অর্গানিক I ইকো-ফ্রেন্ডলি
নিজেকে সুন্দর করে তুলতে গিয়ে পৃথিবীর অকল্যাণ যেন না হয়, সে ভাবনা থেকে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব বিউটি টুল
সাজগোজ করে শুধু নিজেকে নয়, পরিবেশকেও সুন্দর করে তুলতে পারবেন। কীভাবে? পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে। এসব উপকরণ ব্যবহারে নিজেকে যেমন সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা যাবে, তেমনি চারপাশের পরিবেশও সুন্দর হয়ে ওঠে। আপনার অনুভূতিতে যোগ হবে ভালো লাগার নতুন মাত্রা।
নিজেকে সুন্দর করে তোলার জন্য চাই যথাযথ মেকআপ। তবে এতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ট্রেন্ড ও পদ্ধতি। কীভাবে মেকআপ আরও নিখুঁত করে তোলা যায়, তা নিয়ে চলছে নানান নিরীক্ষা। এ ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয় মেকআপ প্রয়োগের উপকরণের ওপর। নানা সাইজ ও শেপের ব্রাশ তৈরি হচ্ছে এখন মেকআপ প্রয়োগ আরও নিখুঁত ও সহজ করে তোলার জন্য। বেশির ভাগই কৃত্রিম উপকরণে তৈরি বলে এগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এখন আবার পরিবেশ রক্ষার নামে এমন কিছু মেকআপ ও বডি ব্রাশ তৈরি করা হচ্ছে যেগুলো বেশ নরম এবং পশম ও পালকের মতো প্রাণিজ উপকরণে তৈরি। এগুলো পচনশীল বলে নষ্ট হয়ে যাবার পর পরিবেশের ক্ষতি করে না। কিন্তু এসব ব্রাশ তৈরির উপকরণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া পরিবেশের জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। কেননা প্রাণীর পশম বা পালক সংগ্রহের কাজে বেশির ভাগ সময় প্রাণী শিকার কিংবা হত্যা করতে হয়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই বিশ্বব্যাপী সুন্দর জীবনযাপনে অনুপ্রাণিত করতে শুরু হয়েছে ‘মাই ট্রু বিউটি’ নামক আন্দোলন। পরিবেশের ক্ষতি না করেই সুন্দর হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
আজকাল ইকো-ফ্রেন্ডলি সৌন্দর্য উপকরণের ব্যবহার বেড়েছে। তবে যখন কেউ সিদ্ধান্ত নেয় যে ইকো-ফ্রেন্ডলি বা পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করবে, তার চিন্তায় প্রথমেই হয়তো মেকআপ ব্রাশ বা বডি ব্রাশ থাকে না। কিন্তু এই ভাবনা আগেই আসা উচিত। ব্রাশগুলোর কোনোটি বেশ নরম ও ফ্লাফি, যা প্রাণীর আসল পালক বা পশম থেকে তৈরি। এ ধরনের ব্রাশের ব্রিসলে অনেক সময় মৃতকোষ, ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ থাকে, যা ত্বকের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। কিন্তু ভেগান বা সিনথেটিক ব্রাশ এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্ত। এগুলো অ্যালার্জিও হতে দেয় না, আর দামেও সুলভ।
পরিবেশবান্ধব ব্রাশের হাতলগুলো নবায়নযোগ্য বাঁশ ও অন্যান্য সহজলভ্য ম্যাটেরিয়ালে তৈরি। ব্রিসল তৈরিতেও রিসাইকলড সিনথেটিক ফাইবার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সিনথেটিক বলে এগুলো নরম নয়। সঠিক মাপের উপকরণে তৈরি হওয়ায় বেশ নরম এবং সহজে মেকআপ ব্লেন্ড করে নিতে সাহায্য করে। এগুলোর মধ্যে অপশনও রয়েছে প্রচুর।
প্রাণী ও পরিবেশবান্ধব পণ্য সম্পর্কে বহুল প্রচলিত তথ্য হলো, বৈশ্বিক ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে এগুলো বেশ শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এমনটাই মনে করছেন ভেগান মেকআপ আর্টিস্ট ডেনিয়েল শ্লিজ। তিনি লক্ষ করেছেন, এটি আসলে ভোক্তার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। যেকোনো ধরনের পরিবেশবান্ধব ও প্রাণিবান্ধব মেকআপ পণ্য তারা বেছে নেবে। বিশেষ করে যারা ভেগান লাইফস্টাইল বেছে নিয়েছেন, তারা এ ধরনের পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। এটা ভালো লক্ষণ। আর ভেগানিজম অবশ্যই ট্রেন্ডি কিন্তু মানুষ এটি বুঝতে পেরেছে যে এথিক্যাল পণ্যের ব্যবহার ও সাসটেইনেবল লাইফস্টাইল বেছে নেওয়াটা প্রাণী ও পরিবেশ সর্বোপরি পৃথিবীর কল্যাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ করে অ্যানিমেল হেয়ার মেকআপ ব্রাশের জায়গায় সিনথেটিক ব্রাশের ব্যবহার বেড়েছে, যা পরিবেশ রক্ষায় একটি সেরা বিষয় হিসেবে বিবেচিত। এ ক্ষেত্রে ম্যাক গত বছরের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছিল, ব্র্যান্ডটির তৈরি মেকআপ ব্রাশগুলো শতভাগ সিনথেটিক ও প্রকৃতিবান্ধব। এটি ভোক্তা ও মেকআপ আর্টিস্টদের জন্য দারুণ খবর, যারা জুতসই পরিবেশবান্ধব মেকআপ ব্রাশ খুঁজছিলেন।
এই ধারণা ঠিক নয় যে, পরিবেশবান্ধব পণ্য মানে তা প্রাণিজ উপকরণে তৈরি হতে হবে। এতে পরিবেশ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণীর ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রকৃতিতে সব প্রাণীর টিকে থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রাণীর ওপর পরীক্ষা চালায় না বটে, কিন্তু পশম বা পালক ব্রাশের ব্রিসল তৈরিতে ব্যবহার করে।
শরীরের মৃতকোষ পরিষ্কার ও এক্সফোলিয়েশনের জন্য বডি ব্রাশের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। একেও পরিবেশবান্ধব করে তোলার জন্য বিভিন্ন বিউটি ব্র্যান্ড ও কোম্পানিগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন বাজারে হাতে তৈরি বডি ব্রাশ পাওয়া যায়। উদ্ভিজ্জ ব্রিসলের এসব ব্রাশের মানও ভালো। এটা ভাবার কারণ নেই যে, উদ্ভিজ্জ বলে এগুলো খসখসে ও শক্ত হবে। বরং বেশ নরম, যা ড্রাই বডি ব্রাশিংয়ের জন্যও বেশ জুতসই।
নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি এই পৃথিবীকেও সুন্দর করে তোলার কাজ চলতে থাকুক।
আহমেদ বুবলি
মডেল: আফরোজ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন