ফিচার I রাইড ইট রাইট
পুরোনো হলেও এ ফ্যাশন প্রথাছুট। গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া। স্ট্রিট ফ্যাশনে প্রাণিত বর-কনেরাও বেছে নিচ্ছেন এ পোশাক। নিজেদের আলাদা দেখানোর জন্য
সাজপোশাকের জগতে জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড ‘রাইডার ফ্যাশন’। পশ্চিমে স্ট্রিট স্টাইলে এটা খুব দেখা যায়। যারা বাইক চালিয়ে চলাফেরা করে, তারা যেমন এই ফ্যাশন ফলো করে, তেমনি যারা বাইকের ধারেকাছে যায় না, তাদের অনেকেই এই ধারার অনুসারী।
কাউবয়
রাইডার ফ্যাশনের শুরুটা কিন্তু বাইক দিয়ে নয়, ঘোড়া দিয়ে। ওয়েস্টার্ন মুভি দেখে বা বই পড়ে আমরা যে ঘোড়ায় চড়া কাউবয়দের কথা জানি, তাদের আউটফিট থেকেই কিন্তু এই ধারার উৎপত্তি। জিনস প্যান্ট, জ্যাকেট, বাকল বেল্ট, হ্যাট, ব্যান্ডানা আর রোপার এবং হেসিয়ান বুট— এই হলো কাউবয়দের আউটফিট। বর্তমানে ফ্যাশনে আবারও ফিরে এসেছে এই ট্রেন্ড।
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, পুরোনো এই পশ্চিমা স্টাইল কীভাবে এই সময়ে ফ্যাশনে যুক্ত হলো? সাম্প্রতিক ওয়েস্টার্ন ট্রেন্ড খুব সহজেই গ্রহণ করা যায়। কিছু মৌলিক নিয়ম অনুসরণ করলেই চলে। তবে মনে রাখা উচিত, ওয়েস্টার্ন ওয়্যার ট্রেন্ড মানে হেড টু টো কাউবয় লুক নয়। একটি শার্ট বা প্যান্ট কিংবা জ্যাকেট অথবা অ্যাকসেসরিজ দিয়ে রেগুলার লুকে ব্লেন্ড করলেই চলবে।
ওয়েস্টার্ন ডেনিম, চেক শার্ট দিয়ে খুব সহজে ক্যাজুয়াল লুক আনা যায়। এ ছাড়া স্টেটমেন্ট জ্যাকেট তো আছেই। এই ধাঁচের জ্যাকেট একটি সাধারণ লুককে খুব সহজেই অন্য রকম করে দিতে পারে। বেছে নেওয়া যায় অথেনটিক ওয়েস্টার্ন ডেনিম জ্যাকেট, অ্যানিমেল প্রিন্টেড লেদার জ্যাকেট, বেইজ কালার কটন জ্যাকেট অথবা ফ্রিঞ্জ জ্যাকেট। ফুল স্লিভ কটন শার্ট, চেক ফ্লানেল শার্ট, ডেনিম শার্ট আর ভেলভেট শার্ট— এসবই হলো ওয়েস্টার্ন শার্ট। বুটের ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি। ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কাউবয় বুট না গেলে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো। এগুলো উঁচু হয় কিছু বুটের সামনের অংশ সরু চোখা হয়ে থাকে এবং এর শ্যাফট হয় লম্বা। এর সঙ্গে প্যান্ট পরলে বুটের শ্যাফটের ভেতর প্যান্টের নিচের অংশ ঢুকিয়ে রাখতে হয়। ডেনিম জিনসের সঙ্গে এই বুট ভালো মানায়। হ্যাট ছাড়া কাউবয়দের লুক অসম্পূর্ণ। এটি ছাড়াও বর্তমানে যে ওয়েস্টার্ন অ্যাকসেসরিস খুব চলছে সেগুলো হলো, লেদার বাকল বেল্ট আর বোলো নেকটাই। উইকেন্ড হ্যাং আউট, গেট টুগেদার পার্টি বা নরমাল আউটিংই হোক— যদি নিজেকে সবার থেকে আলাদা দেখানোর ইচ্ছা হয়, তবে ওয়েস্টার্ন স্টাইল আদর্শ।
বাইকার
বাইকার ফ্যাশন সব সময়ই সাহসী। ওয়েস্টার্ন স্টাইল বেশ পুরোনো হলেও বাইকার ফ্যাশন তা নয়। এর শুরু পঞ্চাশের দশক থেকে। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য ওয়াইল্ড ওয়ান’ যেখানে বিখ্যাত অভিনেতা মারলন ব্রান্ডোকে দেখা যায় জনি স্টাবলারের ভূমিকায়, যে কিনা একটি মোটরসাইকেল ক্লাবের লিডার। তার আউটফিট ছিল, আরভিং শটের সৃষ্টি ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট পারফেক্টো, ব্লু ডেনিম, ইঞ্জিনিয়ার বুট আর ক্যানভাস ক্যাপ। চতুর্থটি ছাড়া ব্রান্ডোর পুরো লুকটাই তখন থেকে হয়ে ওঠে বাইকার স্টেটমেন্ট। এই লুক শুধু তাদের নয়, রেবেল, মিউজিশিয়ান, টিন— সবাইকে খুব প্রভাবিত করে। তাই এখনো ব্রান্ডোর সেই লুক বাইকার স্টাইলের ক্ল্যাসিক বলে মানা হয়।
লেদার বা ডেনিম জ্যাকেট আর প্যান্ট, গন্টলেট গ্লাভ, লেদার বুট— ব্যস, হয়ে গেল বাইকার স্টাইল।
জ্যাকেট
১৯২৮ সালে নিউইয়র্কে আরভিং শট নামের একজন জ্যাকেট মেকার প্রথম ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট বানান। আর এটি বানানোই হয় শুধু বাইকারদের জন্য। নিজের প্রিয় সিগার ব্র্যান্ডের নামে এর নাম দেন পারফেক্টো। এই জ্যাকেটকেই বিখ্যাত করেন ব্রান্ডো। এখনো বাইকারদের প্রথম পছন্দ লেদার জ্যাকেট। অবশ্যই কালো। যারা বাইকার ইন্সপায়ার আউটফিট পরে, তারাও ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেটকে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রাখে। যেকোনো রঙের টি-শার্ট বা শার্টের উপরে ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট পরা যায়। এই পোশাক এখন এতটাই সমাদৃত হয়েছে যে অনেক বর-কনে তাদের বিয়েতে ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট পরে।
এরপর ফেডেড ডেনিম জ্যাকেট। এটিও যেকোনো টি-শার্ট বা শার্টের উপর পরা যায়। তবে কালারফুল লেদার জ্যাকেটের কথা না বললেই নয়। গ্রাঁ প্রি মোটরসাইকেল রেসিং রোড থেকে এসেছে এই কালারফুল লেদার জ্যাকেট। অনেকেই এখন এটি বেছে নিচ্ছে।
কটি
মূলত র্যাড বাইকারদের ড্রেস। লেদার বা ডেনিম— দুই ধরনেরই বাইকার কটি আছে।
প্যান্ট
লেদার প্যান্ট লেদার জ্যাকেটের সঙ্গে খুব ভালো মানায়। এই প্যান্টে স্বচ্ছন্দ না হলে, বেছে নেওয়া যায় ডেনিম প্যান্ট। অনেক মেয়ে এখন বাইক চালানোর সময় স্টকিং দিয়ে ডেনিম শর্টস পরছে।
অ্যাকসেসরিজ
বাইকার গ্লাভ (লেদার বা আর্টিফিশিয়াল লেদার), চেইন, ব্রেসলেট, রিং— নারী-পুরুষ সব বাইকারের জন্যই পারফেক্ট। চেইন, রিং, ব্রেসলেট হতে পারে গথিক স্টাইলের। বাকল বেল্টও হতে পারে একই ধারার। এ ছাড়া আছে নানা রঙের ব্যান্ডানা। সানগ্লাস মাস্ট। পারসোনালিটির সঙ্গে ম্যাচ করে ডিজাইন করা হেলমেট হতে পারে সেরা বাইকার অ্যাকসেসরিজ।
বাইকার ইন্সপায়ার লুক
স্ট্রিট স্টাইলে অনেক পশ্চিমা নারী সেলিব্রিটির পছন্দ বাইকার লুক। এর ভেতর রয়েছে অল ব্ল্যাক লুক। যা তৈরি হয় কালো লেদার বা ডেনিম প্যান্ট, লেদার জ্যাকেট, লেদার অ্যাঙ্কেল বা হাই নি বুট দিয়ে। এটি খুব ক্ল্যাসিক এবং এলিগ্যান্ট। এ ছাড়া ডেনিম প্যান্টের সঙ্গে ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট দিয়েও বাইকার লুক আনা যায়। অনেকে ফরমাল পার্টিতে হাজির হচ্ছে এ লুক নিয়ে। গাউনের উপর ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট আর ব্ল্যাক বুট— হয়ে গেল শিক, র্যাড পার্টি লুক। ট্র্যাডিশনাল ওয়েডিং ড্রেসের উপর ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট চাপিয়ে আর ব্ল্যাক লেদার বুট পরে তৈরি করা যায় আনকনভেনশনাল ওয়েডিং লুক।
ছেলেরা যেকোনো স্ট্রিট স্টাইলে বেছে নিতে পারে বাইকার লুক। ডেনিম প্যান্ট বা লেদার প্যান্ট, টি-শার্ট বা শার্ট সঙ্গে বুট, যা হতে পারে হাই শ্যাফট বুট। আর বাইকারদের মতো দেখাতে পরা যায় বড় বাকলের বেল্ট; অবশ্যই তা হতে হবে মেটাল ও গথিক ডিজাইনের। পরা যায় স্কাল বা ড্রাগন হেড রিং। চাইলে মাথায় বা গলায় ব্যান্ডানা পরা যেতে পারে।
ফাহমিদা শিকদার
মডেল: আকাশ
মেকওভার: পারসোনা মেন্জ
ছবি: সৈয়দ অয়ন