ফিচার I স্প্রিং এমবেলিশমেন্ট
প্রকৃতির বর্ণিলতা আর মনের স্ফূর্তির সমন্বিত প্রকাশই ঘটছে এই বসন্তে। বিচিত্র মাধ্যম, রঙ ও নকশায়। লিখেছেন শিরীন অন্যা
রঙের ঋতু বসন্ত। এ সময় ডিজাইনাররাও মেতে ওঠেন রঙের খেলায়। তাতে নানান কালারের ফ্যাব্রিক আর ডিজাইনের পাশাপাশি ট্রেন্ডি এমবেলিশমেন্ট। নতুন। এই বসন্তে পোশাকে কী কী এমবেলিশমেন্ট থাকতে পারে, তা নিয়েই বিশ্বব্যাপী ডিজাইনাররা কাজ করছেন।
প্যাচওয়ার্ক
নানান আকৃতি, রঙ বা টেক্সচারের কাপড় দিয়ে সেলাই করে একটা প্যাটার্ন তৈরির পদ্ধতি। প্যাচওয়ার্ক সাধারণত বড় জিওমেট্রিক ডিজাইনের হয়ে থাকে। এমনটি অনেক আগে থেকেই ছিল, নব্বইয়ের দশকে। এখন আবার ফিরে আসছে। প্যানডেমিকে যখন কোথাও যাওয়া বা কিছু করার সুযোগ ছিল না, সময় কাটানোর জন্য অনেকেই পুরাতন সোয়েটপ্যান্ট কিংবা বড় আকারের হুডিগুলোতে করে নিয়েছেন প্যাচওয়ার্ক। কামিজ থেকে শুরু করে প্যান্ট, সোয়েটার, স্কার্ট এমনকি হ্যাটেও এর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। প্যাচওয়ার্ক জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এটি রিসাইক্লিংয়ের সঙ্গে জড়িত। অব্যবহৃত কিংবা পুরোনো বা ছিঁড়ে যাওয়া কাপড় হতে পারে প্যাচওয়ার্কের ম্যাটেরিয়াল। বড় বড় ব্র্যান্ডও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কিংবা ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য প্যাচওয়ার্ক বেছে নিয়েছে।
কাটআউট
এখন প্রায় সব ফ্যাশন রানওয়েতে যে ট্রেন্ড সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে, তা হচ্ছে কাটআউট। এটি পোশাকের মাঝের যেকোনো একটা স্থান কেটে ওই অংশকে রিভিলিং রাখার পদ্ধতি। কাটআউট শুধু চিরাচরিতভাবে হাতের ওপরের অংশে কিংবা গলা বা ঘাড়ের কাছে হয় না, এখন ডিজাইনাররা এটি নিয়ে অনেক বোল্ড এক্সপেরিমেন্ট করছেন। ভারসাচি ক্যাটওয়াকে জিজি হাদিদ এমনই একটি কালো কাটআউট ড্রেস পরেন, যা তার অ্যাবসের ওপরের অংশে কাটা। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন ইভেন্ট কিংবা রেড কার্পেটে অনেক তারকাই এই ফ্যাশন বেছে নিয়েছেন। কাটআউটকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এর আশপাশে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের এমবেলিশমেন্ট। লেইস, গ্লসি ফ্যাব্রিক, ব্রোকেড, বোতাম কিংবা কারচুপির কাজও। শুধু শার্ট, টপই নয়, কাটআউট স্থান করে নিচ্ছে প্যান্ট কিংবা সোয়েটারেও। এই শীতপোশাকের কাঁধের কাছে খানিকটা কিংবা প্যান্টেও হাঁটুর কাছাকাছি স্থানে কাটা অংশ দেখা যাচ্ছে অনেক ফ্যাশন হাউসের কাজে।
ফেদার
ফেদার বা পালক আকর্ষণীয় প্রাণিজ উপাদানগুলোর একটি। পোশাকের সৌন্দর্যে সচেতনভাবে ষাটের দশকে এটি নতুন রূপে ফিরে আসে। তখনকার প্রাকৃতিক এমবেলিশমেন্টের সময়ে যে যত বেশি অপ্রচল এমবেলিশমেন্ট জুড়ে দিত, তার সামাজিক অবস্থান বিবেচিত হতো তত ওপরে। তবে ১৮, ১৯ এবং ২০ শতকের দিকে এই ফেদার ট্রেন্ড মনোযোগের শীর্ষে পৌঁছায়। এবারের বসন্তেও ফেদার এমবেলিশমেন্ট নিয়ে কাজ করছেন অনেক ফ্যাশনিস্তা। ফেরত আসার শুরুতে ফেদার শুধু কানের দুল কিংবা চুলের ক্লিপে স্থান পেলেও খুব জলদিই পোশাকে এটি জায়গা করে নেয়। একই সঙ্গে খুব কোমল ও উজ্জ্বল হওয়ায় পালক নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন ভ্যালেন্টিনো, মার্ক জ্যাকবস, অস্কার ডি লা রেন্টার মতো অনেক ব্র্যান্ড। জামার হাতায়, নিচে কিংবা কাঁধে, জ্যাকেটের কাঁধে অথবা টপ বা হ্যাটের এমবেলিশমেন্টেও ব্যবহার করা হয় ফেদার। অর্গানিক সৌন্দর্যের কারণেই মূলত এটি বেশি জনপ্রিয়।
ক্রোশে ডিটেইল
শুরুর দিকে ঘরবাড়ির বিভিন্ন জিনিস বানাতে ব্যবহার করা হতো। আমাদের মা কিংবা নানিরা ক্রোশে করেন এখনো। তবে সজ্জার জিনিস পেরিয়ে এটি স্থান করে নিয়েছে ফ্যাশন জগতেও।
ক্রোশে বিভিন্ন প্যাটার্ন বা সাইজের হতে পারে। একরঙা কিংবা বিভিন্ন কালার মিলিয়ে চাকা বা তারার আকৃতি করা হয় এতে। চাইলে ঘরে বসে নিজেই জামায় করে নেওয়া যায় এই কাজ, সেলাইয়ের বই থাকলে ভালো, না হয় ইউটিউব তো আছেই। সঠিক সুতা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, এর ওজন তৈরি টুকরোটির টেক্সচারকে প্রভাবিত করবে। কেউ কেউ এতে বিভিন্ন প্রাণী যেমন- পাখি কিংবা বিড়ালও তৈরি করেন। ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে একের অধিক ফোড় দিতে হয়। ক্রোশে শুধু মেয়েদের জন্যই নয়, ছেলেদের শার্ট বা সোয়েটারের হাতের প্যাচ, হ্যাট অথবা গ্লাভস তৈরিতেও জনপ্রিয়।
ড্র স্ট্রিং ডিটেইল
জামার কোনো একটা অংশে স্ট্রিং বা ফিতা অথবা এই জাতীয় কোনো বস্তু দিয়ে টেনে বন্ধ করা কিংবা কুঁচকে নেওয়ার পদ্ধতি। এটি কর্ড, ফিতা, লেইস কিংবা দড়ি দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। সাধারণত কোমরে, জামার দুপাশে, হাতে, প্যান্টের নিচে বা জ্যাকেটে এই এমবেলিশমেন্ট ব্যবহার করা হয়। তবে এখন জামার কাঁধ কিংবা পিঠেও এর ব্যবহার দেখা যায়। ড্র স্ট্রিংয়ের একটি মজার ব্যাপার হলো, এটা সব ডিজাইনার একভাবে তৈরি করেন না। কেউ কেউ ইলাস্টিকের সাহায্যে শুধু একটা ফিতা লাগিয়ে দেন, যা দেখতে ড্র স্ট্রিংয়ের মতো মনে হয়, আবার কিছু কিছু পোশাকে লেইস বা ফিতা জামার ভেতরে দিয়ে সঠিক ড্র স্ট্রিং তৈরি করা হয়। তাই কেনা বা বানানোর আগে সঠিকটি বেছে নেওয়া জরুরি।
সিকুইন
ড্রেসটির কথা শুধু উৎসবকালেই ভাবা হয়ে থাকে। যেমন ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার কিংবা কোনো থার্সডে নাইট পার্টি। তবে এই বসন্তে ডে টু নাইট সিকুইন জায়গা করে নিয়েছে ফ্যাশনিস্তাদের পছন্দের তালিকায়। খুব বেশি গাঢ় রঙের দিকে না গিয়ে এটি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে একেবারে ন্যুড অথবা কালো রঙগুলো মাথায় রেখে। জামার কোনো এক অংশে অল্প কিছু সিকুইনের কাজ নজর কাড়তে পারে।
লেদার
জামায় লেদারের ব্যবহার নতুন নয়। বিশেষ করে টপ কিংবা শার্টের সঙ্গে লেদার বেল্ট খুবই জনপ্রিয়। তবে এমবেলিশমেন্টের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। জামার কিছু অংশে যেমন গলা, কাঁধ বা হাতায় লেদারের তৈরি ফুল দিয়ে ডিজাইন করা যেতে পারে। এ ছাড়া লেদার প্যাচ নিয়েই কাজ করছেন অনেকে, যা জ্যাকেট কিংবা ড্রেসের শোভা বাড়িয়ে তুলবে কয়েক গুণ। লেদারের তৈরি ফিতা দিয়েও করা যেতে পারে জামা, স্কার্ট কিংবা প্যান্টের এমবেলিশমেন্ট।
এগুলো ছাড়াও টাই-ডাই, নেট, শিয়ার ডিটেইল, বেল্টেড ডিটেইল- এ ধরনের এমবেলিশমেন্টের ব্যবহারও রানওয়েতে দেখা যাচ্ছে।
মডেল: অভিনেত্রী পূর্ণিমা, সাফা ও আয়শা
ছবি: ফারাবী তমাল ও ক্যানভাস
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ভায়োলা ও আইকনিক