ফুড বেনিফিট I কুলের বিলকুল
ফলটি সহজলভ্য। কিন্তু এর রয়েছে বিস্তর গুণ। স্বাস্থ্যরক্ষায় যেমন কার্যকর, তেমনি সৌন্দর্যচর্চায়ও
মুখের কথায় বরই। বইয়ের ভাষায় কুল। আমাদের দেশে মোটেও অচেনা নয়। গাছ ঝাঁকিয়ে বরই ঝরানোর শব্দ এখনো অনেকের শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়। হাতে লবণ নিয়ে কাঁচাপাকা বরই খাওয়া, সেই স্বাদ অমৃত সমান। বাড়ির আনাচে-কানাচে অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠে বরইগাছ। যত্ন আত্তি ছাড়াই বাঁচতে পারে বছরের পর বছর। শীতে ফল আসে। গোল, লম্বাটে, চ্যাপ্টা। সবুজ। পাকলে হলুদ কিংবা লাল। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই আছে এ গাছ। এর আদি নিবাস আফ্রিকায়। বর্তমানে এশিয়াজুড়েই বরইয়ের উপস্থিতি।
শুকিয়েও এটি খাওয়া যায়। তাতে পুষ্টিগুণের পার্থক্য ঘটে না। প্রতি ১০০ গ্রাম খাওয়ার উপযোগী বরইয়ে খাদ্যশক্তি আছে ৭৯ কিলোক্যালরি, শকর্রা ২০.২৩ গ্রাম, আমিষ ১.২ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৭৭.৮৬ গ্রাম, থায়ামিন ০.০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৯ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৪০ আইইউ, ভিটামিন বি৬ ০.০৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৪৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ ০.০৮৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম, জিংক ০.০৫ মিলিগ্রাম এবং সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম। এ উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন অসুখ সারাইয়ের কাজ করে। যেমন বরইয়ে থাকা ভিটামিন সি গলার ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, জিভে ঠান্ডাজনিত লালচে ব্রণের মতো ফুলে যাওয়া এবং ঠোঁটের চামড়া ওঠা রোধ করে। বরইয়ের রস অ্যান্টি-ক্যানসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ফল ক্যানসার সেল, টিউমার সেল, লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এখনকার পরিচিত অসুখ। দাওয়াই বরই। এ ছাড়া ডায়রিয়ায় বরই ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ১০ থেকে ১৫ গ্রাম শুকনো বরই তিন কাপ পানিতে মিশিয়ে জ্বাল দিতে দিতে এক কাপ পরিমাণ করে নিন। সেই পানি ছেঁকে দই ও ডালিমের রস মিশিয়ে সেবন করলে উপকার পাবেন।
মুটিয়ে যাওয়া, রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা এবং ব্রংকাইটিস সারায় বরই। খাবারের রুচিবর্ধক হিসেবে এ ফলের খ্যাতি আছে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও খাওয়া হয় এটি।
সর্দি কাশি প্রতিরোধ করতে পারে বরই। মানসিক দুর্বলতা কাটাতেও সহায়ক এ ফল। অবসাদ বাড়ানোর জন্য দায়ী স্ট্রেস হরমোন। দুশ্চিন্তা ও অনিদ্রার কারণও এটি। বরই খেলে এ হরমোন নিঃসরণের মাত্রা কমে। ফলে অবসাদের পাশাপাশি দুশ্চিন্তা কমে যায়।
হজমে উপকারী এর খোসা। শুকনো বরইয়ের সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়া, সৈন্ধব লবণ ও চিনি মিশিয়ে খেলে পেট ফাঁপা দূর হবে। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং কোলেস্টেরল কমাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এ ফল।
বরইয়ের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে থাকা ফ্রি র্যাডিকেল নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং যকৃৎ সুরক্ষিত থাকে। একই কাজ করে এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটোকেমিক্যাল উপাদানগুলো।
আগেই বলা হয়েছে, মুটিয়ে যাওয়া রোধ করে বরই। এতে ফ্যাট নেই বললেই চলে। দুটি বরই শরীরে প্রায় ৪৪ ক্যালরি জোগান দেয়, অথচ সেখানে ফ্যাটের পরিমাণ শূন্য। এতে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন হাড় শক্ত ও মজবুত করে। আয়রন ও ফসফরাস রক্ত উৎপাদন ও সঞ্চালনপ্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে। মাংসপেশি শক্তিশালী করতেও বরইয়ের ভূমিকা আছে। ফলে সুঠাম শরীর পেতে চাইলে বরই খেতে পারেন।
শুকনো বরইয়ে স্যাপোনিন, অ্যালকালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড নামের উপাদান থাকে। এগুলো রক্ত পরিশুদ্ধ করে। হাঁপানির প্রতিষেধক আছে এই ফলে। শুকনো বরই ভাপে সেদ্ধ করে খেলে অ্যাজমায় উপকার পাওয়া যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে এটি। পাশাপাশি কণ্ঠ পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য চায়ের সঙ্গে শুকনো বরই মেশানোর চেয়ে স্যুপের সঙ্গে মেশানো ভালো। এতে কাশি সারে। চৈনিক চিকিৎসাবিদ্যা বলে, লাল শুকনো বরইয়ের সঙ্গে সাদা ছত্রাক ও রক ক্যান্ডি মিশিয়ে সেদ্ধ করে খেলে কাশি প্রশমিত হয়। ফুসফুসের সমস্যারও সমাধান হয়। তা ছাড়া এ ফল ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ত্বক কোমল রাখে এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করে। শুকনো বরই মেশানো চা পেটের ব্যথা সারায়।
এর গাছের ছালেও আছে স্বাস্থ্যোপকারিতা। রক্ত আমাশয়ের ক্ষেত্রে বরইগাছের কাঁচা ছাল দুই গ্রাম পরিমাণ নিয়ে বেটে তাতে দুধ মিশিয়ে দুই থেকে তিন দিন খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়ে যায়।
শ্বেতপ্রদর দূর করতে ৫ গ্রাম শুকনো কুলের সঙ্গে সামান্য আখের গুড় মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৮ থেকে ১০টি বরইয়ের বীজ ভেঙে ভেতরের শাঁস বের করে মাড়িয়ে নিয়ে আধা চামচ চাল ধোয়া পানি এবং সামান্য দুধ মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। মাসিকের পর অনেক সময় যোনিমুখে চুলকানি হয়। এ ক্ষেত্রে ৫ গ্রাম শুকনো বরইয়ের গুঁড়া আখের গুড় বা চিনির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে আরাম পাওয়া যায়। বোলতা, ভিমরুল কিংবা যেকোনো বিষাক্ত পতঙ্গ কামড় দিলে আক্রান্ত স্থানে যজ্ঞডুমুর ও বরইগাছের পাতা বেটে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণা উপশম হয়।
ু শিবলী আহমেদ
ছবি: ক্যানভাস
বড়ই অনেক সুস্বাদু প্রকৃতির খেতে ভারী মিষ্টি। পশুপাখিদের নিয়ে গল্প পড়ার সময় বড়ই খেতে আসলেই দারুন লাগে। পশুপাখিদের সম্পর্কে গল্প পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।