বহুরূপী I বাদাম বিচিত্রা
থিয়েটার, স্কুল, অফিস, চায়ের দোকান কিংবা জমজমাট আড্ডা—সবখানেই বাদাম খুব চেনা স্ন্যাকস। মুখরোচক এই খাবারের রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ। স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে পুষ্টিবিদ ও জিম ইনস্ট্রাক্টরদের দেওয়া খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নেয় অহর্নিশ। বিভিন্ন তরকারির স্বাদ বাড়াতেও রয়েছে এর ব্যবহার। বাদামে থাকে প্রচুর প্রোটিন। হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখতে এর বিকল্প মেলা ভার। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি নানা রোগবালাই থেকে মানবদেহ সুস্থ রাখতেও রয়েছে এর ভূমিকা।
বাদামেরও আছে প্রকারভেদ। অন্য বাদামের তুলনায় কাঠবাদাম আস্ত অথবা টুকরো হিসেবে, এমনকি খোসাবিহীনও বিক্রি হয়। ময়দাবিহীন কেক বানানোর বেলায় ময়দার বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা হয় এটি। প্রতি আউন্স কাঠবাদামে থাকে ১৬১ ক্যালরি, ৫.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৮ গ্রাম ফ্যাট ও ৩৭ শতাংশ ভিটামিন ই।
অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতির দক্ষিণ আমেরিকান কাজুবাদাম ইন্ডিয়ান ও থাই ফুডের মতো অন্যান্য খাবারে জায়গা করে নিয়েছে। এর পেছনে অবদান রেখেছেন মূলত পর্তুগিজ অনুসন্ধানী ও ব্যবসায়ীরা। কোনো রেসিপিতে ভিন্ন টেক্সচার, আকৃতি কিংবা ক্রাঞ্চ যোগ করতে চাইলে বেছে নেওয়া যেতে পারে কাজুবাদাম। কাজু দুধ কাঠবাদাম দুধের মতোই দুগ্ধজাত খাবারের একটি পুষ্টিকর বিকল্প। প্রতি আউন্স কাজুবাদামে রয়েছে ১৫৭ ক্যালরি, ৮.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫.১ গ্রাম প্রোটিন, ০.৯ গ্রাম ফাইবার ও ১২.৩ গ্রাম ফ্যাট।
পশ্চিম এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে উদ্ভূত পেস্তাবাদাম বাকলাভা, মামউল, হারোসেথ ও হালভার মতো খাবারে একটি মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে এর তুর্কি ও পার্সিয়ান জাতগুলো বেশ সহজলভ্য, যেগুলো আকারে ছোট এবং গাঢ় খোসাসংবলিত। তবে ইউরোপের বাজারে ক্যালিফোর্নিয়ার পেস্তাবাদামের বেশ দাপট। প্রতি আউন্স পেস্তাবাদামে ১৫৯ ক্যালরি, ৭.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫.৭ গ্রাম প্রোটিন, ২.৯ গ্রাম ফাইবার, ১২.৪৯ গ্রাম ফ্যাট এবং ভিটামিন বি ৬ থেকে ২৪ শতাংশ আরডিআই থাকে।
চিনাবাদাম মূলত শিম (যেমন মটর, মসুর ও মটরশুঁটি) থেকে উদ্ভূত; তবে রন্ধনসম্পর্কিত ব্যবহারের কারণে এটি বাদাম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এটি দামে সস্তা। সারা বছর প্রাপ্যতা ছাড়াও চিনাবাদাম এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ, এতে থাকা উচ্চ প্রোটিন। এক কাপ চিনাবাদাম থেকে মেলে ৪০ গ্রাম প্রোটিন, যা অন্য বাদামগুলোর চেয়ে এটির বেশি প্রোটিনসমৃদ্ধ হওয়ারই সাক্ষ্য দেয়। চিনাবাদাম এইচডিএল মাত্রা বাড়িয়ে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সক্ষম। এই বাদামে রয়েছে খনিজ ও ম্যাগনেশিয়াম, যা ত্বক ও চুল মসৃণ করার পাশাপাশি দাঁত ও মাড়ি রাখে মজবুত।
সবচেয়ে বড় আকারের বাদামগুলোর অন্যতম হলো ব্রাজিল নাট। ব্রাজিলের লোকালয়ে এবং আমাজন রেইন ফরেস্ট জুড়ে দেখা মেলে এর। মাত্র দুটি কুঁচকানো, হালকা গন্ধযুক্ত এই বাদাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই-এর দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
বাণিজ্যিকভাবে নুটেলা নামে বেশি পরিচিত জনপ্রিয় মিষ্টি স্প্রেড জিয়ান্ডুজা তৈরিতে বড় ভূমিকা রয়েছে গোলাকার হ্যাজেলনাটের। চকোলেটে স্বর্গীয় স্বাদ এনে দিতে বেশ কাজে দেয় এই বাদাম। বেশির ভাগ বাদামের মতো এটিও কাঁচা খাওয়া যায়, তবে স্বাদ বাড়াতে হ্যাজেলনাট রোস্ট করে নেওয়া ভালো। তা ছাড়া রোস্টিং এই বাদামকে ক্রাঞ্চি করে তোলে, যা স্যালাড ও স্যুপে নিখুঁত টেক্সচার দিতে ভূমিকা রাখে।
জানা কথা, আখরোট বেশ জনপ্রিয় বেকিং উপাদান। জানেন কি, বেশির ভাগ বাদামই খোসাবিহীন হলেও আখরোট নাট সেই বিরল বাদামগুলোর একটি, ঋতুর ওপর নির্ভর করে যার থাকে বেশ শক্ত খোসা। রাফড মিটে এর ব্যবহার তুলনামূলক বেশি ট্যানিন থাকে, যা আখরোটকে সামান্য তিক্ত ও শুষ্ক স্বাদ দেয়। তবে সার্বিকভাবে আখরোটকে মিষ্টি স্বাদের একটি ভালো পরিপূরক বলা যেতে পারে।
ম্যাকাডেমিয়া বাদাম সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। এই বাদামগুলো অনেকটাই মাখনের স্বাদে সমৃদ্ধ, বিশেষ করে মাছের সঙ্গে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে যায়; সেই সঙ্গে কুকিজ ও পাইয়ের মতো বেকড পণ্যগুলোতেও।
এদিকে পাইন নাটের উৎস হলো পাইনগাছ। দুনিয়াজুড়ে এ বাদামের বেশির ভাগই চীন ও ইতালি থেকে আমদানি করা হয়। ইতালীয় পাইন বাদাম চীনাগুলোর তুলনায় লম্বা ও সরু হয়। স্পাইসি স্বাদযুক্ত এই বাদাম টোস্ট ও পেস্টোতে পরিণত হয় দারুণ মানিকজোড়ে।
অন্যদিকে, আমেরিকান রন্ধনসম্পর্কীয় ইতিহাসে একটি স্বতন্ত্র স্থান দখল করে রেখেছে স্থানীয় বাদাম—পেকান। সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। মূলত জর্জিয়া ও টেক্সাস অঞ্চলে উৎপাদিত এই বাদাম আখরোটের চেয়ে মিষ্টি, যা সাধারণত বেকিংয়ে কাজে লাগে।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট