ত্বকচর্চা I অ্যাকনেসংকুল
সমস্যাপীড়িত এই ত্বকে যথাযথ যত্ন জরুরি। অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য
অ্যাকনে, পিম্পল কিংবা ব্রণ-ত্বকের সাধারণ সমস্যাগুলোর একটি। ২০১৫ সালের এক জরিপ বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৩৩ মিলিয়ন মানুষ অ্যাকনেতে আক্রান্ত। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, এগারো থেকে ত্রিশ বছর বয়সী চারজন মানুষের মধ্যে গড়ে তিনজনের ত্বকেই ব্রণের সংক্রমণ। মূলত বয়ঃসন্ধিতে এর প্রকোপ বাড়লেও যেকোনো বয়সেই ব্রণের উপদ্রব দেখা দিতে পারে। সাধারণত ত্বকে জমতে থাকা মৃতকোষ স্তর আর অতিরিক্ত তেলের নিঃসরণের ফলে হেয়ার ফলিকলের সঙ্গে যুক্ত সিবাশিয়াস গ্ল্যান্ডের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দিলেই সৃষ্টি হয় ব্রণ। এন্ড্রোজেন নামক একধরনের হরমোনের কারণে বয়ঃসন্ধিতে ব্রণের প্রকোপ বাড়ে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় কিংবা মেনোপোজের সময়েও হরমোনের গরমিল হয় শরীরজুড়ে। অনেকের ত্বকে তখন ব্রণ হতে দেখা যায়। বংশপরম্পরাতেও এতে আক্রান্ত হন অনেকে। জীবনযাত্রার ধরন থেকেও এ সমস্যা হতে পারে। খাবার, ওষুধ, ঘুম, মানসিক চাপ এমনকি মোবাইল ফোনেও এটি সংক্রমিত হয়। শুরুতে ত্বকে দেখা দেয় হোয়াইটহেড, ব্ল্যাকহেড। পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ বাড়লে তা পরিণত হয় যন্ত্রণাদায়ক ব্রণ আর অ্যাকনেতে। সচরাচর মুখত্বকে ব্রণ বেশি দেখা যায়। তবে অনেকেরই তা ছড়িয়ে পড়ে বুকে, কাঁধে এমনকি পিঠেও। ব্রণের শুরুটা যেমন অস্বস্তিকর, তা সেরে যাওয়ার পরেও অনেক সময় বিশ্রী দাগছোপ আর পিগমেন্টেশন রেখে যায় ত্বকে। যার প্রভাব শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও ক্ষতি করে আক্রান্তদের।
রোজনামচায়
সকালটা শুরু হোক সঠিক ক্লিনজার ব্যবহারে। অ্যাকনে আক্রান্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত অ্যাকনেরোধী উপাদানে তৈরি ত্বক পরিষ্কারক পণ্যগুলো। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড কিংবা বেনজয়েল পার অক্সাইডযুক্ত ক্লিনজারগুলোই সবচেয়ে কার্যকর। এগুলো দারুণ কেরাটোলাইটিক, যা ত্বকের উপরের স্তরে জমতে থাকা মৃত ত্বককোষগুলো সারাইয়ে সাহায্য করে। বন্ধ লোমকূপগুলো কোমলভাবে এক্সফোলিয়েট করে দেয়। তারপরই টোনার ব্যবহার জরুরি। এটা ত্বকে বিন্দুমাত্র ময়লা থাকলে তা-ও দূর করে। সঙ্গে ত্বকের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে। পৌঁছে দেয় জরুরি আর্দ্রতা। টোনারেও থাকুক স্যালিসাইলিক কিংবা গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের উপস্থিতি। তারপর যদি চিকিৎসক অনুমোদিত কোনো অ্যাকনে জেল বা ক্রিম মাখতে হয়, তা ব্যবহারের পালা। এরপর ময়শ্চারাইজার। অয়েল ফ্রি, নন-কমেডোজেনিক এবং জেল বেসড ময়শ্চারাইজারগুলো অ্যাকনে আক্রান্ত ত্বকের জন্য বেশি ভালো। এগুলো লোমকূপ বন্ধ করে দেয় না। ফলে ব্রণের আশঙ্কা অনেক কমে যায়। আর যদি বাইরে বেরোনোর পরিকল্পনা থাকে, তাহলে দিনের বেলায় সানস্ক্রিন মাস্ট। নিদেনপক্ষে এসপিএফ ৪০ যুক্ত সানস্ক্রিনগুলোও হওয়া চাই নন-কমেডোজেনিক ও তেলমুক্ত। প্রতিদিনকার মেকআপ বাছাইয়েও এ বিষয়গুলোর উপস্থিতি মাথায় রাখা জরুরি। আর নন-অ্যাকনেজেনিক মেকআপ পণ্য ব্যবহার করতে পারলে তো আরও ভালো।
রাতের রুটিনেও ক্লিনজিং সমান গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকে মেকআপ থাকলে অ্যাকনে আক্রান্ত ত্বকের জন্য উপযোগী অয়েল বেসড বা বাই ফেসড ফর্মুলার মেকআপ রিমুভার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। তারপর করা যেতে পারে ডাবল ক্লিনজিং। প্রথমে কোনো ক্লিনজিং অয়েল দিয়ে মুখ ম্যাসাজ করে, পরিষ্কার করে, তারপর ব্যবহার করা যেতে পারে পছন্দসই ক্লিনজার। ক্লে বেসড ম্যাটিফায়িং ক্লিনজারগুলো এ ক্ষেত্রে দারুণ। তারপর টোনার। রাতে অ্যাকনেযুক্ত ত্বকে সেরাম ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেরাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধান। উপাদানের তালিকায় নজর রাখা জরুরি। ভিটামিন সি, নিয়াসিনামাইড, রেনিটল, হায়ালুরনিক আর স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত সেরামগুলো বেছে নিলেই ভালো। পরিষ্কার বালিশে শোবার অভ্যাস জরুরি।
সপ্তাহান্তে
অ্যাকনে আক্রান্ত ত্বকেরও এক্সফোলিয়েশন জরুরি। এই কাজে চাই সতর্কতা। নতুবা হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। এ ধরনের ত্বকের যত্নে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট বেশি কার্যকর। কারণ, ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট অনেক রুক্ষ হয়ে থাকে, যা ত্বকের ক্ষতি বাড়ায়। আর এক্সফোলিয়েট করার সময় ব্রাশ বা পুনর্ব্যবহারের উপযোগী যন্ত্রের বদলে একবারই ব্যবহার করা যায় এমন এক্সফোলিয়েটিং প্যাডগুলো ব্যবহৃত হতে পারে সপ্তাহে দুবার। সালফারযুক্ত মাস্ক অ্যাকনে সারিয়ে ত্বকের দাগছোপ কমাতে সাহায্য করবে। চারকোল মৃতকোষ সারিয়ে ত্বককে রাখবে ব্রণমুক্ত। ক্লে মাস্ক গভীর থেকে দূষণ আর ব্যাকটেরিয়া দূর করে ত্বক রাখবে পরিষ্কার। এএইচএ এবং বিএইচএ যুক্ত মাস্কে এক্সফোলিয়েটিং উপাদান থাকে, যা ব্রণযুক্ত ত্বকের যত্নে দারুণ।
মাসে একবার
ভালো কোনো ত্বক বিশেষজ্ঞ কিংবা ডার্মাটোলজিস্টের কাছে গিয়ে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে নেওয়া যেতে পারে। পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা আর ওষুধ ব্রণ কমাতে সহায়ক হবে। অ্যান্টি-অ্যাকনে ট্রিটমেন্টও করে নেওয়া যেতে পারে ভালো কোনো পার্লার থেকে।
প্রাকৃতিক পরিচর্যায়
অ্যাকনে আক্রান্ত ত্বকের চর্চায় যারা রাসায়নিক বর্জিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে চান, তাদের জন্যও রয়েছে সহজ সমাধান। একদম প্রকৃতিপ্রাণিত।
ক্লিনজার: মধু আর অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করতে হবে ২ থেকে ৩ মিনিট। তারপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। অ্যাক্টিভেটেড চারকোলও মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে অ্যালোভেরার সঙ্গে। বন্ধ লোমকূপ পরিষ্কার করবে এটি। দূষণ দূর করবে ভেতর থেকে। রুখবে ব্রণ।
টোনার: অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে টোনার হিসেবে। এ ছাড়া টি ট্রি অয়েলের সঙ্গে সামান্য শসার রস মিশিয়ে তা-ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ময়শ্চারাইজার: জোজোবা অয়েল কিংবা হেম্প সিড অয়েল অ্যাকনে আক্রান্ত যেকোনো ধরনের ত্বকে আর্দ্রতার জোগান দেবে। তৈলাক্ত ত্বকে অ্যালোভেরা আর টি ট্রি অয়েলের মিশ্রণ মাখা যেতে পারে। শুষ্ক ত্বকে আমন্ড অয়েল বেশি জুতসই।
এক্সফোলিয়েটর: ওটসের সঙ্গে মধু আর দই মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে ব্রণযুক্ত ত্বকে। এ ছাড়া মধু, অলিভ অয়েল আর লেবুর মিশ্রণও এ ধরনের ত্বক এক্সফোলিয়েট করে দারুণভাবে। বেকিং সোডার সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে তা-ও ব্যবহার করা যায়। ব্রণের দাগ দূর করবে এটা।
ফেস মাস্ক: ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে বেকিং সোডা আর মুলতানি মাটি মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিমের গুঁড়া আর গোলাপজলের মিশ্রণ দারুণ অ্যান্টি অ্যাকনে মাস্ক। হলুদ, দই আর মুলতানি মাটির মিশ্রণও ব্রণ সারাতে সাহায্য করে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: সামিরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন