যাপনচিত্র I গো উইদ দ্য ফ্লো
মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া। মডেল ও অভিনেত্রী। লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টারের মাধ্যমে আবির্ভাব। এরপর নাটক, সিনেমা, মিউজিক ভিডিওসহ নানা মাধ্যমে পদচারণ। উঁকি দেওয়া যাক হাস্যোজ্জ্বল এই তারকার একান্ত জীবনে
শুটিং থাকলে ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে ওঠেন টয়া। গোসল সেরে নিয়ে গোছগাছ, মেকআপ নিজেই করতে পছন্দ করেন। অয়েলি হেয়ারের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন প্রতিদিন। তারপর অনুসরণ করেন সকালের স্কিন কেয়ার রুটিন। বাইরে কাজ থাকে বলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। সেই সঙ্গে ময়শ্চারাইজার ও সেরাম। পাশাপাশি বরফ দিয়ে মুখমণ্ডল কাম-ডাউন করেন। ব্রেকফাস্টে টয়ার মেনুতে থাকে পরোটা, দই যোগে রেনোলা (খাবার বিশেষ)। সব শেষে কফি বা চা। ‘খাবার রুটিনে হেলদি লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে পারি না। তবে মেটাবলিজম ভালো হওয়ায় এবং জিমে ওয়ার্কআউট করি বলে রক্ষা,’ বললেন টয়া।
অবশ্য শুটিং না থাকলে ১১-১২টা পর্যন্ত ঘুমান। কেননা আগের দিন শুটিং থাকলে বাসায় ফেরা হয় মাঝরাতে। এমন দিনে দুপুরে একবারে ‘ব্রাঞ্চ’ সারেন। মেনুতে থাকে ভাত, ডাল, মাছ অথবা মাংস। জানালেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক, দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমানো চাই। অন্যদিকে কাজের ক্ষেত্রে রেস্টোরেশন তার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। টানা দুদিন কাজ করলে চেষ্টা করেন পরবর্তী দুদিন বিশ্রাম নেওয়ার। টয়া বলেন, ‘ক্রিয়েটিভ কাজের ক্ষেত্রে মেন্টাল ও ফিজিক্যাল এনার্জি থাকাটা জরুরি; সেই সঙ্গে মনে থাকা চাই শান্তি।’
জিমে যান সন্ধ্যায়। ঢাকায় তার আবাস মিরপুর ডিওএইচএসে হলেও বনানীর একটি নামকরা জিমে দুই-আড়াই ঘণ্টা ওয়ার্কআউট করেন। সাধারণত ফুল বডি ওয়ার্কআউট করার চেষ্টা থাকে। টোন আপ হতে নিয়ম মেনে একেক দিন একেক ধরনের শারীরিক কসরত সারেন। টোনড বডি বানাতে ও মেইনটেইন করতে লেগস, আপার বডি, চেস্টব্যাক—সব এক্সারসাইজ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে করেন, তবে অবশ্যই ইনস্ট্রাক্টরের নির্দেশনা মেনে।
মন শান্ত রাখতে সময়-সুযোগ পেলেই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন টয়া। কখনো ঢাকার বাইরে, কখনো বিদেশে। জানা গেল, তার ছোটবেলা কেটেছে রাঙামাটিতে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে উঠেছেন বলেই অপার প্রকৃতি তাকে হরদম কাছে টানে। দু-এক মাসে অন্তত একবার ঘুরে আসেন কক্সবাজার, সিলেট, রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন অঞ্চলে। একটু দম ফেলার জন্য কখনো কখনো চলে যান ঢাকার অদূরে কোনো রিসোর্টে। এমন মানুষের জীবনসঙ্গীরও যদি ভ্রমণে আসক্তি থাকে, একে সৌভাগ্যই বলতে হয়! তার স্বামী সাঈদ জামান শাওন পেশাগত কারণে ঘুরে বেড়িয়েছেন ৩০টির বেশি দেশে। টয়ার ঘুরে বেড়ানো দেশের সংখ্যা ৭। এগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড তাকে আকৃষ্ট করেছে বেশি। পাহাড়ঘেরা ও সমুদ্রসৈকতবেষ্টিত দ্বীপগুলো, সেই সঙ্গে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার ও সংস্কৃতির জন্যই মূলত। সদ্যই ভ্রমণে গিয়েছিলেন সে দেশের ফুকেটে, ম্যারেজ অ্যানিভারসারি সেলিব্রেট করতে। সেখানকার রাওয়াই বিচের যে রিসোর্টে উঠেছিলেন, সেটি মোটেই ট্র্যাডিশনাল নয়। সেখানে থাকতে হয় একধরনের বিলাসবহুল তাঁবুতে। তাঁবুর একটু সামনেই একটি জ্যাকুজি ও চেয়ারে ঘেরা জায়গা। এর পরেই সমুদ্রসৈকত। সৈকতের পর দ্বীপ। তারপরে পাহাড়। বর্ণনা থেকেই বোঝা যায়, ওই জায়গার প্রেমে পড়ে গেছেন টয়া। সেখানে আবারও যাওয়ার ইচ্ছা রাখেন।
আরেকটি ব্যাপার হলো, থাই ফুড ভীষণ পছন্দ এই অভিনেত্রীর। যতবার থাইল্যান্ডে গেছেন, চেখে দেখেছেন নানা রকম নিত্যনতুন কুজিন। সেই সঙ্গে সি ফুড খেতেও ভালোবাসেন, সেটি থাইল্যান্ডে গিয়ে হোক কিংবা কক্সবাজারে। ভাত অথবা ভাতজাতীয় খাবার খুব একটা পছন্দ না করলেও কক্সবাজারে গেলে লইট্টা ফ্রাইয়ের সঙ্গে ডাল-ভাতের স্বাদ তার কাছে অমৃত সুধা বলে মনে হয়, জানালেন নিজেই।
টয়া বেশ পরিবারকেন্দ্রিক। বাইরে কাজ না থাকলে বাসায় পরিবারকে সময় দিতে পছন্দ করেন। ঘর গোছাতেও ভালোবাসেন। বাসার ফার্নিচারগুলো কাস্টমাইজ করে বানানো। এর সঙ্গে ছোটখাটো অনেক কিছুই তিনি চীন, জাপান, তুরস্ক থেকে অর্ডার করে আনিয়েছেন। বাসা সাজিয়েছেন ওয়ার্ম ও হোয়াইট লাইটের সমন্বয়ে। বাসা সাজানো হোক কিংবা লাইফস্টাইল, বোহিমিয়ান ব্যাপারটা তার দারুণ লাগে। জীবন যেহেতু একটাই, তা খুব রাশভারী করে কাটানোর পক্ষপাতী তিনি নন। ‘গো উইদ দ্য ফ্লো’তেই আস্থা। কাউকে বা কোনো কিছুকে কষ্ট না দিয়ে কিংবা ক্ষতি না করে যেকোনো অ্যাডভেঞ্চারে গা ভাসাতে দ্বিধা নেই তার। নিজেকে অবশ্য খুব একটা উচ্চাভিলাষী ভাবেন না। তাই কোনো কিছু পাওয়ার প্রতি অস্থিরতা নেই। মনে করেন, যা হবার তা হবেই। সুখী হওয়াটাই টয়ার কাছে জীবনের মূলমন্ত্র।
এই হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি ছোটবেলায় এক দুঃখজনক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই থেকে, এমনকি তার আগে থেকেই নিবিড়ভাবে পাশে পেয়েছেন মা-বাবাকে। সঙ্গে জীবনীশক্তি হিসেবে সব সময় পাশে পেয়েছেন একমাত্র বোনকেও। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় টয়া বেশ সরব। অভিনেতা সিয়াম আহমেদ, তার স্ত্রী অবন্তি, অভিনেত্রী সাফা কবির, সারাহ্ আলমসহ বেশ কয়েকজন কাছের বন্ধু রয়েছে তার। সাধারণত নিকেতনে এক বন্ধুর বাসায় জম্পেশ আড্ডা দেন। বসে গানের আসরও।
পপ ঘরানার গান বেশি পছন্দ টয়ার। প্রিয় শিল্পী এড শিরান, রিয়ানা, অ্যালেক বেঞ্জামিন, টেইলর সুইফট, ব্রুনো মার্স, বিয়ন্সে। অলটারনেটিভ পপ রক ব্যান্ড কোল্ডপ্লের গানও শোনেন বেশ। ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে কোল্ডপ্লের কনসার্ট সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা তার কাছে এখনো সুখস্মৃতি হয়ে আছে। শুধু তা-ই নয়, সেই দিনকে জীবনের সেরা তিনটি দিনের একটি বলেও মনে করেন।
টয়ার পছন্দের রং সবুজ ও সাদা। আউটফিটের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেন আরাম ও স্বস্তিদায়ক যেকোনো ধরনের ক্যাজুয়াল পোশাক। পছন্দের ব্র্যান্ড থাইল্যান্ডের জেসপাল, স্পেনের জারা, যুক্তরাষ্ট্রের ফরেভার টোয়েন্টি ওয়ান। অ্যাকসেসরিজ হিসেবে পছন্দ ফিঙ্গার রিং।
স্টাইল প্রশ্নে টয়া বলেন, ‘এ হলো নিজেকে নিজের মতো প্রকাশের মাধ্যম। স্টাইল শুধু ড্রেস, জুতা, মেকআপের মতো বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়; বরং একজন ব্যক্তির চিন্তাধারা, কাজের মাধ্যমেও তা ফুটে ওঠে।’
আগেই বলা হয়েছে, টয়া নিজের মেকআপ নিজেই করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। পছন্দের মেকআপ ব্র্যান্ড ফেন্টি বিউটি বাই রিয়ানা, মেকআপ ফরেভার, হুদা বিউটি। সবকিছুর পরে পারফিউম ব্যবহার করা চাই তার। এ ক্ষেত্রে পছন্দের ব্র্যান্ড জর্জিও আরমানি সি, পয়জন গার্ল ডিওর, গুচি ফ্লোরা। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার করেন ভারসাচি।
সময় পেলে সিনেমা, টিভি সিরিজ, ড্রামা, ডকুমেন্টারি দেখতে পছন্দ করেন এই মডেল। ‘ফ্রেন্ডস’ সিরিজটি তার মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। এর প্রতিটি সিজন দেখেছেন বেশ কয়েকবার করে; আর বুঁদ হয়ে থেকেছেন প্রতিবারই।
রাতের খাবার রুটিন মেনে করা হয় না তার। তা মূলত কাজের জন্যই। কাজ না থাকলে ১১টার মাঝেই সারেন নৈশভোজ। মেনুতে অন্য কিছু থাকুক বা না-ই থাকুক, চিকেন থাকা চাই। সঙ্গে সামান্য ভেজিটেবল। কাজ থাকলে মাঝরাতের আগে মেলে না খাওয়ার সুযোগ। সে ক্ষেত্রে মিড নাইট স্ন্যাকসই সই। বিশেষ করে মানচিজ ও আইসক্রিম।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন