কুন্তলকাহন I স্ক্যাল্পে সানস্ক্রিন
শুধু মুখত্বকেই নয়, সানক্রিনের ব্যবহার চাই চুলে ও মাথার ত্বকে। জাদুকরি সুরক্ষা পেতে
সানস্ক্রিন। রোদ থেকে ত্বক সুরক্ষায় জনপ্রিয় প্রডাক্ট। তবে অনেকে সানস্ক্রিন কথাটি সামনে এলেই ভাবি, এটি শুধু মুখ বা বাহ্যিক ত্বকে ব্যবহারের জন্যই। কিন্তু সানস্ক্রিন চুলের জন্য মাথার ত্বকেও ব্যবহার করতে পারেন। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে ত্বকের জন্য সানস্ক্রিন যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই স্ক্যাল্পের জন্য। তাই সূর্যের আলোয় বাইরে বের হতে হলে মাথার ত্বকেও সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না।
রৌদ্রোজ্জ্বল ঋতু না হলে সানস্ক্রিন ব্যবহারের দরকার পড়ে না—এই ধারণা সঠিক নয় বলেই জানা যায় বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। রৌদ্রোজ্জ্বল ঋতু না হলেও নিয়মিত সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেওয়া কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সৌন্দর্য অনুশীলনের মধ্যে পড়ে। কারণ, সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে ত্বকের যত্নের রুটিনের এই অংশ এড়িয়ে যাওয়ার ফলে ত্বকে ক্যানসার হতে পারে। মূলত আমাদের ত্বক প্রতিনিয়ত সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শে আসে; ফলে এটি রোদের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাথার ত্বকে সরাসরি রোদের আলো পড়ায় তা পুড়ে যায় সহজেই। ফলে চুলের গোড়া কিংবা মাথার ত্বক খুশকির মতো বিশ্রী দেখায়।
কেন চাই
নিউ জার্সির হ্যাকেনস্যাক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যালেক্সিস ইয়াং জানান, প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ মাথার ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহারে অবহেলা করেন। অনেকেই স্ক্যাল্পে সানস্ক্রিন লাগানোকে ঝামেলা হিসেবে ভাবেন। কিন্তু সত্যি হচ্ছে, প্রায় ৫ শতাংশ ক্যানসার ত্বকের ক্যানসারের সঙ্গে সঙ্গে মাথার ত্বকে হানা দেয়, যা অনেক সময় চুলের আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে। এই ক্যানসার এমন পর্যায়ে ধরা পড়ে, যার চিকিৎসা করানোটাও কঠিন। মাথার ত্বক, কান ও মুখ যেহেতু সারা দিনে সবচেয়ে বেশি সময় সূর্যের এক্সপোজার পায়, তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এই জায়গাগুলোর সুরক্ষা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যেভাবে ব্যবহার
আমরা কম-বেশি সবাই নিয়মিত কিছু চুলের রুটিন মেনে চলি। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে চুলের সেই রুটিনে কিছু সুরক্ষাও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যার মধ্যে রয়েছে সানস্ক্রিন প্রয়োগ। মাথার ত্বকে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা চাই, যাতে ন্যূনতম এসপিএফ ৩০ থাকে এবং তা জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটানিয়াম ডাই-অক্সাইডের মতো ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। এতে সূর্যের ইউভিএ এবং ইউভিবি বাধাগ্রস্ত হয়।
খেয়াল রাখা চাই, চুলের পাতলা অংশ কোনটি। মূলত চুলের পাতলা অংশটিতে উদারভাবে সানস্ক্রিন প্রয়োগ করতে হবে। বাজারে স্প্রে, পাউডার ও শ্যাম্পু—এই তিন আকারে সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। পছন্দমতো সেটির ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখুন, তেল-মুক্ত সানস্ক্রিনের সংস্করণগুলো মাথার ত্বকে ব্রেকআউট প্রতিরোধে সহায়তা করবে। এ ছাড়া পানি প্রতিরোধী পণ্যগুলো স্ক্যাল্পের দুরবস্থা চোখে পড়ার ভয় থেকে মুক্তি দেবে। হ্যাঁ, এসবের বাইরে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করাটাও জরুরি।
যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন
এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন: এই সানস্ক্রিন স্প্রে আকারে পাওয়া যায়। এটি হালকা শিশিরের মতো ছড়িয়ে যায়। ফলে চুলের সঙ্গে এমনভাবে মিশে যায়, মাথায় এর আলাদা ওজন অনুভব করবেন না; অন্যদিকে স্ক্যাল্প পাবে সুরক্ষা।
স্ক্যাল্প অ্যান্ড হেয়ার মিস্ট অর্গানিক সানস্ক্রিন এসপিএফ ৩০: এই সানস্ক্রিন ৭০ শতাংশের বেশি অর্গানিক ইনগ্রেডিয়েন্টে তৈরি। আর এই স্প্রেতে মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করার মতো তেলের মিশ্রণ রয়েছে। তা ছাড়া স্প্রেটির হালকা ঘ্রাণ চুলে সজীবতা আনে। এটি ৮০ মিনিট পর্যন্ত পানি প্রতিরোধী এবং হালকা ওজনের। তাই চুলকে চটকদার দেখাবে না।
সুপারগুপ পুফ ১০০% মিনারেল পার্ট পাউডার এসপিএফ ৩৫: এই সানস্ক্রিন একটি নন-ফ্যাটি, কার্যত শনাক্ত করা যায় না এমন পাউডার আকারে ব্রড-স্পেকট্রাম এসপিএফ দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা শুষ্ক শ্যাম্পুর মতোই মনে হয়; কিন্তু তাতে ইউভি সুরক্ষার বাড়তি সুবিধা রয়েছে।
মিনারেল পাউডার সানস্ক্রিন ব্রাশ: আরেকটি পাউডার বিকল্প। হাওয়াইয়ান ট্রপিকের এই ব্রাশ-অন সানস্ক্রিন মাথার ত্বক থেকে মুখ পর্যন্ত সর্বত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কপারটোন পিওর অ্যান্ড সিম্পল সানস্ক্রিন স্প্রে: প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত জিঙ্ক অক্সাইডভিত্তিক খনিজ স্প্রেতে রয়েছে পুষ্টিকর বোটানিক্যাল নির্যাস, ইউভিএ ও ইউভিবি সুরক্ষা। এটি ৮০ মিনিট পর্যন্ত পানি প্রতিরোধী। এর হাইপোঅ্যালার্জেনিক সূত্রটি চা-পাতা, জায়ান্ট কেল্প এবং ভার্জিন লোটাসের নির্যাসে তৈরি। একই সঙ্গে পিএবিএ, প্যারাবেন, রঞ্জক, অ্যালকোহল, সুগন্ধি এবং সালফেট মুক্ত।
কালারসায়েন্স টোটাল প্রোটেকশন ব্রাশ-অন শিল্ড এসপিএফ ৫০: এই তেলমুক্ত পাউডারে একটি সর্ব খনিজ সূত্র রয়েছে, যা ব্র্যান্ড অনুসারে, কোনো আঠালো অবশিষ্টাংশ না রেখে ৮০ মিনিট পর্যন্ত ইউভিএ/ইউভিপি, দূষণ, নীল (এইচইভি) আলো এবং ইনফ্রারেড বিকিরণ থেকে সুরক্ষা দেয়। পোর্টেবল ব্রাশটি চলতি পথে প্রয়োগ করা সহজ করে তোলে।
স্টরিকস সানব্লক হেয়ার সেরাম: এতে সব কটি সানব্লক স্পেকট্রাম আছে, যা রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে। চুলের স্বাভাবিক রং বজায় রাখে। সেই সঙ্গে চুল রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে যাওয়ার হাত থেকেও বাঁচায়!
ওয়াও সাটিন সানশেড সানস্ক্রিন শ্যাম্পু: এই শ্যাম্পু প্যারাবেন ও সালফেট ফ্রি। ফলে যেকোনো ধরনের চুলে মানানসই। এটি ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন; ফলে ইউভিএ ও ইউভিবির হাত থেকেই চুলকে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া, অকালপক্বতা ও ডগা ফাটার হাত থেকেও রক্ষা করে।
সরাসরি রোদের আলো পড়ে বলে চুলের কেরাটিন নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্যারাবেন ও সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু কিংবা সানস্ক্রিন ব্যবহার করা দরকার। যারা সানস্ক্রিন ব্যবহার ব্যয়বহুল মনে করেন, তারা নিয়মিত অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ নারকেল তেল ব্যবহার করেও হেয়ার সানস্ক্রিন প্রোটেকশন দিতে পারেন। অ্যালোভেরা ও নারকেল তেলের পুষ্টি চুলের ওপর একটি আলাদা প্রলেপ তৈরি করে। অবশ্য মূলত সানস্ক্রিনের ব্যবহারই আপনার চুলকে আরও বেশি সুরক্ষা দেবে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাবে। তাই রোদে বের হলেই ব্যবহার করুন সানস্ক্রিন।
উম্মে হানী
মডেল: মাহালেকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল