skip to Main Content

লেবেল অ্যালার্ট I খুশ

ডিজাইনার ব্র্যান্ড। নকশায় নান্দনিকতা থেকে রাজনীতি—সবই বিদ্যমান। দেশকে ভালোবেসে সেখানেই প্রেরণার খোঁজ। ফ্যাশন যে কতটা শক্তিশালী, তারই খোঁজে তরুণ প্রাণের এই উচ্ছ্বাস

রাইসা আমিন শৈলী। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। গড়ে তুলেছেন নিজের ব্র্যান্ড। নাম ‘খুশ’। মায়ের নাম খুকি। সেখান থেকে পাওয়া প্রথম অংশ আর নিজের ও বোনের নাম থেকে ‘শ’—দুয়ে মিলে এই নামকরণ। আভিধানিকভাবে পার্সিয়ান এই শব্দের অর্থ খুশিতে থাকা, আনন্দে থাকা।
শুরুটা হয়েছিল করোনা অতিমারির দিনগুলোতে লকডাউনের সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী পলিপ্রোপাইলিন যুক্ত ভার্সাটাইল মাস্ক দিয়ে। ধীরে ধীরে ব্যাপ্তি বাড়ে। নিউ নরমালে পোশাকের চাহিদা ভেবে প্রোডাক্ট লাইনে যোগদান। এরপরে ওয়্যারড্রোব কালেকশনে দারুণ মনোযোগ।
খুশের নকশায় বিশেষত্ব আছে। একদমই একঘেয়ে নয়। সে কেমন? ড্রেসগুলো স্টাইলিং করা যায় নানাভাবে। অর্থাৎ একাধিকবার ব্যবহারে লাগবে না একঘেয়ে। প্রতিবারই মনে হবে নতুন পোশাক। শ্রাগ, স্কার্ট, শার্ট, প্যান্টস, মিডি ড্রেস, কামিজ, গাউন, ফিউশন শাড়ি, আনারকলি, কাফতান, মাস্ক, স্ক্রাঞ্চি—সবই আছে। ফ্যাশনিস্তাদের চাহিদা অনুযায়ী স্টাইলিং করা যাবে ভিন্নভাবে, যা নিজেকে একদম আলাদা রূপে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আগ্রহ যাদের, তারা নিজেদের ভিন্নভাবে উপস্থাপনে বেশ মনোযোগী। অনেকে একই পোশাক একাধিকবার ব্যবহারে আগ্রহ হারান। তাদের জন্য ভার্সাটাইল নকশার পোশাক বেশ কার্যকরী। তাতে মুনশিয়ানার কারিশমা স্পষ্ট। ভার্সাটাইল, ফাংশনাল, এক্সপেরিমেন্টাল, রিসার্চারাল পোশাক নকশা করতে আগ্রহ আছে এই ব্র্যান্ডের। প্রতিটি ডিজাইনের পেছনে থাকে প্রকৃত উদ্দেশ্য। হতে পারে সেটা পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা, দেশপ্রেম, রাজনীতি, শান্তির প্রত্যয় অথবা একটি পোশাক বিভিন্নভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি।
খুশের ডিজাইনার রাইসাকে অনুপ্রেরণা জোগায় চারপাশের সবকিছু। সহজ থেকে শুরু করে জটিলতর ভাবনা—সবেতেই তার নিত্যদিনের জীবনের ছাপ। তাই কখনো নকশার প্রেরণায় থাকে রিকশার রঙিন হুড, আবার কখনো আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক নির্দেশক। ফ্যাশনকে ব্যক্তিত্বের অংশ মনে করেন রাইসা। সেই ভাবনা থেকে খুশে তিনি রেখেছেন ক্রেতার ইচ্ছা অনুযায়ী নকশা করার সুযোগ। কাস্টমাইজড অর্ডার তৈরির অপশন রয়েছে।
অফিশিয়াল যাত্রা করোনাকালে হলেও রাইসার মনে খুশের জন্ম ছোটবেলায়। তখন তার ঈদের জামা তৈরি হতো মায়ের হাতে। সেখানে কখনো মনমতো কুঁচি যোগ করতে বলতেন তিনি; আবার কখনো আবদার করতেন ভিন্ন রঙের কাপড় যোগের। সেখান থেকে আপসাইকেল, রিসাইকেলের সঙ্গে পরিচয়। পুরোনো শাড়ি থেকে তৈরি বিশেষ সংগ্রহ প্রদর্শন করেছেন আর্কা ফ্যাশন উইকে। কাজের মাঝে সময়কে ফুটিয়ে তোলার চাহিদা এই লেবেলের চিরন্তন। গতানুগতিকের সঙ্গে আধুনিকের মেলবন্ধন উপজীব্য। সেখান থেকে তৈরি হয় ফিউশন। আবার, নিজের দেশের সংস্কৃতিকেও করতে চায় ধারণ। যেসব উপাদানের শিকড় বাংলার মাটিতে, কিন্তু চলে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে, সেগুলো সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা আছে। তাই অলংকরণে প্রথম পছন্দ হ্যান্ড এমব্রয়ডারি। কারণ, এর সঙ্গে মিশে আছে বাংলার ঘ্রাণ। প্রতিটি ফোড়ে জড়িয়ে থাকে ভালোবাসার সুগন্ধ।
ফ্যাশন ফর অল দর্শনকে মনে রাখে খুশ। তাই বডি পজিটিভিটি এই ব্র্যান্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো সাইজের পোশাকই তৈরি করা সম্ভব। ব্র্যান্ডটি ৯০ টাকার মাস্ক থেকে লাখ টাকার গাউন—সবই তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলেবর বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে চান রাইসা। ফ্যাশন শুধু নায়ক-নায়িকা, ফ্যাশন ডিজাইনার বা বড় বড় ব্র্যান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক, এমনটা চান না; বরং স্বপ্ন দেখেন, একদিন ফ্যাশন হবে সবার।
ট্যাগলাইন ‘ফ্ল্যাক্সিবেল স্টাইল ফর আ ভার্সাটাইল লাইফ’ই বলে দেয় ব্র্যান্ডটির কাজের ধরন ও উদ্দেশ্য। স্টাইলের নিজস্বতার গুণমুগ্ধতা ধরে রাখার চেষ্টা সবেতেই স্পষ্ট। সঙ্গে যাপিত জীবনের সবকিছুকে সাদরে ফ্যাশনে অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা।
সামনের দিনে পরিসর বড় করার স্বপ্ন দেখে খুশ টিম। সঙ্গে থাকবে নিজস্ব কারখানা। তার আগে গুটি গুটি পথচলা। এগিয়ে যাওয়া।

 ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: খুশের সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top