; শিশুদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
ঘি শুধু রান্নার উপকরণ নয়; বরং আরও কিছু কাজে ব্যবহৃত হয়। পোলাও, খিচুড়ি, হালুয়া, বিরিয়ানি ইত্যাদিতে ঘি ব্যবহারে স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়ে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতেও এই উপাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সনাতন ধর্মের পূজা-পার্বণে, প্রদীপ জ্বালানো বা হোম-যজ্ঞে ঘি অপরিহার্য। প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবেও এটি ব্যবহারের চল রয়েছে।
তবে খাঁটি ঘি চেনা সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ কৌশল প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। প্রথমত, খাঁটি ঘিয়ের একটি স্বাভাবিক মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে। দ্বিতীয়ত, দেশি গরুর ঘি সাধারণত হালকা হলুদ রঙের, মহিষের ঘি সাদা রঙের হয়। তৃতীয়ত, ঠান্ডা আবহাওয়ায় খাঁটি ঘি সহজে জমে যায়। সর্বশেষ, পানিতে এক ফোঁটা ফেলে দিলে খাঁটি ঘি পানির মধ্যে এক জায়গায় বসে যাবে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top