skip to Main Content

ফিচার I দেশভেদে বিয়ের ডিশ

ভোজনরসিকদের জন্য বিয়ে হলো সুস্বাদু ও বৈচিত্র্যময় খাবারে রসনা তৃপ্ত করার দারুণ সুযোগ। তবে কম-বেশি সব দেশে বিয়ের রয়েছে কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার

কোথাও বিশেষ কোনো রুটি, কোথাও আবার মিষ্টান্ন, কোথাও সুগন্ধি তরকারি—একেক দেশে বিয়ের খাবারের তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নেয় একেকটি বিশেষ খাদ্যপদ। এগুলোর মধ্যে পারস্পরিক মিল তেমন না থাকলেও উদ্দেশ্য সাধারণত অভিন্ন—নবদম্পতির কল্যাণ কামনা।
কোরোভাই
ইউক্রেনিয়ান ওয়েডিং ব্রেড। বুলগেরিয়া ও রাশিয়ার বিয়েতেও খুব পরিচিত ফুড আইটেম। এই ব্রেড আদতে একটি গোলাকার পেস্ট্রি, যা উর্বরতা, সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক। ফুল, তারকা ও পায়রার মোটিফে সাজানো হয়, নবদম্পতির সুখী জীবন কামনা করে। ইউক্রেনিয়ান বিয়েগুলোতে বর ও কনে—উভয় পরিবারের সদস্যরা ব্রেডটি নিজ হাতে বানান, পরিবারে নতুন সদস্যকে স্বাগত জানাতে।
চুরোস কন চকলেট
স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ কুজিনের খুব চেনা ফ্রাইড ডো। ডোনাটতুল্য। চিনি ও দারুচিনিতে সিক্ত। ঐতিহ্যবাহী স্প্যানিশ ওয়েডিং ফুড হিসেবে পরিবেশিত হয় ঘন হট চকলেট সস-সমেত। কখনো কখনো কাস্টার্ড বা চকলেট ক্রিমে পূর্ণ করা হয়। খাদ্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই মিষ্টান্নের অষ্টভুজাকার বা ষড়ভুজাকার প্রিজমগুলোর উৎপত্তি ষোড়শ শতাব্দীতে; আজটেক সভ্যতার চকলেট সম্পর্কে স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা জ্ঞানলাভের পর থেকে এতে হট চকলেট জুড়ে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু।
মেক্সিকান ওয়েডিং কুকিজ
দেশের নামেই নামকরণ। মিষ্টি স্বাদে ভরপুর। বাদাম ও মাখনে সমৃদ্ধ এই বিস্কুটগুলো ছাড়া যেন মেক্সিকান বিয়ের খাবার জমেই না! এসব বিস্কুটের আকার ছোট ছোট তুষার-গোলার মতো। বিয়ের পাশাপাশি ছুটির মৌসুমেও এগুলোর জনপ্রিয়তা বেশ। বিয়েতে এ খাবার কীভাবে জায়গা করে নিল, সেই ইতিহাস জানা না গেলেও এর নেপথ্যে একাধিক কারণ খুঁজে পেয়েছেন খাদ্য-ইতিহাসবিদেরা। এক পক্ষের মতে, মধ্যযুগে আরব রুটিওয়ালাদের হাতে সৃষ্ট এই বিস্কুট ইউরোপিয়ান সন্ন্যাসিনীদের হাত ধরে মেক্সিকোতে প্রবেশ করেছে; আবার অপর পক্ষ বলছে, ষোলো শতকে স্প্যানিশ দিগ্বিজয়ীদের মাধ্যমে উত্তর আমেরিকায় আবির্ভূত হয়েছে এটি।
কারিড গোট
জ্যামাইকান বিয়েতে নৈশভোজের পাতে খাসির মাংসের তরকারি রাখা চাই-ই চাই! কারিড গোট নামে পরিচিত এই পদ অবশ্য দেশটির নিজস্ব রন্ধনশৈলীর বার্তাবাহী; ফলে প্রায় প্রতিটি বিশেষ আয়োজনে এর উপস্থিতি মেলে। বিয়ে ঘিরে পদটির জন্য মাংস বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অতীতে ছিল এক দারুণ রেওয়াজ। বর ও কনেপক্ষ কোনো খামারে রীতিমতো অভিযান চালিয়ে বাছাই করত খাসি। তারপর সেটির মাংস নিজেরা ধীর আঁচে রান্না করত, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে। কালের পরিক্রমায় সেই রেওয়াজে ভাটা পড়লেও জ্যামাইকান বিয়েতে কারিড গোটের উপস্থিতি মিলিয়ে যায়নি।
পিকিং ডাক
ঐতিহ্যবাহী চীনা বিয়ের খাদ্যতালিকা সুদীর্ঘ। তার মধ্যে পিকিং ডাকের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। নামই বলে দিচ্ছে, এটি হাঁসের মাংসের পদ। একই সঙ্গে মুচমুচে ও কোমল। একটি নির্দিষ্ট ধরনের হাঁস দিয়ে তৈরি। সাধারণত আস্তই রান্না করা হয়। রান্নার পর পাতলা করে কেটে পরিবেশিত হয়। তাতে বেশির ভাগ অংশে থাকে চামড়া; মাংস বেশ কম। এই পদ নবদম্পতির শান্তি ও পূর্ণতার প্রতীক; একই সঙ্গে পারস্পরিক বিশ্বস্ততারও প্রতিনিধিত্ব করে। কেননা, যুগল হিসেবে হাঁসেরা সাধারণত আজীবনের সঙ্গী হিসেবে পরিচিত। চীনা বিয়েতে এই সুস্বাদু ও মসলাদার পদের সঙ্গে প্যানকেক, শসা, পেঁয়াজ প্রভৃতি জুড়ে দেওয়ার চল রয়েছে।
ক্রোকামবুশ কেক
ভ্যানিলা ক্রিম ও ক্যারামালাইজড সুগারে পূর্ণ এই সুউচ্চ প্যাস্ট্রি টাওয়ার ছাড়া ফরাসি বিয়ের ভোজ যেন ভাবাই যায় না! সাধারণত রিসেপশনের সময় এটি পরিবেশন করা হয়। আবহকে আরও নাটকীয় করে তুলতে তখন জ্বলতে থাকে ঝিকিমিকি বাতি; বাজে আপবিট মিউজিক।
বাকলাভা
কোনো গ্রিক বিয়েতে গিয়ে, ডেজার্ট টেবিলে বাকলাভার উপস্থিতি দেখে চমকে যাবেন না যেন! ১০ থেকে ১১ স্তরের পাতলা ডোয়ে বানানো এই প্যাস্ট্রি সে দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী বিয়ের খাদ্যপদ। সাধারণত টুকরো টুকরো করা আখরোট বা পেস্তাবাদামে পূর্ণ থাকে; তাতে মিষ্টির স্বাদ ছড়াতে ব্যবহৃত হয় মধু। বিশেষ এই মিষ্টান্ন বানানো সহজ কর্ম নয়; তাই বিয়ের অনুষ্ঠানের বেশ আগেভাগে বুকিং দিতে হয়।
জর্ডান আমন্ডস
চিনির সিরাযুক্ত আমন্ড ক্যান্ডি। সুগারড আমন্ডস, দ্রাগিজ, কনফেত্তি প্রভৃতি নামেও পরিচিত। ইতালীয় বিয়েতে ঐতিহ্যগতভাবে পাঁচটি আমন্ড বা কাজুবাদাম আদতে নবদম্পতির জন্য পাঁচটি শুভকামনার প্রতিনিধিত্ব করে—সুস্বাস্থ্য, সম্পদ, আনন্দ, উর্বরতা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব। এই কাজুবাদামগুলো কোনো সুসজ্জিত বাক্সে কিংবা বম্বোনিয়ারস নামে পরিচিত টিউল ব্যাগে ভরে পরিবেশন করা হয়। শুধু ইতালীয় নয়, গ্রিক বিয়েতেও এই মিষ্টান্নের উপস্থিতি থাকে; তবে ডাকা হয় কুফেতা নামে। সেখানেও ক্যান্ডিগুলোতে ছোট্ট ব্যাগে পুরে পরিবেশিত হয়; তবে গ্রিকরা এক ব্যাগে শুধু পাঁচটি নয়, যেকোনো বিজোড় সংখ্যক ক্যান্ডি পুরে দেন। আর সেগুলো পরিবেশন করা হয় রুপালি থালায়। এই বিজোড় সংখ্যা আদতে নবদম্পতির পরস্পরের সঙ্গে সবকিছু ভাগাভাগি করে নেওয়ার এবং আজীবন অবিচ্ছেদ্য থাকার প্রতীক বহন করে।
কুক সু সাং
কোরিয়ান ঐতিহ্যবাহী বিয়ের পদ। আদতে নুডলস ভোজ। নবদম্পতির দীর্ঘস্থায়িত্ব ও সুখ-শান্তির প্রতীক হিসেবে বিয়ের খাবারে পাতে তোলা হয়। সাধারণত গরুর মাংসের স্বচ্ছ ঝোল, কুচি কুচি করা ডিম আর সবজিতে পূর্ণ এ খাবার বেশ সুস্বাদু।
হকজাইৎজুপে
খিটিমিটি নামের এ পদের সরল বাংলা ‘বিয়ের স্যুপ’। মুরগির মাংসের ঝোল, নুডলস, সবজি, মুরগির মাংস আর ছোট ছোট মিটবলের সমাহারে প্রস্তুত করা। জার্মান বিয়ের ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় স্টার্টার ডিশ হিসেবে সমাদৃত। বিয়ে পড়ানো শেষে ভোজসভায় নবদম্পতির কল্যাণ কামনায় দেশটির উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে এই স্যুপ আস্বাদনের প্রচলন বেশি।
মেজ
লেবাননে বিয়েবাড়িতে সাধারণত বিচিত্র ধরনের খাবারে ভরপুর বিশাল ভোজের ব্যবস্থা থাকে। তার মধ্যে ঠান্ডা ও গরম—উভয় ধরনের মেজ পরিবেশনের চিত্র ঐতিহ্যবাহী। এটি আসলে কোনো একক পদ নয়; বরং একসঙ্গে একাধিক পদের সমাহার। এতে হুমাস, ফালাফেল, বাবা গানুশ, কিবে প্রভৃতি খাদ্যপদ সাজানো থাকে ছোট ছোট পাত্রে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top