কুন্তলকাহন I বন্ধু লাল গোলাপী
উৎসবের রঙে মেতে ওঠার সময় রঙিন হয়ে ওঠে চুল। এর আগে ও পরের নিয়মগুলো মেনে চললে রঙের রাসায়নিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে না
দুর্গাপূজার মূল উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে। আনুষ্ঠানিক কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তবেই দশমী, মানে বিসর্জন। এই ধাপগুলোতে ঢাক বাজানো, ধুনচি নাচ, রঙ খেলা, সিঁদুর খেলা- এমনি নানা আনন্দময় পর্বও রয়েছে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বর্ণিল অংশ হলো রঙ খেলা। একে অপরকে নানান রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা। কিন্তু এই আনন্দের আয়োজন থেকেও অনেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখেন চুলের ক্ষতি হওয়ার ভয়ে। রঙ যত মজার হোক না কেন, এতে চুলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। রঙে যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তাতে চুল শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলে চুল ভাঙতে শুরু করে। তবু উৎসবের বর্ণিলতা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা যায় না। পূজার এই আনন্দময় অংশটি যেন মনখারাপের কারণ না হয়, সে ব্যবস্থা করে নেওয়াই ভালো। কেমিক্যাল কালারের বদলে হারবাল কালার পাউডার দিয়ে চলতে পারে রঙের খেলা। তবে সব সময় তা সম্ভব হয় না। রঙ খেলার আগে ও পরে কিছু নিয়ম মেনে চললে চুল সুরক্ষিত থাকবে।
রঙ খেলায় সাধারণত পাউডার ব্যবহার করা হয়। এই পাউডারে থাকা রাসায়নিক চুলের ক্ষতি করতে পারে। তাই খোঁপা বেঁধে কিংবা বেণি করে নিন। চুল পিনআপ মানে খোঁপার মতো স্টাইলে, গুছিয়ে এমনভাবে ক্লিপ দিয়ে আটকে ফেলুন, যাতে সহজে খুলে না যায়। এতে হেয়ারস্টাইলও হলো, চুলও সুরক্ষিত থাকলো। এ ছাড়া চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করতে চাইলে পনিটেইলের বদলে বেণি করে ফেলাই ভালো। চুল ছোট হলে একটি ব্যান্ডানা দিয়ে ঢেকে ফেলুন। আরও সুরক্ষা পেতে স্কার্ফ বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে ফেলুন। এতে রূঢ় রঙ থেকে চুল বেঁচে যাবে।
সাধারণত চুলে যে তেল ব্যবহার করছেন, তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস বা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি মাথার ত্বকে খুশকি হতে দেবে না। এক টেবিল চামচ জোজোবা অয়েলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে আঙুলের ডগার সাহায্যে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। এতে মাথার ত্বকে রঙ বসে যাবে না।
চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করে নিন। রঙ খেলতে যাবার আগে চুলে এমন কোনো হেয়ার মাস্ক দিন, যা কন্ডিশন করার পাশাপাশি চুলের গোড়াও মজবুত করে তুলবে। যেহেতু চুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তা ভেতর থেকে মজবুত হওয়া চাই, টান লেগে যেন ছিঁড়ে বা ভেঙে না যায়।
রঙ খেলার আগে যখনই সুযোগ পাবেন, মাথার ত্বক ম্যাসাজ করে নিন। তাতে রক্তসঞ্চালন বাড়বে। চুল মজবুত হতে সাহায্য করবে এটি। হালকা গরম তেল যথেষ্ট পরিমাণে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। এটি চুলে রঙ আটকে যাওয়া বা বসে যেতে বাধা দেবে।
রঙ খেলার কয়েক দিন আগে শ্যাম্পু ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। যতটা সম্ভব চুল ময়শ্চার করে রাখুন। শ্যাম্পু চুল শুষ্ক করে রাখবে এবং রঙের বিরূপ প্রভাব ফেলতে সাহায্য করবে। এটি এড়িয়ে চললে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে মাথার ত্বক স্বাভাবিক তেল নিঃসরণ করবে এবং চুল ময়শ্চার থাকবে। চুল ভেঙে যাবে না।
এবার আসা যাক রঙমাখা চুলের পরিচর্যায়। প্রথমে হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে নিন। এতে রঙ ওঠানো সহজ হবে। রঙ ধুয়ে নেবার পর হারবাল বা মাইল্ড শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। নিশ্চিত হয়ে নিন এগুলো প্যারাবেনমুক্ত কি না। ভালো হয় চুল ধোয়ার আগে একটি ডিপ কন্ডিশনার মাস্ক ব্যবহার করলে।
অলিভ অয়েল হাফ টেবিল চামচ, নারকেল তেল ১ টেবিল চামচ, মধু ১ টেবিল চামচ, টক দই ১ টেবিল চামচ ভালো করে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল হয়ে উঠবে মসৃণ, উজ্জ্বল ও কোমল।
শ্যাম্পু দেওয়ার আগে রঙ ভালো করে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। রঙ মাখানো চুলে সরাসরি শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। এতে জট পাকিয়ে যাবে। এটি ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গেলে চুল বেশি ঝরে পড়বে ও ভেঙে যাবে।
চুল ধোয়ার পর শুকিয়ে যাবার আগেই মাথার ত্বকে লেবুর রস লাগিয়ে নিন। এটি মাথার ত্বকের পিএইচ লেবেল ঠিক করে নিতে সহায়তা করবে। লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড পিএইচ ব্যালান্স স্বাভাবিক করে তুলতে সহায়তা করে। এরপর রোদে একদম যাওয়া যাবে না। লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিংও বটে। তাই এটি চুলে থাকা অবস্থায় রোদে গেলে চুল বিবর্ণ করে দিতে পারে।
শুকিয়ে যাবার পর চুলে আবার তেল দিন। এতে ময়শ্চার নিশ্চিত হবে। চুল ও মাথার ত্বকে তেল প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগানও দেবে। যেকোনো তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ভালো ফল দেবে ক্যাস্টর ও কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে দিলে। এটি বেশ গভীরে পৌঁছাতে সক্ষম। ক্যাস্টর অয়েল কিছুটা স্টিকি ও ঘন, তাই এর সঙ্গে নারকেল তেল বা অন্য কোনো তেল মিশিয়ে নেওয়াটা ভালো।
এবার রঙিন হয়ে উঠুন উৎসবের মতো উপভোগ্য সব রঙে। নিশ্চিন্তে। শুধু খেলতে নামার আগে ও পরে নিয়মগুলো ঠিকঠাক মেনে চললেই হলো।
আহমেদ বুবলি
মডেল: মাইশা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন