ফুড ফিচার I লাউচিংড়ি
পর্তুগিজ বণিকদের হাত ধরেই বাংলায় লাউচিংড়ির আগমন ঘটেছে। উল্লেখ্য, ভারতের কালিকট বন্দরের পূর্ব উপকূলে নাবিক বার্থোলমিউ দিয়াজের পা রাখার ৩৩ বছর পর ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ বণিকেরা সমুদ্রপথ ধরে এ দেশে আসে।
বাঙালির রান্নায় পর্তুগিজদের প্রভাব ব্যাপক। আমরা যে দুই বা ততোধিক সবজির মিশ্রণে খাবার তৈরি করি, তা এসেছে তাদের কাছ থেকেই। যেমন বাঙালি হিন্দুদের সপ্তাহে একটু শুক্তো না হলে খাবারে তৃপ্তি আসে না। এটি মূলত বিভিন্ন সবজির মিশেল। পোস্ত রান্নার কথাই ধরা যাক, আলু ছাড়া পোস্ত- এটা ভাবাই যায় না। আবার লাউ ছাড়া চিংড়ির ঝোল কিংবা বেগুন বা আলু ছাড়া মাছের ঝোল- এসবই এসেছে পর্তুগিজদের হাত ধরে।
লাউ ও চিংড়িতে রয়েছে আলাদা পুষ্টি উপাদান, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আবার যখন দুই খাদ্য উপাদানকে এক করা হয়, তখন এর পুষ্টিগুণের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। স্বাদও ভিন্ন মাত্রা পায়। লাউচিংড়ি তেমনই একটি খাবার। লাউয়ে রয়েছে ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, পলিফেনল নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ। এগুলো দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার ও কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে সক্ষম। লাউ উচ্চ ডায়াটারি ফাইবার ও লৌহে ভরা। যেটি হজমে সাহায্য করে এবং প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব পূরণ করে। সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক পর্যাপ্ত লাউ খাওয়া দরকার। চিংড়িতে আছে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন ও প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ, ভিটামিন-ই, ভিটামিন বি৬, লৌহ ও ম্যাগনেসিয়াম। আছে গ্লুট্যাথিওন পার-অক্সাইডের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সিলেনিয়াম। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি এনজাইম, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। লাউয়ের সঙ্গে চিংড়ির মিশেলে তৈরি এই খাবার মুখরোচক ও পুষ্টিকর।
অন্য খাবারের তুলনায় লাউচিংড়ি রান্নার পদ্ধতি সহজ। এতে সব মসলার প্রয়োজন হয় না। পরিমাণমতো হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, লবণের মিশ্রণে লাউচিংড়ি খুব সহজেই রান্না করা যায়। মসলা কম ব্যবহৃত হলেও এটি বেশ উপাদেয় ও স্বাস্থ্যকর। চিংড়ি সুস্বাদু, কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়। তবে লাউয়ের সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করা হলে এর ক্ষতির উপাদান, যেমন কোলেস্টেরল বেশ সহনীয় হয়ে আসে। চিংড়ি খাওয়া যাদের বারণ, এই খাবার তাদের জন্য কম ক্ষতিকর। লাউচিংড়ি সাধারণত ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়। রুটির সঙ্গেও খাওয়া যায়। আবার রাতে রান্না করে রাখা লাউচিংড়ি পরদিন সকালে গরম না করে পান্তা ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এটি আজও জনপ্রিয়।
অন্যদিকে, এটি পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী খাবার।
রেন্টিনা চাকমা
ছবি: সংগ্রহ