skip to Main Content

সালতামামি ২০২৫ I বিউটি বাজার

এ বছর বৈশ্বিক গ্লোবাল বিউটি ইন্ডাস্ট্রির বৃদ্ধি বেশ চমকপ্রদ। মার্কেট সাইজ প্রায় ৫৭২ বিলিয়ন ডলার। বছরের সবচেয়ে বড় ও দ্রুত বর্ধমান প্রসাধন বাজার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। বিশ্বব্যাপী ডমিনেন্ট ট্রেন্ড হিসেবে ক্লিন বিউটির রাজত্ব। বিউটি টেকও বুম করেছে এ সময়ে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল ট্রাই-অনের মাধ্যমে পার্সোনালাইজড এক্সপেরিয়েন্স পেয়েছে গুরুত্ব

সৌন্দর্য দুনিয়ার জন্য এক নতুন সূচনা দেখা গেছে এ বছর। যেখানে বিউটি শুধু সাজসজ্জা নয়; বরং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, নৈতিকতা আর সচেতনতার এক বহুমাত্রিক মেলবন্ধন। স্কিন মিনিমালিজম থেকে এআই-চালিত ট্রাই-অন, বায়োটেক উদ্ভাবন থেকে সাসটেইনেবল প্যাকেজিং—সবকিছুর মধ্যেই পরিবর্তনের স্পষ্ট ছাপ।
ক্রেতা চাহিদা
ক্রেতাদের চাহিদা বদলেছে। আর ক্রেতাসন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌন্দর্য বিশ্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা। টেকসই তত্ত্ব পেয়েছে দারুণ গুরুত্ব। প্লাস্টিক ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট যথাসম্ভব কমিয়ে আনার প্রয়াস দেখা গেছে। এথিক্যাল সোর্সিংয়ের বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিংয়ের দিকেও তৈরি হয়েছে আগ্রহ। এককথায়, ধরণীর ক্ষতিতে মোটেই সায় নেই আর। পণ্য উৎপাদনের বিস্তারিত জানার ক্ষেত্রেও সচেতনতা বেড়েছে। ইনগ্রেডিয়েন্ট সেফটি ও ট্রান্সপারেন্সি তাই মাস্ট। প্যারাবেন, সালফেট, সিনথেটিক ফ্রাগরেন্স নিয়েও সচেতনতা তৈরি হয়েছে। অনেক ক্রেতা এসব উপাদানের উপস্থিতি আছে, এ ধরনের প্রসাধন ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বায়োটেক থেকে উদ্ভাবিত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
ট্রেন্ড
বছরজুড়ে স্কিন মিনিমালিজম দারুণ আলোচনায়। ত্বকের যত্নের রুটিনে বাহুল্য বর্জন করেছেন অনেকে। গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে টেকসই তত্ত্বের সঙ্গে নতুন করে হাজির হয়েছে ওয়াটারলেস বিউটি, আর কার্বন-নিউট্রাল ব্র্যান্ড। মেকআপে বিরাজ করেছে ডোপামিন বিউটি ট্রেন্ড। সেখানে দেখা গেছে বোল্ড, কালারফুল মেকআপ, হোলোগ্রাফিক আই লুক এবং মিনি অ্যাকসেসরিজ। লিপস্টিক, আইশ্যাডে শেড রেঞ্জ বেড়েছে। জেন্ডার-নিউট্রাল প্রোডাক্ট আর পার্সোনালাইজড পারফিউমও থেকেছে চর্চায়। মাইন্ডফুল বিউটি রুটিনে আগ্রহী হচ্ছেন তরুণেরা। ফলস্বরূপ, গবেষণা ও উন্নয়নে মনোযোগ বেড়েছে উৎপাদনকারীদের।
নতুনের আহ্বান
২০২৫ সালে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে বিউটি ট্রেন্ডে, যা ত্বক সম্পর্কে বহু বিস্তারিত তথ্য পেতে সাহায্য করছে। স্কিনের বায়োলজিক্যাল এইজ এবং রিঅ্যাকশন সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা মিলছে। ফরাসি ব্র্যান্ড ল’রিয়েল বাজারে এনেছে সেল বায়ো পয়েন্ট নামের একটি ডিভাইস, যা এআই জেনারেটিভ মেকআপ সাজেশন দিতে পারঙ্গম। ট্রাই-অনের মাধ্যমে রিয়েল টাইম সাজেশনও দিতে পারে। স্মার্ট মিররের মাধ্যমে হলিস্টিক ওয়েলনেস ট্র্যাক করা যায়। সে অনুযায়ী পরামর্শ মেলে। সুগন্ধির জগতেও আছে প্রযুক্তির ব্যবহার। ফ্রাগরেন্স টেক ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুগন্ধি তৈরি হচ্ছে এখন। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা কোনোভাবেই মানছেন না ক্রেতা। তাই সেখানেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। কসমেটিক টেস্টিং এমনভাবে করা হচ্ছে, যেন কোনো প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সবশেষে, ল্যাব-গ্রো পেপটাইড, ক্রুয়েলটি ফ্রি ফর্মুলা আর ইকো-ফ্রেন্ডলি প্যাকেজিংয়ের মতো সাসটেইনেবল উদ্ভাবন ২০২৫ সালকে ওয়েলনেস-ফোকাসড লাক্সারির বছরে পরিণত করেছে।
বিউটি কোলাব
২০২৫ সালে বিউটি দুনিয়ায় বেশ কিছু হাই-ইমপ্যাক্ট অ্যাম্বাসেডর চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ল’রিয়েল প্যারিসের সঙ্গে নাম যুক্ত হয়েছে চীনা তারকা লিম ইউনের। শিভাজি বিউটি সঙ্গে ঝাও লিয়িং, ওয়াইএসএলের সঙ্গে ব্ল্যাক পিংকের রোজ নাম লিখিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্গানিকাওনের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সুনেহরা তাসনিম এবং গ্লো অ্যান্ড লাভলির সঙ্গে সাবিলা নূর যোগ দিয়েছেন। বছরজুড়ে বিউটি ল্যান্ডস্কেপ আরও গ্লোবাল, ডাইভার্স আর ইনফ্লুয়েন্স-ড্রাইভেন হিসেবে বিরাজ করেছে।
নিষিদ্ধে নিশ্চিন্ত
এ বছর বিউটি বাজারে কিছু রাসায়নিক উপাদান ক্ষতিকর হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে ক্যানসার সৃষ্টি করে এমন উপাদান; যেমন কোজিক অ্যাসিড, আরবুটিন, ট্রাইক্লোসান।
প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বিউটি ও পার্সোনাল কেয়ার মার্কেটের রাজস্ব আনুমানিক ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্থানীয় ব্র্যান্ড স্কয়ার, কেয়া, রিমার্ক প্রভৃতি আমদানিকারক ব্র্যান্ডগুলোর পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। স্কিন ক্যাফের সুনামও সোনা যাচ্ছে বেশ। ক্রেতাচাহিদার তথ্য বিশ্লেষণেও পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয়। ভোক্তারা এখন শুধু সৌন্দর্য নয়; গুণগত মান, নিরাপদ প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। আরও জানা যায়, প্রসাধন এখন শুধু বিশেষ দিনের চাহিদা নয়; বরং নিত্যদিনের প্রয়োজন হিসেবে বিবেচিত। শুধু শহরে নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বাড়ছে চাহিদা। দেশের পণ্যমান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পাশাপাশি কিছু কোম্পানি গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেসের (জিএমপি) মতো আন্তর্জাতিক মান নিয়েও আগ্রহী হচ্ছে। ই-কমার্স ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ক্রেতাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে, যা সঠিকভাবে সমাধান সম্ভব হলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের প্রসাধন বাজার। মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চাই। কেননা, নকল ও নিম্ন মানের পণ্য ক্রেতাকে পণ্যবিমুখ করে। তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট ও কঠোর নীতিমালা তৈরি এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কাঁচামালের দামে ওঠানামা এবং আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, কাঁচামালের দাম বেশি হলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ভ্যালু চেইনে নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হলে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হতে পারে। তবে চ্যালেঞ্জ কম নয়; রেগুলেটরি ফাঁক, নিম্নমানের পণ্যের প্রবেশ এবং গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি এখনো বড় বাধা।
২০২৫ সাল জুড়ে বাংলাদেশে বিউটি জগৎ আরও রঙিন আর গতিশীল থেকেছে। শুধু লাক্সারি বা বড় শহরের লোকের জন্য নয়; এখন মেকআপ, স্কিন কেয়ার আর ব্যক্তিগত যত্নের পণ্য দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। পৌঁছে গেছে দেশের সবখানে। লোকাল ব্র্যান্ডগুলোও ক্রমে নিজেদের ছাপ রেখে যাচ্ছে, আর বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।
 সারাহ্ দীনা
ছবি: ক্যানভাস আর্কাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top