skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ

১৬ ডিসেম্বর। বিজয় দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে নির্মিত বাংলাদেশি প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে লিখেছেন লেখক, সম্পাদক ও চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু

বাইরের দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও প্রামাণ্যচিত্রের কদর বাড়ছে। তবে উন্নত বিশ্বে সব সময় যে প্রামাণ্যচিত্র সমান আদর পেয়েছে, তা কিন্তু নয়। নয়তো সত্তরের দশকে ফরাসি চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক ক্রিস্তিয়াঁ মেৎজ প্রামাণ্যচিত্রকে গোটা দুনিয়ার প্রেক্ষাপটে ‘প্রান্তিক অঞ্চল’ বা ‘সীমান্ত এলাকা’ বলে চিহ্নিত করতেন না। ‘ফিল্ম ল্যাঙ্গুয়েজ’ বইতে মেৎজ বলছেন, ‘সিনেমার দুনিয়ায় অ-আখ্যানমূলক ধারায় প্রামাণ্যচিত্র, শিক্ষামূলক ফিল্ম ইত্যাদি এখন প্রান্তিক অঞ্চল হয়ে গেছে, বলতে গেলে সীমান্তের এলাকা; অন্যদিকে, উপন্যাসের মেজাজ নিয়ে ফিচার লেন্থ ফিল্ম, যেগুলোকে স্রেফ ফিল্ম বলা হয়—ব্যবহারটা বেশ অর্থপূর্ণ—দিন দিন চলচ্চৈত্রিক প্রকাশের রাজকীয় মহাসড়কে নিজের আলামত স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর করে তুলেছে।’
তবে বিশ্বে এই পরিস্থিতি আর নেই। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে এই দৃষ্টিভঙ্গি। এর প্রমাণ আগের চেয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে টেলিভিশন চ্যানেল বাড়ার কারণে তো বটেই, এই সংখ্যা বাড়ছে তরুণ নির্মাতাদের আগ্রহের কারণেও। তারা তৈরি করছেন বিচিত্র সব বিষয়ের ওপর প্রামাণ্যচিত্র। তবে বিষয় বৈচিত্র্যের ভেতর নির্মাতাদের মধ্যে এখনো মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।
বাংলাদেশে প্রামাণ্যচিত্র শুরুর কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয় ‘স্টপ জেনোসাইড’ (১৯৭১) ছবিটির কথা। সকলেই জানেন, জহির রায়হানের হাত ধরে কেমন করে এই চলচ্চিত্র জন্ম নিয়েছে। এই ছবি এককভাবে প্রতিকূল পরিবেশ ঠেলে যেভাবে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির পক্ষে বিশ্বের কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছে, তা এককথায় অতুলনীয়। তবে তুলনা যে একেবারেই করা যায় না, তা নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ছবিকে তুলনা করি লাতিন আমেরিকার গেরিলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে। সেই অর্থে জহির রায়হান ছিলেন গেরিলা নির্মাতা।
‘স্টপ জেনোসাইড’ প্রামাণ্যচিত্রটি পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা ও পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর চালানো গণহত্যার এক অসম্ভব জরুরি দলিল। এর মধ্য দিয়ে জহির রায়হান কেবল বিশ্ববিবেকের কাছে বাংলার মানুষকে মুক্ত করার আহ্বানই জানাননি; বরং গোটা মানবজাতির মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম করে দিয়েছেন। গেরিলা কায়দায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রের আবেদন সে সময় যেমন মানবিক বোধের পরাকাষ্ঠা ছুঁয়েছিল, এখনো ঠিক তেমন করেই এই ছবি আমাদের মুক্তি আন্দোলন ও উপনিবেশবিরোধী মগ্নচৈতন্যে শিষ দিয়ে যায়।
একই সময়ে জহির রায়হান নির্মাণ করেন আরও একটি প্রামাণ্যচিত্র—‘আ স্টেট ইজ বর্ন’ (১৯৭১)। এই প্রামাণ্যচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতি কী হবে, সেই বিষয়ে যেমন আলোকপাত ছিল; তেমনি ছিল তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ মনসুর আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বক্তব্য। তখন আরও দুটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয় একই বিষয়ের ওপর। জহির রায়হানের সহযোদ্ধা, আরেক গেরিলা নির্মাতা আলমগীর কবির নির্মাণ করেন ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ (১৯৭১); জহির রায়হানের তত্ত্বাবধানেই ছবিটি বানান কবির। একইভাবে বাবুল চৌধুরী তৈরি করেন ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’ (১৯৭১)।
একাত্তর সালের এই চারটি ছবির মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়, অবিচার, বর্বরোচিত গণহত্যা, নির্যাতনের বীভৎস চিত্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতির কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হয়। ছবিগুলোর মাধ্যমে জাতীয় মুক্তির উন্মেষ ঘটেছিল বলেই জহির রায়হান এই চতুষ্টয় চলচ্চিত্রের নাম দিয়েছিলেন ‘জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র’। দুঃখের বিষয়, যার হাতে দিয়ে এই ‘জাতীয় ধারার চলচ্চিত্রে’র পথ চলা শুরু হয়েছিল, তাকেই দেশ স্বাধীনের কয়েক দিনের মাথায় অন্তর্ধান হতে হয়েছিল (ধারণা করা হয়, মর্মান্তিকভাবে খুন হয়েছেন তিনি)।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দুটি প্রামাণ্যচিত্র বেশ সাড়া জাগায় মানুষের মনে: একটি হলো ‘মুক্তির গান’ (১৯৯৫) এবং অন্যটি ‘সেই রাতের কথা বলতে এসেছি’ (২০০১)। তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ একাত্তর সালের রঙিন দৃশ্য দেখতে পান। যদিও এর মূল কৃতিত্ব মার্কিন চিত্রনির্মাতা লিয়ার লেভিনের। তিনি ১৯৭১ সালে যুক্ত হয়ে যান ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র সঙ্গে। এই সংস্থা তখন সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে সংগীতের মূর্ছনায় উজ্জীবিত করত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের। তাদের কর্মকাণ্ড ক্যামেরায় ধারণ করে রাখলেও অর্থের অভাবে প্রামাণ্যচিত্রটি সম্পন্ন করতে পারেননি লেভিন। কিন্তু ইতিহাসের দায় মেটাতে এসব দুর্লভ মুহূর্তের চিহ্ন জোগাড়ে নেমে যান তারেক ও ক্যাথরিন। তারা যখন ছবিগুলোকে গেঁথে এক অনন্য দলিলে রূপ দিলেন, তখন রীতিমতো হইচই পড়ে যায় সর্বত্র। দেশের বিভিন্ন জেলায় লাইন ধরে মানুষ এই প্রামাণ্যচিত্র দেখতে থাকে। ছবিটি মুক্তির পাশাপাশি এতে ব্যবহৃত গানের একটি অডিও অ্যালবামও প্রকাশিত হয়। সেটিও বেশ প্রশংসিত হয়।
‘মুক্তির গান’ ছবিটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখাতে নিয়ে যান পরিচালকদ্বয়। টানা তিন বছর ছবি দেখানোর সময় উপস্থিত দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ধারণ করেন তারা। সেসব প্রতিক্রিয়া আদতে হয়ে ওঠে কথ্য ইতিহাসের অংশ; কারণ, তারা একাত্তরের স্মৃতিচারণা করেছিলেন ‘মুক্তির গান’ দেখার পর। মুক্তিযুদ্ধের সেই মুখের কথার ইতিহাস নিয়েই তারেক ও ক্যাথরিন নির্মাণ করেন ‘মুক্তির কথা’ (১৯৯৯)। এই ছবিও বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্রের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
১৯৯৩ সাল থেকে আট বছর গবেষণা ও প্রস্তুতির পর কাওসার চৌধুরী নির্মাণ করেন ‘সেই রাতের কথা বলতে এসেছি’ (২০০১)। এই প্রামাণ্যচিত্রে একাত্তর সালের পঁচিশে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, সেটি ফুটিয়ে তোলা হয়। ছবিটি এতটাই আলোড়ন তৈরি করে যে পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় স্বীকৃতি দিয়ে বা স্বীকৃতি ছাড়াই এই ছবির বিভিন্ন দৃশ্য ব্যবহার হতে থাকে। কালরাত্রির ঘটনাটি এই প্রামাণ্যচিত্রে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন কাওসার চৌধুরী; পাশাপাশি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের। শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তানদের মর্মস্পর্শী বয়ান এই ছবিকে সমৃদ্ধ করে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংগ্রামের নানা দিক নিয়ে কয়েকটি প্রামাণ্য ও কাহিনিচিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল। তার দুটি উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র হলো ‘তাজউদ্দীন: নিঃসঙ্গ সারথি’ (২০০৭) ও ‘১৯৭১’ (২০১১)। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্যতম নেতা ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে তৈরি করা ‘নিঃসঙ্গ সারথি’ ছবিতে স্বাধীনতাসংগ্রামে একজন নেতার লড়াই, আত্মত্যাগ ও প্রজ্ঞার পরিচয় তুলে ধরা হয়। ছবিতে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাজউদ্দীনের সম্পর্কের টানাপোড়েনের দিকও উঠে এসেছে। সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাজউদ্দীনের স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীনের সাক্ষাৎকার।
তানভীর মোকাম্মেলের ‘১৯৭১’ প্রামাণ্যচিত্রটির দৈর্ঘ্য চার ঘণ্টার। এই ছবিতে নির্মাতার ভাষ্যে উঠে এসেছে, ‘গণহত্যা, নারী নির্যাতন, শরণার্থীদের ব্যাপক দেশত্যাগ, বিভিন্ন বাহিনী গঠন, গেরিলা যুদ্ধ ও নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সম্মুখযুদ্ধ এবং পরিশেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়।… তা ছাড়া রয়েছে সে সময়কার রাজনীতি, মুজিবনগর সরকারের কর্মকাণ্ড এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির দিকগুলো।’
উল্লিখিত ছবিগুলো ছাড়াও আরও অনেক প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে; সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো—স্মৃতি ’৭১ (১৯৯১), হৃদয়গাথা (২০০২), ডায়েরিজ অব বাংলাদেশ (১৯৭২), লংমার্চ টু ওয়ার্ডস গোল্ডেন বাংলা (১৯৭৪), মুক্তিযোদ্ধা (১৯৭৬), এক সাগর রক্তের বিনিময়ে (১৯৮৫), চারুকলায় মুক্তিযুদ্ধ (১৯৯৭), কামালপুরের যুদ্ধ (২০০১), মৃত্যুঞ্জয়ী (২০০১), স্বাধীনতা (২০০২), মুক্তিযোদ্ধা আমরাও (২০০৩), তখন (২০০৪), আমি স্বাধীনতা এনেছি (২০০৭), অন্য মুক্তিযোদ্ধা (২০০৭), কালরাত্রি (২০০৭), টিয়ার্স অব ফায়ার (২০০৭), আলবদর (২০১১) ও মার্সিলেস মেইহেম (২০১৮)। এ ছাড়া আশির দশকে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে সাতটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক।
প্রামাণ্যচিত্রে—চলচ্চিত্রবিষয়ক মার্কিন দেশের শিক্ষক মাইকেল রেনভের মতে—তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে: এক, দৃশ্যাবলিতে প্রাণ স্থাপিত হলো কি না; দুই, বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে জ্ঞানতাত্ত্বিক অবস্থা তৈরি হলো কি না এবং তিন, ঐতিহাসিক বয়ান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে কি না। এই তিনের মানদণ্ডে সকল প্রামাণ্যচিত্র উতরে যাবে, তা হয়তো নয়; কোনোটিতে প্রাণ স্থাপিত হলেও ঐতিহাসিক বয়ান হয়ে উঠবে না, অথবা জ্ঞানকাণ্ডে পত্র যোগ করলেও হয়তো তার ছবি কথা বলবে না। কাজেই এই ক্ষেত্রেও সফল ও অসফল হওয়ার ব্যাপার থাকছে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে এটা বলা যায়, প্রামাণ্যচিত্র আসলে শেষ পর্যন্ত একটা গল্পই বলতে চায়। সত্যি ঘটনার গল্প। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জীবনের এক অমোচনীয় সত্যি ঘটনা। তাই এ দেশের মানুষের ঘটনাটি নিয়ে যার যার মতো করেই এক বা একাধিক গল্প রয়েছে। এখন এসব গল্প যত বেশি প্রামাণ্যচিত্রে উঠে আসবে, ততই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পর তার দৃশ্যাবলি প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করুক, জ্ঞানকাণ্ডে যোগ করুক নতুন নতুন শাখা-প্রশাখা-পল্লব এবং স্বতন্ত্র বয়ানের জোরে নিজেই হয়ে উঠুক ইতিহাসের অংশ।

দোহাই:
ক্রিস্তিয়াঁ মেৎজ, ‘সাম পয়েন্টস ইন দ্য সেমিওটিকস অব দ্য সিনেমা’, ফিল্ম ল্যাঙ্গুয়েজ: আ সেমিওটিকস অব দ্য সিনেমা, অনুবাদ: মাইকেল টেইলর (নিউইয়র্ক: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৪); মাইকেল রেনভ, ‘দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট নন-ফিকশন’, থিওরাইজিং ডকুমেন্টারি, সম্পাদনা: মাইকেল রেনভ (নিউইয়র্ক: রাউটলেজ, ১৯৯৩); অনুপম হায়াৎ, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র, প্রথম আলো, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮; শাহরিয়ার কবির, একাত্তরের গণহত্যা ও জহির রায়হান, প্রথম আলো অনলাইন, ২৬ মার্চ ২০১৬; তানভীর মোকাম্মেল, আমার কাজ হচ্ছে সত্যকে তুলে ধরা (সাক্ষাৎকার), এনটিভি অনলাইন, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top