skip to Main Content

ফিচার I উদ্বৃত্ত খাদ্যে নতুন পদ

বিভিন্ন কারণেই আগের দিনের খাবার রয়ে যায়। পচনের আগেই সেগুলো দিয়ে তৈরি হতে পারে বিচিত্র পদ। এতে অপচয় কমে

খাবারের অপচয় চলছে বিশ্বজুড়ে। প্রতিবছর খাদ্যের ৩০-৫০ শতাংশই ফেলে দেওয়া হয়। এর পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টন। অর্থমূল্য ৭৫ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি। উন্নত দেশেই খাবারের অপচয় হয় বেশি। খাবার ফেলে দেওয়ার প্রবণতা আছে বাংলাদেশিদের ওপরেও। দেশে প্রতিবছর উৎপাদিত খাদ্যের ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়। এর আর্থিক মূল্য ৩০ হাজার কোটি টাকা। ব্যক্তিপর্যায়ে এই অপচয়ের হার ৫ শতাংশ। দেশে প্রতিবছর ৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকার খাদ্যদ্রব্য পচে যায়। যা দিয়ে ৭০ লাখ মানুষকে তিন বেলা খাওয়ানো সম্ভব। এসব তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে। ঢাকাই রেস্তোরাঁগুলো এবং বিয়েবাড়িতে প্রতিবছর ১০ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়। অপচয়িত এই খাবার দিয়ে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার মানুষকে এক বেলা খাওয়ানো সম্ভব।
সাধারণত পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতা কিংবা কোনো বিপদের কারণে খাবার রয়ে যায়। অপচয় রোধে বেঁচে যাওয়া খাদ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জরুরি। বাড়িতে রান্নায় পরিমিতিবোধ এবং রয়ে যাওয়া খাবার দিয়ে পুনরায় নতুন পদ তৈরির মাধ্যমে খাদ্য নষ্টের পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে। উদ্বৃত্ত খাবার দিয়ে ভিন্ন পদ তৈরির চল নতুন কিছু নয়। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা রাতে থেকে যাওয়া ভাতের সঙ্গে সকালে ডাল যোগে নতুন একটি পদ তৈরি করত। যার নাম ‘কিজোরি’। ভাবা হয় এটিই ভারতবর্ষে এসে খিচুড়ি হয়েছে। রয়ে যাওয়া বা পচনের লক্ষণ দেখতে পাওয়া প্রায় সব ধরনের খাবার দিয়েই নতুন পদ তৈরি করা সম্ভব। পচতে শুরু করা ফল দিয়ে তৈরি হতে পারে জ্যাম, জেলি, সিরাপ ও আপেল সস-সহ নানান কিছু। কাস্টার্ড ও স্মুদিও বানানো যায়। পাকা ফল অল্প দিনেই পচে যেতে পারে। পচনের শুরুতে পাকা কলা দিয়ে মাফিন কিংবা স্মুদি তৈরি করলে অপচয় কমবে। রান্না করা ব্রকলি, বাঁধাকপি ও ফুলকপি বেঁচে গেলে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে অমলেট, স্যান্ডউইচ, পাস্তা ইত্যাদিতে। লেটুসের সঙ্গে এই তরকারিগুলো যোগ করে স্যালাড তৈরি করা যেতে পারে। সে উদ্দেশ্যে একটু অলিভ অয়েল ও ভিনেগার যোগ করলে মুখরোচক হবে। বিটরুট, কুমড়া, গাজর, বেগুন, ব্রকলির ডাঁটা কিংবা টমেটোর খোসা ফেলে না দিয়ে শিশুদের জন্য তৈরি করা যেতে পারে স্টু। বেঁচে যাওয়া সবজি দিয়ে হয় ফ্রিটাটাও। সে ক্ষেত্রে মাফিন ট্রেতে সামান্য তেল ব্রাশ করে সবজির টুকরোগুলো বিছিয়ে ওপরে ফেটানো ডিম ও পনির দিতে হয়। তারপর ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১০-২০ মিনিট বেক করে নিলেই হয়ে যায়। পদটি ফাইবার, বিটা ক্যারোটিন ও কোলিনের উৎস। বেঁচে যাওয়া সবজির সঙ্গে পোলাও চাল ও প্রয়োজনীয় মসলা মিশিয়ে মিক্স খিচুড়িও তৈরি করা যেতে পারে।
পাউরুটি খুব কম সময়েই নষ্ট হয়। ছত্রাক পড়ে। বেঁচে যাওয়া পাউরুটি স্যান্ডউইচ, মাংসের কাটলেট, পুডিং ইত্যাদিতে ব্যবহার করা যায়। পাউরুটির সঙ্গে ডিম, পনির, মাশরুম, মাখন ও ধনেপাতা মিশিয়েও মজাদার পদ তৈরি করা যেতে পারে। সাধারণ রুটি বাসি হয়ে গেলে তা দিয়ে তৈরি করা যায় এগরোল। সে ক্ষেত্রে একটি প্যানে অর্ধেক ডিমের অমলেট বানিয়ে তাতে রুটিটি ছেড়ে দিতে হবে। এরপর রুটির ওপরে বাকি অর্ধেক ডিম দিয়ে ভালোভাবে সেঁকে নিলেই হয়ে যাবে।
সবচেয়ে বেশি রয়ে যায় সম্ভবত ভাত। বাড়তি ভাতে পানি দিয়ে পানতা খাওয়ার চল তো রয়েছেই। তাতে অরুচি থাকলে ভাতের সঙ্গে মাংস, ডিম ও সবজি মিশিয়ে ফ্রায়েড রাইস তৈরি করা যেতে পারে। ভাত নরম হয়ে গেলে ফেলে না দিয়ে তাতে পেঁয়াজ, মরিচকুচি, হলুদ ও তেল মেখে তাওয়ায় ছড়িয়ে চটা বানিয়ে খাওয়া যায়। বেঁচে যাওয়া ভাতের সঙ্গে পেঁয়াজ, মরিচ, সবজি, মুরগি সেদ্ধ ডিম ও লবণ দিয়ে মেখে রাইস বল বানানো যায়। চৈনিকদের মতো ভাত ব্লেন্ড করে রাইস কেক তৈরি করেও খাবারের অপচয় কমিয়ে আনা সম্ভব। রয়ে যাওয়া পাস্তাও ফেলনা নয়। এর সঙ্গে সবজি ও ডিম মিশিয়ে ভালোভাবে ভেজে স্ন্যাকস তৈরি করে খাওয়া যায়।
অনেক সময় মাংস বাসি হয়ে যায়। সেগুলোতে রসুনবাটা, অলিভ অয়েল ও টমেটো পেস্ট ভালোভাবে মিশিয়ে সস তৈরি করা যেতে পারে। পাস্তার সঙ্গে তা পরিবেশন করা যায়। এ ছাড়া ওসব মাংস ডিম কিংবা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে স্যান্ডউইচ বানানো সম্ভব। মুরগির মাংসে সামান্য টক দই মিশিয়ে ব্লেন্ড করে সহজেই স্যান্ডউইচের পুর তৈরি করা যায়। মাংস রুটির মধ্যে পুরে রোল বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে। কিংবা পুদিনা, পনির ও গোলমরিচের সঙ্গে মেখে, তেলে ভেজে চপ তৈরি করে খাওয়া যায়।
বেঁচে যাওয়া রুটি, মাংস ও টমেটো দিয়ে পিৎজাও বানানো সম্ভব। সে উদ্দেশ্যে রুটিতে টমেটো পিউরি দিয়ে সেটির ওপর মাংস ছড়িয়ে দেওয়া লাগে। তারপর ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১৫-২০ মিনিট বেক করলেই হয়ে যায় পিৎজা।
মাছ রয়ে গেলে ফেলে না দিয়ে সেগুলোর কাঁটা বেছে তৈরি করা যেতে পারে ফিশবল কিংবা কাটলেট। বাসি বাদামের কুড়কুড়ে ভাব নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো টেলে স্যুপে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। রয়ে যাওয়া নুডলসও কাজে লাগে। ফেলে না দিয়ে তাতে সবজি ও ডিম যোগ করে বানানো যেতে পারে নুডলস অমলেট। রান্না করা ডিম রয়ে গেলে তা দিয়ে ভর্তা তৈরি করা যায়। সে ক্ষেত্রে ডিমটি ধুয়ে দুই মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয় গরম পানিতে। তারপর তুলে নিয়ে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, লবণ ও তেল কচলে নিলেই হয়ে যায় ভর্তা। বেঁচে যাওয়া ডাল দিয়েও তৈরি করা যায় মুখরোচক পদ। বাসি ডাল অল্প আঁচে শুকিয়ে তাতে আটা, গরম তেল, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা দিয়ে মেখে পরোটা কিংবা লুচির মতো বেলে সেঁকে বা ভেজে নেওয়া যেতে পারে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top