বহুরূপী I চিনি চেনা
সাদা নাকি বাদামি—কোন চিনি কম ক্ষতিকর। এই দোটানায় আটকে না থেকে জেনে নিন আরও চিনির সমাহার
চিনি খাবেন কি না—এ নিয়ে দোটানা অনেকের। এই ভোজ্যদ্রব্য নিয়ে কানাঘুষারও নেই শেষ। চিনির ওপর চাপানো অপবাদগুলো অবশ্য খুব একটা মিথ্যা নয়। তাই চিনি ছাড়া যাদের চলেই না, তারা তুলনামূলক কম ক্ষতিকর—এমন চিনি হাতড়ে বেড়ান। মানে, মন্দের ভালো খোঁজেন। সাদা নাকি বাদামি চিনি—এই নিয়ে চলে তর্ক।
চিনির প্রভেদ খতিয়ে দেখলে অবশ্য এর প্রায় ১১টি ধরন বেরোয়। সেগুলোর মধ্যে উচ্চমাত্রায় পরিশোধিতটিই সাদা চিনি। তবে চিনিকে এর চেয়েও বেশি শোধন করা সম্ভব। সেটি করলে তা হয়ে যায় সাসটার চিনি, যা সিরাপ ও ড্রিংকস তৈরিতে কাজে লাগে।
বেকড আইটেম তৈরিতে আবার চিনির কেলাসকে গুঁড়া করে নিতে হয়। এ ধরনের সুগার পাউডারকে বলে কনফেকশনারস সুগার। আবার কুকিজ তৈরিতে এমন চিনি লাগে, যা অন্যান্য চিনির তুলনায় কিছুটা শক্ত। এ ধরনের চিনির তাপ সহনশীলতা বেশি। নাম পার্ল সুগার। অবশ্য স্যান্ডিং সুগারও তাপ সইতে পারে। তবে এটি দানাদার; অন্যান্য চিনির চেয়ে বড়। বিস্কুটের ওপর ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এসব চিনির দরকার পড়ে।
সবচেয়ে কম পরিশোধিত হয় আখের চিনি। মানবদেহ এটিকে খুব সহজেই শোষণ করতে সক্ষম। আখ থেকে ক্যারামেল ফ্লেভারের আরেকটি চিনি মেলে। নাম টারবিনেডো। এর দানা বড়; রং সামান্য খয়েরি। কোমল পানীয় তৈরিতে এই চিনির কদর রয়েছে। আবার আখ প্রক্রিয়াজাত না করে সামান্য ভেজা ও আঠালো এক প্রকার চিনি উৎপন্ন করা হয়। এর গন্ধ বেশ কড়া। নাম মাসকোভাডো। কম পরিশোধিত আরেক চিনির নাম ডিমেরারা। এর দানা আকারে বড়। চা-কফিতে মিষ্টি স্বাদ আনতে ব্যবহার বেশি। অন্যদিকে, পরিশোধিত হোয়াইট সুগারের সঙ্গে সামান্য মোলাসেস মিশিয়ে তৈরি হয় লাইট ব্রাউন সুগার। ফ্লেভারও ক্যারামেল। তবে অতিরিক্ত মোলাসেস মেশালে তা হয়ে যায় ডার্ক ব্রাউন সুগার।
এই সব চিনির সঙ্গে সাধারণ মানুষ খুব একটা পরিচিত না হলেও সাদা ও বাদামি চিনি কমবেশি সবারই চেনা। ফলে এই দুটি চিনির গ্রহণ-বর্জন নিয়েই গোল বাধে। কম শোধনের কারণেই সাদা চিনির চেয়ে বাদামি চিনি কম উজ্জ্বল। সাদা চিনিতে থাকে ১৬ কিলোক্যালরি, বাদামিতে ১৭। মানে ক্যালরির হিসাবে এই দুই চিনিতে খুব একটা পার্থক্য থাকে না। এই ক্যালরির হিসাব মিলেছে ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের এক রিপোর্টে। পুষ্টিবিদেরা বলেছেন, ওই দুই চিনির পার্থক্য শুধু রং ও স্বাদে। জনসাধারণের ধারণা, বাদামি চিনিতে সাদা চিনির তুলনায় বেশি মিনারেল থাকে। ধারণাটি সঠিক নয়। ফলে এই দুই চিনির কোনোটিই আরেকটির থেকে বেশি উপকারী নয়। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, বাদামি চিনিতে ৯৫ শতাংশ সুক্রোজ থাকে। অর্থাৎ সাদা চিনি মানুষের শরীরে যেসব ক্ষতি করতে পারে, বাদামি চিনিও তা-ই।
তবে মিষ্টতা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা থাকলে বাদামি চিনি বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের চিনিতে গুড়ের অস্তিত্ব থাকে, ফলে মিষ্টতা বেশি। গুড় থাকার কারণেই এতে ভেজা ভাব থাকে। বাদামি চিনিতে তৈরি পদের রং সামান্য ভিন্ন হতে পারে। এসব ছোটখাটো পার্থক্য ছাড়া সাদা চিনির সঙ্গে বাদামিটির মোটাদাগে কোনো ফারাক নেই। ফলে যার স্বাস্থ্যের জন্য সাদা চিনি ক্ষতিকর, সে ক্ষেত্রে বাদামিটিও উপকারী নয়।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট