সাক্ষাৎকার I প্রিয় পোষ্য
ঠিক কোন রসায়নে এক পোষ্য গোটা পরিবারের আনন্দের অন্যতম উৎস হয়ে ওঠে, তার ছকবাঁধা কোনো ব্যাখ্যা নেই। যা আছে, পুরোটাই অনুভূতি। শর্তহীন ভালোবাসার নিঃস্বার্থ বন্ধন। আনুগত্য, আস্থা আর নির্ভরতার সূত্র যেমন শেখায় এ সম্পর্ক, তেমনি তৈরি করে দেয় খানিকটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচার এসকেপ অপশন। জীবনটাই কেমন বদলে যায় পোষ্যের উপস্থিতিতে। ঠিক এমনই অভিজ্ঞতা সাদাত চৌধুরীর। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসপোক ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘জুরহেম’-এর কো-ফাউন্ডার এবং চেয়ারপারসন তিনি। মূলত ব্র্যান্ডটির মাসকট হিসেবেই অরিজিনাল চাও চাও ব্রিডের একটি কুকুর নিয়ে আসেন তারা। নাম রাখেন চমচম। কিন্তু কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে জুরহেমের স্টোরের বদলে সাদাতের বাসায় রাখা হয় তাকে। এর আগে খরগোশ আর পাখিকে পোষ মানালেও পোষ্য হিসেবে কুকুর এবারই প্রথম। সে অভিজ্ঞতা নিয়েই সাদাত কথা বলেছেন জাহেরা শিরীনের সঙ্গে
ক্যানভাস: পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন শ ব্রিড রয়েছে কুকুরের। চাও চাও ব্রিডটা বেছে নেওয়ার কোনো বিশেষ কারণ?
সাদাত চৌধুরী: চাও চাও মূলত অরিজিনাল চায়নিজ ব্রিড। প্রাচীনকালে চীনা রাজারা শখ করে পুষতেন এদের। এগুলোর চেহারার চারপাশজুড়ে অনেক লোম থাকায় অনেকটা সিংহের কেশরের মতো দেখায়। ফ্লাফি আর বেশ বড়সড় হয় একটি পূর্ণবয়স্ক চাও চাও। আমরা যখন প্রথম ওর ছবি দেখি, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, ওকে আমরা জুরহেমের মাসকট হিসেবে চাই।
ক্যানভাস: চমচম নামটা রাখার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো মজার গল্প আছে?
সাদাত চৌধুরী: আমার কুকুরটার রঙ একটু লালচে। একদম চমচম মিষ্টির মতো দেখতে। তাই চাও চাও থেকে চমচম। হা হা হা।
বাংলাদেশে একটা প্রচলন আছে পোষ্যদের নাম ইংরেজিতে রাখার। টম, ডিক থেকে গুচি, ফেন্দির মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর নামও বাদ যায় না এ ক্ষেত্রে। কিন্তু বাংলায়ও তো চমৎকার নাম রাখা যায়। তাই শুরু থেকেই চেয়েছিলাম, ওর জন্য সুন্দর একটা বাংলা নাম রাখব।
ক্যানভাস: বাসায় কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে চমচম আসার পর।
সাদাত চৌধুরী: ওদের মতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর কে দেয় বলুন। বাড়ি ফেরার পর তো বটেই, একটু নিচ থেকে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ও যে ছুটে এসে অভ্যর্থনা জানায়, নিজেকে অনেক বিশেষ কেউ একজন মনে হয়। আমাকে দরকার, আমাকে ছাড়া চলবে না- এমন ভালোবাসা আর গুরুত্ব অনেক কাছের মানুষ থেকেও পাওয়া যায় না।
আর বাড়িতে পোষ্য থাকা মানেই দিনভর মনে হবে বাড়িজুড়ে বছর তিনেকের কোনো শিশু দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওদের খাওয়া, ওদের শোয়া, ওদের বেড়ানো, ওদের শাসন নিয়েই আবর্তিত হয় দিন-রাত। যাকে বলে একদম ফুলটাইম জব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের বড় করা খানিকটা চ্যালেঞ্জিংও হয়ে যায়। কারণ, ওরা তো কথায় বুঝিয়ে বলতে পারে না। আর আমি তো একাই থাকতাম। এখন আর সেই সুযোগ নেই এক মুহূর্তের জন্য। প্রতিদিনকার ছকে বাঁধা একঘেয়ে রুটিন আর নেই কারও এই বাসায়। কেমন যেন একটা উৎসব উৎসব ভাব লেগেই থাকে। আর ও তো জুরহেমের মাসকট। তাই জুরহেমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই, এমনকি আমার পার্টনার মেহরুজও প্রায় প্রতিদিন চলে আসে ওর সঙ্গে খেলতে। সীমিত পরিসরে আমার কাছের বন্ধুদেরও নিয়মিত আনাগোনা লেগেই থাকে শুধু চমচমের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। কোয়ারেন্টিনের দমবন্ধ সময়টাও দারুণ ব্যস্ততায় কেটে যায় আমাদের। জীবনে এতটাই পূর্ণতা এনে দেয় পোষ্যের উপস্থিতি।
তবে আমি বিশ্বাস করি, পোষ্য শুধু খেলার সঙ্গী বা নিঃসঙ্গতায় নির্ভরতা নয়, ইটজ আ কমিটমেন্ট। সে জীবনকে ভালোবাসতে শেখায়, দায়িত্ব নিতে শেখায়।
ক্যানভাস: যারা নতুন পোষ্য রাখার চিন্তা করছেন, তাদের জন্য কী পরামর্শ?
সাদাত চৌধুরী: পোষ্য নেওয়ার শুরুতেই বেশ কিছু চিন্তা মাথায় আসবে। যার মধ্যে অন্যতম ঘর নোংরা হওয়ার ব্যাপারটা। লোম পড়বে, যখন-তখন যেখানে-সেখানে পেশাব-পায়খানা হয়ে যেতে পারে, এমনকি ঘরটাও গন্ধ গন্ধ হয়ে থাকবে। আমার ঘর সব সময় টিপটপ ও পরিষ্কার থাকে। তাই এ চিন্তা আমারও হয়েছিল। আর সত্যি কথা যদি বলি, এর সবই ঘটবে। আপনি সারা দিন ঘর পরিষ্কার করলেও এগুলো এড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু যখন আপনি পোষ্যের ভালোবাসা আর আনুগত্য পাবেন, বিশ্বাস করেন এগুলো একটাও আপনাকে আর ভাবাবে না। আর ছোট বয়স থেকেই যদি একটু ধৈর্য ধরে পোষ্যদের ঘরের নিয়ম শিখিয়ে নেওয়া যায়, তারা খুব জলদি সেগুলো শিখে নেয়। আর কুকুরের বেলায় বাচ্চার মা-বাবা যদি আপনার কাছে না থাকে, সে ক্ষেত্রে বাচ্চাটি আনার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি, সেটি যেন দু-তিন মাস তার মায়ের সঙ্গে থাকার পর পোষ্য হিসেবে আনা হয়। কারণ, জন্মের পর তারা মায়ের কাছে অনেকগুলো বেসিক জিনিস শেখে যেমন পায়খানা, পেশাব করার ব্যাপারটা, কমিউনিকেশন কীভাবে করতে হয় ইত্যাদি।
ওদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে অনেক যত্নশীল হতে হবে। একদম নিজের বাচ্চার মতো করেই খেয়াল রাখতে হবে। তাই সারাক্ষণ শুধু প্যাকেটের খাবার দেওয়া যাবে না, ঘরে রান্না করা খাবারও খাওয়ানো জরুরি। আমি তো চমচমকে প্রথম থেকেই ঘরে রান্না করা খাবার খাইয়েছি। ডিম, ভাত, চিকেন, সব ধরনের ফলমূল, শাকসবজি- কিছুই বাদ দিইনি। এটা সহজলভ্য, সাশ্রয়ী তো বটেই। স্বাস্থ্যকরও। কিন্তু পরিমাণমতো খাওয়ানো চাই, আন্ডারওয়েট কিংবা ওভারওয়েট- কোনোটাই হওয়া যাবে না।
হাঁটানোর ব্যবস্থা করতে হবে নিয়মিত। বাইরে হাঁটানো গেলে তো খুবই ভালো। সেটি সম্ভব না হলে বাসার নিচে, পার্কিং এরিয়ায় বা ছাদে হাঁটাতে হবে। যেন একটু দৌড়ঝাঁপ করতে পারে।