দেহযতন I কার্ডিও ক্যারিশমা
চলতি সময়ের স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজে অভ্যস্ত। বাড়িতেও করা সম্ভব এর নিয়মিত চর্চা; নিয়ম মেনে
প্রথমেই জানা চাই, কার্ডিও কী? এ এমন এক ব্যায়াম, যা হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। দৌড়ানো বা দ্রুত হাঁটা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের ব্যায়াম এর অন্তর্ভুক্ত। রমজান মাসে সারা দিন সিয়াম সাধনার পর জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা অনেকের জন্যই বেশ দুঃসাধ্য। তাই চলুন, জানা যাক কয়েকটি দারুণ কার্ডিও ওয়ার্কআউটের কথা, যেগুলোর চর্চা বাড়িতেই করা সম্ভব।
বারপিস
বারপিস ক্রসফিট পেশাদারদের অনেকেই ভয় পেতে পারেন! কিন্তু এটি অল্প সময়ের মধ্যে একটি কিলার কার্ডিও ওয়ার্কআউটের অনুভূতি এনে দিতে সক্ষম। এর জন্য কোনো ইকুইপমেন্ট কিংবা বেশি জায়গার দরকার পড়ে না। ফলে বাড়িতে চর্চার জন্য দারুণ এক কার্ডিও ওয়ার্কআউট। বারপিস করতে বিকল্প প্ল্যাঙ্ক অবস্থানের পরিবর্তন করে সঙ্গে সঙ্গেই উঠে, শূন্যে সামনের দিকে লাফ দিতে হবে। নিশ্চিত করা চাই, হাত যেন মাটিতে সমতল অবস্থায় এবং পিঠ সোজা থাকে। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে ১০০ ক্যালরির মতো বার্ন করা যায়। আঘাত এড়াতে ধীরগতিতে শুরু এবং ১০ মিনিটের বেশি চর্চা না করাই শ্রেয়।
দড়িলাফ
ছোটবেলায় দড়ি লাফানো নিয়ে প্রিয় কোনো স্মৃতি আছে আপনার? চাইলেই বাড়িতে ওয়ার্কআউট হিসেবে এই চর্চাকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। দড়িলাফকে অন্যতম সেরা কার্ডিও ওয়ার্কআউট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক ক্রীড়াবিদ এটি করে থাকেন। করা যায় যেকোনো জায়গায়। তবে এ জন্য সবার আগে স্পোর্টস পণ্যের দোকান থেকে একটি বিশেষ ধরনের দড়ি কিনে আনা চাই। মাত্র ২০ মিনিট দড়িলাফে প্রায় ২২০ ক্যালরি বার্ন করা সম্ভব। এর চেয়ে বেশি সময় ধরে এই ওয়ার্কআউট করতে চাইলে শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রাখা দরকার।
জাম্পিং জ্যাকস
অনেককে শৈশবস্মৃতিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আরেকটি কার্ডিও ওয়ার্কআউট এটি। বারপিসের মতো একটানা ১০ মিনিট জাম্পিং জ্যাক করলে প্রায় ১০০ ক্যালরি বার্ন হতে পারে। বারপিস, দড়িলাফ ও স্কোয়াট জাম্পের সঙ্গে কিছুটা মিল আছে এই ব্যায়ামের। ফলে এগুলো চাইলে পরপর চর্চা করতে পারেন। কোনো ইকুইপমেন্ট ছাড়াই যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় জাম্পিং জ্যাক সঞ্চালন করা যায়।
স্কোয়াট জাম্প
স্কোয়াট জাম্প এমন এক দুর্দান্ত কার্ডিও ব্যায়াম, যা একা একাই করা সম্ভব। নাম শুনে বোঝা যায়, স্কোয়াটের মাধ্যমে এটি শুরু করতে হবে; তারপরে লাফিয়ে যতটা সম্ভব ওপরে উঠে আবার স্কোয়াটে ফিরে আসতে হবে। এই এক্সারসাইজে হাঁটুর ওপর বেশ প্রভাব পড়ে। তাই শিক্ষানবিশ হলে কিংবা হাঁটুতে আঘাত থাকলে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
কিকবক্সিং
সংগঠিত কার্ডিও সেশনে আরও বেশি ক্যালরি বার্ন করতে চান? শুরু করুন কিকবক্সিং! বাড়িতে চর্চার জন্য আরেকটি সেরা কার্ডিও ওয়ার্কআউট। কিকবক্সিং হলো কারাতে ও বক্সিংয়ের সংমিশ্রণ। এটি শুধু কার্ডিও নয়, স্ট্রেন্থ স্ট্রেনিংয়ের জন্যও দারুণ। এর জন্য একটি পাঞ্চিং ব্যাগ প্রয়োজন। এক্সারসাইজ ভিডিওর সহযোগিতা নিয়ে করতে পারেন চর্চা। তবে ইতিমধ্যে কিকবক্সিংয়ে দক্ষতা থাকলে নিজে নিজেই তা করা যেতে পারে। প্রতি ১০ মিনিটের এই ওয়ার্কআউটে প্রায় ১০০ ক্যালরি বার্ন হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রেস ও অ্যাগ্রেসন থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ড্যান্স মুভ
বাড়িতে মজার কোনো কার্ডিও ওয়ার্কআউট করার কথা ভাবছেন? প্লে লিস্টে রাখুন কিছু আপবিট মিউজিক; তার সঙ্গে চেষ্টা করুন নাচার। এই চর্চা হৃৎপিণ্ড পাম্প করে। ফলে কিছু ড্যান্স মুভ আসলেই কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম উন্নত করার পাশাপাশি মাংসপেশি উন্নত করতে কাজে দেয়। আরও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা পেতে বিনা মূল্যে ইউটিউব থেকে ড্যান্স এক্সারসাইজ ভিডিও দেখে নিতে পারেন।
সিঁড়িতে দৌড়ানো
এর জন্য দরকার আবাসস্থলে ভালো মানের সিঁড়ি থাকা। সিঁড়িতে দৌড়ানোর ওয়ার্কআউট সম্পূর্ণ শরীর, বিশেষ করে শরীরের নিম্নাংশে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং হার্ট রেট পাম্প করে। সকল ওয়ার্কআউটের পর আরও বেশি ক্যালরি বার্ন করার ইচ্ছা থাকলে সিঁড়িতে নিয়মিত দৌড়ানোর চ্যালেঞ্জ জানান নিজেকেই!
জগিং
দৌড়ানোর জন্য সব সময় বাইরে যাওয়া কিংবা ট্রেডমিলে ওঠার দরকার নেই; বাড়িতে একই জায়গায় জগিং করেও পেতে পারেন সমান উপকার। অবশ্য দীর্ঘ সময়ের জন্য একই জায়গায় দৌড়ানো অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে অন্য ব্যায়াম, যেমন বার্পি, দড়িলাফ ইত্যাদির সঙ্গে জগিংকে জুড়ে নিতে পারেন।
এতক্ষণ যে ব্যায়ামগুলোর কথা বলা হলো, এগুলোর সংমিশ্রণে পাওয়া যাবে দারুণ ফল। প্রতিটি ব্যায়াম কয়েক রাউন্ড করে চর্চার ফলে যেমন ক্যালরি বার্ন করা সম্ভব, তেমনি তা শক্তিশালী মাংসপেশি গঠনেও কাজে দেবে। এ ক্ষেত্রে নিতে পারেন অনলাইন টিউটরিয়াল ভিডিওর সহায়তা। তবে বাড়িতে ব্যায়াম করলে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি একেবারেই থাকবে না, তা নয়। তাই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিন্তে কিছু পরামর্শ মানা যেতে পারে—
অবাধে চলাফেরা করার জন্য বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা উন্মুক্ত রাখা;
পাটি, ম্যাট কিংবা কার্পেট স্থিতিশীল কি না, তা পরীক্ষা করে নেওয়া;
মেঝেতে নন-স্কিড জুতা পরা;
হৃৎস্পন্দন বাড়াতে এবং পেশি উষ্ণ করতে ৫ মিনিটের জন্য ওয়ার্মআপ করা;
হাইড্রেটেড থাকার জন্য পানি পানের নিয়মিত বিরতি নেওয়া;
শরীর ও হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বুঝে ব্যায়ামের সীমারেখা নির্ধারণ করা;
একটি ওয়ার্কআউট শেষ হলে কিছু সময় বিরতি নেওয়া এবং অল্প সময়ের জন্য পেশি প্রসারিত করা;
সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা কিংবা বর্তমান উপসর্গের অবনতি ঠেকাতে ব্যায়াম শুরুর আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া।
ব্যায়াম আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠতে পারে। যেকোনো ধরনের ব্যায়াম ধীরে ধীরে শুরু করাই শ্রেয়। ফিটনেস বাড়তে থাকলে ব্যায়ামের সঙ্গে শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায়; এতে আঘাতের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে।
বাসায় আপনার কার্ডিও এক্সারসাইজ হোক নিয়মনিষ্ঠ ও নিরাপদ।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট