বহুরূপী I কলা কচাল
কলার ভালোমন্দ বিচারে কাঁচা কলা থেকে আলাপ শুরু করাই ভালো। যদিও তরকারি করা ছাড়া এটি খেতে বিস্বাদ। এই কলায় থাকে স্টার্চ, যা হজম হতে বেশি সময় নেয়। এতে ক্ষুধা কম লাগে। তাই ওজন কমাতে চাইলে কাঁচা কলা খাওয়া যেতে পারে। স্টার্চ বিপাক ক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে। ফলে ফ্যাট কমে। কিন্তু এই কলার জটিল কার্বোহাইড্রেট সহজে হজম হয় না। ফলে পাকা কলার তুলনায় কাঁচা কলা খেলে শরীর খনিজ ও ভিটামিনের পর্যাপ্ত জোগান পায় না। তাই স্বাস্থ্যের উপকারের বিচারে কাঁচা কলার চেয়ে পাকা কলাই ভালো।
পাকা কলার আছে রকমফের। সাগর, শবরী, চাঁপা, কাঁঠালি, অনুপম—আরও কত কী! এসব কলার প্রতিটির রয়েছে আলাদা গুণ। যেমন মাথাব্যথা কিংবা বাতের ব্যথা দূর করতে পারে কাঁঠালি কলা। শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যও বজায় রাখতে সহায়তা করে এটি। দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য। সুগার নিয়ন্ত্রণেও আছে এই কলার ভূমিকা। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে। যারা দৈহিক অস্থিরতায় ভোগেন, তাদের জন্য পথ্য হতে পারে কাঁঠালি।
আঁশসমৃদ্ধ চাঁপা কলা। ফলে তা খেলে পেট পরিষ্কার হয়। এটি মগজ সতেজ রাখার পাশাপাশি কাজের উদ্যম বাড়ায়। ক্যানসার প্রতিরোধেও এই কলা কার্যকর। শরীরের হাড় সুস্থ রাখতে খাওয়া যেতে পারে চাঁপা কলা। কমায় স্ট্রেসের ঝুঁকি। কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। রক্তশূন্যতা দূর করে। সিঙ্গাপুরি কলা খেলেও রক্তশূন্যতা দূর হয়। এতে পটাশিয়াম থাকায় মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয়। নিয়ন্ত্রণে থাকে রক্তচাপও।
দারুণ ঔষধি গুণসম্পন্ন বিচি কলা। অনেকে চেনেন আঁটিয়া কলা নামে। এ কলায় মেলে ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন ও ফসফরাস। এসব মৌল দেহের টিস্যু গঠনে কাজে লাগে। ব্রঙ্কাইটিস, আলসার ও আমাশয় সারাইয়ে বিচি কলা বেশ উপাদেয়। ডায়রিয়া সারাইয়ে এর বীজের মিউসিলেজ ব্যবহৃত হয়। গ্যাস্ট্রিকের পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এ কলা। কিডনি সমস্যা দূর করতেও খাওয়া যেতে পারে। মাত্র দুটি বিচি কলা দিতে পারে ৯০ মিনিট কাজ করার শক্তি। এই কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা কমায়।
সাগর কলা ও অনুপম কলা প্রায় একই গুণসম্পন্ন। অনুপম কলা অনিদ্রা দূর করে। স্ট্রেস কমায়। তা ছাড়া চর্বি কমাতে পারে এটি। তবে সাগর কলায় কিছু গুণ আছে, যা অনুপমে নেই। সাগর কলা নরম হওয়ায় এর পুষ্টিগুণ প্রায় দশ মিনিটের কম সময়ে রক্তে প্রবেশ করে। ফলে দ্রুত শক্তির জোগান পায় দেহ। এ ক্ষেত্রে অনুপম কলার লাগে ২০ মিনিট।
সাগর কলার আরও উপকারিতা আছে। যেমন রক্তচাপের সমস্যা দূর করে। হজম সমস্যা বাড়ায়। পেশি মজবুত করে। গর্ভাবস্থায় শারীরিক ও মানসিক চাপ দূর করে। গ্যাস্ট্রিক ও আলসার রোগীদের জন্য এই কলা এন্টাসিডের বিকল্প। তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকের কথা প্রচলিত আছে। যাদের শ্বাসকষ্ট, এজমা রয়েছে—এমন রোগীদের এ কলা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন অনেকে।
সব ধরনের কলাতেই কিছু অপকারিতা আছে। যেমন খালি পেটে কলা না খাওয়াই ভালো। তাতে গ্যাস্ট্রিক বাড়ে। বেশি খেলে শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে। যাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ এমনিতেই বেশি, তারা অতিরিক্ত কলা খেলে হাইপারক্যালিমিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তা ছাড়া ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্র ও মাইগ্রেনে সমস্যা থাকলে বুঝেশুনে কলা খাওয়া ভালো।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট