ফিচার I স্বস্তিদায়ক খাবারের গল্প
বিষণ্নতায় স্বস্তি দেয় কমফোর্ট ফুড। হাই ক্যালরি আর কার্বোহাইড্রেটের আধার এই খাবারের আরাম তো নিতে হয় বুঝেশুনে
ব্রেকআপের পর এক বক্স আইসক্রিম বা চকলেট খাওয়া যেন সাধারণ দৃশ্য হয়ে গেছে হলিউডের রোম্যান্টিক কমেডিতে। এমন পরিস্থিতিতে নায়িকা কেন খায় এত চকলেট আর আইসক্রিম? উত্তর হলো, যখন এই হাই ক্যালরি আর হাই কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হয়, তখন মনের ভেতর একধরনের স্বস্তি কাজ করে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও জীবনে ঘটে যাওয়া খারাপ মুহূর্তগুলো ভুলে থাকা যায়। শুধু ব্রেকআপ নয়, কাজের বা পড়াশোনার চাপ, স্ট্রেস— সবকিছু থেকে যখনই মানুষ একটু স্বস্তি পেতে চায়, তখনই সবাই এমন কিছু খাবারের খোঁজ করে, যা তার মনকে প্রশান্ত কিন্তু চাঙা করে। মূলত এসব খাবারকেই পশ্চিমে কমফোর্ট ফুড বলা হয়। আমেরিকায় টার্মটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৬৬ সালে পাম বিচ পোস্ট পত্রিকায় ওবিসিটি বিষয়ক একটি নিবন্ধে। তাতে বলা হয়, যখন কেউ প্রচণ্ড স্ট্রেসে থাকে, তখন কমফোর্ট ফুডে শুধু স্বস্তিই নয়, ছোটবেলায় পাওয়া একধরনের নিরাপত্তাবোধ অনুভব করা যায়। যেসব মানুষ বেশি দুঃখে থাকে, তাদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি এই খাবারের কারণেই।
কমফোর্ট ফুডের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো হাই কার্বোহাইড্রেট, হাই ফ্যাট, হাই ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং অস্বাস্থ্যকর। এ ছাড়া যেসব খাবারের সঙ্গে ঐতিহ্য এবং আবেগ জড়িত, তাকেও কমফোর্ট ফুড বলা হয়ে থাকে। আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় কমফোর্ট ফুড হচ্ছে আইসক্রিম। এরপরই আসে চকলেট, চকলেট কেক, ব্রাউনি, ম্যাক এন চিজ, ম্যাশড পটেটো, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশের আছে নিজস্ব কমফোর্ট ফুড। আমাদের দেশে যেমন ফুচকা। এরপর চটপটি, ঝালমুড়ি, বিরিয়ানি ইত্যাদি। বর্ষাকালে খিচুড়ি, বেগুন ভাজি আর ইলিশ মাছকেও কমফোর্ট ফুড বলা যায়।
কমফোর্ট ফুডের হেলথ বেনিফিট খুব একটা বেশি নয়, তার ওপর এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক। একটি নরমাল চিজ বার্গারে রয়েছে ৩০০ ক্যালরি, ফ্যাট আছে ১২ গ্রাম এবং কার্বোহাইড্রেট ৩৩ গ্রাম। ২টি নরমাল সাইজের ব্রাউনিতে আছে ৪৬৬ ক্যালরি, ২৯ গ্রাম ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট ৫০ গ্রাম। ১০০ গ্রাম চকলেট আইসক্রিমে আছে ২১৬ ক্যালরি, ২৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ১১ গ্রাম ফ্যাট। নরমাল ১ পিস চকলেট কেকে আছে ৩৭১ ক্যালরি, ফ্যাট আছে ১৫ গ্রাম এবং কার্বোহাইড্রেট ৫৩ গ্রাম। এক স্লাইস পিৎজায় আছে ২৮৪ ক্যালরি, ফ্যাট ১০ গ্রাম এবং কার্বোহাইড্রেট ৩৬ গ্রাম। বোঝা যাচ্ছে, কমফোর্ট পাওয়ার জন্য কী পরিমাণ ফ্যাট, কার্ব ও ক্যালরি শরীরে ঢোকানো হচ্ছে। তার ওপর আপনি যদি ঠিকমতো ব্যায়াম বা নিয়মমাফিক হাঁটাচলা না করেন, বাড়বে ওজন, সঙ্গে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস এমনকি ক্যানসার হওয়ার ঝুঁঁকি। হতে পারে গ্যাস্ট্রিক, আলসার বা হজমে সমস্যা। শরীরে বেড়ে যাবে টক্সিন। তৈলাক্ত এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবারের জন্য বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে ত্বকে। যেমন ব্রণের প্রকোপ বাড়তে পারে, এমনকি অল্প বয়সে মুখে দেখা দিতে পারে বয়সের ছাপ। তাই আমাদের উচিত এসব কমফোর্ট ফুড খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা। যদি প্রায়ই এসব খান, তাহলে নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করতে হবে। খাওয়ার পর অবশ্যই অতিরিক্ত ক্যালরি ও ফ্যাট ঝরিয়ে ফেলতে হবে।
কমফোর্ট ফুড নিয়ে গবেষণা হওয়ার পর থেকে অনেক বিতর্ক শুরু হয়েছে। ফলে এটি কী করে স্বাস্থ্যকর উপায়ে খাওয়া যায়, ডায়েটিশিয়ানরা সেই অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন। নেট ঘাঁটলেও পাওয়া যাবে সুস্বাদু সব কমফোর্ট ফুডের স্বাস্থ্যকর সংস্করণ বানানোর রেসিপি। এ ক্ষেত্রে ডায়েটিশিয়ানদের দেওয়া পদ্ধতি এখন খুবই জনপ্রিয়। যেমন
ম্যাশড পটেটো থেকে বাটার বাদ দেওয়া
ম্যাক এন চিজে বাটারের পরিমাণ কমানো
চকলেট চিপ কুকির বদলে ফ্যাট বাদ দিয়ে চকলেট চিপ মাফিন খাওয়া
আইসক্রিমে লো ফ্যাট মিল্ক ও চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করা। স্বাদ বাড়ানোর জন্য এর সঙ্গে মেশানো যেতে পারে মিষ্টি ফল
সুপ থেকে ক্রিম বাদ দেওয়া
পিৎজা, বার্গারে মাংসের পরিবর্তে সবজি খাওয়া
চিনির বদলে মধু, বাটারের পরিবর্তে সানফ্লাওয়ার অথবা অলিভ অয়েল, ফ্যাট মিল্কের জায়গায় লো ফ্যাট মিল্ক ব্যবহার করে খাবার বানালে ক্যালরি ও ফ্যাট কমে আসে। ফলে শরীরে এর কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে না। কিছু হলদিয়ার ভার্সনের রেসিপিও খুব জনপ্রিয় হয়েছে গত কয়েক বছরে। আমেরিকার অনেক ক্যাফে ও ডাইনারে স্বাস্থ্যকর কমফোর্ট ফুড সার্ভ করা হয়। এর ভেতর রয়েছে টার্কি বার্গার, কলিফ্লাওয়ার পিৎজা (গ্লুটেন ফ্রি), ভেগান চিজ কেক, ব্রিঞ্জাল বার্গার, স্পিনাচ লাজানিয়া, বেকড ভেজিটেবল মুসাকা, কলিফ্লাওয়ার আলফ্রেডো পাস্তা ইত্যাদি।
ফাহমিদা শিকদার
ছবি: ইন্টারনেট