skip to Main Content

সেলুলয়েড I কণ্ঠ

কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নন্দিতা রায়
অভিনয়: শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, জয়া আহসান, পাওলি দাম, চিত্রা সেন, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, সৃজনী মুখোপাধ্যায়, ইশিক সাহা, কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, তনিমা সেন, বিপ্লব দাশগুপ্ত প্রমুখ
সংগীত: অনুপম রায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
চিত্রগ্রহণ: শুভঙ্কর ভড়
সম্পাদনা: মলয় সাহা

কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রের একঝাঁক তরুণ পরিচালকের সৌজন্যে এমন কিছু রুচিশীল ও শিল্পসম্মত ছবি তৈরি হচ্ছে, যেগুলো দর্শককে হলমুখী করছে। বাণিজ্যিকভাবেও আসছে সাফল্য। গল্প বলার ধরন থেকে শুরু করে আঙ্গিক, সংগীতের ব্যবহার—সবকিছুতেই কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রে সুদিন ফিরিয়ে এনেছে এসব ছবি। এমনই আরেকটি ছবি সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘কণ্ঠ’।
বাচিকশিল্পী ও পেশায় রেডিও জকি অর্জুন মল্লিক এফএম শোয়ে মাতিয়ে রাখেন কলকাতার রেডিও শ্রোতাদের। অর্জুনের স্ত্রী পৃথা মল্লিকও বাচিক শিল্পী এবং টেলিভিশন অ্যাঙ্কার। একদিন রেডিওতে শো করার সময় শ্রোতাদের টেলিকলের মাধ্যমে অর্জুন জানতে পারেন, কিশোরী শ্রোতা সহেলী ছাদের কার্নিশে বসে আছে। অর্জুন ওই শোতেই সহেলীর কাছ থেকে তার মায়ের ফোন নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করেন। আত্মহত্যা থেকে সহেলীকে ফেরান। বাচিক শিল্প এবং রেডিও শোর জন্য তিনি যেদিন শহরের বড়সড় একটি প্রতিষ্ঠানের প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার পান, সেদিনই তার গলা থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে। ক্যানসার ধরা পড়ে। ডাক্তার জানান, গলার ভয়েস বক্স অপারেশন করে বাদ দিতে হবে। চিরদিনের মতো বাক্শক্তি হারাবেন বলে অর্জুন অপারেশনে রাজি হন না। কিন্তু স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের (ইশিক সাহা) কথা ভেবে, বন্ধু ও পরিবারের অনুরোধে অপারেশন করান। বাকশক্তি হারান। প্রাণোচ্ছল অর্জুন অবসাদে ডুবে যান। এই অবস্থায় তিনি নিজেই একদিন খুঁজে বের করেন ল্যারিংজেকটমি স্পেশালিস্ট ও স্পিচ থেরাপিস্ট রোমিলা চৌধুরীকে। রোমিলা ঢাকার মেয়ে, বিবাহ ও কর্মসূত্রে কলকাতার বাসিন্দা এবং ডিভোর্সড। কলকাতা ছেড়ে তিনি ঢাকায় ফিরে যাবেন। এই অবস্থায় ল্যারিংজেকটমির কেস নিতে রাজি হন না। পরে মেয়ে সহেলীর মুখে জানতে পারেন, এই সেই অর্জুন, যার জন্য মেয়ের প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। স্পিচ থেরাপি শুরু হয় অর্জুনের। রোমিলার প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয় তার, তিনিও অর্জুনের কাছের বন্ধু হয়ে ওঠেন। অর্জুন ফের কৃত্রিমভাবে এবং খাদ্যনালি দিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে কথা বলা শুরু করেন। অর্জুনের স্ত্রী, যে তাকে আগলে রেখেছেন সর্বদা, তার মনে সন্দেহ তৈরি হয়। এটা দূর করতে রোমিলা ঢাকায় ফিরে যান। সেদিনই নতুন করে কৃত্রিম কণ্ঠস্বর দিয়ে রেডিও শোতে প্রত্যাবর্তন করেন অর্জুন।
অর্জুন চরিত্রে শিবপ্রসাদ অনবদ্য। ল্যারিংজেকটমি পেশেন্টদের মতো কণ্ঠস্বর দিয়ে পুরো ছবিকে তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। রোমিলা চরিত্রে জয়া ফের অসাধারণ। স্মার্টনেস, গভীরতা, আভিজাত্য, প্রাণচঞ্চল—সবই ফুটিয়ে তুলেছেন নিখুঁতভাবে। অর্জুনের স্ত্রী পৃথার চরিত্রে পাওলি দাম আবার একটি অসামান্য কাজের নজির রাখলেন। সাংসারিক মায়া, প্রেম, শাসন—এসব নিয়ে তিনিও অনবদ্য। বাকি চরিত্রগুলোর মধ্যে বরিশালি পিসিমা চিত্রা সেন, ল্যারিংজেকটমির আরেক পেশেন্ট চরিত্রে পরান বন্দ্যোপাধ্যায় দারুণ। প্রতিটি চরিত্রকেই সাফল্য এনে দিয়েছেন এ ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।
এই চরিত্রগুলোকে বাস্তবিক ও বিশ্বস্ত করে তুলেছে কস্টিউম ও মেকআপ। ক্যানসারের আগে গাঢ় ও লাইট কালারের কন্ট্রাস্ট ক্যাজুয়াল শার্ট, টি-শার্ট, জিনস আর মুখভর্তি দাড়ি নিয়ে শিবপ্রসাদ প্রাণোচ্ছল রেডিও জকির চরিত্রে, আর ভয়েস বক্স বাদ দেওয়ার পর হালকা রঙের ঘরোয়া পোশাকে তার অবসাদ ফুটিয়ে তোলা কিংবা রোমিলার তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে বাক্শক্তি ফিরে পাওয়ার সময় তার পোশাকের পরিবর্তন দারুণ বাস্তবানুগ। গলায় ক্ষত আড়ালের জন্য রোমিলার (জয়া) বিশেষ স্কার্ফকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট করে তোলা হয়েছে। টাইট খোঁপা, উজ্জ্বল রঙের সালোয়ার, স্কার্ট, টপ আর শাড়িতে রোমিলা চরিত্রের সঞ্জীবনী আকর্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। পাওলির শাড়ি, সালোয়ারের ব্যবহার আর প্রয়োজনীয় পরিমিত মেকআপ পৃথার চরিত্রটির সঙ্গে বেশ মানানসই হয়েছে। তবে কস্টিউমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুযোগ পাওয়া গেছে থেরাপিস্ট রোমিলা চৌধুরীর চরিত্রে। আভিজাত্য, রুচি, সম্ভ্রম, দৃঢ়তা—সবই নিখুঁত হয়ে উঠেছে জয়ার অভিনয়ের পাশাপাশি তার পোশাকে।
সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা আর মিউজিক অনবদ্য। ছবিটি নন-অ্যাক্টরদের দিয়ে শুরু হয়, এটা বোঝানোর জন্য যে, তারা কলকাতার সাধারণ মানুষ এবং এফএমের শ্রোতা। মূল ন্যারেটিভে যাওয়ার আগে শহরে ছড়িয়ে থাকা বন্ধুতা, কর্মচাঞ্চল্য, একাকিত্ব, অবসাদ, প্রেম, বিনোদন—এসবের কোলাজ দেখানো হয়, যা আর্ট ডিরেকশন ও সিনেমাটোগ্রাফির নান্দনিকতাকে প্রতিভাত করে। এডিটিং, সাউন্ড ও মিউজিকের যোগ্য সংগত ছবিটিতে মূর্ত হয়েছে।

 অতনু সিংহ

কুইজ
১। এ ছবিতে জয়া আহসানের চরিত্রটির নাম কী?
ক। রুবিনা। খ। রাবেয়া। গ। রোমিলা চৌধুরী
২। অর্জুন মল্লিকের পিসিমার দেশের বাড়ি কোথায়?
ক। ফরিদপুর খ। চট্টগ্রাম গ। বরিশাল
৩। অর্জুন মল্লিক পেশায় কী?
ক। রেডিও জকি খ। অভিনেতা। গ। সাংবাদিক
গত সংখ্যার বিজয়ী

১. তুষার হালদার, জিগাতলা, ঢাকা।
২. আবিদা সুলতানা, সেগুনবাগিচা, ঢাকা।
৩. ফারহানা ইয়াসমিন, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top