ফুড বেনিফিটস I দই
শত শত বছর ধরে আহার্য হিসেবে দই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পুষ্টিকর এবং মানবস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সহায়ক। এটি অস্টিওপোরোসিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া দই ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
দই দুগ্ধজাত খাদ্য। এটি ব্যাকটেরিয়া গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই খাদ্য প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় ‘দই বীজ’, যেটি দুধে পাওয়া প্রাকৃতিক চিনির ল্যাকটোজকে গাঁজন করে। প্রক্রিয়াটিতে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। এটি এমন একটি পদার্থ, যা দুধকে ঘন, আলাদা স্বাদ এবং গঠন প্রদান করে।
যেকোনো ধরনের দুধ দিয়ে দই তৈরি হতে পারে। সর তোলা দুধ মূলত এই খাদ্য বানানোর প্রাথমিক প্রক্রিয়া।
দই সাধারণত তরল, সাদা, স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানি এতে চিনি ও কৃত্রিম নির্যাস যোগ করে, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অন্যদিকে মিষ্টিহীন সাধারণ দই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
দইয়ে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি উপাদান রয়েছে। এতে দাঁত এবং হাড়ের জন্য দরকারি খনিজ ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় প্রচুর। শরীরে দৈনিক যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়, তার প্রায় ৪৯% রয়েছে মাত্র এক কাপ দইয়ে।
উচ্চমাত্রার ভিটামিন বি সমৃদ্ধ হওয়ায়, বিশেষত বি ১২ এবং রিবোফ্লাভিন থাকায় দই হৃদরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
প্রতিদিন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৮% ফসফরাস, ১২% ম্যাগনেশিয়াম, ১৮% পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয় মাত্র এক কাপ দই খেলেই। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, হজমশক্তি বৃদ্ধিতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য এসব খনিজ অত্যন্ত দরকারি। এতে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি না থাকলেও এর সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। হাড় মজবুত এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে, ডিপ্রেশন ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ডি-এর জুড়ি নেই।
দইয়ে আমিষের পরিমাণ প্রতি ২০০ গ্রামে ৭ আউন্স। প্রতিদিন যে ক্যালরি ক্ষয় হয়, তার সামঞ্জস্য রক্ষা করে আমিষ। স্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগের কারণ বলে মনে করা হতো। পরে গবেষণায় দেখা যায়, সেটি সঠিক নয়। যাহোক, ফ্যাট ফ্রি ও লো ফ্যাট- দুই ধরনের দই বেশ জনপ্রিয়।
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই নিয়মিত খেলে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা কমে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। প্রদাহ, অন্ত্রের ব্যধি ও ভাইরাল সংক্রমণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো কমায় প্রোবায়োটিক। গবেষণায় দেখা গেছে, সিজনাল ফ্লু, সর্দি জ্বর সারাতে প্রোবায়োটিক ভালো কাজ করে।
ভিটামিন ডি ফর্টিফাইড সমৃদ্ধ দই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এটি ভাইরাসজনিত সর্দি ও জ্বরের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
এতে কিছু মূল পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন ডি- এগুলো হাড় গঠন ও সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। এই ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলো অস্টিওপোরোসিস অর্থাৎ হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধী। এই সমস্যায় সাধারণত বয়স্করা ভুগে থাকেন। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাড়ের ঘনত্ব কম হয় এবং হাড়ে চিড় ধরার ঝুঁকি থাকে। নিয়মিত দই খেলে এ থেকে উপশম মিলবে।
দইয়ে ফ্যাট থাকার এর উপকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এটা যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে সম্পর্কে সঠিক কোনো প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে এটা হার্টের জন্য খুবই উপকারী।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই দুগ্ধজাত খাবারে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট উপকারী এইচ ডি এল কোলেস্টেরল বাড়ায়। যেটি হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়।
দইয়ে কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। এটিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, যেটি ক্যালসিয়ামের সঙ্গে কাজ করে ক্ষুধা কমানো হরমোনের মাত্রা বাড়ায়।
টক দই স্থূলতা কমানোয় সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দই ক্ষুধা বাড়ায়।
রাইসুল রাণা
ছবি: ইন্টারনেট