skip to Main Content

টেকসহি I থ্রিফট থ্রিল

একসময় অসম্ভব হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে হয়ে উঠেছে সাসটেইনেবল বিউটির অংশ। শখের দাম হাজার টাকা হলেও যদি তা সস্তায় মিটিয়ে নেওয়া যায়, ক্ষতি কি

সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটিং বা থ্রিফটিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। কারও কারও ড্রেসিং টেবিলের বেশ খানিকটা জায়গাও সগর্বে দখল করে নিয়েছে থ্রিফটিং আইটেমগুলো। সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটিং দামে যেমন কম পড়ে, তেমনি নিজের শখও উজ্জীবিত রাখা যায়। পাশ্চাত্যের তথ্য বলে, প্রায় ৫২ শতাংশ আমেরিকান থ্রিফটিংয়ে শপিং করে; বাঙালিরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই।
মাল্টিবিলিয়ন ডলারের মেকআপ ইন্ডাস্ট্রি যে বছরের পর বছর মেকআপ থ্রিফটিংয়ের বিষয়টি লুকিয়েই রেখেছিল, তা হয়তো অনেকের অজানা। সাসটেইনেবল স্কিন কেয়ারের চাহিদা, ইকো-ফ্রেন্ডলি সিদ্ধান্ত, সোশ্যাল মিডিয়া কালচারের উত্থান—সব মিলিয়ে বর্তমান মেকআপ ট্রেন্ডে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে সেকেন্ডহ্যান্ড বা থ্রিফটিংয়ের পণ্য।
হয়তো ভুরু কুঁচকাচ্ছেন অনেকে। নিজের পারফিউম, শ্যাম্পু, ব্যবহৃত ফাউন্ডেশন কী করে অন্যকে দেওয়া যায়, সবই তো পার্সোনাল হাইজিনের অন্তর্গত। তবে বিশ্বসেরা থ্রিফটিং মার্কেট মারকারি বলছে ভিন্ন কথা। গেল বছরে তাদের বিক্রয় করা বিভিন্ন আইটেমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল বিউটি কেয়ার আইটেমগুলো। তাদের মতে, ২০৩১ সালের মধ্যে প্রায় ১২৬ শতাংশ বাড়বে থ্রিফটেড বিউটি প্রোডাক্ট বিক্রি।
হাজার টাকার ফাউন্ডেশন শেড ম্যাচ না করলে কান্নার দিনের ইতি এখানেই। কারণ, ইন্টারনেটের বিশাল দুনিয়ায় কেউ মিলবেই, যার প্রয়োজন কারও বাতিল করে দেওয়া ফাউন্ডেশনের শেডটি। আবার অন্যের আরাধ্য ও হতে পারে নিজের কাজ না লাগা পণ্যটি।
কোনো আন্দোলন নয়তো?
সিগনেচার বিউটি প্রোডাক্ট নিজের করে পেতে চান না এমন মেকআপ লাভার নেই বললেই চলে। ফার্স্টহ্যান্ড পাওয়া দুষ্কর, বাজেট নাগালের বাইরে, এখানেই সূচনা সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টের চাহিদার। ডিজাইনার বিউটি ইনভেন্টরি নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, নিজেদের মেকআপ লেভেল খুব সহজে আপ করে ফেলতে পারেন সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটি রেজিমে প্রবেশ করে। শ্যানেল, ডিওর, গুচির মতো প্রোডাক্টগুলো মিললেও মিলতে পারে সাধ্যের মধ্যে।
পাশ্চাত্য ছাপিয়ে এশিয়ার মার্কেটেও সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটি সমানতালে এগোতে শুরু করছে। জাপানে মারকারি নামক ব্র্যান্ডের প্রসার হচ্ছে খুবই দ্রুত। অনেকে হয়তো ভাবছেন, জাপানের মতো দেশ; যেখানে সেলফ হাইজিনকে প্রমোট করা হয় দিনরাত, সেখানে এমন কীভাবে হয়! একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে বোঝা যাবে, পুরো ব্যাপারটা আসলে চাহিদা আর জোগানের সেতুবন্ধ। হাতের নাগালের বাইরে দাম, আবার রয়েছে এক্সপায়ারি ডেট শেষ হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা। ফাস্ট ফ্যাশনে টেস্ট বদলাচ্ছে দ্রুত, এরই সমাধানে গ্রাহকেরা ঝুঁকছেন থ্রিফট মেকআপ আইটেমের দিকে।
সময়টা যেন পরিবর্তন হচ্ছে চোখের পলকে। হঠাৎ ভিন্টেজ ফ্যাশন, রাত না পেরোতেই নব্বইয়ের দশকের সাজ, তাল মেলানো দুষ্কর। ইনফ্লুয়েন্সার কালচারের বিস্তার তো আরও সহজে বদলে ফেলছে গ্রাহকের মন। প্রিয় ইউটিউবার দিচ্ছেন টিপস, টিকটকে গেলেই দেখা যায় নতুন কোনো গানে রিলে চলছে নতুন কিছু। এর সঙ্গে মানিয়ে চলা তো চাট্টিখানি ব্যাপার নয়! এতশত ট্রেন্ডে নতুন প্রসাধনী কেনা বেশ ঝক্কির। আবার বাহুল্যও বটে। তাই সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টেই ভরসার হাতছানি।
কী কেনা যাবে, কী যাবে না
লিকুইড শুধুই নিজস্ব সংগ্রহে
ভাইরাল কোনো ক্রিমি কনসিলার, পছন্দের কোনো লিকুইড লিপস্টিক থ্রিফটিংয়ে দেখলেই হুমড়ি খেয়ে না পড়াই ভালো। লিকুইড বিউটি প্রোডাক্ট স্যানিটাইজ করা মুশকিল। কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে ধরনা দেওয়া লাগতে পারে বারবার। ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস জমে ত্বক থেকে ত্বকে ছড়িয়ে করতে পারে সর্বনাশ। সিল করা প্যাকেজ না হলে এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
পাউডার আর পেনসিলে বন্ধুত্ব
৭০% আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলে জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া যায় থ্রিফটিংয়ে কেনা পাউডারি ব্লাশ, ব্রোঞ্জার, লিপলাইনার কিংবা আইলাইনার। পাউডার-বেজড প্রোডাক্টের সেকেন্ডহ্যান্ড বায়িং তুলনামূলক নিরাপদ। পেনসিল বিউটি প্রেডাক্টের ক্ষেত্রে শুধু টিপ শার্প করেই সম্ভব স্টেরিলাইজ করে ফেলা।
নিরাপত্তা সবার আগে
সেকেন্ডহ্যান্ড মেকআপ আইটেম কিনতে গেলে আগে দেখে নিতে হবে রং, ঘনত্ব আর পরিমাণ ঠিক আছে কি না। যতই লোভনীয় লাগুক, এই তিনের কোনো একটায় সন্তুষ্টি না হলে এড়িয়ে চলাই উত্তম। অনলাইনে কিনলে নিজের বায়িং ক্যাপাসিটির ওপর ভরসা রাখা চাই। শুধু কেনার জন্য কেনা নয়, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কেনা হচ্ছে, মাথায় রাখা যেতে পারে এই প্রতিপাদ্যও। কিনতে হবে বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম বা মার্কেট থেকে; যেনতেন সেলার এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
প্যাকেজিংয়ে সচেতন দৃষ্টি
অনেকে ভেবে থাকেন, সেকেন্ডহ্যান্ড প্রোডাক্টে আবার প্যাকেজিং দেখার কী প্রয়োজন? তবে বিষয়টা পুরোই বিপরীত। অরিজিনাল প্রোডাক্ট কি না, কোনো দিক থেকে লিকেজ আছে কি না, এক্সপায়ারি ডেট আছে কি না দেখে শুনেবুঝে কেনা প্রয়োজন। ডার্মাটোলজিস্ট রায়ান টার্নার মনে করেন, ইন্টেক্ট প্যাকেজিং করা বিউটি প্রোডাক্ট কিনতে গেলেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, মেকআপের শেলফ লাইফ অতি গুরুত্বপূর্ণ।
বিউটি ইন্ডাস্ট্রির হাহাকার নয়তো?
সবাই যদি থ্রিফটেড আইটেমই কিনছেন, তবে আবার পথে বসে যাবে না তো বিউটি ইন্ডাস্ট্রি? না, এমনটা ভাবার অবকাশ নেই; বরং বড় বড় মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বলছেন ভিন্ন কথা। এক্সিওলজির কর্ণধার, জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, গেল বছর তাদের বেঁচে যাওয়া দুই হাজারের বেশি লিপস্টিক তারা বিক্রি করেছেন থ্রিফটিংয়ে, নিজেদের বাঁচিয়েছেন ল্যান্ডফিলের খাতায় নাম লেখানো থেকে।
অভিজাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড গুচি, লুলুলেমন, কোচ অনেক আগে নিজেদের প্রোডাক্ট সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে ভক্তদের মনে জায়গা কেড়েছে, এবার পালা মেকআপ ইন্ডাস্ট্রির। পরিবর্তনের হাওয়ায় তাল মেলাতে তারাও পাল বইতে পারে নতুনের সঙ্গে।
ক্রেতাদের পছন্দের প্রোডাক্ট হাতের নাগালে পাবার আকাক্সক্ষা, বিক্রেতাদের নতুন এক মাধ্যম খুঁজে পাওয়া—দুইয়ের মিল হতে পারলে খুব সহজে সম্ভব সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটি ইন্ডাস্ট্রির মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। পুরোনো ধ্যানধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নতুনকে সুন্দরভাবে মেনে নেওয়া এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। সৌন্দর্য তো আর কোনো গোষ্ঠীতে সীমাবদ্ধ নয়, নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অধিকার আছে সবার। সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটি নতুন কনসেপ্ট হলেও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা থেকে শুরু করে আত্মবিশ্বাসকে আরও অটুট করতে আর ছোট-বড় ব্যবসার প্রসারে এর ভূমিকা অস্বীকারের উপায় নেই।

 বিদিশা শরাফ
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top