কভারস্টোরি I লাল লালিত্য
১৬ মিলিয়নের বেশি রঙের এই দুনিয়ায় লালের দাপট কখনো কমেনি। এ যেন মুকুটহীন সম্রাট! শত বছর ধরে বিয়ের কনে আর লাল রঙের সন্ধি। কত প্যাস্টেল এলো গেল, সাদা থেকে কালোতেও ছুটল পছন্দের তীর। তবু লালের বীরত্ব অটুট। বাকি সব পানসে যেন! লিখেছেন সারাহ্ দীনা
বউ! শব্দটা শুনলেই টুকটুকে লাল ঘোমটা আর শাড়িতে লজ্জাবনত একটি মুখের কথা মনে পড়ে, তাই না? যদিও লাল রং থাকতেই হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। তবু শত বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে লালের উত্থান অবিচল। কালার প্লেটের গুরুত্বপূর্ণ রং এটি। ব্যবহার করা হয় না, এমন কোনো দেশ নেই। শক্তিশালী রং হিসেবে ফ্যাশন জগতে স্থান করে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া এই রঙের মাথায় যে মুকুট বসিয়েছে, তার তুলনা নেই পৃথিবীর বাকি মানচিত্রে। এই অঞ্চলের বিয়ে মানেই লাল রঙের ব্যবহার। কখনো সামান্য, কখনো পরিশীলিত, কখনো বাহুল্য বরাবর। যেমনভাবেই উপস্থাপন করা হোক না কেন, লালের আবেদন কমেনি এক রত্তিও।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিয়ের পর্ব একাধিক হয়ে থাকে। কোনো না কোনোটিতে কনেকে খুঁজে পাওয়া যায় লালে। অথবা লালেরই কোনো শেডে। আর তা না হলে, বিয়ে-পরবর্তী বউ আদর, দাওয়াতের মতো ঘরের আয়োজনে লালের উদ্ভাসন নজর কাড়ে।
অতীতে ভারতীয় উপমহাদেশে লাল রংকে দেখা হতো শক্তির প্রতীক হিসেবে; বিশেষত নারী শক্তির প্রতীক। হিন্দু বিয়েতে লাল রঙা সিঁদুর পরিয়েই সম্পন্ন হয় যজ্ঞ। আবার, উপাস্য দেবীর পরনের পোশাকেও থাকে লালের স্পর্শ। যেন দেবীর পোশাক প্রাণিত হয়েই কনের সবেতে এ রঙের উপস্থিতি। কিন্তু এখানে ধর্মের চেয়ে সংস্কৃতি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই মুসলিম বিবাহেও প্রাসঙ্গিক লাল। একটি মেয়ের কন্যা থেকে জায়াতে পরিণত হওয়ার সাক্ষী যেন!
লাল রঙের মনস্তাত্ত্বিক দিকে নজর দিলে দেখা যায়, সেখানে আছে সাহস ও ভালোবাসা—উভয়ই। একজন কনে যখন বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ করেন, তখন তিনি ভালোবাসায় পূর্ণ মন নিয়ে যেমন সামনে যান, আবার সম্পূর্ণ নতুনকে আপন করে নেওয়ার সাহসেও নিজেকে তৈরি করেন।
ইতিহাস কথা বলে
বৈদিক সভ্যতার সময়ে লালের মানে ছিল উর্বরতা, ভালোবাসা আর প্রাচুর্যের প্রতীক। কনেরা তখন সিঁদুরের লালে উদ্ভাসিত হতেন। কখনো সঙ্গত দিত লাল সুতায় বোনা কাপড় আর ওড়না। এরপর গুপ্ত যুগে লাল বিবেচিত হয় উন্নতির প্রতীক হিসেবে। সে সময়ে রেশমে বোনা কাপড় আসে মানুষের জীবনে। এরপর আসে মোগল সাম্রাজ্য; যেখানে লাল পরিপূর্ণভাবে বিয়ের পোশাকের রং হয়ে ওঠে। রেশম, মখমলের মতো অভিজাত ফ্যাব্রিক বেছে নেওয়া হতো কনের পোশাক তৈরিতে। আর সেখানে আভিজাত্য নিয়ে উদ্ভাসিত হতো সোনায় বোনা নকশা। মোগল রাজেরা নিজেদের বিয়ে এবং পরিবারের জন্য ব্যবহার শুরু করেন এমন বিলাসবহুল পোশাক। লালের ব্যবহার তখন রাজকীয় কারবার। অর্থাৎ বিলাসের প্রমাণ। সম্রাট, সম্রাজ্ঞী—উভয়ের পোশাকেই খোঁজ মেলে একাধিক শেডের। আবার, সেই সময়টাতেই তাঁতশিল্পের উত্থান। টানা ও পোড়েনের ছন্দে তৈরি হয় জামদানি। শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠে জামদানিপল্লি। আর বেনারসের লাল রং সিল্কও হয়ে ওঠে বিয়ের পোশাক। কোনোটার আবেদনই কম ছিল না। তবে দৃশ্যমান ছিল ভিন্নতা।
কলোনিয়াল পিরিয়ডেও লাল রং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯০৫ সালে শুরু হয় স্বদেশি আন্দোলন। সেই বিপ্লবের মূল স্লোগান ছিল, দেশি জিনিস ব্যবহার করো, বিদেশি পণ্য বর্জন করো। এই আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক নয়; ছিল সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ ও জাতীয় পরিচয়ের প্রকাশও। পোশাক, খাদ্য—সবকিছুতেই দেশের সম্পদ ও শিল্প নিয়ে গর্ব প্রকাশের ছিল প্রয়াস। সেই সময় দেশীয় তাঁতে তৈরি সাদা শাড়ি নারীদের মধ্যে দেশপ্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠে। বিশেষত লাল পাড় সাদা শাড়ি, যা মূলত বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতে তৈরি হতো। লাল পাড় ছিল শক্তি, আত্মমর্যাদা ও মাতৃশক্তির প্রতীক।
এ তো গেল পুরোনো দিনের কথা। বিশ শতকে হাজার রকম রঙের দুনিয়াতেও লাল প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। যদিও তত দিনে প্যাস্টেলের সঙ্গে পরিচয় সম্পন্ন। ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। আবার হাতির দাঁতের রং আইভরিও কম যাচ্ছে না। দেখাচ্ছে তার মহিমা। তবু সেখানে লাল চিরস্থায়ী! মসনদে বসতে পারেনি অন্য কোনো রং। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর অখণ্ড ভারতবর্ষ ভেঙে যখন নতুন দুই রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান তৈরি হয়, সে সময়ের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলার কোনো অংশ থেকেই লাল দাপট হারায়নি; বরং জামদানি আর গরদ নানাভাবে আরও বেশি মিশে গেছে নারীর জীবনে। একদম লাল জমিনে তৈরি হয়েছিল সিল্ক। জামদানি ও গরদ ভিন্ন নকশায় লালকে আপন করে নিয়েছিল। একহারা সাদা জমিনে রক্ত লাল পাড় ধরে রেখেছিল এই দুই রকমের শাড়ি। সেই থেকে এই—লালের জৌলুশ কমেনি এক রত্তিও। এই রং উপমহাদেশের মানুষের জীবনে মিশে গেছে। মানচিত্র পরিবর্তনের কারণে লালের সঙ্গে হয়নি কোনো বিরোধ।
লালের মনস্তত্ত্ব
বাঙালি বিয়েতে কনের গায়ে লাল রঙের হাজিরা যেন চিরচেনা দৃশ্য। কিন্তু এই রঙের উপস্থিতি কেবল ঐতিহ্যের অংশ নয়; এর পেছনে আছে গভীর মনস্তত্ত্ব, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য এবং নারীর আত্মপ্রকাশের ভাষা। লাল রং মানুষের হৃৎস্পন্দন বাড়ায়; উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। মনোবিজ্ঞানে একে বলা হয় সাইকোলজিক্যাল অ্যারাউজাল। এ কারণে সাজে বা পোশাকে লাল ব্যবহার করলে মানুষ নিজেকে আরও জীবন্ত, শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী মনে করে। আবার এই রং ভালোবাসারও প্রতীক। মনোবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু এলিয়টের গবেষণায় দেখা গেছে, লাল পরিহিত নারী বা পুরুষকে মানুষ আত্মবিশ্বাসী, আকর্ষণীয় বলে মনে করে। কারণ, লাল হলো শরীরের প্রাণশক্তির রং; যা অবচেতন মনে যৌবন, জীবনীশক্তি ও প্রজননশীলতার প্রতীক হয়ে ওঠে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে লাল মানুষকে দেয় কর্তৃত্বের সাহস। রাজনীতি, সামরিক পোশাক, এমনকি করপোরেট লোগোতেও এ রঙের ব্যবহার তাই নেতৃত্ব ও শক্তির ইঙ্গিতবাহী।
বিয়ের প্রেক্ষাপটে যখন কোনো কনে লাল পোশাক পরেন, সেটি হয়ে ওঠে আত্মপ্রকাশের ভাষা। বিয়েতে লাল পোশাক কেবল রীতি নয়; এটি এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক দৃশ্যপট, যেখানে নারী হয়ে ওঠেন কেন্দ্রবিন্দু, সৃষ্টির প্রতীক, শক্তির প্রতিমা ও আশীর্বাদের বাহক।
দ্য সিলভার স্ক্রিন গেম
শতবর্ষের লালের এই উজ্জ্বল উপস্থিতির পেছনে চলচ্চিত্রের ভূমিকাও ভাবার মতো। কারণ, রুপালি পর্দায় লাল দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে দর্শকদের। বলিউডের ১৯৬০ সালের আংশিক রঙিন চলচ্চিত্র ‘মুঘল-ই-আজম’-এ বিয়ের দৃশ্যে দেখা যায় লাল পোশাকে সোনালি কারুকাজ। এরপর ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালে হেমা মালিনী, শ্রীদেবী এবং বাংলা নায়িকাদের রিচ রেড সিল্ক শাড়ি ও সোনার অলংকরণে দেখা গেছে, যা ব্রাইডাল স্টাইলের জন্য আকাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে, ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘চোখের বালি’তে ঐশ্বরিয়া রাইকেও দেখা গেছে লাল শাড়িতে।
চলচ্চিত্রে লাল শাড়ি দেখানো হতো ভালোবাসা, উদ্যাপন ও তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে, যা দর্শকদের মনে আবেগিক ও দার্শনিক গুরুত্ব তৈরি করে। আজও এই উপমহাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে, হোক সেটি বলিউড, টলিউড কিংবা ঢালিউড—লাল ব্রাইডাল শাড়ি সিনেমার পর্দায় মূল পছন্দ।
সেকাল-একাল
বৈদিক যুগ থেকে আজ—লাল উজ্জ্বল। এখনকার ডিজাইনাররাও আপন করে নিচ্ছেন। ক্রেতা চাহিদার পারদের গতিও ঊর্ধ্বমুখী। ডিজাইনাররা বুননশিল্পকে আধুনিক কাট ও এমব্রয়ডারির সঙ্গে মিশিয়ে নতুনত্ব এনেছেন। শুধু বারো হাত শাড়িতেই লালের রাজ্যপ্রাচীর সীমাবদ্ধ থাকেনি। লেহেঙ্গা, শারারা, গারারা, ব্রাইডাল সালোয়ার স্যুটও স্পর্শ করেছে। লাল কনের প্রতিটি লুক যেন একেকটি ভিজ্যুয়াল স্টোরি। ইতিহাস, দর্শন, শিল্প ও ব্যক্তিগত রূপান্তরের প্রতিফলন। প্রতিটি সেলাই, জরি আর লালের ছায়া বহন করে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য। প্রতিটি ব্রাইডাল পোশাক একেকটি জীবন্ত ট্যাপেস্ট্রি যেন! সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা ও আবেগের মিশ্রণ। সময়ের স্রোতে সেখানে পরিবর্তন এলেও মূল একই। ট্র্যাডিশনাল টুকটুকে লাল শাড়ি থেকেই প্রাণিত হয়েছে আধুনিক সময়ের ওম্ব্রে রেড, মেরুন রেড, ব্রিক রেড।
রঙের অন্য ভুবন
লালের উষ্ণ শেডের সঙ্গে সোনার অলংকার মিলিয়ে রঙের ভারসাম্য বজায় রাখার চল রয়েছে। এই উপমহাদেশে স্বর্ণের চাহিদা তৈরির পেছনে এই ধারণা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মেকআপেও রংটি এড়িয়ে যাওয়ার জো নেই। বিয়ের কনের সাজে ঠোঁটের রং সাধারণত ডিপ রেড থেকে মেরুন পর্যন্ত হয়ে থাকে। চোখেও অনেক সময় দেখা যায় র্যাডিশ-ব্রাউন শেড। রোজি বা লাল ব্লাশ তো এখনো ইন ট্রেন্ড। আলতা, নেইলপলিশেও লাল উদ্ভাসিত। আর প্রথাগত চিহ্ন হিসেবে হিন্দু কনেদের জন্য লাল সিঁদুর অপরিহার্য।
ইতিহাসজুড়ে লাল রঙের দুটি বিপরীত অর্থ। ভালো-মন্দ আর প্রেম-ক্রোধ। যেভাবেই হোক, এটি নিঃসন্দেহে আবেগ ও প্রবল অনুভূতির রং এবং শিল্পকর্মে ব্যবহৃত প্রাচীনতম রংগুলোর অন্যতম। লাল রঙের রঞ্জক প্রকৃতিতে প্রচুর পাওয়া যায়। মানুষ ও প্রাণীর রক্ত থেকে শুরু করে লাল মাটি ও ধাতু পর্যন্ত। ভূমিতে লোহার অক্সাইডের উপস্থিতির কারণে মাটির রং লালে পরিবর্তিত হয়। অতীতে সাজসজ্জায় করা হতো এর ব্যবহার। এমন মাটি পিষে দেহে রং হিসেবে ব্যবহার করা হতো একসময়।
অন্যান্য প্রাথমিক লাল রঞ্জক ছিল সিসার টেট্রা-অক্সাইড, ভারতের রুবিয়া উদ্ভিদ, সিনবার ও কোকিনিয়াল। এশিয়ায় লাল রং সাধারণত সৌভাগ্য ও আনন্দের সঙ্গে যুক্ত। সূচনাকালে এই রঙের জন্য এই অঞ্চলে ভরসা রাখা হতো মান্দার গাছের ফুলে। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হতো মূল রঞ্জক এলিজারি। উত্তর ভারতে মূলত এই যজ্ঞ শুরু। কুসুম ফুলও ব্যবহৃত হয়েছে এ কাজে। হালকা লাল, কোরাল রেড তৈরিতে ছিল কার্যকরী। গুজরাট ও রাজস্থানে ব্লক-প্রিন্টেড কাপড়ের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ল্যাক পোকা থেকে প্রাপ্ত রেজিনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ঘন ও চকচকে এই লাল আরও উজ্জ্বল করার জন্য ফিটকারি মেশানো হতো। তুলা, রেশম বা উলের কাপড় পানি এবং ছাই দিয়ে ধুয়ে নিয়ে তারপর করা হতো রঙিন। যাতে প্রাকৃতিক তেল, মাটি ও সাইজিং দূর হয়। কখনো কখনো উদ্ভিদভিত্তিক সাবান ব্যবহৃত হতো কোমলভাবে পরিষ্কার করার জন্য।
প্যানটোন প্যারামিটার
ফ্যাশনে প্যানটোন অপরিহার্য হওয়ার কারণ, এটি একটি সর্বজনীন রঙের ভাষা প্রদান করে, যা ডিজাইনার, নির্মাতা ও বাজারের মধ্যে সামঞ্জস্য নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে। নিউইয়র্কে একটি লাল রং যখন প্যানটোনের শেড অনুযায়ী রেফার করা হয়, তা ঢাকা বা প্যারিসে একই রকম দেখা যায়। তাই এটি বৈশ্বিক ফ্যাশন প্রোডাকশনের জন্য অপরিহার্য। প্রযুক্তিগত নির্ভুলতার বাইরে ট্রেন্ডও নির্ধারণ করে প্যানটোন। এর কালার প্যালেটে লাল বিভিন্ন ধরনের শেড রয়েছে। উজ্জ্বল প্রাইমারি লাল থেকে গভীর, নরম ও উষ্ণ লাল পর্যন্ত।
মূল লাল রং
Pantone 186 C: উজ্জ্বল, ক্ল্যাসিক লাল, ব্র্যান্ডিং এবং সাহসী স্টেটমেন্টের জন্য।
Pantone 485 C: শক্তিশালী, সামান্য কমলা ছোঁয়া লাল, খুব প্রাণবন্ত।
গভীর ও উষ্ণ শেড
Pantone 200 C: পরিণত লাল, সামান্য বারগেন্ডি ভাব।
Pantone 187 C: গাঢ় লাল, পরিশীলিত ও এলিগ্যান্ট।
নরম ও সূক্ষ্ম শেড
Pantone 1767 C: নরম, প্যাস্টেল লাল, হালকা গোলাপি টোন।
Pantone 705 C: হালকা লাল-গোলাপি, কোমল ও রোমান্টিক।
ডিজাইনার’স লাভ
বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান থেকে নেপাল—দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রাইডাল ডিজাইনে লাল রং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রং কনেকে করে তোলে মেইন ক্যারেক্টার। লাল রঙের ওপর সোনালি জরি বা সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারির কাজ আজও কনেদের পছন্দের তালিকায় উজ্জ্বল। জামদানি, কাতান কিংবা বেনারসি—সবেতেই লাল যেন নকশার প্রাণ। একদিকে ঐতিহ্য, অন্যদিকে আধুনিক গ্লামারের মেলবন্ধন। লাল রং শক্তিশালী ভিজুয়াল প্রভাব তৈরি করে। এটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে, ফটোফ্রেমে প্রাণ আনে, আর কনেকে আরও বিশেষ করে তোলে। তাই ক্রেতা চাহিদা ছিল, আছে এবং থাকবে—বলাই যায়।
ফ্যাশন ফোরকাস্ট
বাংলাদেশে বিয়ের উৎসবের সময়কাল শুরু হয় নভেম্বর থেকে। এ বছরের কনেরাও যে লাল রঙের পোশাককে গুরুত্ব দেবেন, সেই ধারণা করা যায় বিভিন্ন তথ্য ও ডিজাইনারদের কাজ দেখে। সাহার রহমান কতুর, নাবিলা, জুবাইদা ফাইজা ক্লোদিং, রিলাস, সাফিয়া সাথীর ব্রাইডাল কালেকশনে লাল পেয়েছে প্রাধান্য। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণেও একই সুর। একটি বাজার বিশ্লেষণে ভারতের বাজার সম্পর্কেও জানা যায় একই রকম তথ্য। দ্য আলটিমেট ব্রাইডাল কালার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এই রং। স্প্রিংফিল্ড কান্ট্রি ক্লাবের একটি ওয়েডিং-ট্রেন্ড রিসোর্সে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে উজ্জ্বল লাল রং একটি শক্তিশালী স্টেটমেন্ট হবে। তথ্যগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, লাল শুধু ঐতিহ্যবাহী রং হিসেবে নয়; আধুনিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে, ব্রাইডাল ফ্যাশনে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ধরে রেখেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতে, মিউটেড রেডের চাহিদা বাড়বে। ফ্যাশন রিটেইল ব্র্যান্ড হু হোয়াট ওয়্যারের ট্রেন্ড রিপোর্ট বলছে, ফল সিজনে মেরুন, বারগেন্ডি ও উইন্টারবেরি টোন বেশি দেখা যাবে। যার শিকড় মূলত লালে।
আমানা রহমান
কনের পোশাক যদি লাল হয়, তাহলে ঠোঁটে রাখা যেতে পারে একই শেডের লিপস্টিক। সেই সঙ্গে চোখের সাজ কোমল হলে সামঞ্জস্য তৈরি হবে। টোন-ডাউন এখানে মেজর রোল প্লেয়ার। দিনে বিয়ে হলে আমার পছন্দ ন্যাচারাল সফট শেড। আর রাতের কিংবা ইনডোর আয়োজন হলে লিপ ও হাইলাইটার—দুই-ই হতে পারে খানিকটা গাঢ় শেডের। আবার, ট্র্যাডিশনাল ব্রাইডাল লুক চাইলে চোখে ব্রাউন টোন আর কাজলই সই। তা না চাইলে শ্যাম্পেইন গোল্ড হতে পারে অপশন। লালে লুকিয়ে আছে ক্ষমতায়নের শক্তি আর সাহস। তাই সবার মাঝেও নজর কেড়ে নিতে সক্ষম।
সাহার রহমান
লাল আমার কাছে শুধু রং নয়; একটি আবেগও। এর কারণ, আমাদের সংস্কৃতিতে মিশে আছে এই রং। শত বছর ধরে যেন এর রাজ্যশাসন। লাল ক্যানভাসে হ্যান্ডওয়ার্ক আমার ডিজাইনকে বিশেষ করে তোলে। বর্তমান সময়ের কনেরা প্যাস্টেল, জুয়েল টোনের সঙ্গেও পরিচিত। তবু লালের আবেদন হারিয়ে যায়নি। লাল শক্তি, সাহস, প্রেম ধারণ করে। অমলিন হয়ে অবস্থান করে ফ্যাশন ট্রেন্ডে। আমার পোশাক মেইড উইদ লাভ। নকশার বুননে ভালোবাসার গল্প। বিয়ের কনে আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে নতুন জীবনে পা রাখেন। সেখানে লালের অবস্থান সেকেলে নয়; বরং সুপ্রাচীন বিলাসী অতীতের আভা ছড়ায়।
মডেল: সাহার রহমান ও আমানা রহমান
ওয়্যারড্রোব: সাহার রহমান কতুর
জুয়েলারি: জড়োয়া হাউজ
পারান্দা: তাসা
ছবি: জিয়া উদ্দীন
