ফিচার I খাদ্যপ্রযুক্তি ও নারী
যন্ত্র মানুষের দৈনন্দিন কাজ সহজ করে। দীর্ঘকাল ধরে নারীদের স্থান ছিল রসুইঘরে। আবার কৃষির আবিষ্কারও হয়েছে তাদের হাতে। ফলে এই দুয়ের বদৌলতে খাদ্য উৎপাদন, বিপণন ও খাদ্যসংস্কৃতিতে নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে বেশি। এমনকি রান্নাঘরের কাজ সহজ করতে বেশ কিছু যন্ত্র ও খাদ্যানুষঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছে নারীর হাতেই
খাদ্যের মতোই প্রয়োজনীয় খাবারের অনুষঙ্গগুলো। পাত্র ছাড়া পানি পান কিংবা রান্না খুবই আদিম প্রবৃত্তি। সেটিকে সভ্যতা বলা চলে না। তাই তো মৃৎপাত্র আবিষ্কারকে নৃতাত্ত্বিকেরা সভ্যতার একটি ধাপ হিসেবে গণ্য করেন। খাবারের এসব ধারক তৈরিতে নারীদের আবিষ্কার অনস্বীকার্য। কৃষি আবিষ্কার যেমন নারীর হাত দিয়ে হয়েছে, তেমনি খাদ্যের বিভিন্ন অনুষঙ্গও তাদের মাধ্যমেই সভ্যতায় এসেছে। তেমন কিছু বস্তুর ফিরিস্তি রইল এই নিবন্ধে।
ফ্ল্যাট বটম পেপার ব্যাগ
আজকাল শপিংয়ে গেলেই কাগজের তৈরি ব্যাগ মেলে। যার তলা থাকে সমান। এ ধরনের ব্যাগের আবিষ্কারের কৃতিত্ব আমেরিকান নারী মার্গারেট নাইটের। তিনি একটি তুলা কলের কর্মী ছিলেন। ১৮৬৭ সালে পেপার ব্যাগ তৈরির এক কারখানায় কাজের আমন্ত্রণ পান। মার্গারেট সেখানে লক্ষ করলেন, ইনভেলাপের মতো তলানিযুক্ত কাগজের ব্যাগগুলো খুবই ঠুনকো; ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য নেই। তাই সমান তলানির পেপার ব্যাগ তৈরি শুরু করেন তিনি। শোনা যায়, তার তৈরির আগেই ব্রিটেনে এ ধরনের ব্যাগ হাতে বানানো হতো। কিন্তু মার্গারেটের বদৌলতে তা মেশিনে তৈরি শুরু হয়। এসব কারণে সে সময় সমতল ব্যাগের পেটেন্ট নিয়ে জটিলতা হয়েছিল। চার্লস আনান নামের এক ব্যক্তি এই ব্যাগ আবিষ্কারের পেটেন্ট দাবি করে বসেন। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। আইনি লড়াই শেষে ১৮৭১ সালে এর পেটেন্ট লাভ করেন মার্গারেট।
পেপার কফি ফিল্টার
কফিপ্রেমীদের কাছে জার্মান নারী মেলিটার নাম সুপরিচিত। তার প্রতিষ্ঠিত মেলিটা কোম্পানি কফি, কফি মেকারসহ কফিসংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র সরবরাহ করে থাকে। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে তিনি পেপার কফি ফিল্টার আবিষ্কার করেন। মূলত কাপে কফি দিয়ে তাতে গরম পানি ঢালার পর তা পান শেষে তলানিতে অনেক গুঁড়া লেগে থাকত। এই অপচয় রোধের জন্যই মেলিটা এমন ফিল্টার ব্যাগ তৈরিতে উদ্যোগী হন। প্রথমে রান্নাঘরের সাধারণ পাত্রে ছিদ্র করে ঘরের সাধারণ কাগজ দিয়ে ফিল্টার তৈরি করেন। পরে এই কাজে তিনি সফল হন এবং ১৯০৮ সালে নিজ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
ডিশওয়াশার
এর আবিষ্কার ঘটেছে আমেরিকান নারী জোসেফিন গ্যারিসের হাতে। দ্রুত সময়ে থালাবাসন পরিষ্কারের তাগিদে তিনি একটি ডিশওয়াশিং মেশিন আবিষ্কার করেন। ১৮৮৬ সালে এই যন্ত্রের পেটেন্ট লাভ করেন জোসেফিন। তিনি ১৮৯৩ সালের শিকাগো ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে যন্ত্রটি প্রদর্শন করেছিলেন। অবশ্য সে সময় কিছু রেস্তোরাঁ ছাড়া অন্য কেউ মেশিনটির প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি যন্ত্রটি সাধারণ গৃহসামগ্রী হতে সময় নিয়েছিল ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। তারপর এটি মানুষের ঘরে আসতে শুরু করে।
পিৎজা সেভার
প্যাকেট যেন পিৎজার টপে লেগে না যায়, এ উদ্দেশ্যে খাবারটির ওপর একটি ছোট তেপায়া লাগানো হয়। সেটির আবিষ্কারক একজন নারী। নাম কারমিলে ভিটেল। ১৯৮৩ সালে তিনি পিৎজা সেভারের প্যাটেন্ট লাভ করেন।
ফ্রোজেন পিৎজা ডো
এটিও আমেরিকান একজন নারীর আবিষ্কার। নাম রোজ টোটিনো। তিনি ও তার স্বামী এ ধরনের খাবারের ব্যবসা করে বেশ বিখ্যাত হয়েছেন। ঘটনাটি ১৯৬৯ সালের।
আইসক্রিম মেকার
নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া নারী ন্যান্সি জনসনের আবিষ্কার এটি। বর্তমানে আইসক্রিম মেকার খুবই সাধারণ একটি জিনিস হলেও এটি যখন আবিষ্কৃত হয়, তখন তা ছিল খুবই যুগান্তকারী। কেননা, এটি আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত আইসক্রিম ছিল কেবল ধনাঢ্যদের ডেজার্ট। শুধু বিশেষ কোনো উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই খাওয়া হতো। কিন্তু আইসক্রিম মেকার আবিষ্কৃত হওয়ার পর এই ঠান্ডা খাবার জনসাধারণের আয়ত্তে আসে।
কেভলার
ননস্টিকি প্যান তৈরিতে দ্রব্যটি ব্যবহৃত হয়। এর আবিষ্কারক পোলিশ-আমেরিকান নারী স্টেফানি নোলেক। তিনি ছিলেন কেমিস্ট। ১৯৬৬ সালে তিনি আকস্মিকভাবে গাড়ির টায়ার থেকে একপ্রকার তন্তু আবিষ্কার করেন। পরে সেটি ননস্টিকি প্যান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
কম্বাইন্ড এগ বিটার অ্যান্ড পটেটো ম্যাশার
যন্ত্রটি ওকলাহোমার নারী মে কনারের আবিষ্কার। তিনি মূলত ডিম ফেটানো ও আলু ভর্তা করার দুটি লিভারকে একত্র করে দেন। ফলে রান্নার কাজ কিছুটা সহজ হয়ে যায়।
কুকিং স্টোভ
১৮৬৭ সালে এথেন্সের নারী এলিজাবেথ আবিষ্কার করেন এটি। আবিষ্কারের মাত্র দুই মাসের মধ্যে এই চুলার প্রায় ২ হাজার পিস বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
কর্ন মিল
আমেরিকান নারী সাইবিলা রাইটন হলেন কর্ন মিলের আবিষ্কারক। নেটিভ আমেরিকানদের যাপিত জীবন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার। তাদেরকে তিনি খুব কষ্ট করে ভুট্টা মাড়াই করতে দেখেছেন। ফলে এই কাজ সহজ করার তাগিদ থেকেই এই মিল আবিষ্কার করে ফেলেন।
ফুড প্যাডেল ট্র্যাশ ক্যান
এটি আবিষ্কার করেন আমেরিকান মনোরোগবিদ লিলিয়ান মোলার গিলব্রেথ। বর্তমানে এ ধরনের প্যাডেল রান্নাঘরের বিশেষ একটি অনুষঙ্গ।
খাদ্য অনুষঙ্গ তো বটেই, খাবার উৎপাদন, বিপণন ও খাদ্যসংস্কৃতি বিনির্মাণে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। বিশ্বে বহুল প্রচলিত পানীয় বিয়ারের উন্নতিও নারীদের মাধ্যমে হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন বিয়ার হিস্টরিয়ান জেন পেটন। তা ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া কুজিন আবিষ্কারক হিসেবে অ্যালিস ওয়াটার নামের একজন আমেরিকান নারীর কৃতিত্ব রয়েছে।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট